তবুও শেষ রক্ষা হলো না by নাজমুল হক নোবেল

তুর্থ দিনের শেষবেলায় সাকিব আউট হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশের পরাজয় এখন সময়ের ব্যাপার। প্রেসবক্সে সাংবাদিকদের অনেকে ঘোষণা পর্যন্ত দিয়েছিলেন, পঞ্চম দিনের খেলা লাঞ্চ পর্যন্ত গড়াবে না; কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া আলোহীন সেশনে বিপুল বিক্রমে রুখে দাঁড়ান মুশফিক এবং নাসির। শেষ দিনে উইকেট ছাড়া কোনো সেশন কাটিয়ে দেওয়া! সত্যিই বিস্ময় উপহার দিলেন নাসির-মুশফিক; কিন্তু সকালের শঙ্কা


বাস্তবে রূপ নিল লাঞ্চের পর। এমন একটি জুটির পরও ৩৫ রানে শেষ পাঁচ উইকেট হারিয়ে জেগে ওঠা ড্রর স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের।
পঞ্চম দিনের উইকেটে পাকিস্তানের বৈচিত্র্যপূর্ণ বোলিং মোকাবেলা করা বিশ্বের যে কোনো দলের ব্যাটিং লাইনআপের জন্যই বিশাল চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে পাকিস্তানের স্পিন আক্রমণ। সাইদ আজমল, আবদুর রেহমান এবং মোহাম্মদ হাফিজকে উপমহাদেশীয় উইকেটে টেস্ট ম্যাচের শেষদিনে খেলা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু এ অসাধ্য কাজটি করলেন নাসির এবং মুশফিক। ষষ্ঠ উইকেটে সেঞ্চুরির পার্টনারশিপ গড়ে বাংলাদেশকে বিজয়ের চেয়ে বড় এক ড্রর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তারা। এর মধ্যে নাসির তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি।
সকালের দিকে কিন্তু উইকেটে বেশ ভালোই মুভমেন্ট ছিল। অবশ্য সেটা বেশিক্ষণ থাকেনি। কেবল দিনের প্রথম কয়েক ওভার পেসাররা উইকেট থেকে সাহায্য পেয়েছেন। তাই দিনের শুরুতে মুশফিক ও নাসির_ উভয়েই স্লিপে কয়েকবার ক্যাচ দিয়েছিলেন। যদিও প্রতিবারই ভাগ্য তাদের সহায় ছিল। তবে গুল-চিমাদের সুইং-বাউন্সের মাঝে পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে বেশ ক'টি চমৎকার শট খেলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দিনের চতুর্থ ওভারে ড্রাইভ করতে গিয়ে সেকেন্ড স্লিপে প্রায় ধরা পড়ে গিয়েছিলেন নাসির; কিন্তু এরপরও ভড়কে যাননি এ তরুণ। পরের বলেই আপার কাটে গালির ওপর দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠানোর সাহস দেখিয়েছেন তিনি। ওই একটি শটে কুড়ি বছরের নাসির, যে কি-না মাত্র তিনটি টেস্ট খেলেছেন, আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা দেখিয়ে দিয়েছেন। নাসিরের এমন কয়েকটি শটের কারণেই পেসারদের আক্রমণ থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হন মিসবাহ।
সাইদ আজমল এবং আবদুর রেহমান আক্রমণে এসে রানের গতিতে লাগাম পরিয়ে দেন। দুই স্পিনার উইকেট টু উইকেট বল করতে শুরু করেন। তবে রান না আসায় উতলা হয়ে ওঠেননি বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যান। অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পাকিস্তানের দুই স্পিনারকে মোকাবেলা করেছেন তারা। কিন্তু একটানা আর কতক্ষণ পারা যায়! স্পিনাররা ঠিকই আলগা বল দিলেন এবং নাসিরও ড্রাইভে সীমানা ছাড়া করেছেন।
মুশফিক এবং নাসির দু'জনই ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা দেখিয়েছেন। যে কারণে লাঞ্চের আগে আজহার আলীর মতো পার্টটাইম স্পিনারদের পর্যন্ত আক্রমণে আনেন পাক অধিনায়ক। উল্টো তার বলে মিড উইকেট দিয়ে একটি চার মেরে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ পূর্ণ করেন নাসির। তবে লাঞ্চের পর আবদুর রেহমানের একটি অসাধারণ ডেলিভারিতে নাসির বোল্ড হয়ে গেলে ভাঙে এ জুটি। নাসির ও মুশফিক জুটি ৪১.২ ওভার ব্যাট করে ১১৭ রান যোগ করেছে। যদিও তারা শেষ রক্ষা করতে পারেননি; কিন্তু প্রথম পাঁচটি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এভাবে রুখে দাঁড়ানোর বাহবা তারা পেতেই পারেন।

No comments

Powered by Blogger.