কেউই নিচ্ছে না সাবেক রাষ্ট্রপতিদের খোঁজ by মান্নান মারুফ
কেউই নিচ্ছে না সাবেক রাষ্ট্রপতিদের খোঁজ। তারা কে কোথায় কেমন আছেন তা জানার আগ্রহটাই যেন মরে মরে গেছে সবার। কাছে নেই আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, আপন মানুষ। দূরে সরে গেছে এক সময়কার ঘনিষ্ঠ সহচর আর কর্মক্ষেত্রের সতীর্থরাও।
রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকাকালে যারা ছিলেন সারা দেশ ও জাতির মনোযোগের কেন্দ্রে তাদের নামই যেন আর মনে নেই কারও। নিত্য দিনের সংবাদ হয়ে থাকা এই রাষ্টপ্রধানদের ব্যাপারে এখন আর সংবাদমাধ্যমগুলোরও কোনো আগ্রহ আর অবশিষ্ট নেই।
চলতি রমজানের ইফতার মাহফিলগুলোতে বড়-ছোট সব দলের নেতাদের নিয়মিত দেখা মিললেও সাবেক রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত পাঁচজনের তিনজনকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
এরা হলেন- প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বিশ্বাস, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে খুব একটা কথাও বলেন না এই তিন সাবেক রাষ্ট্রপতি। একে তো তাদের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে সংবাদমাধ্যম, বিপরীতে তারা নিজেরাও যেন মিডিয়াকে এড়িয়ে চলার নীতি নিয়েছেন।
তবে এই তিনজনের বাইরে অপর দুই সাবেক রাষ্ট্রপতি তাদের কাঙ্ক্ষিত সম্মান না পেলেও গলার জোরে টিকে আছেন রাজনীতির মাঠে। মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় খবর হতে দেখা গেলেও খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন না তারা।
এদের একজন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মাঝেমধ্যেই আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার আওয়াজ দিলেও মূলত তিনি এখন আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবেই মাঠ দাবড়াচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন আছে। নানা সময়ে নানা কথা বলে তিনি আলোচনায় থাকার চেষ্টা করলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রাপ্য ও সম্মান তার জুটছে না।
অন্যজন বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নতুন দল গঠন করে হালে পানি না পেয়ে অগত্যা রাজনীতির চেয়ে চিকিৎসাদানেই হয়ে পড়েছিলেন অধিক মনোযোগী।
তবে রাজনীতিতে টিকে থাকার প্রয়োজনে তিনি এখন বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। যে বিএনপি তাকে মসনদ থেকে রাজপথে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল,পরিবর্তিত বাস্তবতায় এখন সেই বিএনপির সঙ্গেই সখ্য গড়তে মরিয়া তিনি। নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য তার এ প্রাণান্ত চেষ্টা সংশ্লিষ্ট মহলে নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
বিএনপির সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানগুলোতে হাসিমুখে যোগ দিচ্ছেন বি চৌধুরী। তার অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসছেন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির হেভিওয়েট নেতারা।
স্বৈরশাসকের তকমা ঝেড়ে ফেলতে চান এরশাদ
১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এরশাদ। টানা ৯ বছর দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সবাইকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে দোর্দণ্ড দাপটে স্বৈরাচারি কায়দায় টানা ৯ বছর রাষ্ট্র চালান তিনি। অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জনরোষের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এতোকাল পরে এসে আরও একবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার খায়েস জেগেছে তার। তাই মহাজোটের অন্যতম শরিক হয়েও পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার আশায় দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি।
তবে মামলার রশিতে ক্ষমতাসীনদের হাতেই ভাগ্য ঝুলছে তার। বিএনপি না এলে পরবর্তী নির্বাচনে তিনিই হতে পারেন আওয়ামী লীগের তুরুপের তাস, হতে পারেন লোক দেখানো প্রধান বিরোধী দলেরও নেতা।
