কাতারের মহিলা স্প্রিন্টারের দুঃখজনক বিদায় by মোঃ মামুন রশীদ

একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন নূর হুসেইন আল মালিকি। মুসলিম অধ্যুষিত কাতারের প্রথম কোন মহিলা এ্যাথলেট হিসেবে অলিম্পিকে এসেছিলেন তিনি। ধর্মীয় বিধিনিষেধের কড়াকড়ি আর সংরক্ষণশীলতার বন্ধনে আটকা পড়ে এতদিন কাতার থেকে কোন মহিলা এ্যাথলেটকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়নি দেশটি।


মালিকিও অবশ্য সরাসরি অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) বদান্যতা দেখানো ওয়াইল্ড কার্ডের সুবাদে মালিকি সুযোগ পেয়ে যান গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে নিজেকে একজন প্রতিযোগী হিসেবে অংশগ্রহণের। শুক্রবার দেশের পক্ষে ইতিহাস গড়লেন ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ইভেন্টে দৌড়ানোর জন্য ট্র্যাকে নেমে। অবশ্য, ওই ইতিহাসকে চকচকে করা কিংবা বাড়তি উজ্জ্বলতা দেয়ার আর কোন সুযোগ পেলেন না ১৭ বছরের এই কিশোরী। মাত্র দুই সেকেন্ডের মতো স্থায়ী হয়েছে তাঁর অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ইভেন্টটি। শুরু করার পরপরই ডান পায়ে টান অনুভব করে ট্র্যাকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান মালিকি। অবশ্য, ইভেন্ট শুরুর আগে পরিপূর্ণ ফিট ছিলেন মালিকি। কিন্তু প্রথমবার অলিম্পিক আসরে দৌড়ানোর উত্তেজনা এবং স্নায়ুচাপের অস্থিরতায় এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাত্র কয়েকটি পদক্ষেপ। এরপরই ট্র্যাকের ওপরে পড়ে যান মালিকি। ব্যথায় দাঁত কিড়মিড় করতে থাকেন। অবশেষে সব প্রতিযোগী শেষ লাইনটি ছুঁয়ে ফেললেও আর উঠেই দাঁড়াতে পারেননি মালিকি। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হুইল চেয়ারে করে ট্র্যাকের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একটি আরবীয় টেলিভিশনে মালিকি বলেন, ‘আমি খুবই মর্মাহত। কিন্তু আমি একজন অলিম্পিয়ান। কাতার থেকে আসা একজন অলিম্পিয়ান। এটাই সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার।’ লন্ডন অলিম্পিকে আসার ১ মাস আগে মালিকির সঙ্গে ইয়াহু স্পোর্টস কথা বলেছিল। ওই সময় নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানিয়েছিলেন মালিকি। তিনি তখন বলেছিলেন, ‘আমি কখনই এটা বলতে পারব না যে আমি অলিম্পিকে অংশগ্রহণের স্বপ্ন দেখেছি। এমনকি বড় হয়ে এ মর্যাদার আসরে যাব সেটাও আমার কল্পনাতীত ছিল। কারণ আমি এটাকে একেবারেই অসম্ভব ভেবেছিলাম। এটা সহজে ভাবা যায় এমন কোন সহজ বিষয় নয়। তবে আমার স্বপ্নের শুরু তখন থেকে যখন তাঁরা আমাকে অলিম্পিকে অংশ নেয়ার কথা বলেন। আমি যতকিছু কল্পনা করেছি নিঃসন্দেহে অলিম্পিকে যেতে পারাটা তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যের বিষয়। লন্ডনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এটাকে বাস্তব মনে করতে পারছি না।’ উচ্ছ্বসিত কিশোরী মালিকি ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন সকল দেশের কম বয়েসী মেয়েদের একজন রোল মডেল হিসেবে নিজেকে উত্থাপন করতে এবং নিজের দেশের মেয়েদের জন্য অনুপ্রেরণার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে। এ বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি আমার কি দায়িত্ব। আমি একটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি এটা কতখানি গুরুত্বের বিষয় সেটাও আমি উপলব্ধি করেছি। লন্ডনে যাওয়াটা হবে আমার জন্য সর্বাধিক গর্বের একটি বিষয় এবং আমি আশা করব এটা অন্য মেয়েদের জন্য একটা উদাহরণ হবে যে ক্রীড়া থেকেও অর্জনের অনেক কিছুই আছে নারীদের জন্য। আমি বিশ্বের সেরা এ্যাথলেটদের কাতারে অনেক পেছনে। কিন্তু আমি দেখাতে চাই একজন এ্যাথলেট হয়ে কতটা আত্মবিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব।’ কাতার বর্তমানে ক্রীড়াক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন এবং ২০২৪ সালে অলিম্পিক আয়োজনের যোগ্যতা পেতে লড়াই করছে কাতার। বিশ্বকাপের পর অলিম্পিকও আয়োজন করতে পারলে ক্রীড়ার লীলাভূমিতে পরিণত হয়ে উঠবে কাতার এমনটাই মনে করছেন অনেকে।

No comments

Powered by Blogger.