সোনার মেয়ের ‘ব্রোঞ্জ আলো’ by শাকিল আহমেদ মিরাজ
আড়াই বছরের বাচ্চা মেয়েটা খেলতে গিয়ে আচমকা ঘরের দরজায় হাত আটকে একটা আঙ্গুল দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল! সেই হাত দিয়েই অলিম্পিক পদক এনে দিলেন ভারতকে। মা ঊষা ঘরের মেঝে থেকে আঙ্গুলের কাটা অংশ তুলে সাইনাকে কোলে তুলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে গেলেন, তিরিশটা সেলাইয়ের পর জোড়া লাগল আঙ্গুল।
সেই হাতের ‘র্যাকেট ম্যাজিকে’ই ইতিহাস রচনা করে ব্যাডমিন্টনে দেশকে প্রথম অলিম্পিক পদক এনে দিলেন সাইনা নেওয়াল। সাইনার এ জয়কে অবশ্য অলিম্পিকের ‘অলৌকিক পদক জয়’ও বলা যায়। লন্ডনের ওয়েম্বলি পার্কে দুই পরাজিত সেমিফাইনালিস্টের লড়াইয়ে প্রথম গেমে হেরে এবং দ্বিতীয় গেমে পিছিয়ে থেকেও ম্যাচ জিতে নেন ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা। আসলে প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াং জিন চোটের কারণে খেলার মাঝপথে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে ব্রোঞ্জ পদক গলায় ওঠে সাইনার। প্রতিপক্ষ চোট পেলে সে দায় তো আর সাইনার নয়! দারুণ এ অর্জনের পরও তাই স্টেজে বেশ শান্ত আর ধীরস্থির উপস্থিত ছিলেন সাইনা। কোনরকম উল্লাসে ফেটে পড়েননি।
সাইনার ব্রোঞ্জ জয়ের কীর্তি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ভারতের অধিকাংশ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। পত্রপত্রিকার ফ্রন্ট ও স্পোর্টস পাতাজুড়ে কেবলই সাইনা বন্দনা। ক্রিকেটপাগল ভারতে এ এক অভাবিত দৃশ্য। বিশেষ করে ক্রিকেটে এমন একটি চমৎকার র্যাঙ্কিং উন্নতির দিনে তো বটেই (সাইনার পদক জয়ের দিনেই ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ওয়ানডে র্যাঙ্কিয়ের দ্বিতীয় স্থানে ওঠে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত)। আসলে সাইনার ব্রোঞ্জ জয়ের মহিমা ছাড়িয়ে যায় আর সবকিছুকে। দেশটির প্রেক্ষাপটে উন্মাদনার কারণটাও অনুমেয়। সাইনা হলেন দ্বিতীয় প্রমিলা এ্যাথলেট যিনি ভারতকে অলিম্পিক পদক উপহার দিলেন। এর আগে ভারোত্তোলক কারমান মালেশ্বরির (২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ) হাত ধরে একবারই মাত্র অলিম্পিকে পদকের দেখা পেয়েছিল বৃহত্তম এ দেশটির মেয়েরা। যদিও পুরুষ শ্যূটিং ও বক্সিংয়ে স্বর্ণসহ একাধিক পদক পাওয়ার ইতিহাস রয়েছে ভারতের। ফিচারটি লেখার দিনে এবারের আসরেও ১ সিলভার ও ২ ব্রোঞ্জে ভারতের পদক সংখ্যা ৩।
ব্যাডমিন্টনের সুপার কুইন সাইনাকে নিয়ে এবারের অলিম্পিকে আশার জাল বুনেছিল ভারতবাসী। লন্ডনে আয়োজনের শুরু থেকে একে একে বাধা ডিঙ্গিয়ে নজিরবিহীন স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন ২২ বছর বয়সী হায়দ্রাবাদী ব্যাডমিন্টন সেনসেশন। আর একটি মাত্র ধাপÑ সেমিফাইনাল পেরুলেই স্বপ্নের স্বর্ণপদকের নিঃশ্বাসসম দূরত্বে, কাছাকাছি পৌঁছে যেতেন। গত শুক্রবার মেয়েদের সিঙ্গেলসে চীনের বিশ্বসেরা ইহান ওয়াংয়ের কাছে মাত্র ৪২ মিনিটেই যখন ১৩-২১, ১৩-২১ এর সরাসরি সেটে উড়ে গিয়ে স্বর্ণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সেদিন বেদনায় মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিল সাইনা-ভক্তরা। কিন্তু পরদিন (শনিবার) ঠিকই দেশবাসীকে ব্রোঞ্জের আনন্দে ভাসান ভারতের সর্বকালের সেরা প্রমীলা ব্যাডমিন্টন তারকা। মাত্র একদিন আগে সেমির ম্যারাথনে হারের ক্লান্তি নিয়ে পরদিনই ব্রোঞ্জ জয়ের আনন্দে ভাসেন তিনি। অবশ্য এজন্য ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন। লন্ডনের ওয়েম্বলি এ্যারোনাতে ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে সাইনার প্রতিপক্ষ ছিলেন চীনেরই দু’নম্বর বাছাই ওয়াং জিং। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে চারটি গেম পয়েন্ট বাঁচিয়ে সাইনা প্রথম গেমে হারেন ১৮-২১ পয়েন্টে। এই গেম চলাকালীনই হাঁটুতে চোট পান ওয়াং। কিন্তু সামান্য চিকিৎসা নিয়ে ফের শুরুও করেন তিনি। পুনরায় শুরুর পর অবশ্য চোট আরও গুরুতর হওয়ায় ওয়াং যখন ম্যাচ থেকে নিজেকে সরিয়ে (অবসর) নিতে বাধ্য হন তখন অবস্থান : ১৮-২১, ০-১। ব্রোঞ্জ নিশ্চিত হয় ‘সোনার মেয়ে’ (শান্ত-শিষ্ট ভদ্র আর লক্ষ্মী মেয়ে হিসেবে ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে তাকে সোনার মেয়েই ভাবা হয়) সাইনার! পদক জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাইনা বলেন, ‘সেমিফাইনালে আগের দিনই দেখেছিলাম গতিতে অসম্ভব এগিয়ে চীনারা। ইহান ওয়াংয়ের কাছে হারলেও বিশ্বাস ছিল এ ম্যাচে ওয়াং জিংকে হারাতে পারব। তবে ম্যাচটি মোটেও সহজ ছিল না। কারণ বেশকিছুটা ক্লান্ত ছিলাম আমি। শেষ অবধি আঘাতে প্রতিপক্ষ নিজেকে গুটিয়ে নেয়ায় অবশ্য মন্দ হয়নিÑ এ অর্জন দেশবাসীর জন্য!’ বিজয়ের অনেক পরে গলায় ব্রোঞ্জ পদক ঝুলিয়ে স্মিত হাস্যে বিজয় মঞ্চে উপস্থিত হন সাইনা নেওয়াল। হাত তুলে অভিনন্দন গ্রহণ করেন প্রিয় গোপী স্যারের (সাইনার কোচ গোপীচান্দ)সহ বিশাল ভারতীয় বহরের। এও কি সম্ভব! আমার গলায় অলিম্পিক পদক। ঠিক তখনও যেন সাইনার ঘোর কাটেনি! প্রায় হারা ম্যাচে ঐতিহাসিক অলিম্পিক পদক। ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, অলিম্পিক পদক জিতেছি! কারণ এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এত অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন যে...! কিন্তু তারপরও আজ আমার গলাতেই অলিম্পিক পদক। এর চেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ হওয়া আমার জীবনে সম্ভব ছিল না।’ প্রতিক্রিয়ায় মিডিয়াকে বলেন সাইনা।
ওদিকে ক্রিকেটে ধোনিদের সাফল্যের দিনে দেশকে অলিম্পিক পদক এনে দেয়ায় কেবল পত্রপত্রিকাতেই নয়, সাইনাকে স্তু‘তিতে ভাসাচ্ছেন ভারতীয় তারাকা ক্রিকেটাররাও। যাদের মধ্যে রয়েছেন শচীন টেন্ডুলকর- যুবরাজ সিংয়ের মতো সুপার হিরোরা। টেন্ডুলকর এক টুইটার বার্তায় লেখেন, ‘অসাধারণ নৈপুণ্যসাইনা। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় মেয়ে হিসেবে তুমি অলিম্পিক পদক উপহার দিয়েছ। গৌরবময় এ অর্জনে ভারতবাসীর ভালবাসা তোমার জন্য।’। তো বুঝুন শচীন টেন্ডুলকরের মতো ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তিও সাইনায় বিভোর! বিশ্বকাপ হিরো যুবরাজ সিং তো আরও সরস এক কাঠি এগিয়ে। ‘সাইন তুমি সুন্দর... অনেক সুন্দর। তার চেয়েও সুন্দর কোর্টে তোমার ব্যাডমিন্টনশৈলী। তোমার এ অর্জনের ভারতীয় হিসেবে আমিও গর্বাবোধ করি। আশা করি দেশবাসীও গর্বিত হবে।’ টুইন বার্তায় লেখেন যুবরাজ। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মুখপাত্র ভাবা হয় যাকে, সেই প্রকাশ পাড়ুকোন অবশ্য উচ্ছ্বসিত ছিলেন সাইনার অর্জনে। তিনি বলেন, ‘১৯৮০তে আমি যখন অল ইংল্যান্ড জিতেছিলাম, সেটা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে বিপ্লব সৃষ্টি করে নতুন প্রচারের আলোয় এসেছিল। আজ বত্রিশ বছর পর সাইনা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটাল। কোন ভারতীয় মেয়ে অলিম্পিকের ব্যক্তগত ইভেন্টে জিতেছেÑ এমনটা আমাদের সময় ভাবাই যেত না! সাইনা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমি নিশ্চিত, এবার ভবিষ্যতে বাবা-মায়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি মেয়েকে খেলাধুলাতেও উৎসাহ দেবেন।। এ পদক দেশে (ভারতে) ব্যাডমিন্টনের ছবিটাই বদলে দেবে।’ হরিয়ানার হিসার-এ জন্ম সাইনার। পদক জেতার এক ঘণ্টার মধ্যে হরিয়ানা সরকার তাঁকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করে। দিল্লীর রোবট প্রস্তুতকারী কোম্পানি সাইনার নামে একটি নতুন রোবট তৈরির ঘোষণাও দেয় তৎক্ষণাৎ। সাইনার এ অর্জনকে এক কথায় সবচেয়ে ভাল মূল্যায়ন করেছেন দেশটির আরেক গ্রেট ক্রীড়াবিদ মহেশ ভূপতি। দেশটির টেনিস তারকা বলেন, ‘গোপী আমাকে বলেছিল, সাইনার মতো পরিশ্রম করতে ও কাউকে দেখেনি। বাকিটা তো আজ ইতিহাস।’
হায়দ্রাবাদে টেনিস কুইন সানিয়া মির্জাদের বাড়ির প্রতিবেশী সাইনা নেওয়াল। সানিয়া গ্ল্যামার আর রূপের ঠমকে দুনিয়া মাত করলেও প্রতিবেশী সাইনা কিন্তু র্যাকেট দিয়েই ভারতকে অন্য উচ্চতায় তুলে ধরলেন। বর্তমানে সেরা ৪Ñএ থাকা সাইনার ক্যারিয়ার সেরা র্যাঙ্কিং ছিল ২ (২০১০ সালে)। ২০০৮-এ ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়ে ব্যাডমিন্টন দুনিয়ার নজর কাড়েন তিনি। এরপর ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমে স্বর্ণ ও এশিয়ান চ্যাম্পিনশিপের ব্রোঞ্জ জিতে আভাস দেন আরও বড় কিছু করার, যা পূর্ণতা পেল মর্যাদার অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয়ের মধ্য দিয়ে। এক ব্রোঞ্জ পদক দিয়েই দেড় শ’ কোটি ভারতবাসীর হৃদয়ে স্বর্ণের আলো ছড়ালেন সোনার মেয়ে সাইনা।
সাইনার ব্রোঞ্জ জয়ের কীর্তি বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ ভারতের অধিকাংশ মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করা হয়। পত্রপত্রিকার ফ্রন্ট ও স্পোর্টস পাতাজুড়ে কেবলই সাইনা বন্দনা। ক্রিকেটপাগল ভারতে এ এক অভাবিত দৃশ্য। বিশেষ করে ক্রিকেটে এমন একটি চমৎকার র্যাঙ্কিং উন্নতির দিনে তো বটেই (সাইনার পদক জয়ের দিনেই ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ওয়ানডে র্যাঙ্কিয়ের দ্বিতীয় স্থানে ওঠে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত)। আসলে সাইনার ব্রোঞ্জ জয়ের মহিমা ছাড়িয়ে যায় আর সবকিছুকে। দেশটির প্রেক্ষাপটে উন্মাদনার কারণটাও অনুমেয়। সাইনা হলেন দ্বিতীয় প্রমিলা এ্যাথলেট যিনি ভারতকে অলিম্পিক পদক উপহার দিলেন। এর আগে ভারোত্তোলক কারমান মালেশ্বরির (২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকের ব্রোঞ্জ) হাত ধরে একবারই মাত্র অলিম্পিকে পদকের দেখা পেয়েছিল বৃহত্তম এ দেশটির মেয়েরা। যদিও পুরুষ শ্যূটিং ও বক্সিংয়ে স্বর্ণসহ একাধিক পদক পাওয়ার ইতিহাস রয়েছে ভারতের। ফিচারটি লেখার দিনে এবারের আসরেও ১ সিলভার ও ২ ব্রোঞ্জে ভারতের পদক সংখ্যা ৩।
