আমি কি ভাবছি-কোথায় গেলে নিরাপদ থাকব?
আজ আমি একটি মেয়ের গল্প বলব। গল্পটি যখন আমি শুনছিলাম, আমার বুকের পাঁজরগুলো যেন ভেঙে যাচ্ছিল এক এক করে। আমাদের মেয়েরা কত কষ্ট নিয়ে বাঁচে। এ ধরনের গল্প নিয়ে বুকে পাথর বেঁধেছে অনেক মেয়ে, আবার অনেকেই নিজের জীবন শেষ করে দিচ্ছে। জীবনের ২২টি বসন্ত পার করেছেসে নেত্রকোনা শহরে।তার প্রিয়ছোট্ট শহর, যেখানে সবাই তার চেনা, সবাই তার আপন। ভালোও বেসেছিল একটি ছেলেকে। বিকম পাস করে একটি
কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা শুরু করল। বাবা নেই, মা-ই তার সব। তার পরও একদিন হঠাৎ করে ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে পালিয়ে যায়। প্রেমিক ছিলবেকার। বেকার প্রেমিকের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে ছেলেটির হাতখরচ বহন করত। রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভেবেছে, একদিন তো ভালোবাসার মানুষটিই তার সব আবদার বহন করবে। কিন্তু হায়!
সব স্বপ্ন ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। যাকে বিশ্বাস করে ঘর ছেড়েছে, মাকে ছেড়েছে, সে-ই কিনা তাকে আটকে রেখে তার মায়ের কাছে মুক্তিপণ দাবি করল। উপায়ন্তর না দেখেকোনো রকমে পালিয়ে চলে আসে সেই অসহায় মায়ের কাছে। কিন্তু মা আজ নিরুপায়। এই কন্যাকে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও বাড়িতে রাখতে নারাজ।ছোট্ট শহর, সবাই জেনে গেছে। মানুষের ছি ছি তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তাই মেয়েটিকে নিয়ে চলে এলেন ঢাকার দূর সম্পর্কের বোনের বাসায়। সব ঘটনা শুনে খালাতো বোন ও ভগ্নিপতি মেয়ের মাকে আশ্বস্ত করল, এটাই তাঁর মেয়ের উপযুক্ত স্থান, খুবই নিরাপদ। মা মেয়েকে নিশ্চিন্তে নিরাপদে রেখেচলে গেলেন নেত্রকোনায়।
এই প্রথম ঢাকায় এসেছে মেয়েটি। খালার বাসায়ও প্রথম। একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে এসেছে বলে খালা চলতে ফিরতে তাকে শুনিয়ে দিচ্ছেন, সে একটি বাজে মেয়ে। মেয়েটি শুনেও যেন শুনে না।কারণ, সে নতুন করে বাঁচতে চায়, নতুন এই শহরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, ভুলে যেতে চায় তার অতীত। এরই মাঝে তাকে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তিকরে দিয়েছেতার প্রায় পিতৃতুল্য ভগ্নিপতিটি। ভালো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আশার নিভে যাওয়া প্রদীপটি যেন একটু একটু করে জ্বলতে শুরু করেছে। প্রতাপশালী ভগ্নিপতির প্রতি মনে মনে কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে যায়।কিন্তু কোথায় যেন একটু খটকা লাগছে। ভদ্রলোকটির কিছু আচরণ সে মেলাতে পারছে না। একদিন ভগ্নিপতির ঘরেডাক পড়ল। উদ্দেশ্য, চাকরির জন্য আবেদনপত্র লিখতে হবে। বাসায়কেউ নেই ভদ্রলোকটি বাদে। বোন চলে গেছেঅফিসে। একটু আড়ষ্ট লাগছিল। তার পরও মনের আড়ষ্টতা ঝেড়ে ফেলে সে আবেদনপত্র লিখতে বসে গেল।হঠাৎ ঘরের দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল।মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মুখটি চেপে ধরল, যে কি না সম্পূর্ণ নিরাপদে রাখার আশ্বাস দিয়েছিল মেয়েটির মাকে। লাঞ্ছিত হলো সে। নির্বাক মেয়েটি বাসা থেকেই ফোন দিয়েচিৎকার করে কেঁদে সব খুলে বলল। কিন্তু বোনটি তার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছিল না। কারণ, সে যে আগেই অপরাধী হয়ে আছেতাদের দৃষ্টিতে। মনে হচ্ছিল, আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু মৃত্যুকে তার প্রচণ্ড ভয়। শুধুই নীরবে কেঁদেছে, আর আকুল হয়ে ভেবেছে এবার সে যাবে কোথায়? আবার কোন নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বাঘের মুখে?
