টুপি তৈরি এবং নিলুফার ভাগ্য ফেরা by রুবেল হাবিব
নিলুফার গল্পটা একটু অন্য রকম। টুপি দিয়েই তিনি জয় করেছেন অভাব। সংসারে ফিরিয়ে এনেছেন সুখ-শান্তি। নিজের কাজটি গুছিয়ে করেন। বগুড়ার ধুনট থানার চালাপাড়া গ্রামের নিলুফার কুঁড়েঘরে এখন টিনের চাল। বেড়াগুলোও টিনের। বেশ কিছু জমিও তাঁরা কিনেছেন। অনেক দুঃখ-কষ্ট পাড়ি দিয়ে এসেছেন।
কিশোরী বয়সে ভূমিহীন বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। অভাবের কারণে লেখাপড়াও করা হয়নি। বিয়ের পর শুরু হলো বেঁচে থাকার লড়াই। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে ঘরে বসেই উপার্জনের একটা পথ খোঁজেন তিনি। পেয়ে যান পথও। ভাবেন, তিনি তো সেলাই করতে পারেন। যেই ভাবা, সেই কাজ। শুরু হয় ঘরে বসে ক্রুস কাঁটা দিয়ে টুপি তৈরি করা। স্বামীকে দিয়ে ৩০ টাকায় একটি সুতার কোণ (স্থানীয় নাম ডলার) ও ১২ টাকায় একটি ক্রুস কাঁটা কিনে নেন। এ কাজে তাঁকে বাড়তি কোনো প্রশিক্ষণ নিতে হয়নি। নিলুফা কাজ করেন একাগ্রচিত্তে। দিন গড়িয়ে মাস যায়। মাসের পর আসে বছর। চলে যায় এক যুগ। সুঁই-সুতা দিয়ে টুপি তৈরি করে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয় নিলুফার ভাগ্যের।
শুরুতে মাত্র ৪২ টাকা পুঁজি নিয়ে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেন নিলুফা। একটি সুতার কোণ দিয়ে ১২টি টুপি তৈরি করেন। এতে সময় লাগে তিন দিন। ওই টুপি পাইকারি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করেন ১৪৪ টাকায়। লাভ হয় ১০২ টাকা। এভাবে এক মাস কাজ করার পর নিলুফা ঠিক করেন স্বামীকে আর কামলা বেচতে দেবেন না। তাঁকে দিয়ে পাইকারি টুপির ব্যবসা করাবেন। স্ত্রীর পরামর্শে বাচ্চু মিয়া মাত্র ২০০ টাকা মূলধন নিয়ে টুপির পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে টুপি কিনতে থাকেন। ওই সময় এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের নারীরা টুপি তৈরির কাজ করছিলেন। একদিকে নিলুফা ঘরে বসে টুপি তৈরি করছেন, অপর দিকে বাচ্চু মিয়া গ্রামে গ্রামে ঘুরে টুপি কিনছেন। বাড়িতে এনে ওই সব টুপি পরিষ্কার শেষে রোদে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করেন। তারপর সেগুলো চলে যায় ঢাকার চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। সেখান থেকে দেশের বাইরে।
বাচ্চু মিয়াকে আর কামলা বেচতে হয় না। স্বামী-স্ত্রীর আয় দিয়ে চলে সংসার। এখন প্রতিমাসে তাঁদের আয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। টুপি তৈরি ও পাইকারি ব্যবসার বার্ষিক আয় দিয়ে ছয় বিঘা জমি কিনেছেন এবং চারটি টিনের ঘর তৈরি করেছেন। এ ছাড়া ঘরের আসবাব, টেলিভিশন, বাইসাইকেলসহ সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছেন। বদলে গেছে তাঁদের জীবনচিত্র। নিলুফা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরোলেও লেখাপড়ার গুরুত্ব বোঝেন। তাই বড় ছেলে সুমনকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন।
এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে সে। ছোট ছেলে জিহাদের বয়স ছয় বছর। মেয়েটা সবার ছোট। তাঁদের পাঁচ সদস্যের পরিবার। একসময় যাদের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েছেন, এখন তাদের সারিতে দাঁড়িয়ে অন্যদের সহযোগিতা করছেন। এভাবেই টুপি তৈরি আর টুপি বিক্রির আয় দিয়ে ১২ বছরে বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য। নিলুফা বলেন, ‘আগ্রহ ও পরিশ্রম করার ক্ষমতা থাকলে যে কেউ নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি নিজে কিছু করার। এত দিন পর সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আমি লেখাপড়া করতে না পারলেও সন্তানদের স্কুলে পড়াতে পারছি। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।’ এ বছর ঈদের আগে টুপির চাহিদা কেমন, তা জানতে চাইলে নিলুফা বলেন, প্রতিবছর ঈদের আগে টুপির চাহিদা বেশি হয়। তখন টুপি তৈরির ধুম পড়ে যায়। বিক্রিও বাড়ে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত বছরের তুলনায় বিক্রি একটু কম।
শুরুতে মাত্র ৪২ টাকা পুঁজি নিয়ে টুপি তৈরির কাজ শুরু করেন নিলুফা। একটি সুতার কোণ দিয়ে ১২টি টুপি তৈরি করেন। এতে সময় লাগে তিন দিন। ওই টুপি পাইকারি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করেন ১৪৪ টাকায়। লাভ হয় ১০২ টাকা। এভাবে এক মাস কাজ করার পর নিলুফা ঠিক করেন স্বামীকে আর কামলা বেচতে দেবেন না। তাঁকে দিয়ে পাইকারি টুপির ব্যবসা করাবেন। স্ত্রীর পরামর্শে বাচ্চু মিয়া মাত্র ২০০ টাকা মূলধন নিয়ে টুপির পাইকারি ব্যবসা শুরু করেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে টুপি কিনতে থাকেন। ওই সময় এলাকার প্রায় ২০টি গ্রামের নারীরা টুপি তৈরির কাজ করছিলেন। একদিকে নিলুফা ঘরে বসে টুপি তৈরি করছেন, অপর দিকে বাচ্চু মিয়া গ্রামে গ্রামে ঘুরে টুপি কিনছেন। বাড়িতে এনে ওই সব টুপি পরিষ্কার শেষে রোদে শুকিয়ে প্যাকেটজাত করেন। তারপর সেগুলো চলে যায় ঢাকার চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়। সেখান থেকে দেশের বাইরে।
বাচ্চু মিয়াকে আর কামলা বেচতে হয় না। স্বামী-স্ত্রীর আয় দিয়ে চলে সংসার। এখন প্রতিমাসে তাঁদের আয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। টুপি তৈরি ও পাইকারি ব্যবসার বার্ষিক আয় দিয়ে ছয় বিঘা জমি কিনেছেন এবং চারটি টিনের ঘর তৈরি করেছেন। এ ছাড়া ঘরের আসবাব, টেলিভিশন, বাইসাইকেলসহ সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছেন। বদলে গেছে তাঁদের জীবনচিত্র। নিলুফা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি না পেরোলেও লেখাপড়ার গুরুত্ব বোঝেন। তাই বড় ছেলে সুমনকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন।
এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ছে সে। ছোট ছেলে জিহাদের বয়স ছয় বছর। মেয়েটা সবার ছোট। তাঁদের পাঁচ সদস্যের পরিবার। একসময় যাদের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা নিয়েছেন, এখন তাদের সারিতে দাঁড়িয়ে অন্যদের সহযোগিতা করছেন। এভাবেই টুপি তৈরি আর টুপি বিক্রির আয় দিয়ে ১২ বছরে বদলে ফেলেছেন নিজেদের ভাগ্য। নিলুফা বলেন, ‘আগ্রহ ও পরিশ্রম করার ক্ষমতা থাকলে যে কেউ নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি নিজে কিছু করার। এত দিন পর সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। আমি লেখাপড়া করতে না পারলেও সন্তানদের স্কুলে পড়াতে পারছি। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।’ এ বছর ঈদের আগে টুপির চাহিদা কেমন, তা জানতে চাইলে নিলুফা বলেন, প্রতিবছর ঈদের আগে টুপির চাহিদা বেশি হয়। তখন টুপি তৈরির ধুম পড়ে যায়। বিক্রিও বাড়ে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত বছরের তুলনায় বিক্রি একটু কম।
No comments