তদবিরের সংস্কৃতি গ্রামবিমুখতাকে জোরালো করেছে-চিকিৎসকদের শহরপ্রীতি
চিকিৎসকদের গ্রাম ছেড়ে শহরের হাসপাতালে চলে আসাটা স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক নৈরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। অবশ্য সাধারণভাবে এটা কোনো নতুন সমস্যা নয়। চিকিৎসকদের শহরপ্রীতি বিশ্বজুড়েই আছে। কিন্তু বহু দেশ তা সামাল দিলেও বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ২০০০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সমস্যার একটি আন্তর্জাতিক মাত্রা রয়েছে। এতে ব্রাজিল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও জাম্বিয়ার চিকিৎসকেরা গ্রামে যেতে অনাগ্রহী বলে
দেখানো হয়েছে। প্রতিবেশী নেপাল ও পাকিস্তানে এমনটাই দেখা যায়। বাংলাদেশে গত দুই দশকের ব্যবধানে এ সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। কারণ, স্বাস্থ্য খাতের পেশাজীবী সংগঠনগুলো প্রধানত কট্টর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিভক্ত। তারা স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশাসনে কুপ্রভাব রাখছে।
২০ ডিসেম্বর প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএমএ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংসদেরা চিকিৎসকদের শহরমুখী করার তদবিরের সঙ্গে জড়িত। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসকদের গ্রামবিমুখতার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা সহ্য করা হবে না। কিন্তু আমরা কোনো প্রতিকার দেখিনি।
জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে গত দুই বছরে চার হাজার ১৩৩ জন চিকিৎসককে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এমনকি কর্মস্থল নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাঁদের নিজ জেলা কিংবা কাছাকাছি উপজেলা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা তাঁদের সন্তুষ্ট করেনি। এসব চিকিৎসক তাঁদের পূর্বসূরিদের অশুভ পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তাঁদের অধিকাংশই নিয়োগ পাওয়ার এক বছরের মাথায় গ্রাম ছেড়ে শহরের হাসপাতালে চলে এসেছেন।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের বুঝতে হবে, ওই তদবিরকারীরা ঘরের শত্রু বিভীষণের ভূমিকা পালন করছেন। তবে একই সঙ্গে চিকিৎসকদের গ্রামমুখী রাখতে হলে কিছু প্রণোদনামূলক ব্যবস্থাও নিতে হবে। এলাকার রকমভেদে বিশেষ ভাতা, দুই বছর গ্রামে থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়ার মতো ব্যবস্থার কথা ভাবা চলে। তবে এ ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া বাস্তবসম্মত, তা খতিয়ে দেখতে সরকারের উচিত একটা উপযুক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা। তদবিরের আছরমুক্ত থেকে তা অনুসরণ করতে হবে।
No comments