চালচিত্র-বিজয়ের মাসে নাশকতা ও নৈরাজ্যের শক্তির তাণ্ডব by শুভ রহমান
মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তিতে আমাদের জাতীয় জীবনের প্রধান চারটি ক্ষেত্রে_অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিজয় কী প্রভাব রেখেছে, তার আলোচনায় যেতে চেয়েছিলাম। সে আলোচনা স্থগিত রেখে আকস্মিকভাবে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে উন্মত্ত নাশকতা ও নৈরাজ্যের শক্তির চ্যালেঞ্জের মুখোশ খুলে ধরাই আরো জরুরি জ্ঞান করছি। পুরো জাতি যখন মহান বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তির নানামুখী উৎসব
উদ্যাপনে মগ্ন, স্পর্ধার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার শক্তি তখন স্পষ্টত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের সম্মুখীন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আট জেলায় ১৭ আগস্টের কায়দায় একযোগে বোমাবাজি, সন্ত্রাস, সংঘর্ষ ও রক্তপাতের বিভীষিকায় মেতে উঠল। হতাহত হতে হলো তাদের উন্মত্ত ও চোরাগোপ্তা সহিংস হামলায় সাধারণ নিরীহ মানুষকে ও আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যদের। গত রবিবার ভোর থেকেই এই তাণ্ডব শুরু হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নাগরিকসাধারণ সন্ত্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়েও দ্রুত ঘরে ফিরতে শুরু করেন। অনেক অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায়। অজানা আশঙ্কা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভরে যায় সবার অন্তর। ২০০৫-এর ১৭ আগস্টেও একযোগে ৬৩ জেলায় পাঁচ শতাধিক টাইমবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণের জঙ্গিবাদী তাণ্ডবের সময় দেশজুড়ে একই রকম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল। গণতান্ত্রিক মহাজোট সরকারের আমলে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নিরন্তর প্রচেষ্টায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল হলেও দেখা গেল জঙ্গিবাদের মূল মদদদাতা ও সূতিকাগার মৌলবাদী জামায়াত-শিবির নিরস্ত হয়নি। একই কায়দায় দেশকে অস্থিতিশীল করতে মহান বিজয় দিবসকে চ্যালেঞ্জ করেই তারা শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে আমলে নেওয়ার দিনই উন্মত্ত বোমাবাজি ও সহিংস তাণ্ডব চালানোর স্পর্ধা প্রদর্শন করল। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা জ্ঞাপনের কার্যক্রম আর বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপি-ছাত্রদলকর্মীদের বোমাবাজি, বাস ও পুলিশের গাড়ি জ্বালানো এবং ভাঙচুরের তাণ্ডবকে সচেতন দেশবাসী একসূত্রে গাঁথা ও একই পরিকল্পনাভুক্ত নাশকতা হিসেবেই দেখছে। মঙ্গলবারের কালের কণ্ঠ রিপোর্টে সে নাশকতার ব্যাপকতার মহা উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে সে রিপোর্টে বলা হয়েছে : পেট্রল পাম্পসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বোমা হামলা, অগি্নসংযোগ, সচিবালয়কে অকার্যকর করা, ঢাকাকে অচল করে দেওয়া এবং রাজধানীতে অন্তত তিন দিন অবস্থানের পরিকল্পনা ছিল বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের।
সোমবার অন্য জাতীয় দৈনিকে এ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, 'সরকারকে চাপের মুখে রাখার পাশাপাশি নিজেদের বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করতে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল বিএনপির একাংশ। দলের বেশির ভাগ সিনিয়র নেতাকে না জানিয়ে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার উদ্যোগে গ্রহণ করা হয় এ গোপন কর্মসূচি।'
পরিকল্পনা করা হয় পাশের দেশে বসে!
পত্রিকার আরো তথ্য হচ্ছে : মূল পরিকল্পনাটা করা হয় পাশের একটি দেশে। রবিবারের কর্মসূচিতে এমনকি ঢাকা মহানগরীর বিএনপির শীর্ষ নেতা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা কিছুই জানতেন না। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা আকস্মিকভাবে এ শোডাউনের সিদ্ধান্তকে অপরিপক্বতার পরিচায়ক বলে মন্তব্য করেন এবং এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পুলিশের ভাষ্য
পুলিশের ভাষ্য তুলে ধরে পত্রিকার তথ্যে বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবির ছিল মূল পরিকল্পনাকারী। তাদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্পটে থেকে এ নাশকতা চালায়। পুলিশের কর্তারা বলছেন, তাঁদের পূর্ব-সতর্কতায় আরো বড় রকমের নাশকতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
জনতার প্রতিক্রিয়া
এদিকে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, জামায়াত নেতাদের বিচার ভণ্ডুল করার জন্যই বিএনপি এসব করছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কিছু কিছু বক্তব্য বিএনপির মতো একটি বড় গণতান্ত্রিক দলকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে আবার মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লোকে প্রশ্ন করছে, এ মুক্তিযুদ্ধ কিসের জন্য, কাদের সঙ্গে, কাদের হাত থেকে তারা দেশ বাঁচাবে! মানুষ বলছে, মুক্তিযুদ্ধ মানেটা কী? মুক্তিযুদ্ধ তো নতুন একটা দেশকে সৃষ্টি করার জন্য। খালেদা জিয়া এখন কোন দেশ সৃষ্টি করতে চান? শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম একাত্তরে 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি' করেছিলেন। আজ কি তাহলে তাঁর সে মিশনই খালেদা জিয়া সফল করতে চাইছেন?