এজন্য স্বৈরশাসকের তকমা ঝেড়ে ফেলতে নানা দেনদরবারও চালাচ্ছেন সাবেক এই সেনানায়ক। ‘স্বৈরাচার’ আখ্যা নিয়ে সংসদে নিজের অসন্তোষের কথাও জানিয়েছেন তিনি। তার এসব উদ্যোগকে অবশ্য নিজের গুরুত্ব বাড়ানোরই চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
ছেলের মৃত্যুর পর থেকে অন্তরালে আব্দুর রহমান বিশ্বাস
১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বিশ্বাস।
১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত তিনি। সেবার বিএনপি সরকার গঠন করলে তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে বিএনপি।
তিনি রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়ার আগেই তার নির্বাচনী আসন থেকে বড় ছেলে এহতেশামুল হক নাসিম ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় এক বিয়ের দাওয়াতে খাবারের বিষক্রিয়ায় মারা যান নাসিম। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন আব্দুর রহমান বিশ্বাস।
অতীতে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়ার পর আর রাজনীতিতে ফেরেন নি। এখন ঢাকার গুলশানের বাসায় কোরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকির ও মর্নিং ওর্য়াক করে এবং টিভি দেখে দিন কাটে আবদুর রহমান বিশ্বাসের।
বরিশাল শহরে তার পৈতৃক বাড়িতে কেয়ারটেকার ছাড়া এখন আর কেউ থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সেখানে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।
নিরাপত্তাকর্মী বেষ্টিত হয়ে হাঁটতে বের হন সাহাবুদ্দীন
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বর্তমানে গণমাধ্যমে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। গুলশানের এক অ্যাপার্টমেন্টে তিনি সপরিবারে বসবাস করছেন। স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের নিয়ে দিন কাটছে তার।
বাসায় তিনি বই পড়ে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটান। সকালে গুলশান লেক পার্কে নিয়মিত হাঁটতে বের হন নিরাপত্তাকর্মী বেষ্টিত হয়ে। শারীরিকভাবে এখনও বেশ সুস্থ আছেন সাহাবুদ্দীন আহমদ।
নিজের আসন ধরে রাখতে চান বি চৌধুরী
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর। দলীয় অসন্তোষের মুখে ২০০২ সালের ২১ জুন পদত্যাগ করেন তিনি। অভিমানে বিএনপি ছেড়ে রাজনীতিতে বিকল্প একটি মঞ্চ তৈরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন `বিকল্পধারা বাংলাদেশ` নামে এক রাজনৈতিক সংগঠন।
কিন্ত ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব ক’টি আসনে পরাজয়ের কারণে দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
দলীয়ভাবে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত না হলেও পরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি বি চৌধুরী বা তার দল। অগত্যা চিকিৎসা পেশায় আবার মনোযোগী হয়ে ওঠেন তিনি।
উত্তরায় নিজের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে প্রতি সোমবার বসেন বি চৌধুরী। কেসি মেমোরিয়ালে বসেন শনি ও বুধবার। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে গুলশানে নিজ বাসায় রোগী দেখেন। সাংবাদিকদের সঙ্গেও খুব একটা কথা বলেন না এখন।
রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে নতুন করে বিএনপির সঙ্গে সর্ম্পক গড়ছেন অধ্যাপক চৌধুরী। এক্ষেত্রে নিদেনপক্ষে তিনি মুন্সীগঞ্জে তার আসনটি ধরে রাখার কৌশল নিয়েছেন।
ড. ইয়াজউদ্দিনকে বিশ্বাসঘাতক মনে করে বিএনপি
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ। চারদলীয় জোট সরকার মনোনীত এ রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিজেই শপথ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান।
এর ফলে অস্থির হয়ে ওঠা পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি। দেশের পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ার দায় এখনও তার ওপরই বর্তান অনেকে।
ড. ইয়াজউদ্দীন বর্তমানে গুলশানে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। বয়সের ভারে তিনি অনেকটাই ন্যুব্জ। বই পড়ে আর টিভি দেখেই সময় কাটে তার। বাড়ি থেকে বের হন না বললেই চলে। বিএনপি তাকে রাষ্ট্রপতি বানালেও এ দলটি এখন তাকে `বিশ্বাসঘাতক` বলে অভিহিত করে থাকে।
