স্বাগতা দি অলরাউন্ডার by রবিউল ইসলাম জীবন

০ ডিসেম্বর ২০১১। দুপুর ২টা ৫। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশের ৩৩৮ রানের বিপরীতে পাকিস্তান অল আউট ৪৭০ রানে। এই মাত্র আরেকটি উইকেটের পতন। এ উইকেটটিও পেলেন সাকিব। এ নিয়ে ম্যাচে সাকিবের উইকেটসংখ্যা ৬। ব্যাট হাতে ১৪৪ রান করার পর বল হাতেও দেখালেন দারুণ কারিশমা! এ সময় পর্যন্ত ম্যাচের সর্বোচ্চ রান এবং সর্বোচ্চ উইকেট সাকিবেরই দখলে। এই না হলে কি সাকিব বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার (এক


দিনের ম্যাচে)! সাকিবের খেলাটা সবাই রঙিন মনে উপভোগ করলেও একজনের মনে দানা বেঁধে আছে আহ্লাদি অভিমান! কারণ খেলাটা উপভোগ করতে পারেননি। তিনি স্বাগতা। সাকিবের অন্য রকম এক ভক্ত। 'সাকিবের খেলা আমার ভীষণ পছন্দ! তবে ব্যস্ততার কারণে এখন আর সেভাবে খেলা দেখতে পারি না। এটা বেশ মিস করি। তবে সময়-সুযোগ বুঝে খবরটা ঠিকই রাখি।' বেশ আবেগ জড়ানো কণ্ঠে বললেন স্বাগতা। স্বাগতা তখন গাড়িতে। এক হাতে মুঠোফোন, অন্য হাতে গাড়ির ড্রাইভিং স্টিয়ারিং। পুবাইলে যাচ্ছেন নিজেই ড্রাইভ করে। বেশ তাড়া। গিয়েই অংশ নিতে হবে নাটকের শুটিংয়ে। কয়েক দিন ধরে দম ফেলার সময় নেই। শুটিং আর শুটিং। 'প্রতিদিন ভোরে বের হই। বাসায় ফিরি রাত ১২টা-১টায়। ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে অবসরবিহীন এই ব্যস্ততা।' সেখানে দুটি নাটকের শুটিং করছেন তিনি। এগুলোর একটি সৈয়দ শাকিলের 'হাওয়াই মিঠাই', আরেকটা মামুন খানের 'শ্বশুরবাড়ি মধুর হাঁড়ি'। দু-তিন বছর আগে নাটকটির শুটিং করেছিলেন। তবে এত দিন প্রচারিত হয়নি। এবার হবে। তাই নতুন করে শুটিং করতে হচ্ছে।
ঢাকার পরিচিত যানজট আর শীতের শীতলতাকে পাশ কাটিয়ে স্বাগতা পেঁৗছে গেলেন শুটিং স্পটে। কথা বলছিলেন শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে। টিভিতে এখন কয়টা নাটক প্রচারিত হচ্ছে আপনার? স্বাগতার ব্যস্ত উত্তর, 'জানি না, কিচ্ছু জানি না।' পরক্ষণেই নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বললেন, 'পাঁচ-ছয়টা হবে।' এর একটা কারণও জানালেন, 'আসলে নাটকের শুটিং তো বিভিন্ন সময়ে হচ্ছে। হঠাৎ দেখা গেল সবকটির প্রচার শুরু হয়েছে একই সময়ে।' কথার রেশ না কাটতেই একনাগাড়ে স্বাগতা বলে গেলেন, 'গত পাঁচ-ছয় মাসে আমার লাইফে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অসুস্থতার কারণে সার্জারি করাতে হয়েছে। সেরে উঠতে না উঠতেই শুরু হলো ব্যান্ডের (মহাকাল) কাজ। আট বছর ধরে করি করি করেও অ্যালবামটি বের করতে পারছিলাম না। অবশেষে গত ঈদে প্রকাশ করতে পেরেছি ব্যান্ডের অ্যালবাম। গানগুলোর জন্যও সবার কাছ থেকে ইতিবাচক মন্তব্য পাচ্ছি। অনেকেই জানিয়েছেন, গানগুলো তাঁদের মনে ধরেছে।' এ অ্যালবাম বের করার আগে স্বাগতা কাজ করেছেন ছোট ভাই সন্ধির সুর ও সংগীতে প্রকাশিত মিঙ্ড 'ভালোবাসি তোমাকে' অ্যালবামে। এতে গানের গল্পের সঙ্গে মিল রেখে পাঠ করা হয় আবৃত্তি। ইরেশ যাকেরের সঙ্গে সেই আবৃত্তিগুলো করেছেন স্বাগতা। অ্যালবামটির নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি! গত দুই ঈদে বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারিত প্রায় ডজনখানেক নাটকেও দেখা গেছে তাঁকে। গান নিয়ে ঘুরে এসেছেন কাতার থেকে। মহাকালের গান শ্রোতাদের পছন্দ হওয়ায় স্বাগতার সংগীতের ব্যস্ততা আরো বেড়েছে। সম্প্রতি অংশ নিয়েছেন দুটি কনসার্টে। স্বাগতা বলেন, 'আরো কনসার্ট আছে সামনে। এগুলোর জন্য প্র্যাকটিসে বসা দরকার। সময়ই তো পাচ্ছি না!'
উপস্থাপনায়ও সফল স্বাগতা। 'সিনেবিট সাদা কালো' ও 'মিউজিক ইউফোনি' অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে নজর কেড়েছেন তিনি। উপস্থাপনা নিয়ে অনেক গল্পও আছে। স্বাগতার হাসিটা বেশ সুন্দর! কথা বলেন অনেক মজা করে! আরো কত্ত কী! এই হাসির রহস্যটা কী? কথা শুনে স্বাগতা হাসেন, 'আমি আসলে এমনই। হাস্যোজ্জ্বল থাকতে পছন্দ করি। মজায় সময় কাটাতে ভালোবাসি। অলটাইম ফুর্তিবাজ! ফুর্তি ছাড়া লাইফে আর কী আছে, বলেন?' হাসির জন্যই ২০০৫ সালে 'ইউ গট দ্য লুক' হয়েছেন স্বাগতা। শুটিংয়ের ডাক পড়েছে। তাই চলে গেলেন। আধা ঘণ্টা পরে আবার কথা শুরু। আপনার হাসির রংটা কেমন? স্বাগতার ঠোঁটে রহস্যের হাসি, 'সে তো আমি বলব না। আমার হাসি যাঁদের পছন্দ, তাঁরাই বলবেন।'
সংগীত, নাটক, উপস্থাপনা এমনকি চলচ্চিত্রেও নিজের দ্যুতি ছড়িয়েছেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিষয়ে পড়ুয়া এ শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে অভিনয় করেছেন চারটি চলচ্চিত্রে। এগুলোর তিনটি 'শত্রু শত্রু খেলা', 'কোটি টাকার ফকির' ও 'অশান্ত মন' মুক্তি পেয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে 'সূচনা রেখার দিকে'। নতুন কোনো চলচ্চিত্রে কাজ করছেন না? 'আপাতত হাতে কোনো চলচ্চিত্র নেই। প্রস্তাব তো আসে। কিন্তু ব্যাটে বলে না মিললে তো আর করা যাবে না।'
সবশেষে বললেন, 'এত্ত কিছু করি দেখিই তো অনেকে আমাকে বলেন, বাংলাদেশে দুজন অলরাউন্ডার_একজন সাকিব আল হাসান, অন্যজন স্বাগতা।' দুজনেরই নাম শুরু হয় ইংরেজি 'এস' অক্ষর দিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.