এফবিসিসিআইর সেমিনারে বক্তারা-বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না নারী উদ্যোক্তারা

নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয়। ট্রেড লাইসেন্স, টিন, ভ্যাট, ব্যাংক লোন, শিল্পের কাঁচামাল, সবশেষে বাজারজাতকরণ_ সর্বক্ষেত্রেই নানান সমস্যা রয়েছে। রয়েছে পারিবারিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা। ফলে নারী উদ্যোক্তারা বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। অথচ নারীর অর্থনেতিক ক্ষমতায়নই জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। এ জন্য জাতীয় নীতিমালায় নারী উদ্যোক্তাদের স্বার্থ


রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিরও পরিবর্তন করতে হবে। বুধবার এফবিসিসিআই আয়োজিত 'এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তা :বাংলাদেশ প্রেক্ষিত' শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। চলমান এসএমই মেলা উপলক্ষে মেলার ভেন্যু বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মোঃ আবুল কাশেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের উপ-পরিচালক ড. ইয়ামীন আকবরী। এ ছাড়া এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উপ-পরিচালক মাহবুবা পান্না, বিলকিস বেগম বক্তব্য রাখেন। মুক্ত আলোচনায় নারী উদ্যোক্তা, ব্যাংকার ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এফবিসিসিআই পরিচালক মনোয়ারা হাকিম আলী। মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে সরকার ব্যাংক ঋণ প্রদান ও সহজীকরণ, শিল্পনীতিতে অগ্রাধিকার, সর্বশেষ বাজারজাতকরণ ব্যবস্থা জয়িতাসহ নানান উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন জাতীয় উন্নয়নের পূর্বশর্ত। তিনি নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে ব্যাংক ঋণের ডকুমেন্টস কমানো, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পুঁজি, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির অভাব এবং কাঁচামাল ও শ্রমের মূল্য নারী উদ্যোক্তাদের প্রধান সমস্যা। তবে এর চেয়ে বড় সমস্যা বাজারজাতকরণ ও ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি। তিনি বলেন, উৎপাদককে ন্যায্যমূল্য দেওয়া রাষ্ট্র ও ব্যবসায়ী সমাজের দায়িত্ব। এফবিসিসিআই সে চেষ্টা করে যাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে বিসিক শিল্প নগরীসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৩০ শতাংশ কোটা রাখা এবং জেলায় জেলায় সরকারের খাস জমিতে বিপণন কেন্দ্র স্থাপন করে দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মোঃ আবুল কাশেম বলেন, মহিলা উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পেতে যাতে সমস্যায় না পড়েন সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। আগামীতে মহিলা উদ্যোক্তাদের জন্য আরও কিছু কার্যক্রম নেবে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংক। তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তারা দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ সর্বোপরি সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখছেন।
মূল প্রবন্ধে ড. ইয়ামীন আকবরী নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ইতিমধ্যে রাষ্ট্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কী করেছে, আরও কী করতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। নারীদের সম্পদের মালিকানা এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তি, সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে পারলে নারীরা আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। অন্য বক্তারা বলেন, নারীরা এখনও পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতায় রয়েছেন। তাদের এসব সমস্যা থেকে বের করে আনতে পারলে দেশের অর্থনেতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এদিকে সকালে মেলা উপলক্ষে আয়োজিত অপর এক সেমিনারে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া বলেছেন, দেশের শিল্প সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিসিকের ৪০টি শিল্পনগরী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা বিসিক শিল্প নগরীগুলোতে শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য নতুন করে প্লট বরাদ্দ পাবেন। এ ক্ষেত্রে এসএমই নারী শিল্প উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে।
ওই সেমিনারেও এফবিসিসিআই সভাপতি এ. কে. আজাদ সভাপতিত্ব করেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটি সেন্টার ঢাকা'র নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম।


সেমিনারে বক্তারা বলেন, শিল্পায়িত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন ও চীনের মতো এলাকাভিত্তিক এসএমই শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। এসব শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার আগে আন্তর্জাতিক মানের যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। তারা শিল্প উদ্যোক্তাদের মতামতের ভিত্তিতে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা জরুরি বলে অভিমত দেন। সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারিত্বে খাতভিত্তিক শিল্পাঞ্চল গড়ে তুললে শিল্পায়ন প্রচেষ্টা সফল হবে বলে তারা উল্লেখ করেন। তারা বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার পরিত্যক্ত জমিতে শিল্প পার্ক গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

No comments

Powered by Blogger.