রপ্তানি ও পাচারের কারণে মাছের দামে আগুন by রাজীব আহমেদ
পাঁচজনের একটি পরিবারে মাসে এক থেকে দেড় কেজির বেশি কাঁচা মরিচ প্রয়োজন হয় না। রমজান মাসে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বাড়লেও মাঝারি মানের একটি পরিবারের মাসে খরচ বাড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এই ৮০ টাকা খরচ কমাতে সরকার কাঁচা মরিচ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে।
আবার দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ মাছ প্রতিবেশী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। তাই দেশের বাজারে মাছের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে রমজানে একটি পরিবারকে দিনে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে কাঁচা মরিচের মাসিক বাড়তি খরচেরও অনেক বেশি। অথচ এই মাছ পাচার ও রপ্তানি বন্ধে কারো কোনো উদ্যোগ নেই। বিশেষ করে ইলিশ। নদী থেকেই ইলিশ পাচার করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। গত পরশুই পাচার হয়েছে ২৫ টন। আর বাংলাদেশে প্রায় ইলিশশূন্য বাজার।
এক বছর আগের তুলনায় বাজারে মাছের দাম গড়ে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে। গড়ে কেজিতে ১০০ টাকা বাড়লে মাসে একটি পরিবারের খরচ বাড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু সংসারে বাজার খরচের বাজেটে সবচেয়ে বেশি দামের এই পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো তদারকি নেই। চলতি রমজানে মাছের বাজারে গিয়েই মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের মাছের বড় বাজার ভারতে মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হওয়ায় ওই মুদ্রার বড় অংশ সরকারও পাচ্ছে না।
ঢাকার বাজারে মাঝারি আকারের এক কেজি টেংরা মাছের দাম ৬০০ টাকা। আর একটু বড় ও তাজা টেংরা কেজিপ্রতি ৮০০ টাকার নিচে মেলে না। বেশি দামের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে মাছটি।
দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে কার্পজাতীয় মাছ, তেলাপিয়া ও চাষের কই মাছেরও। ৮০ থেকে ১০০ টাকার তেলাপিয়া ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে কমপক্ষে ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর বড় আকারের তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ টাকা।
শিং, মাগুর, কই, টেংরা ইত্যাদি মাছের কেজিপ্রতি দাম এখন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। মলা, বাতাসি ইত্যাদি ছোট মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ফলি, বাইন, কোরাল, শোল, রাজপুঁটি ইত্যাদি মাছের কেজিপ্রতি দাম ৪০০-৬০০ টাকা।
ঢাকার বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রুইজাতীয় মাছ। দেশি রুই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা হলে দাম ২৫০ টাকা ৩০০ টাকা। তবে নদীর রুই হলে সাধারণ মানুষের দাম জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। পয়সাওয়ালাদের কাছ থেকে হাজার টাকা কেজি আদায় করেন বিক্রেতারা। ঢাকার বাজার থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ কেনে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও নলাজাতীয় মাছ। এসব মাছের দাম কেজিতে কমপক্ষে ৮০ টাকা বেড়েছে গত এক বছরে।
ইলিশের কথা তো বলাই বাহুল্য। কোনোক্রমে এক কেজি ওজন হলেই এর দাম হাজার ছাড়িয়ে যায়। ছোট ইলিশের দামও ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। ইলিশের রপ্তানি মূল্য ৬০০ ডলারে বেঁধে দিয়েছে সরকার। এতে এক কেজি মাছের দাম দাঁড়ায় ৫০০ টাকার কাছাকাছি। অথচ ঢাকার বাজারে দাম অনেক বেশি। জানা গেছে, ভারতে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরা এক কেজি ইলিশের দাম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পান। তবে এ থেকে মাত্র ৫০০ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পায় সরকার। বাকিটা হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের পকেটে ঢোকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম বাড়ার পেছনে রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি পরিবহন খরচ ও বরফের দাম বেড়ে যাওয়া এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের প্রবণতা দায়ী। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ ও বরফের দাম কমানো সম্ভব নয়। তবে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কাঁচা মাছ রপ্তানি বন্ধ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব মতে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়েছে। অবশ্য এর বড় একটা অংশই সামুদ্রিক মাছ। বছরে তিন থেকে চার কোটি ডলারের মিঠা পানির মাছ (ইলিশ বাদে) রপ্তানি হয় বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কাচকি, মলা, টেংরা, গৌতম, কাজলি, বাতাসি, বাটা, মেনি, বাইন, শিং, মাগুর, কইসহ প্রায় সব প্রজাতির মাছই রপ্তানি হয়। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে এসব মাছ রপ্তানি হয় প্রক্রিয়াজাত করে। আর ভারতে যায় সরাসরি কাঁচা মাছ।
বেশি মাছ উৎপাদনকারী এলাকা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ভারতে মাছ চলে যাচ্ছে বৈধ ও অবৈধভাবে। ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় মাছ রপ্তানি বেড়ে গেছে।
মহানগর মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, রপ্তানি হয় বলে মাছের চাহিদা বেড়ে যায়। এতে দামও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সরকার ইচ্ছা করলে মানুষকে কম দামে মাছ খাওয়ানোর লক্ষ্যে রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। অন্তত রমজান মাসের জন্য রপ্তানি বন্ধ করা যায়।
