গণপরিবহন ব্যবস্থা-নৈরাজ্যই নিয়তি হতে পারে না
রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার যে চিত্র বুধবারের সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে, ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন তা কতখানি সত্য। রিকশা, অটোরিকশা ও ট্যাক্সিক্যাবের সংকট সম্পর্কেও অনেক কথাবার্তা হয়েছে। এটাও জানা কথা যে, রাস্তায় বাসের সংখ্যা বাড়লেই ছোট যানবাহন সংক্রান্ত সংকট অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আসবে। যে কারণে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন রুটে পাবলিক বাসের সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছে।
কিন্তু সমকালের আলোচ্য প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সংখ্যা বৃদ্ধি দূরে থাক, দিনের পর দিন বাসের সংখ্যা কমছে। সড়ক পরিবহন সমিতির এক নেতা দাবি করেছেন, গত আড়াই বছরে ৪০টি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। দফায় দফায় ভাড়া বাড়লেও রাজধানীতে বাস কোম্পানি পরিচালনা নাকি এখন লাভজনক নয়। 'রাশ আওয়ারে' শত শত যাত্রী রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় বাস সার্ভিস কেন লাভজনক হচ্ছে না_ এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্যেই নিহিত রয়েছে গণপরিবহন সংক্রান্ত সংকটের সমাধান। পরিবহন মালিকরা বলছেন, অস্বাভাবিক যানজট ও জ্বালানির ঊর্ধ্বমুখী মূল্য এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী পক্ষের মর্জিমাফিক চাঁদাবাজিই তাদের নিরুৎসাহিত করছে। আমরা মনে করি, তৃতীয় কারণটিই সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রধান প্রতিবন্ধক। এটি সবার আগে সমাধানযোগ্যও বটে। দীর্ঘ অব্যবস্থাপনায় ঢাকা মহানগর যানজটের যে দুষ্টচক্রে পতিত হয়েছে, তা থেকে মুক্তি সময় ও বিনিয়োগসাপেক্ষ। জ্বালানি মূল্যের লাগামও বাংলাদেশের হাতে নেই। আমাদের কর্তাব্যক্তিরা আন্তরিক হলেই কিন্তু চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বিধিবহির্ভূত অর্থ-ব্যয় কমলে যানজট ও জ্বালানি মূল্যও পরিবহন কোম্পানিগুলোর জন্য বড় বাধা হবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলেরই শাখা-উপশাখা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত। চাঁদাবাজির বখরাও নানা ঘাটে যায়। হাইকমান্ড চাইলে সাধারণ মানুষের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জিত অর্থ বারো ভূতের ভোগে যাওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। এর বিকল্পও নেই। মুষ্টিমেয় লোকের দুর্নীতি ও লোভের কারণে গণপরিবহন ব্যবস্থার নৈরাজ্য আমাদের নিয়তি হয়ে থাকতে পারে না।
No comments