শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে-বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উদ্যাপন by মামুন মিজানুর রহমান

শিল্পকলা একাডেমীর প্রাঙ্গণজুড়ে ও ভবনের ছাদে সারিবদ্ধভাবে মোম স্থাপন শুরু হয় দুই দিন আগেই। নভেম্বরের শেষ দিনটি পেরিয়ে রাত ১২টা বাজতেই শিল্পকলা একাডেমীর প্রাঙ্গণ মুখরিত হয় শত শত মানুষে। গোটা শিল্পকলায় জ্বলে উঠতে থাকে ৪০ হাজার মোম। শত শত নারী-পুুরুষ তুমুল আনন্দে মোম জ্বালিয়ে নিজেকে এবং দেশকে আলোকিত করার শপথ নেন। মোমের বিচিত্র কোরিওগ্রাফিতে সৃষ্টি হয় অসাধারণ দৃশ্য। শিল্পকলায় পুকুরের মতো


জায়গাটিতে মোম ও জাতীয় পতাকার মাধ্যমে অদ্ভুত সুন্দর একটি শিল্প তৈরি হয়। এ সময় মঞ্চে ছিল শিশুদের সংগীত পরিবেশনা। বিজয়ের ৪০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমী আয়োজন করে আট দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের নাট্যোৎসব। এ উৎসবে বিনা মূল্যে শিল্পকলার তিনটি মিলনায়তনে নাটক প্রদর্শিত হয়। উৎসবে প্রদর্শিত হয় থিয়েটার আর্ট ইউনিটের 'সময়ের প্রয়োজনে', লোকনাট্যদলের (সিদ্ধেশ্বরী) 'মুজিব মানে মুক্তি', থিয়েটারের (আরামবাগ) 'সাত ঘাটের কানাকড়ি', মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের 'ঘুম নেই', থিয়েটারের (বেইলি রোড) 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়', নাগরিক নাট্যাঙ্গনের 'সেই সব দিনগুলো', নাট্যধারার 'বীরাঙ্গনার সাক্ষাৎকার', শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের 'রাইফেল', রাজারবাগ পুলিশ লাইনের 'রাজারবাগ-৭১', পালাকারের 'রাইফেল', ঐকিক থিয়েটারের 'ঠিকানা', উত্তরাধিকারের 'মৃত্যুপাখি', স্বপ্নদলের 'স্বাধীনতা সংগ্রাম', ড্রামা ডট কমের 'জানালায়', বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর 'মুক্তি', নাগরিক নাট্যাঙ্গনের (বাংলাদেশ) 'আমি বীরাঙ্গনা বলছি' ও যাত্রাদল দেশ অপেরার 'স্বাধীন সুলতান ইলিয়াস শাহ'। তা ছাড়া শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তাঙ্গনে ছিল পথনাটকের প্রদর্শনী। এসব পথনাটকের মধ্যে আছে সময় নাট্যদলের 'জননী বীরাঙ্গনা', নাট্যধারার 'আবারও বাংলাদেশ', দৃষ্টিপাতের 'জোড়াতালি', থিয়েটারের (আরামবাগ) 'বাহার', থিয়েটারের (বেইলি রোড) 'আমরা সবাই চোর', আরণ্যক নাট্যদলের 'আগুনের ডালপালা', সংলাপ গ্রুপ থিয়েটারের 'নতুন প্রজন্ম', মানস নাট্যাঙ্গনের 'ব্যারিকেড চারিদিক' এবং সাত্তি্বক নাট্য সম্প্রদায়ের 'রসু খাঁ অথবা আমি'। বিনা মূল্যে নাটক দেখতে প্রতিদিনই শিল্পকলায় ভিড় জমিয়েছে অসংখ্য মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের এসব নাটক দেখে চেতনাকে আরো শাণিত করার সুযোগ পেয়েছে বিপুলসংখ্যক দর্শক। এসবের বাইরেও শিল্পকলা একাডেমীর জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তন ১১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর এবং জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর প্রতিদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সমবেত, একক সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, বাউল গান ও প্রতিবন্ধীদের অংশগ্রহণে এই সাংস্কৃতিক আয়োজন ছিল মুখরিত। জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে ১২ থেকে ২৮ ডিসেম্বর প্রদর্শিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চারুকলা। তা ছাড়া শিল্পকলা একাডেমীর মুক্তাঙ্গনে বিজয়ের মাসের প্রতিদিনই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। জাতীয় নাট্যশালা চত্বরে চলছে ২০২১ সালে কেমন বাংলাদেশ প্রত্যাশা, তা নিয়ে নানাজনের চিরকুটে লেখা স্বপ্নের প্রদর্শনী। এসব স্বপ্ন দুর্নীতি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রাজনৈতিক হানাহানির অবসান, দুই নেত্রীর কবল থেকে দেশ উদ্ধারসহ নানা ধরনের আবর্জনামুক্ত স্বপ্নের স্বদেশের কথা লিখেছেন অনেকেই। স্বপ্নগুলো সুন্দর হলেও অধিকাংশ স্বপ্নই ভুল বানানে লিখিত।

No comments

Powered by Blogger.