অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা-প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি আমলে নিন

জাতীয় অর্থনীতিতে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদান কতটা ব্যাপক, এ নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানির নামে দীর্ঘদিন ধরে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় প্রকাশ, বছরে প্রায় এক লাখ মানুষকে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। অসাধু কিছু জনশক্তি রপ্তানিকারক, ট্রাভেল এজেন্সি_এই দুই প্রতিষ্ঠানের দালালরা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে তাদের পাঠাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন


আইনের দৃষ্টিতে মানব পাচার। দুঃখজনক হলেও সত্য, মানব পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ বের হতে পারছে না। নিকট-অতীতে এই অপক্রিয়া রোধে বাংলাদেশ সরকার আইন পাস করেছে। কিন্তু এর পরও অবৈধভাবে বিদেশে মানুষ পাঠানোর অপক্রিয়া বন্ধ হয়েছে কি না তা হলফ করে বলা কঠিন।
১৮ ডিসেম্বর ২০১১ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' তাঁর এই উচ্চারণের ইতিবাচক প্রভাব প্রত্যাশিত। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে জনশক্তি রপ্তানির নামে কিছুসংখ্যক অসাধু যে ধরনের কাণ্ডকীর্তি চালিয়ে যাচ্ছে, এর ফলে শুধু অনেক জীবনই বিপন্ন হচ্ছে না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ইতিমধ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের শ্রমবাজারে। বর্তমান সরকার জাতিসংঘের অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার রক্ষা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সনদ সমর্থনসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকারকে এ জন্য সাধুবাদ জানাতে হয়। কাউকে যাতে উপার্জনের জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করতে না হয়, সে জন্য এ বছর সরকার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকও চালু করেছে। এটিও একটি শুভ উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। চাহিদার ভিত্তিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোতে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের মাধ্যমে চাহিদা নিরূপণের নির্দেশও সরকার ইতিমধ্যে দিয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে অভিবাসী কর্মীদের অনন্য অবদানের পরও অভিবাসন প্রশাসন এখনো বেশ জটিল অবস্থায় আছে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবাণী উচ্চারণের পর এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সব জটিলতার অবসান হবে। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ আমাদের শ্রমিক আমদানিকারক কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে বিদেশ থেকে প্রত্যাগত শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের ইস্যুটি সামনে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, অবৈধভাবে যাঁরা যাচ্ছেন সর্বস্ব খুইয়ে, তাদেরও প্রত্যাগমন ঘটছে। সব মিলিয়ে এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান চিত্র উদ্বেগজনক। ইতিমধ্যে জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরোতে ভুক্তভোগীদের অনেক অভিযোগ জমা পড়ে আছে। কিন্তু প্রতিকারের দৃষ্টান্ত তেমন একটা নেই বললেই চলে। জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে ইতিমধ্যে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে বিস্তর। এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতারণার শিকার অনেক মানুষ অমানবিক জীবন যাপন করছে। জনশক্তি রপ্তানি খাতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আর কালক্ষেপণ নয়। প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি আমলে নিয়ে এ ব্যাপারে দ্রুত সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ দরকার।

No comments

Powered by Blogger.