চলতি রমজানের ইফতার মাহফিলগুলোতে বড়-ছোট সব দলের নেতাদের নিয়মিত দেখা মিললেও সাবেক রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত পাঁচজনের তিনজনকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
এরা হলেন- প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বিশ্বাস, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ।
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে খুব একটা কথাও বলেন না এই তিন সাবেক রাষ্ট্রপতি। একে তো তাদের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে সংবাদমাধ্যম, বিপরীতে তারা নিজেরাও যেন মিডিয়াকে এড়িয়ে চলার নীতি নিয়েছেন।
তবে এই তিনজনের বাইরে অপর দুই সাবেক রাষ্ট্রপতি তাদের কাঙ্ক্ষিত সম্মান না পেলেও গলার জোরে টিকে আছেন রাজনীতির মাঠে। মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় খবর হতে দেখা গেলেও খুব বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন না তারা।
এদের একজন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। মাঝেমধ্যেই আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার আওয়াজ দিলেও মূলত তিনি এখন আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবেই মাঠ দাবড়াচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট মহলে গুঞ্জন আছে। নানা সময়ে নানা কথা বলে তিনি আলোচনায় থাকার চেষ্টা করলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রাপ্য ও সম্মান তার জুটছে না।
অন্যজন বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী নতুন দল গঠন করে হালে পানি না পেয়ে অগত্যা রাজনীতির চেয়ে চিকিৎসাদানেই হয়ে পড়েছিলেন অধিক মনোযোগী।
তবে রাজনীতিতে টিকে থাকার প্রয়োজনে তিনি এখন বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। যে বিএনপি তাকে মসনদ থেকে রাজপথে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল,পরিবর্তিত বাস্তবতায় এখন সেই বিএনপির সঙ্গেই সখ্য গড়তে মরিয়া তিনি। নিজের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য তার এ প্রাণান্ত চেষ্টা সংশ্লিষ্ট মহলে নানা বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে।
বিএনপির সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানগুলোতে হাসিমুখে যোগ দিচ্ছেন বি চৌধুরী। তার অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে আসছেন খালেদা জিয়াসহ বিএনপির হেভিওয়েট নেতারা।
স্বৈরশাসকের তকমা ঝেড়ে ফেলতে চান এরশাদ
১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এরশাদ। টানা ৯ বছর দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সবাইকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে দোর্দণ্ড দাপটে স্বৈরাচারি কায়দায় টানা ৯ বছর রাষ্ট্র চালান তিনি। অবশেষে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জনরোষের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এতোকাল পরে এসে আরও একবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার খায়েস জেগেছে তার। তাই মহাজোটের অন্যতম শরিক হয়েও পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার আশায় দেশের এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন তিনি।
তবে মামলার রশিতে ক্ষমতাসীনদের হাতেই ভাগ্য ঝুলছে তার। বিএনপি না এলে পরবর্তী নির্বাচনে তিনিই হতে পারেন আওয়ামী লীগের তুরুপের তাস, হতে পারেন লোক দেখানো প্রধান বিরোধী দলেরও নেতা।
এজন্য স্বৈরশাসকের তকমা ঝেড়ে ফেলতে নানা দেনদরবারও চালাচ্ছেন সাবেক এই সেনানায়ক। ‘স্বৈরাচার’ আখ্যা নিয়ে সংসদে নিজের অসন্তোষের কথাও জানিয়েছেন তিনি। তার এসব উদ্যোগকে অবশ্য নিজের গুরুত্ব বাড়ানোরই চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে।
ছেলের মৃত্যুর পর থেকে অন্তরালে আব্দুর রহমান বিশ্বাস
১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান বিশ্বাস।