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লবিং
সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন শীর্ষ জামায়াত নেতাদের মুক্ত করার জন্য পাশ্চাত্য দেশগুলোয় জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক লবিং চলছে। দেখা যাচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরে বিএনপিও সেই লবিংয়েরই অংশ হিসেবে শোডাউন, বোমাবাজি, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ইত্যাদি করছে।
সামনে আরো বিপদ
রবিবারের বোমাবাজি, শোডাউন, তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ স্পষ্টতই সামনে আরো বড় রকমের নৈরাজ্য ও সহিংস তৎপরতার আভাস দিচ্ছে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত। তাঁরা বলছেন, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে এবং মুক্তিযুদ্ধের সব পক্ষশক্তিকে তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত দৃঢ় ও সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং পাড়ায়-মহল্লায়, জেলায় জেলায়_সর্বত্র একাত্তরের মতোই দেশকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ ও প্রস্তুত করতে হবে। সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েও বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের সহিংস তাণ্ডব সম্পূর্ণ রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ শুরু হয়েছে
ইতিমধ্যেই গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সিপিবির নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই সর্বশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলা তথা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করার তৎপরতাকে পাড়ায়-মহল্লায়_সর্বত্র সংগঠিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁরা ১৪ দল ও মহাজোটকেও এ ব্যাপারে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী
এদিকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকেও সম্ভাব্য নাশকতার বিস্তার রুখতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা গেছে। সোমবার সে লক্ষ্যে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আহূত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে র্যাব-পুলিশ সমাবেশকে ঘেরাও করে রাখে, ফলে কোনো মিছিল বের করা সম্ভব হয়নি। রবিবার থেকে শুরু করে রাজধানীতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাব-পুলিশ হাতেনাতে ককটেল বহনকারীসহ বহুসংখ্যক বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে এবং আদালতের অনুমোদন নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়।
বিএনপির বোধোদয় হোক
দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে, জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ক্রীড়নক না হয়ে বিএনপির অভ্যন্তরের সচেতন গণতন্ত্রমনা শক্তি ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের এই ক্রান্তিকালে মূল ধারার সঙ্গে মিশে ঐক্যবদ্ধভাবে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী শক্তিকে প্রতিহত করা উচিত। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি সব দল নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সংলাপের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তা সফল করার জন্য বিএনপির সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার এবং তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচিও সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে সমন্বিত করেই পালন করা উচিত। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর লক্ষ্যে যেকোনো রকম নাশকতামূলক তৎপরতা বস্তুত বিএনপিকে আরো জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তার অস্তিত্বকেই ক্রমে বিপন্ন করে তুলবে। এদিকে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি রবিবারের নাশকতা-সংক্রান্ত সব অভিযোগকে কল্পকাহিনী আখ্যা দিয়ে তার দায় অস্বীকার করেছে এবং আওয়ামী লীগকেই সে জন্য দায়ী করেছে। সেই সঙ্গে রোডমার্চসহ নতুন আন্দোলনেরও ঘোষণা দিয়েছে। সচেতন দেশবাসী ও বিশ্লেষক মহল মনে করছে, এত কিছুর পরও বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তেমন আশাব্যঞ্জক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
২১-১২-২০১১
সোমবার অন্য জাতীয় দৈনিকে এ সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। বলা হয়েছে, 'সরকারকে চাপের মুখে রাখার পাশাপাশি নিজেদের বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করতে রাজধানীতে ব্যাপক শোডাউন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল বিএনপির একাংশ। দলের বেশির ভাগ সিনিয়র নেতাকে না জানিয়ে কট্টরপন্থী হিসেবে পরিচিত মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতার উদ্যোগে গ্রহণ করা হয় এ গোপন কর্মসূচি।'
পরিকল্পনা করা হয় পাশের দেশে বসে!