গল্পটি বলতে বলতে একসময় আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপু, আমাদের নিরাপত্তা আসলে কোথায়?’ সে এই সহজ প্রশ্নটির উত্তর আমি দিতে পারিনি। কারণ, আমার নিজেরও যে একই প্রশ্ন, আসলেই কোথায় মেয়েদের নিরাপত্তা?
ঊর্মি
মিরপুর।
সব স্বপ্ন ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল। যাকে বিশ্বাস করে ঘর ছেড়েছে, মাকে ছেড়েছে, সে-ই কিনা তাকে আটকে রেখে তার মায়ের কাছে মুক্তিপণ দাবি করল। উপায়ন্তর না দেখেকোনো রকমে পালিয়ে চলে আসে সেই অসহায় মায়ের কাছে। কিন্তু মা আজ নিরুপায়। এই কন্যাকে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও বাড়িতে রাখতে নারাজ।ছোট্ট শহর, সবাই জেনে গেছে। মানুষের ছি ছি তিনি উপেক্ষা করতে পারবেন না। তাই মেয়েটিকে নিয়ে চলে এলেন ঢাকার দূর সম্পর্কের বোনের বাসায়। সব ঘটনা শুনে খালাতো বোন ও ভগ্নিপতি মেয়ের মাকে আশ্বস্ত করল, এটাই তাঁর মেয়ের উপযুক্ত স্থান, খুবই নিরাপদ। মা মেয়েকে নিশ্চিন্তে নিরাপদে রেখেচলে গেলেন নেত্রকোনায়।
এই প্রথম ঢাকায় এসেছে মেয়েটি। খালার বাসায়ও প্রথম। একটি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে এসেছে বলে খালা চলতে ফিরতে তাকে শুনিয়ে দিচ্ছেন, সে একটি বাজে মেয়ে। মেয়েটি শুনেও যেন শুনে না।কারণ, সে নতুন করে বাঁচতে চায়, নতুন এই শহরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়, ভুলে যেতে চায় তার অতীত। এরই মাঝে তাকে বিভিন্ন কোর্সে ভর্তিকরে দিয়েছেতার প্রায় পিতৃতুল্য ভগ্নিপতিটি। ভালো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। আশার নিভে যাওয়া প্রদীপটি যেন একটু একটু করে জ্বলতে শুরু করেছে। প্রতাপশালী ভগ্নিপতির প্রতি মনে মনে কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে যায়।কিন্তু কোথায় যেন একটু খটকা লাগছে। ভদ্রলোকটির কিছু আচরণ সে মেলাতে পারছে না। একদিন ভগ্নিপতির ঘরেডাক পড়ল। উদ্দেশ্য, চাকরির জন্য আবেদনপত্র লিখতে হবে। বাসায়কেউ নেই ভদ্রলোকটি বাদে। বোন চলে গেছেঅফিসে। একটু আড়ষ্ট লাগছিল। তার পরও মনের আড়ষ্টতা ঝেড়ে ফেলে সে আবেদনপত্র লিখতে বসে গেল।হঠাৎ ঘরের দরজাটি বন্ধ হয়ে গেল।মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার মুখটি চেপে ধরল, যে কি না সম্পূর্ণ নিরাপদে রাখার আশ্বাস দিয়েছিল মেয়েটির মাকে। লাঞ্ছিত হলো সে। নির্বাক মেয়েটি বাসা থেকেই ফোন দিয়েচিৎকার করে কেঁদে সব খুলে বলল। কিন্তু বোনটি তার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারছিল না। কারণ, সে যে আগেই অপরাধী হয়ে আছেতাদের দৃষ্টিতে। মনে হচ্ছিল, আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু মৃত্যুকে তার প্রচণ্ড ভয়। শুধুই নীরবে কেঁদেছে, আর আকুল হয়ে ভেবেছে এবার সে যাবে কোথায়? আবার কোন নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বাঘের মুখে?
গল্পটি বলতে বলতে একসময় আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপু, আমাদের নিরাপত্তা আসলে কোথায়?’ সে এই সহজ প্রশ্নটির উত্তর আমি দিতে পারিনি। কারণ, আমার নিজেরও যে একই প্রশ্ন, আসলেই কোথায় মেয়েদের নিরাপত্তা?
ঊর্মি
মিরপুর।
No comments