মাছ রপ্তানিকারক মাসুদ ফিশ প্রসেসিং কম্পানির মালিক আশরাফ হোসেন মাসুদ বলেন, 'আমরা মাছ রপ্তানি করি প্রক্রিয়াজাত করে। এতে মূল্য সংযোজন হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মাছ ভারতে যাচ্ছে প্রক্রিয়াজাত ছাড়াই। এতে রপ্তানি শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে।'
এক বছর আগের তুলনায় বাজারে মাছের দাম গড়ে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা বেড়েছে। গড়ে কেজিতে ১০০ টাকা বাড়লে মাসে একটি পরিবারের খরচ বাড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু সংসারে বাজার খরচের বাজেটে সবচেয়ে বেশি দামের এই পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো তদারকি নেই। চলতি রমজানে মাছের বাজারে গিয়েই মানুষ সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের মাছের বড় বাজার ভারতে মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন হওয়ায় ওই মুদ্রার বড় অংশ সরকারও পাচ্ছে না।
ঢাকার বাজারে মাঝারি আকারের এক কেজি টেংরা মাছের দাম ৬০০ টাকা। আর একটু বড় ও তাজা টেংরা কেজিপ্রতি ৮০০ টাকার নিচে মেলে না। বেশি দামের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে মাছটি।
দেশের বাজারে অস্বাভাবিক হারে দাম বেড়েছে কার্পজাতীয় মাছ, তেলাপিয়া ও চাষের কই মাছেরও। ৮০ থেকে ১০০ টাকার তেলাপিয়া ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে কমপক্ষে ১৫০ টাকা কেজি দরে। আর বড় আকারের তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ টাকা।
শিং, মাগুর, কই, টেংরা ইত্যাদি মাছের কেজিপ্রতি দাম এখন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। মলা, বাতাসি ইত্যাদি ছোট মাছ ৪৫০-৫০০ টাকা কেজি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ফলি, বাইন, কোরাল, শোল, রাজপুঁটি ইত্যাদি মাছের কেজিপ্রতি দাম ৪০০-৬০০ টাকা।
ঢাকার বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রুইজাতীয় মাছ। দেশি রুই ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা হলে দাম ২৫০ টাকা ৩০০ টাকা। তবে নদীর রুই হলে সাধারণ মানুষের দাম জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন নেই। পয়সাওয়ালাদের কাছ থেকে হাজার টাকা কেজি আদায় করেন বিক্রেতারা। ঢাকার বাজার থেকে নিম্ন আয়ের মানুষ কেনে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস ও নলাজাতীয় মাছ। এসব মাছের দাম কেজিতে কমপক্ষে ৮০ টাকা বেড়েছে গত এক বছরে।
ইলিশের কথা তো বলাই বাহুল্য। কোনোক্রমে এক কেজি ওজন হলেই এর দাম হাজার ছাড়িয়ে যায়। ছোট ইলিশের দামও ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। অথচ ভারতে ইলিশ রপ্তানি হয়ে যাচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। ইলিশের রপ্তানি মূল্য ৬০০ ডলারে বেঁধে দিয়েছে সরকার। এতে এক কেজি মাছের দাম দাঁড়ায় ৫০০ টাকার কাছাকাছি। অথচ ঢাকার বাজারে দাম অনেক বেশি। জানা গেছে, ভারতে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরা এক কেজি ইলিশের দাম এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পান। তবে এ থেকে মাত্র ৫০০ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পায় সরকার। বাকিটা হুন্ডির মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের পকেটে ঢোকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাম বাড়ার পেছনে রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি পরিবহন খরচ ও বরফের দাম বেড়ে যাওয়া এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের প্রবণতা দায়ী। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন খরচ ও বরফের দাম কমানো সম্ভব নয়। তবে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কাঁচা মাছ রপ্তানি বন্ধ করে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন অনেক ব্যবসায়ী।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব মতে, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলারের হিমায়িত মাছ রপ্তানি হয়েছে। অবশ্য এর বড় একটা অংশই সামুদ্রিক মাছ। বছরে তিন থেকে চার কোটি ডলারের মিঠা পানির মাছ (ইলিশ বাদে) রপ্তানি হয় বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের।
বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কাচকি, মলা, টেংরা, গৌতম, কাজলি, বাতাসি, বাটা, মেনি, বাইন, শিং, মাগুর, কইসহ প্রায় সব প্রজাতির মাছই রপ্তানি হয়। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে এসব মাছ রপ্তানি হয় প্রক্রিয়াজাত করে। আর ভারতে যায় সরাসরি কাঁচা মাছ।
বেশি মাছ উৎপাদনকারী এলাকা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে ভারতে মাছ চলে যাচ্ছে বৈধ ও অবৈধভাবে। ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় মাছ রপ্তানি বেড়ে গেছে।
মহানগর মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, রপ্তানি হয় বলে মাছের চাহিদা বেড়ে যায়। এতে দামও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। সরকার ইচ্ছা করলে মানুষকে কম দামে মাছ খাওয়ানোর লক্ষ্যে রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। অন্তত রমজান মাসের জন্য রপ্তানি বন্ধ করা যায়।
মাছ রপ্তানিকারক মাসুদ ফিশ প্রসেসিং কম্পানির মালিক আশরাফ হোসেন মাসুদ বলেন, 'আমরা মাছ রপ্তানি করি প্রক্রিয়াজাত করে। এতে মূল্য সংযোজন হয়। কিন্তু বেশির ভাগ মাছ ভারতে যাচ্ছে প্রক্রিয়াজাত ছাড়াই। এতে রপ্তানি শিল্পের ক্ষতি হচ্ছে।'
No comments