রাষ্ট্রপতির সংলাপ-সবার অংশগ্রহণে সফল হোক
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংলাপ সফল হয়েছে, এমন নজির অনেক অনুসন্ধানেও মিলবে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীন দল ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপও দফায় দফায় হয়েছে, কিন্তু তাও ফলপ্রসূ হয়নি। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রাখলে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সংলাপ থেকে ইতিবাচক ফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে হবে। এবারের সংলাপের উদ্দেশ্য পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য প্রতিষ্ঠা।
মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হবে। রাষ্ট্রপতির এ উদ্যোগ শুভ বলে মত দিয়েছেন বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তবে একই সঙ্গে তার অভিমতও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো কী ধরনের কমিশন চায়, সংলাপ থেকে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। কিন্তু দলগুলো এ বিষয়ে কোনো সমঝোতায় আসতে পারবে না।' সাংবিধানিক পদমর্যাদায় থেকে এ ধরনের আগাম অভিমত প্রদান কতটা সঙ্গত, সে প্রশ্ন করাই যায়। কিন্তু এ হতাশা তো আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিদ্যমান বাস্তবতা থেকেই উদ্ভূত। রাষ্ট্রপতির এবারের সংলাপ থেকে অচলাবস্থা কাটার পথে যদি সামান্য অগ্রগতিও হয়, তাকে আমরা স্বাগত জানাব। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী আইনের খসড়া সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে সম্ভাব্য সদস্যদের একটি তালিকা তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। অনুসন্ধান কমিটি কাদের নিয়ে গঠিত হবে, সে প্রস্তাবও তারা দিয়েছেন। তিনি এ তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশনের শূন্য পদে নিয়োগদান করবেন। তবে নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সবকিছু সম্পন্ন হবে, এমন ভাবার কারণ নেই। এ ধরনের অনুশীলন গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য আদর্শ, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এখনও স্বপ্ন। তবে রাষ্ট্রপতি একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিক এবং তার এ ধরনের পদক্ষেপের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি রয়েছে বলেই ধারণা। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তাদের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে সবার ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচন কমিশন যেমন হতে হবে সম্পূর্ণ পক্ষপাতমুক্ত ও স্বাধীন, তেমনি প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর তাদের কর্তৃত্ব হতে হবে নিরঙ্কুশ। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করবে তাতে সন্দেহ করা চলে না। আমরা আশা করব যে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও এ সংলাপে অংশ নেবে এবং তাদের মতামত তুলে ধরবে। এ দলটি সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছে এবং তার পুনর্বহাল না হলে নির্বাচন বর্জন করতে সংকল্পবদ্ধ। কমিশন কীভাবে গঠিত হবে এবং তার স্বাধীনতা কতটা এসব বিষয় তাদের কাছে অর্থহীন। কিন্তু তারপরও আশা করব যে, তাদের এ সংক্রান্ত বক্তব্য রাষ্ট্রপতির সংলাপে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরবে। সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলকেও এ বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে হবে যে, প্রধান দলগুলো নির্বাচনে অংশ না নিলে তার ফল দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপি অতীতে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছিল, কিন্তু তার ফল দেশের জন্য তো নয়ই, এমনকি দলের জন্যও শুভ হয়নি।
No comments