ইলিয়েভস্কির ‘সম্মানজনক’ বিদায়

র্দার আড়ালে অনেক কিছুই ঘটেছে। তবে প্রকাশ্যে দুই পক্ষে সমঝোতার বাতাবরণ। এ দেখে ‘সম্মানজনক’ বিদায় বলতেই হয়। কারও মতে, লাঠি না ভেঙে কৌশলে সাপ মারল বাফুফে। বাফুফের চাকরি ছেড়ে কাল রাতেই দেশে ফিরে গেছেন জাতীয় ফুটবল দলের মেসিডোনিয়ান কোচ। বাংলাদেশ থেকে বিদায়ের সময় ফুটবল কোচরা তিক্ত স্মৃতি নিয়েই যান। ফুটবল মহল এটা দেখেই অভ্যস্ত। তবে ইলিয়েভস্কির নাটকীয় বিদায়ে ছিল কৌশলী চাল, কোচকে বরখাস্ত


না করে বুঝিয়ে পদত্যাগ করানো হয়েছে পরশু। কাল তাঁকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আরেকজন কোচ বিদায়ের ‘সুখবর’ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তারা।
মনে যা-ই থাকুক, সংবাদ সম্মেলনে কোচ হাসিমুখ ধরে রাখলেন। প্রকাশ্য কোনো অভিযোগ নেই। তবে বিস্ময়করভাবে তিনি নিজের অবস্থান বদল করেছেন। ভদ্রলোক দুই দিন আগে বলেছিলেন, ‘আগামী জুন পর্যন্ত মেয়াদ শেষ করে যেতে চাই।’ তিনিই কাল বিদায় সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘আমার হাঁটুতে একটা অপারেশন করতে হবে। ২-৩ মাস কাজ করা অসম্ভব। তার চেয়ে ভালো ফেডারেশন নতুন কোচ বেছে নিক।’ ইলিয়েভস্কির এই অসুস্থতার তত্ত্ব কারও কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। এমন সমস্যা থাকলে তো আরও আগেই বলার কথা।
তবে ভেতরের খবর, কোচ রাখার মতো আর্থিক অবস্থা এ মুহূর্তে নেই বাফুফের। আগামী ছয় মাস জাতীয় দলের খেলাও নেই। জাতীয় দল নিয়ে বাফুফে একেবারেই পরিকল্পনাহীন। কোচ রাখলে তাঁকে তো কাজ দিতে হবে!
গত ২৪ জুন বাংলাদেশে আসেন ইলিয়েভস্কি। টিকতে পারলেন ৬ মাস। ক্রুসিয়ানি, ডিডো, জর্জেভিচদের বিদায়ের পর আসা রবার্ট রুবচিচ কাজবিহীন ছিলেন অনেক দিন। শেষে ১৮ হাজার ডলার বেতন রেখেই কাউকে না জানিয়ে চলে যান ভদ্রলোক। এরপর তড়িঘড়ি করে আনা ইলিয়েভস্কির সময় বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-০ জয় ও ড্র, লেবাননের বিপক্ষে ৪-০ হার ও ২-০ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। দিল্লিতে সাফ ফুটবলে পাকিস্তানের সঙ্গে ড্র, নেপালের (০-১) ও মালদ্বীপের কাছে (১-৩) হারে গ্রুপ থেকেই লজ্জাজনক বিদায়ই চাকরিটা কেড়ে নিয়েছে ইলিয়েভস্কির।
বিদায়বেলায় ইলিয়েভস্কির কথা, ‘এ দেশে সম্ভাবনা আছে। তবে চাইব, লিগটা যাতে আরও ভালোভাবে হয়। তপু, সোহেল, শাহেদরা ইউরোপে খেলার যোগ্যতা রাখে। আমি তাদের হল্যান্ডে হেরেনফেন ক্লাবে খেলার সুযোগ করে দিতে চেষ্টা করব।’
একটা একাদশ দাঁড় করাতে না পারা, দলে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু সাফ ব্যর্থতার দায় কি শুধু কোচের? বাফুফে বা দল ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো দায় নেই? ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান বাদল রায় খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন। ব্যর্থতা স্বীকারে কার্পণ্য নেই তাঁর। কিন্তু ওই পর্যন্তই। যত যা-ই হোক, নিজেদের কাঁধে অবশ্য দায়টা বেশি নিতে রাজি নন। কাল কোচকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যেমন বললেন, ‘ব্যর্থতার দায় কোচের ৬০ ভাগ, আমাদের ৪০ ভাগ।’
তাহলে কর্তাদের জবাবদিহি কোথায়? তাঁরা তো ঠিকই চেয়ারে বহাল। এই ব্যবস্থাপনা কমিটির হাতেই চারজন কোচ বিদায় নিলেন। এখন কর্তারা পদত্যাগ করবেন? সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রশ্নে বাদলের উত্তর, ‘জাতীয় দলের পারফরম্যান্স ভালো হয়েছে সাফে। তবে কিছু ভুলে সাফল্য আসেনি। আমরা দায়িত্ব নিয়েই কাজ করি। যেদিন বুঝব পারছি না, সেদিন ছেড়ে যাব। এখন কার কাছে ছেড়ে যাব?’
যুক্তির অভাব নেই। কিন্তু এটাই সত্য, এ দেশে কোচ এসে টিকতে পারেন না।

No comments

Powered by Blogger.