আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ-ভারতে পাটসুতা রপ্তানি বন্ধ by ইফতেখার মাহমুদ
ভারতে পাটসুতা রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতের আমদানিকারকেরা গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে পাটসুতা আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পাটসুতা আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের শুল্ক বিভাগ ১৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত ৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশের পাটসুতার অন্যতম প্রধান বাজার ভারত। সেখানে চলতি অর্থবছরে ২৩০ কোটি টাকার পাটসুতা রপ্তানি হবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয়
আমদানিকারকদের এই সিদ্ধান্তে তা অর্জন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। এতে সোনালি আঁশ পাট আরেকটি ধাক্কা খেল। এমনিতে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে পাটসুতা রপ্তানি ছয় মাস ধরে অনেক কমে গেছে। ইউরোপের পাটের বাজারও মন্দা। অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের দাম কমতির দিকে। প্রতি মাসে কমছে আমদানি আদেশ। এবার কাঁচা পাট ও পাটসুতার অন্যতম প্রধান বাজার ভারতে বন্ধ হলো পাটসুতা রপ্তানি। এমন অবস্থায় পাটশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা হতাশায় পড়েছেন।
পাটের বিশ্ববাজার পর্যালোচনাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা নেচারাল ফাইবার ওয়ার্ল্ডওয়াইড বলেছে, বাংলাদেশের পাটের প্রধান আমদানিকারক দেশ ইরান ও তুরস্কে পাটপণ্যের বাজারে মন্দা চলছে। পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা কোম্পানিগুলো কম দামের ও নিম্নমানের পাটসুতা সরবরাহ শুরু করেছে। এতে বাংলাদেশের পাটসুতা রপ্তানিকারকেরা ভবিষ্যতে চীনের কাছে বাজার হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন।
অতিরিক্ত ৪ শতাংশ শুল্ক নিয়ে সংকট: এপ্রিল থেকে বাংলাদেশর পাটসুতা আমদানির ওপর ৪ শতাংশ বিশেষ শুল্ক চেয়ে ১৩ ডিসেম্বর আমদানিকারকদের কাছে কারণ দর্শানো নোটিশসহ চাহিদাপত্র পাঠায় ভারতের শুল্ক বিভাগ। আমদানিকারকদের কাছে অতিরিক্ত এই শুল্ক বাবদ তিন কোটি ভারতীয় রুপি চাওয়া হয়। আমদানিকারকেরা এই অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাটসুতা আমদানি বন্ধ করেছেন।
পূর্বঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন ছাড়াই এই অর্থ চাওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে ভারতের পাটপণ্য আমদানিকারক সমিতি বলেছে, নেপাল থেকে পাটসুতা আমদানির ক্ষেত্রেও এ ধরনের কোনো শুল্ক নেওয়া হয় না।
এই সংকট নিরসনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নতুন কোনো শুল্ক আরোপ করেনি। এ ধরনের বিশেষ শুল্কের ব্যবস্থা আগেই ছিল, তবে নেওয়া হতো না।
এদিকে আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানিয়েছেন, এমন ধরনের অনেক শুল্কের বিধান আইনে থাকলেও তা প্রয়োগ করা হয় না। শুধু বাংলাদেশ থেকে পাটসুতা আমদানির ক্ষেত্রে এই বিশেষ শুল্ক আরোপ করায় তাঁরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই শুল্ক প্রত্যাহারের প্রশ্নে তাঁরা কোনো আপস করবেন না।
ভারতের পাটকলগুলো বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে ২১৭ কোটি টাকার পাটসুতা আমদানি করেছিল। চলতি বছর তা বেড়ে ২৩০ কোটি টাকা হবে বলে আশা করা হয়েছিল। গত ছয় মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশও আসে। আগামী ছয় মাসে আরও ১৩০ কোটি টাকার পাটসুতা রপ্তানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) সূত্রে জানা গেছে।
বিজেএসএর সভাপতি শামসুদ্দোহা এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, পাটসুতার বিশ্ববাজারে এখন মন্দা চলছে। দেশে পাটসুতাকেন্দ্রিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের মতো নিশ্চিত ও নিয়মিত বাজার হাতছাড়া হলে তা এই শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় আনবে। সরকারের উচিত দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আশরাফুল মকবুল এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন শেষে এখনো দেশে না ফেরায় তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
রপ্তানি কমেছে: বিজেএসএ সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার তিন লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন পাটসুতা রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখ এক হাজার ৭৫৭ টন পাটসুতা রপ্তানি হয়। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তা কমে ৭৪ হাজার ৩৪৭ টনে দাঁড়িয়েছে।
