মৌসুমীর এখন অভিনয়ের মৌসুম by কামরুজ্জামান মিলু

সময়ের ব্যস্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে মৌসুমী বিশ্বাস পদবি বদলে হয়েছেন মৌসুমী নাগ। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার পর দেশে ফিরেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অভিনয়ে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন কামরুজ্জামান মিলু দীর্ঘ কয়েক মাস কানাডা থেকে দেশে ফিরেই উঠেছেন উত্তরার নতুন ফ্ল্যাটে। সেখানে একাই আছেন তিনি। বেশ পরিপাটি করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিয়েছেন ফ্ল্যাটটি। হঠাৎ কানাডায় চলে যাওয়া আবার দেশে ফিরে এসে অভিনয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়া।


এসব নিয়ে জানতে চাইলে মৌসুমী নাগ বললেন, 'ব্যক্তিগত কিছু কারণেই আমাকে চলে যেতে হয়েছিল। তবে আমি বুঝতে পেরেছি অভিনয় ছাড়া থাকতে পারব না। অভিনয়টাই এখন আমার সব। শুটিংয়ে গেলেই আমি ভালো থাকি। ব্যক্তিগত অনেক সমস্যা ভুলে থাকতে পারি।'
২০০৬ সালে 'সুরে আঁকা ছবি' নাটকে অর্পিতা চরিত্রের মাধ্যমে মিডিয়ায় আগমন তাঁর। এরপর প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টির মতো নাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে অরুণা বিশ্বাসের পরিচালনায় 'দৃষ্টিদান' নাটকে অন্ধ মেয়ের চরিত্র, কাচের পুতুল নাটকে লায়লা চরিত্র এবং সৈয়দ আওলাদের 'নন্দিনী' নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান তিনি। অরুণা বিশ্বাসের পরিচালনায় 'নূপুর' নাটকে অভিনয়ের জন্য দুই বছর নাচও শিখেছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'শখের বসে অভিনয় করতে এলেও এখন অভিনেত্রী হিসেবেই অভিনয়টাকে ভালোবাসি। যেকোনো চরিত্রে অভিনয়ের আগে ওই চরিত্রটি নিয়ে ভাবি, চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে মানানসই করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিই। আমার সৌভাগ্য হয়েছে সিনিয়রদের সঙ্গে কাজ করার। তাঁদের থেকেও অনেক কিছু শিখেছি। এখনো প্রতিনিয়ত শিখে যাচ্ছি।' মৌসুমীর জন্ম ৭ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায়। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন ডাক্তার হওয়ার। সেই ইচ্ছেটা পূরণ হয়নি। তা নিয়ে অবশ্য কোনো আফসোস নেই তাঁর। বরং এখন মনে হয় অভিনয়টা যেন নেশার মতো হয়ে গেছে। পরিবারের আট ভাইবোনের মধ্যে মৌসুমীর অবস্থান সপ্তম। একমাত্র ছেলে পৃথিবী বাবার সঙ্গে কানাডায় থাকে। কানাডার জোরাগ ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন মৌসুমী।
রোজ সকালে ঘড়ির অ্যালার্ম শুনে একরাশ ঘুম চোখে নিয়ে বিছানা ছাড়েন মৌসুমী। এরপর আজ পুবাইল তো কাল গাজীপুর, পরদিন উত্তরা_এভাবেই ব্যস্ত সময় কাটে শুটিং নিয়ে। শিগগিরই বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তাঁর অভিনীত বেশ কিছু নাটক প্রচার হবে। এর মধ্যে ধারাবাহিক নাটকের তালিকায় আছে সৈয়দ আওলাদের 'সাত সওদাগর', জুয়েল মাহমুদের 'বৈরী বাতাস', রিপন নবীর 'আপনঘর' ও সাজ্জাদ সুমনের 'দক্ষিণায়ন'। তবে ধারাবাহিকের চেয়ে একক নাটকের অভিনয় করতেই ভালোবাসেন মৌসুমী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'এখনকার সিরিয়ালগুলোর গল্প ২৬ পর্ব পর্যন্ত ঠিক থাকে। এরপর সব একই রকম ঘটনা দিয়ে শেষ হয়। তাই একক নাটকে অভিনয় করে বেশি আনন্দ পাই। এ ক্ষেত্রে চরিত্র গঠন, ড্রেস নির্বাচন এমনকি গল্পটা নিয়ে ভাবারও সময় পাওয়া যায়।'
দেখতে দেখতে পাঁচ বছর কেটে গেল অভিনয় জীবনের। শুরুর অনেকেই এখন অভিনয়ে নেই। কিন্তু মৌসুমী আছেন এবং দর্শকদের একজন প্রিয়মুখ হয়েই আছেন।
কথা হচ্ছিল এক ঘণ্টার নাটক নিয়ে। সম্প্রতি বেশ কিছু একক নাটকের শুটিং শেষ করেছেন। এসব নাটকের মধ্যে রয়েছে আবু সুফিয়ান বিপ্লবের 'চিরকুট', আহমেদ সুস্ময়ের 'নস্টালজিয়া অ্যান্ড ক্যাথড্রিম', অঞ্জন আইচের 'বৃষ্টি প্রহর ও ওরা তিনজন', ফাত্তাহ্ তানভীরের 'অলৌকিক প্রায়', আরেফিন রূপমের 'গহীনে গন্তব্যে', মকবুল হোসেনের 'অসমান্তরাল' ইত্যাদি। শিগগির এসব নাটক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে।
অবসরে রান্না করতে আর বই পড়তে ভালোবাসেন মৌসুমী। নাচের চর্চাটাও ছাড়েননি এখনো। মৌসুমী জানালেন, "মূলত অরুণাদির 'নূপুর' নাটকে অভিনয়ের জন্যই নাচ শিখেছিলাম। কোরিওগ্রাফার আরিফ, অরুণা বিশ্বাস ও কানিজ তাজিয়ার (বাফার) কাছ থেকে নাচ শিখেছি। ২০০৭ সালে লন্ডনে প্রবাসী বাঙালিদের পহেলা বৈশাখে একটি অনুষ্ঠানে নেচে প্রশংসা পেয়েছিলাম।"
২০০৮ সালে গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মডেল হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। এরপর রবি ও এসিআই-এর বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়েছেন।
এক বছর পর আবার নাটকে পূর্ণ ব্যস্ততা। কেমন উপভোগ করছেন? মৌসুমী বললেন, 'খুবই ভালো। মানুষের কাছ থেকে যে সাড়া আর সহযোগিতা পাই, তা আমাকে কাজে উৎসাহী ও মনোযোগী করে।' এ ছাড়া বাবা সনেতায় নাগ ও ছেলে পৃথিবী তাঁর প্রিয় মানুষ। তাঁদের কাছেই পান বেঁচে থাকার প্রেরণা। মৌসুমী বড়পর্দায় কাজ করার পরিকল্পনা করছেন। ভালো গল্প ও চরিত্র হাতে পেলেই ছবিতে কাজ করবেন মৌসুমী নাগ।

No comments

Powered by Blogger.