শুটিং স্পট-ডাকাত যখন পতিতালয়ে by পিন্টু রঞ্জন অর্ক
এফডিসিতে চলছে অনিমেষ আইচের পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র 'না মানুষ'-এর শুটিং। বাইরের দর্শনার্থীদের পাশাপাশি এফডিসির অনেকেই স্পটে ঢু মেরে দেখছেন অনিমেষের কাজ। স্পট থেকে ফিরে লিখেছেন পিন্টু রঞ্জন অর্ক
১৭ ডিসেম্বর, সন্ধ্যা ৬টা। এফডিসির প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই মনে হলো, লোকজনের আনাগোনা অন্যদিনের তুলনায় বেশ কম। ঘন কুয়াশায় মোড়া সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সঙ্গে কনকনে বাতাস বইছে, যেন তার প্রভাব পড়েছে
১৭ ডিসেম্বর, সন্ধ্যা ৬টা। এফডিসির প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই মনে হলো, লোকজনের আনাগোনা অন্যদিনের তুলনায় বেশ কম। ঘন কুয়াশায় মোড়া সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সঙ্গে কনকনে বাতাস বইছে, যেন তার প্রভাব পড়েছে
এখানেও। কয়েক কদম এগিয়ে সামনে কড়ইতলায় গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। যেন ছোটখাটো একটা জনসভা চলছে। প্রায় শ তিনেক লোকের সমাগম। সবাইকে শুটিংয়ের দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন পরিচালক অনিমেষ আইচ। ছবির শিরোনাম 'না-মানুষ'। এটাই তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র। কাহিনী নেওয়া হয়েছে শহীদুল জহিরের একটি উপন্যাস থেকে। 'আগুন লেগেছে এই মনে' শিরোনামের একটি আইটেম সংয়ের দৃশ্যের শুটিং হবে পতিতালয়ে। হার্ডবোর্ড দিয়ে তৈরি সিনেমা হল, বার, হোটেল এবং পতিতালয়সহ প্রস্তুত পুরো সেট। আনা হয়েছে ৯০ জনের মতো দেহপসারিণীকে। পতিতালয়ের খদ্দের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নাইজেরিয়ার দুইজন এবং ক্যামেরুনের একজনসহ মোট তিনজন বিদেশিও এসেছেন। যমুনা নদীর তীরে পতিতালয়। হত্যা করার উদ্দেশ্যে নায়ককে অপহরণ করে সেখানে নিয়ে এসেছে জোবেদ এবং হালাকু নামের দুজন ডাকাত। তারা নৌকা ঘাটে ভিড়িয়ে ঢুকবে পতিতালয়ে। তাদের সেই প্রবেশের সময় থেকেই শুরু হবে গানটি। জোবেদ চরিত্রে সুমন আনোয়ার এবং হালাকু চরিত্রে অভিনয় করছেন এরফান মৃধা শিবলু। দুইজন অভিনেতা এবং দুইজন অভিনেত্রীকে দিয়ে কয়েকবার ডামি করালেন সহকারী পরিচালক। পরিচালক অনিমেষ আইচকেও দেখা গেল বেশ কয়েকবার চেয়ার থেকে উঠে এসে দৃশ্যটি বুঝিয়ে দিতে। তিন-চারবার ডামি নেওয়া হলেও পতিতা চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রীদের মুখের ভাব ঠিক পছন্দ হচ্ছিল না পরিচালকের। মুখে স্বাভাবিক হাসি ফোটাতে পারছিল না কেউ-ই। এটা দেখে সহকারী পরিচালক আগের দুজনকে সরিয়ে নতুন দুটো মেয়েকে বেছে নিলেন তাঁদের জায়গায়। তিনবারের প্রচেষ্টায় এবার তাঁরা সফল। এরপর অনিমেষ আইচ ডাকাত চরিত্রে অভিনয়কারী সুমন আনোয়ার এবং এরফান মৃধা শিবলুকে ডাকলেন মূল দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য। চার-পাঁচবার দৃশ্যটি টেক করা হলেও পরিচালকের মনমতো হচ্ছিল না। কোনোবার গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলছে না, পরের বার দেখা গেল ঠোঁট মিললেও মুখের এঙ্প্রেশন ঠিকমতো হচ্ছিল না। অবশেষে সপ্তম বারের প্রচেষ্টায় 'ওকে' হলো দৃশ্যটি। অনিমেষ আইচ যখন চেয়ার ছেড়ে উঠে হাততালি দিতে দিতে বললেন, 'ওকে, ডান', তখন সবার মুখে বিজয়ের হাসি! একে অপরকে জড়িয়ে ধরে সেই আনন্দ ভাগাভাগি করলেন তাঁরা! কারণ, এই দৃশ্যের মাধ্যমেই শুরু হলো এই ছবির শুটিং।
ছবির পরিচালক অনিমেষ আইচ বলেন, 'এই ছবি পরিচালনার মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হচ্ছে আমার। শহীদুল জহিরের উপন্যাস-ছোটগল্পে জাদুবাস্তবতার ব্যবহার আছে। এই ছবিতেও সেই বিষয়টি থাকছে। এই ছবির মাধ্যমে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে বাংলা সিনেমার দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।'
ছবির পরিচালক অনিমেষ আইচ বলেন, 'এই ছবি পরিচালনার মধ্য দিয়েই চলচ্চিত্র পরিচালনায় অভিষেক হচ্ছে আমার। শহীদুল জহিরের উপন্যাস-ছোটগল্পে জাদুবাস্তবতার ব্যবহার আছে। এই ছবিতেও সেই বিষয়টি থাকছে। এই ছবির মাধ্যমে গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে বাংলা সিনেমার দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।'
No comments