তৃতীয় চোখ-এমপি বনাম দল

লীয় নেতাদের প্রাধান্য নেই সাংসদের কাছে। তাঁর স্বজনরাই এখন সবকিছুর সিদ্ধান্তের মালিক বনে গেছে। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। তাঁরা দলীয় ফোরামে এবং বিভিন্ন জনসভায় দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। তাঁরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও তুলে ধরেছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি। সাংসদের সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বনজপ্রীতি দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে সাধারণ জনগণের কাছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে


পড়েছে। সাংসদের অপকর্মের কারণে দলের অস্তিত্ব এখন বিপন্নপ্রায়। এ কারণে মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ নিজেই। অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিপি মিয়াজান আলী, সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুলসহ অধিকাংশ স্থানীয় নেতা। এখন এই গ্রুপ মারমুখী অবস্থান নিয়েছে। সাংসদের গ্রুপ ক্ষমতার মোহে আছে। কার্যত সরকারি দল হয়েও সাংসদবিরোধী গ্রুপটি বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জেলা সেক্রেটারি চীন সফর করেন। এলাকায় তাঁকে সংবর্ধনা দিতে গেলে সংসদ সদস্য গ্রুপ তাঁর ওপর হামলা চালিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয়। মেহেরপুর এলজিইডিতে টেন্ডার দখল মোকাবিলা করতে গিয়ে সংসদ সদস্য গ্রুপের সঙ্গে এই গ্রুপের একাধিকবার হামলা এবং বোমা হামলার মতো ঘটনা ঘটেছে। সেক্রেটারি গ্রুপকে মোকাবিলায় সংসদ সদস্য গ্রুপের ক্যাডাররা শহরে সশস্ত্র অবস্থায় মাঝেমধ্যেই মহড়ায় নামে। সর্বশেষ, সেক্রেটারি গ্রুপকে দুর্বল করতে সংসদ সদস্য গ্রুপ একটি হত্যা মামলায় দলের দুইজন শীর্ষ নেতাকে অভিযুক্ত করেছে। গত এপ্রিলে বোমা হামলায় মারা গেছেন সংসদ সদস্যের ভাগ্নে হিসেবে পরিচিত শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মিজানুর রহমান রিপন। এ ঘটনার পেছনে দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিয়াজান আলী এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুলকে জড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কোন্দল এখন চরম পর্যায়ে। সংসদ সদস্য যেকোনো জনসভায় বলেন, 'ওরা খুনি, ওদের সঙ্গে দল করা যায় না।' অপরদিকে, সেক্রেটারি গ্রুপ বলছে, সংসদ সদস্য দুর্নীতিবাজ। তিনি দলকে পরিবারতান্ত্রিক করে দলকে জনবিছিন্ন করে দিয়েছেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে দল করলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দলের দুই শীর্ষ নেতাকে একটি হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই আমরা সংসদ সদস্য জয়নালমুক্ত দল চাই। জানা গেছে, সংসদ সদস্যের কারণে এখন মেহেরপুরে জামায়াতের রাজনীতি চলছে সবচেয়ে নিরাপদে। কেননা, সংসদ সদস্যের স্বজনরা সবাই জামায়াতের সক্রিয় নেতা-কর্মী। সংসদ সদস্যের শ্যালকের স্ত্রী মহিলা জামায়াতের রোকন। ফলে এলাকায় পুলিশ এবং সংসদ সদস্যের ক্যাডারদের ভয়ে বিএনপি অনেক কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও জামায়াতের কর্মকাণ্ড চলছে নির্বিঘ্নে। তাই পুলিশ এ পর্যন্ত জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করার সাহস পায়নি।

No comments

Powered by Blogger.