রাজধানীতে কোটি টাকার জাল নোট মিলল, গ্রেপ্তার ৬

ঈদ সামনে রেখে বাজারে ব্যাপক হারে জাল টাকা ছড়ানোর তৎপরতা চালানোর সময় রাজধানীর মতিঝিল ও মুগদা এলাকা থেকে এক কোটি টাকার জাল নোটসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো চক্রের প্রধান মো. সেলিম (৩০) এবং তার সহযোগী আবিদ মিয়া (৪২), জালাল


উদ্দিন (৪৫), রোজিনা বেগম (৩০), শহীদুল ইসলাম (৩০) ও তাঁর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (২০)। গতকাল তাদেরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।
ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্রের সদস্য। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জাল নোটের পাইকারি বিক্রেতা রোজিনা বেগমকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের আরো চার সদস্যকে মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের প্রধান ও জাল নোট তৈরির কারখানার মালিক মোহাম্মদ সেলিমকে মুগদাপাড়ার ওয়াপদা গলির একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সেলিমের বাসা থেকে এক কোটি টাকার জাল নোট ও নোট তৈরির কাজে ব্যবহার করা ল্যাপটপ, প্রিন্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
এডিসি মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সেলিম জাল নোট তৈরির কারিগর। এক বছর ধরে সে জাল টাকার কারবার চালিয়ে আসছিল। ঈদ সামনে রেখে সেলিম এবার বেশি জাল নোট তৈরি করে। দলের অন্য পাঁচজন তার কর্মচারী। তাদের দিয়েই সে জাল টাকা বাজারে ছাড়ত।
অভিযুক্ত সেলিম সাংবাদিকদের সামনে জাল নোট তৈরির পদ্ধতি দেখায় এবং কিভাবে তা বাজারজাত করে তার বিবরণ দেয়। সেলিম জানায়, সে দুই ধরনের জাল নোট তৈরি করতে পারে। এর মধ্যে ১০০ টাকার আসল নোট সাবান দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে পরে ওই নোটের ওপর ৫০০ টাকার নকশা ছাপিয়ে আবার বাজারে ছাড়ে। এই টাকা 'ধরা খাওয়ার' আশঙ্কা কম থাকে বলে মন্তব্য করে সেলিম। দ্বিতীয় পদ্ধতি সম্পর্কে সে বলে, কাগজ কিনে তার ওপর এক হাজার টাকার নকশা ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ে। তবে এই টাকা ৫০০ টাকার নোটের মতো হয় না। এ কারণে ধরা খাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
সেলিম আরো জানায়, বাবুল নামে এক 'প্রকৌশলীর' কাছ থেকে সে জাল নোট তৈরির প্রযুক্তি শিখেছে। ওই প্রকৌশলীর কাছ থেকে কম্পিউটার সম্পর্কে পরোপুরি ধারণা নেয়। কম্পিউটার ব্যবহার করে কিভাবে জাল নোট তৈরি করা যায় সেটা বাবুলই তাকে শিখিয়েছেন। বাবুল বর্তমানে রংপুরে বসবাস করেন।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা বলে, সেলিমের কাছ থেকে তারা জাল টাকা নিয়ে বিভিন্নভাবে বাজারে ছাড়ত। এ জন্য সেলিম তাদেরকে কমিশন দিত। তারা সপ্তাহে এক থেকে দেড় লাখ টাকার জাল নোট দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করত।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় রাজধানীর মুগদা ও মতিঝিল থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
পুলিশের সূত্রে আরো জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত জালাল ও আবিদ গুলিস্তানের নতুন টাকা বিক্রেতা এবং বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০০ টাকার নতুন বৈধ নোট সংগ্রহ করে তা সেলিমকে ১৩০ টাকা দরে সরবরাহ করত, যাতে ওই নোট জালিয়াতির মাধ্যমে ৫০০ টাকায় রূপান্তর করা যায়। জালাল ও আবিদ সেলিমকে জাল টাকার অন্যান্য উপকরণও নিয়মিত সরবরাহ করত। তারা সেলিমের কাছ থেকে জাল টাকা সংগ্রহ করে বরিশাল, রাজবাড়ী, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতার কাছে সরবরাহ করত। অন্যদিকে রোজিনা জানায়, তার স্বামী মৃত আবদুল মান্নান জাল টাকার একজন বড় পাইকার ছিল। স্বামীর অবর্তমানে সে জাল টাকার ব্যবসার হাল ধরে। স্বামীর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে সে জাল টাকা প্রস্তুতকারী ও জাল টাকার খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরিচিত হয়। এভাবেই এক বছর ধরে বিভিন্ন জাল টাকা প্রস্তুতকারীর কাছ থেকে এক লাখ জাল টাকা ৮-৯ হাজার টাকা দরে সংগ্রহ করে তা ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে ঢাকাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতার কাছে সরবরাহ করত। গ্রেপ্তার হওয়া শহিদুল ও মরিয়ম পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। তারা রোজিনার কাছ থেকে জাল টাকা খুচরাভাবে সংগ্রহ করে মিরপুরের বিভিন্ন মুদি দোকান, কাপড়ের দোকান এবং কাঁচা বাজারে পণ্য সামগ্রী কেনাবেচার মাধ্যমে সরবরাহ করত।

No comments

Powered by Blogger.