দেশে গত বছর নিম্নমানের এক মণ পাটের দাম ছিল এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। মাঝারি মানের পাটের দাম ছিল দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং সবচেয়ে ভালো মানের পাটের দাম প্রতি মণ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সেখানে চলতি বছর নিম্নমানের পাট প্রতি মণ ৯০০ টাকা, মাঝারি মানের এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং ভালো মানের পাট দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাটের বিশ্ববাজার পর্যালোচনাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা নেচারাল ফাইবার ওয়ার্ল্ডওয়াইড বলেছে, বাংলাদেশের পাটের প্রধান আমদানিকারক দেশ ইরান ও তুরস্কে পাটপণ্যের বাজারে মন্দা চলছে। পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজারে চীনা কোম্পানিগুলো কম দামের ও নিম্নমানের পাটসুতা সরবরাহ শুরু করেছে। এতে বাংলাদেশের পাটসুতা রপ্তানিকারকেরা ভবিষ্যতে চীনের কাছে বাজার হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন।
অতিরিক্ত ৪ শতাংশ শুল্ক নিয়ে সংকট: এপ্রিল থেকে বাংলাদেশর পাটসুতা আমদানির ওপর ৪ শতাংশ বিশেষ শুল্ক চেয়ে ১৩ ডিসেম্বর আমদানিকারকদের কাছে কারণ দর্শানো নোটিশসহ চাহিদাপত্র পাঠায় ভারতের শুল্ক বিভাগ। আমদানিকারকদের কাছে অতিরিক্ত এই শুল্ক বাবদ তিন কোটি ভারতীয় রুপি চাওয়া হয়। আমদানিকারকেরা এই অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাটসুতা আমদানি বন্ধ করেছেন।
পূর্বঘোষণা বা প্রজ্ঞাপন ছাড়াই এই অর্থ চাওয়া হয়েছে অভিযোগ এনে ভারতের পাটপণ্য আমদানিকারক সমিতি বলেছে, নেপাল থেকে পাটসুতা আমদানির ক্ষেত্রেও এ ধরনের কোনো শুল্ক নেওয়া হয় না।
এই সংকট নিরসনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা নতুন কোনো শুল্ক আরোপ করেনি। এ ধরনের বিশেষ শুল্কের ব্যবস্থা আগেই ছিল, তবে নেওয়া হতো না।
এদিকে আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানিয়েছেন, এমন ধরনের অনেক শুল্কের বিধান আইনে থাকলেও তা প্রয়োগ করা হয় না। শুধু বাংলাদেশ থেকে পাটসুতা আমদানির ক্ষেত্রে এই বিশেষ শুল্ক আরোপ করায় তাঁরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই শুল্ক প্রত্যাহারের প্রশ্নে তাঁরা কোনো আপস করবেন না।
ভারতের পাটকলগুলো বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে ২১৭ কোটি টাকার পাটসুতা আমদানি করেছিল। চলতি বছর তা বেড়ে ২৩০ কোটি টাকা হবে বলে আশা করা হয়েছিল। গত ছয় মাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশও আসে। আগামী ছয় মাসে আরও ১৩০ কোটি টাকার পাটসুতা রপ্তানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) সূত্রে জানা গেছে।
বিজেএসএর সভাপতি শামসুদ্দোহা এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, পাটসুতার বিশ্ববাজারে এখন মন্দা চলছে। দেশে পাটসুতাকেন্দ্রিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের মতো নিশ্চিত ও নিয়মিত বাজার হাতছাড়া হলে তা এই শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় আনবে। সরকারের উচিত দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আশরাফুল মকবুল এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলন শেষে এখনো দেশে না ফেরায় তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
রপ্তানি কমেছে: বিজেএসএ সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে তিন হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার তিন লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন পাটসুতা রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এক লাখ এক হাজার ৭৫৭ টন পাটসুতা রপ্তানি হয়। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তা কমে ৭৪ হাজার ৩৪৭ টনে দাঁড়িয়েছে।
দেশে গত বছর নিম্নমানের এক মণ পাটের দাম ছিল এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। মাঝারি মানের পাটের দাম ছিল দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং সবচেয়ে ভালো মানের পাটের দাম প্রতি মণ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। সেখানে চলতি বছর নিম্নমানের পাট প্রতি মণ ৯০০ টাকা, মাঝারি মানের এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা এবং ভালো মানের পাট দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
No comments