১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত তিনি। সেবার বিএনপি সরকার গঠন করলে তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে বিএনপি।
তিনি রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়ার আগেই তার নির্বাচনী আসন থেকে বড় ছেলে এহতেশামুল হক নাসিম ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় এক বিয়ের দাওয়াতে খাবারের বিষক্রিয়ায় মারা যান নাসিম। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন আব্দুর রহমান বিশ্বাস।
অতীতে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী আব্দুর রহমান বিশ্বাস রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়ার পর আর রাজনীতিতে ফেরেন নি। এখন ঢাকার গুলশানের বাসায় কোরআন তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকির ও মর্নিং ওর্য়াক করে এবং টিভি দেখে দিন কাটে আবদুর রহমান বিশ্বাসের।
বরিশাল শহরে তার পৈতৃক বাড়িতে কেয়ারটেকার ছাড়া এখন আর কেউ থাকেন না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সেখানে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন।
নিরাপত্তাকর্মী বেষ্টিত হয়ে হাঁটতে বের হন সাহাবুদ্দীন
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ২০০১ সালে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর সব ধরনের সামাজিক কার্যক্রম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বর্তমানে গণমাধ্যমে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে। গুলশানের এক অ্যাপার্টমেন্টে তিনি সপরিবারে বসবাস করছেন। স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনীদের নিয়ে দিন কাটছে তার।
বাসায় তিনি বই পড়ে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্প করে সময় কাটান। সকালে গুলশান লেক পার্কে নিয়মিত হাঁটতে বের হন নিরাপত্তাকর্মী বেষ্টিত হয়ে। শারীরিকভাবে এখনও বেশ সুস্থ আছেন সাহাবুদ্দীন আহমদ।
নিজের আসন ধরে রাখতে চান বি চৌধুরী
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর। দলীয় অসন্তোষের মুখে ২০০২ সালের ২১ জুন পদত্যাগ করেন তিনি। অভিমানে বিএনপি ছেড়ে রাজনীতিতে বিকল্প একটি মঞ্চ তৈরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন `বিকল্পধারা বাংলাদেশ` নামে এক রাজনৈতিক সংগঠন।
কিন্ত ২০০৮ সালের নির্বাচনে সব ক’টি আসনে পরাজয়ের কারণে দলীয় পদ থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
দলীয়ভাবে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত না হলেও পরে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি বি চৌধুরী বা তার দল। অগত্যা চিকিৎসা পেশায় আবার মনোযোগী হয়ে ওঠেন তিনি।
উত্তরায় নিজের প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে প্রতি সোমবার বসেন বি চৌধুরী। কেসি মেমোরিয়ালে বসেন শনি ও বুধবার। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে গুলশানে নিজ বাসায় রোগী দেখেন। সাংবাদিকদের সঙ্গেও খুব একটা কথা বলেন না এখন।
রাজনীতিতে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে নতুন করে বিএনপির সঙ্গে সর্ম্পক গড়ছেন অধ্যাপক চৌধুরী। এক্ষেত্রে নিদেনপক্ষে তিনি মুন্সীগঞ্জে তার আসনটি ধরে রাখার কৌশল নিয়েছেন।
ড. ইয়াজউদ্দিনকে বিশ্বাসঘাতক মনে করে বিএনপি
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মেদ। চারদলীয় জোট সরকার মনোনীত এ রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিজেই শপথ নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটান।
এর ফলে অস্থির হয়ে ওঠা পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি। দেশের পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়ার দায় এখনও তার ওপরই বর্তান অনেকে।
ড. ইয়াজউদ্দীন বর্তমানে গুলশানে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। বয়সের ভারে তিনি অনেকটাই ন্যুব্জ। বই পড়ে আর টিভি দেখেই সময় কাটে তার। বাড়ি থেকে বের হন না বললেই চলে। বিএনপি তাকে রাষ্ট্রপতি বানালেও এ দলটি এখন তাকে `বিশ্বাসঘাতক` বলে অভিহিত করে থাকে।
No comments