রূপগঞ্জে মায়ের সামনে ছাত্রলীগ কর্মীকে গুলি, কুপিয়ে হত্যা- নিহতের মা স্থানীয় আ’লীগ সভাপতি ॥ গাড়ি ভাংচুর, তিন ঘণ্টা সড়ক অবরোধ

নারায়ণগঞ্জ ও নিজস্ব সংবাদদাতা রূপগঞ্জ ॥ উপজেলার কাঞ্চনে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। গুরুতর অবস্থায় ওই ছাত্রলীগ কর্মী রাসেলকে (২৪) স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়।


এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে নিহত রাসেলের মা সামসুন্নাহার। তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিকে ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল খুনের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে এলাকাবাসী মদনপুর-ভুলতা-জয়দেবপুর (এশিয়ান হাইওয়ে) সড়ক তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। নিহত রাসেলের মা কাঞ্চন পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সামসুন্নাহার বেগম নীলা সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাঞ্চন পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন, সফিকুল ইসলাম সফিক, আবুল হোসেন, নয়নসহ একদল সন্ত্রাসী পিস্তল, রাম দা, চাপাতিসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তার ছোট ছেলে রাশিদুল ইসলাম রানাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে। এ সময় তার ছোট ছেলেকে না পেয়ে তার বড় ছেলে রাসেলকে তার সামনেই ঘরের ভেতর থেকে টেনেহেঁচড়ে বের করে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে তার ছেলেকে হত্যা করে। সন্ত্রাসীরা প্রায় ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এর মধ্যে ছেলে রাসেলের শরীরে ২ রাউন্ড গুলিবিদ্ধ হয়। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তিনিও গুলিবিদ্ধ হন।
এদিকে, রাসেল হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী উপজেলার কাঞ্চন কালাদি এলাকায় গাজীপুর-মদনপুর সড়কে ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সকাল ৮টায় স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক) বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচারের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। সকাল সাড়ে ৮টায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। রাসেল নিহত হওয়ার ঘটনায় তার মা সামসুন্নাহার বাদী হয়ে কাঞ্চন পৌর ছাত্রললীগের সভাপতি রফিক, সাধারণ সম্পাদক রবিউল, থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম খোকনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৪ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করেছে।
নিহতের মা সামসুন্নাহার নীলা
নীলা আরও জানান, ঘটনার ২ দিন আগে তাদের সহযোগী আইয়ুবুর রহমান ও হাফিজুল বারী জুয়েল তার বাসায় এসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা না দিলে তার যে কোন এক ছেলেকে হারাতে হবে বলে তারা হুমকি দেয়। নিহতের ছোট ভাই রাশিদুল ইসলাম রানা বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী টু-শব্দ করতে পারে না। কেন তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে এ ব্যাপারে সে অবগত নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, আবাসন কোম্পানির বালু ভরাটের কাজ বাগিয়ে নিতে সফিক ও রানার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর জেরেই এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
অভিযুক্ত রফিক মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান খান জানান, আসামি গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সড়কে নেমেছিল। সংসদ সদস্য সঠিক বিচার ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে তারা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। এখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ রিপোট লেখা পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.