চরাচর-বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ফেরা
একাত্তরের ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানের মিয়াওয়ালি জেলের পাশেই তাঁর কবরও খোঁড়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর দুয়ার থেকে বাড়ি ফিরেছেন। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পারলেও তিনি তাঁর স্বাধীন দেশের নিষ্ঠুর ঘাতকের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। ১৯৭২ সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'বাংলা নামে দেশ' গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ফেরার সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।
এই প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২ এপ্রিল তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১ আগস্ট মিয়াওয়ালি জেলে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হয়। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ২৪ জন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে জরুরি বার্তা পাঠান, 'মুজিবকে বাঁচান'। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বাহাত্তরের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধু বিমানযোগে পাকিস্তান থেকে লন্ডনে এসে ক্ল্যারিজেস হোটেলে ওঠেন। আনন্দবাজার পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, মুক্তির পর প্রথম সাংবাদিক হিসেবে আনন্দবাজারের অমিতাভ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ১০ জানুয়ারি দিলি্লর সমাবেশ শেষে বঙ্গবন্ধু নিজ দেশে ফেরেন। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, বাংলাদেশ নামে নতুন দেশের জন্ম এই খবর সংগ্রহের জন্য কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন সাংবাদিক চঞ্চল সরকার।
রেসকোর্স ময়দানের ১৬ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান কভার করে চঞ্চল ১৭ ডিসেম্বর হেঁটে ধানমণ্ডির ১৮ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান। তিনি লিখেছেন, 'ওই বাড়িতে যাওয়ার সময় আমাকে অনেকে নিষেধ করেছেন। কেননা কালও খান সেনারা ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। বাড়ির ছাদে পাকিস্তানি আর্মিরা বাংকার বানিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ওরা কি সারেন্ডারের খবর রাখে না? পাকিস্তানি সোলজারদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে চঞ্চল বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান। এরই মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী পজিশন নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুননেসা ঘর থেকে বের হয়ে এসে পাকিস্তানি পতাকা পায়ে মাড়ালেন। তাঁর পেছনে হাসিনা, রেহানা ও রাসেল। ছোট মামা রাসেলের কোলে ভাগ্নে জয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স থেকে ধানমণ্ডির বাসায় যান। কামাল দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরেন। বঙ্গবন্ধু হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন। তিনি মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরলেন। মুক্তির আনন্দে তখন সবার চোখে পানি। বঙ্গবন্ধু প্রিয়তমা স্ত্রী ফজিলাতুননেসার সামনে এসে দাঁড়ালেন। ফজিলাতুননেসা স্বামীর বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর তাঁর জ্ঞান ফিরল।' বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি খুব ক্লান্ত। আমাকে কিছু খেতে দাও। এরপর বঙ্গবন্ধু নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগোতে থাকেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হন।
ফখরে আলম
রেসকোর্স ময়দানের ১৬ ডিসেম্বরের ঐতিহাসিক আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান কভার করে চঞ্চল ১৭ ডিসেম্বর হেঁটে ধানমণ্ডির ১৮ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান। তিনি লিখেছেন, 'ওই বাড়িতে যাওয়ার সময় আমাকে অনেকে নিষেধ করেছেন। কেননা কালও খান সেনারা ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। বাড়ির ছাদে পাকিস্তানি আর্মিরা বাংকার বানিয়ে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ওরা কি সারেন্ডারের খবর রাখে না? পাকিস্তানি সোলজারদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে চঞ্চল বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে যান। এরই মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী পজিশন নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুননেসা ঘর থেকে বের হয়ে এসে পাকিস্তানি পতাকা পায়ে মাড়ালেন। তাঁর পেছনে হাসিনা, রেহানা ও রাসেল। ছোট মামা রাসেলের কোলে ভাগ্নে জয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স থেকে ধানমণ্ডির বাসায় যান। কামাল দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরেন। বঙ্গবন্ধু হাঁটতে হাঁটতে নিজের ঘরের দিকে এগোলেন। তিনি মা-বাবাকে জড়িয়ে ধরলেন। মুক্তির আনন্দে তখন সবার চোখে পানি। বঙ্গবন্ধু প্রিয়তমা স্ত্রী ফজিলাতুননেসার সামনে এসে দাঁড়ালেন। ফজিলাতুননেসা স্বামীর বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ পর তাঁর জ্ঞান ফিরল।' বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি খুব ক্লান্ত। আমাকে কিছু খেতে দাও। এরপর বঙ্গবন্ধু নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে এগোতে থাকেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটের আঘাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হন।
ফখরে আলম
No comments