ব্যাডমিন্টনের সুপার কুইন সাইনাকে নিয়ে এবারের অলিম্পিকে আশার জাল বুনেছিল ভারতবাসী। লন্ডনে আয়োজনের শুরু থেকে একে একে বাধা ডিঙ্গিয়ে নজিরবিহীন স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন ২২ বছর বয়সী হায়দ্রাবাদী ব্যাডমিন্টন সেনসেশন। আর একটি মাত্র ধাপÑ সেমিফাইনাল পেরুলেই স্বপ্নের স্বর্ণপদকের নিঃশ্বাসসম দূরত্বে, কাছাকাছি পৌঁছে যেতেন। গত শুক্রবার মেয়েদের সিঙ্গেলসে চীনের বিশ্বসেরা ইহান ওয়াংয়ের কাছে মাত্র ৪২ মিনিটেই যখন ১৩-২১, ১৩-২১ এর সরাসরি সেটে উড়ে গিয়ে স্বর্ণের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সেদিন বেদনায় মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিল সাইনা-ভক্তরা। কিন্তু পরদিন (শনিবার) ঠিকই দেশবাসীকে ব্রোঞ্জের আনন্দে ভাসান ভারতের সর্বকালের সেরা প্রমীলা ব্যাডমিন্টন তারকা। মাত্র একদিন আগে সেমির ম্যারাথনে হারের ক্লান্তি নিয়ে পরদিনই ব্রোঞ্জ জয়ের আনন্দে ভাসেন তিনি। অবশ্য এজন্য ভাগ্যের সহায়তাও পেয়েছেন। লন্ডনের ওয়েম্বলি এ্যারোনাতে ব্রোঞ্জের লড়াইয়ে সাইনার প্রতিপক্ষ ছিলেন চীনেরই দু’নম্বর বাছাই ওয়াং জিং। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে চারটি গেম পয়েন্ট বাঁচিয়ে সাইনা প্রথম গেমে হারেন ১৮-২১ পয়েন্টে। এই গেম চলাকালীনই হাঁটুতে চোট পান ওয়াং। কিন্তু সামান্য চিকিৎসা নিয়ে ফের শুরুও করেন তিনি। পুনরায় শুরুর পর অবশ্য চোট আরও গুরুতর হওয়ায় ওয়াং যখন ম্যাচ থেকে নিজেকে সরিয়ে (অবসর) নিতে বাধ্য হন তখন অবস্থান : ১৮-২১, ০-১। ব্রোঞ্জ নিশ্চিত হয় ‘সোনার মেয়ে’ (শান্ত-শিষ্ট ভদ্র আর লক্ষ্মী মেয়ে হিসেবে ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনে তাকে সোনার মেয়েই ভাবা হয়) সাইনার! পদক জয়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাইনা বলেন, ‘সেমিফাইনালে আগের দিনই দেখেছিলাম গতিতে অসম্ভব এগিয়ে চীনারা। ইহান ওয়াংয়ের কাছে হারলেও বিশ্বাস ছিল এ ম্যাচে ওয়াং জিংকে হারাতে পারব। তবে ম্যাচটি মোটেও সহজ ছিল না। কারণ বেশকিছুটা ক্লান্ত ছিলাম আমি। শেষ অবধি আঘাতে প্রতিপক্ষ নিজেকে গুটিয়ে নেয়ায় অবশ্য মন্দ হয়নিÑ এ অর্জন দেশবাসীর জন্য!’ বিজয়ের অনেক পরে গলায় ব্রোঞ্জ পদক ঝুলিয়ে স্মিত হাস্যে বিজয় মঞ্চে উপস্থিত হন সাইনা নেওয়াল। হাত তুলে অভিনন্দন গ্রহণ করেন প্রিয় গোপী স্যারের (সাইনার কোচ গোপীচান্দ)সহ বিশাল ভারতীয় বহরের। এও কি সম্ভব! আমার গলায় অলিম্পিক পদক। ঠিক তখনও যেন সাইনার ঘোর কাটেনি! প্রায় হারা ম্যাচে ঐতিহাসিক অলিম্পিক পদক। ‘আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে, অলিম্পিক পদক জিতেছি! কারণ এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এত অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন যে...! কিন্তু তারপরও আজ আমার গলাতেই অলিম্পিক পদক। এর চেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণ হওয়া আমার জীবনে সম্ভব ছিল না।’ প্রতিক্রিয়ায় মিডিয়াকে বলেন সাইনা।