পত্রিকার আরো তথ্য হচ্ছে : মূল পরিকল্পনাটা করা হয় পাশের একটি দেশে। রবিবারের কর্মসূচিতে এমনকি ঢাকা মহানগরীর বিএনপির শীর্ষ নেতা, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা কিছুই জানতেন না। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা আকস্মিকভাবে এ শোডাউনের সিদ্ধান্তকে অপরিপক্বতার পরিচায়ক বলে মন্তব্য করেন এবং এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পুলিশের ভাষ্য
পুলিশের ভাষ্য তুলে ধরে পত্রিকার তথ্যে বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবির ছিল মূল পরিকল্পনাকারী। তাদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন স্পটে থেকে এ নাশকতা চালায়। পুলিশের কর্তারা বলছেন, তাঁদের পূর্ব-সতর্কতায় আরো বড় রকমের নাশকতা রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
জনতার প্রতিক্রিয়া
এদিকে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, জামায়াত নেতাদের বিচার ভণ্ডুল করার জন্যই বিএনপি এসব করছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কিছু কিছু বক্তব্য বিএনপির মতো একটি বড় গণতান্ত্রিক দলকে বিপদে ফেলে দিচ্ছে। উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে আবার মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লোকে প্রশ্ন করছে, এ মুক্তিযুদ্ধ কিসের জন্য, কাদের সঙ্গে, কাদের হাত থেকে তারা দেশ বাঁচাবে! মানুষ বলছে, মুক্তিযুদ্ধ মানেটা কী? মুক্তিযুদ্ধ তো নতুন একটা দেশকে সৃষ্টি করার জন্য। খালেদা জিয়া এখন কোন দেশ সৃষ্টি করতে চান? শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম একাত্তরে 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি' করেছিলেন। আজ কি তাহলে তাঁর সে মিশনই খালেদা জিয়া সফল করতে চাইছেন?
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে লবিং
সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন শীর্ষ জামায়াত নেতাদের মুক্ত করার জন্য পাশ্চাত্য দেশগুলোয় জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক লবিং চলছে। দেখা যাচ্ছে, দেশের অভ্যন্তরে বিএনপিও সেই লবিংয়েরই অংশ হিসেবে শোডাউন, বোমাবাজি, মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ইত্যাদি করছে।
সামনে আরো বিপদ
রবিবারের বোমাবাজি, শোডাউন, তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ স্পষ্টতই সামনে আরো বড় রকমের নৈরাজ্য ও সহিংস তৎপরতার আভাস দিচ্ছে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত। তাঁরা বলছেন, গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে এবং মুক্তিযুদ্ধের সব পক্ষশক্তিকে তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত দৃঢ় ও সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে এবং পাড়ায়-মহল্লায়, জেলায় জেলায়_সর্বত্র একাত্তরের মতোই দেশকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য উদ্বুদ্ধ ও প্রস্তুত করতে হবে। সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েও বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের সহিংস তাণ্ডব সম্পূর্ণ রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সে জন্য গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ শুরু হয়েছে
ইতিমধ্যেই গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সিপিবির নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের এই সর্বশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলা তথা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বানচাল করার তৎপরতাকে পাড়ায়-মহল্লায়_সর্বত্র সংগঠিতভাবে রুখে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁরা ১৪ দল ও মহাজোটকেও এ ব্যাপারে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী
এদিকে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকেও সম্ভাব্য নাশকতার বিস্তার রুখতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা গেছে। সোমবার সে লক্ষ্যে বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আহূত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে র্যাব-পুলিশ সমাবেশকে ঘেরাও করে রাখে, ফলে কোনো মিছিল বের করা সম্ভব হয়নি। রবিবার থেকে শুরু করে রাজধানীতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাব-পুলিশ হাতেনাতে ককটেল বহনকারীসহ বহুসংখ্যক বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে এবং আদালতের অনুমোদন নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়।
বিএনপির বোধোদয় হোক
দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে, জামায়াত-শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ক্রীড়নক না হয়ে বিএনপির অভ্যন্তরের সচেতন গণতন্ত্রমনা শক্তি ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের এই ক্রান্তিকালে মূল ধারার সঙ্গে মিশে ঐক্যবদ্ধভাবে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী শক্তিকে প্রতিহত করা উচিত। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি সব দল নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সংলাপের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তা সফল করার জন্য বিএনপির সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার এবং তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচিও সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে সমন্বিত করেই পালন করা উচিত। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর লক্ষ্যে যেকোনো রকম নাশকতামূলক তৎপরতা বস্তুত বিএনপিকে আরো জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলবে এবং সংসদীয় গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তার অস্তিত্বকেই ক্রমে বিপন্ন করে তুলবে। এদিকে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি রবিবারের নাশকতা-সংক্রান্ত সব অভিযোগকে কল্পকাহিনী আখ্যা দিয়ে তার দায় অস্বীকার করেছে এবং আওয়ামী লীগকেই সে জন্য দায়ী করেছে। সেই সঙ্গে রোডমার্চসহ নতুন আন্দোলনেরও ঘোষণা দিয়েছে। সচেতন দেশবাসী ও বিশ্লেষক মহল মনে করছে, এত কিছুর পরও বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তেমন আশাব্যঞ্জক কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।
২১-১২-২০১১
No comments