ওদিকে ক্রিকেটে ধোনিদের সাফল্যের দিনে দেশকে অলিম্পিক পদক এনে দেয়ায় কেবল পত্রপত্রিকাতেই নয়, সাইনাকে স্তু‘তিতে ভাসাচ্ছেন ভারতীয় তারাকা ক্রিকেটাররাও। যাদের মধ্যে রয়েছেন শচীন টেন্ডুলকর- যুবরাজ সিংয়ের মতো সুপার হিরোরা। টেন্ডুলকর এক টুইটার বার্তায় লেখেন, ‘অসাধারণ নৈপুণ্যসাইনা। আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় মেয়ে হিসেবে তুমি অলিম্পিক পদক উপহার দিয়েছ। গৌরবময় এ অর্জনে ভারতবাসীর ভালবাসা তোমার জন্য।’। তো বুঝুন শচীন টেন্ডুলকরের মতো ক্রিকেটের জীবন্ত কিংবদন্তিও সাইনায় বিভোর! বিশ্বকাপ হিরো যুবরাজ সিং তো আরও সরস এক কাঠি এগিয়ে। ‘সাইন তুমি সুন্দর... অনেক সুন্দর। তার চেয়েও সুন্দর কোর্টে তোমার ব্যাডমিন্টনশৈলী। তোমার এ অর্জনের ভারতীয় হিসেবে আমিও গর্বাবোধ করি। আশা করি দেশবাসীও গর্বিত হবে।’ টুইন বার্তায় লেখেন যুবরাজ। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের মুখপাত্র ভাবা হয় যাকে, সেই প্রকাশ পাড়ুকোন অবশ্য উচ্ছ্বসিত ছিলেন সাইনার অর্জনে। তিনি বলেন, ‘১৯৮০তে আমি যখন অল ইংল্যান্ড জিতেছিলাম, সেটা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে বিপ্লব সৃষ্টি করে নতুন প্রচারের আলোয় এসেছিল। আজ বত্রিশ বছর পর সাইনা ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটাল। কোন ভারতীয় মেয়ে অলিম্পিকের ব্যক্তগত ইভেন্টে জিতেছেÑ এমনটা আমাদের সময় ভাবাই যেত না! সাইনা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। আমি নিশ্চিত, এবার ভবিষ্যতে বাবা-মায়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি মেয়েকে খেলাধুলাতেও উৎসাহ দেবেন।। এ পদক দেশে (ভারতে) ব্যাডমিন্টনের ছবিটাই বদলে দেবে।’ হরিয়ানার হিসার-এ জন্ম সাইনার। পদক জেতার এক ঘণ্টার মধ্যে হরিয়ানা সরকার তাঁকে এক কোটি টাকা পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করে। দিল্লীর রোবট প্রস্তুতকারী কোম্পানি সাইনার নামে একটি নতুন রোবট তৈরির ঘোষণাও দেয় তৎক্ষণাৎ। সাইনার এ অর্জনকে এক কথায় সবচেয়ে ভাল মূল্যায়ন করেছেন দেশটির আরেক গ্রেট ক্রীড়াবিদ মহেশ ভূপতি। দেশটির টেনিস তারকা বলেন, ‘গোপী আমাকে বলেছিল, সাইনার মতো পরিশ্রম করতে ও কাউকে দেখেনি। বাকিটা তো আজ ইতিহাস।’
হায়দ্রাবাদে টেনিস কুইন সানিয়া মির্জাদের বাড়ির প্রতিবেশী সাইনা নেওয়াল। সানিয়া গ্ল্যামার আর রূপের ঠমকে দুনিয়া মাত করলেও প্রতিবেশী সাইনা কিন্তু র্যাকেট দিয়েই ভারতকে অন্য উচ্চতায় তুলে ধরলেন। বর্তমানে সেরা ৪Ñএ থাকা সাইনার ক্যারিয়ার সেরা র্যাঙ্কিং ছিল ২ (২০১০ সালে)। ২০০৮-এ ওয়ার্ল্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়ে ব্যাডমিন্টন দুনিয়ার নজর কাড়েন তিনি। এরপর ২০১০ সালে কমনওয়েলথ গেমে স্বর্ণ ও এশিয়ান চ্যাম্পিনশিপের ব্রোঞ্জ জিতে আভাস দেন আরও বড় কিছু করার, যা পূর্ণতা পেল মর্যাদার অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয়ের মধ্য দিয়ে। এক ব্রোঞ্জ পদক দিয়েই দেড় শ’ কোটি ভারতবাসীর হৃদয়ে স্বর্ণের আলো ছড়ালেন সোনার মেয়ে সাইনা।
No comments