উইলিয়ামসরা হারে না by সায়মা শারমীন
অভিজ্ঞতার একটা দাম আছেই। আর এজন্যই আবারও সফল হলেন মেয়েদের পাওয়ার টেনিসের অন্যতম প্রবক্তা সেরেনা উইলিয়ামস। প্রমাণ করলেন এখনও ফুরিয়ে যাননি তিনি। বিশ্ব টেনিসকে এখন তাঁর দেয়ার আছে আরও অনেক কিছুই।
জার্মানির স্টেফিগ্রাফের পর দ্বিতীয় মহিলা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ইতিহাস গড়েন সেরেনা উইলিয়ামস। শনিবার লন্ডন অলিম্পিকের মেয়েদের লন টেনিস এককের ফাইনালে রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভাকে অনায়াসেই ৬-০, ৬-১ গেমে হারিয়ে ‘ক্যারিয়ার গোল্ডেন সø্যাম’ (অস্ট্রেলিয়ান, ফ্রেঞ্চ, উইম্বল্ডন ও ফ্রেঞ্চ ওপেনের সঙ্গে অলিম্পিকের এককেও স্বর্ণপদক। গ্রাফের কৃতিত্ব হলোÑ তিনি এ পাঁচ শিরোপা অর্জন করেন এক বছরেই, ১৯৮৮ সালে) পূরণ করেন চতুর্থ বাছাই কৃষ্ণকন্যা সেরেনা। এর ফলে কপাল পুড়ল রুশ তন্বী তনুলতা শারাপোভার। বড় আশা ছিল, প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নিয়েই বাজিমাত করবেন। কিন্তু তাঁর সে আশায় জল ঢেলে দেন সেরেনা। ফাইনাল খেলাটিকে অলিম্পিকের ইতিহাসের অন্যতম ‘একপেশে লড়াই’ হিসেবে মনে করছেন টেনিসবোদ্ধারা। শুধু তাই নয়, এককের পাশাপাশি দ্বৈতেও সোনায় মোড়ানো সাফল্য পেয়েছেন সেরেনা। রবিবার লন্ডন অলিম্পিকের প্রমীলা দ্বৈতের ফাইনালে বড় বোন ভেনাস উইলিয়ামসকে নিয়ে সেরেনা ৬-৪, ৬-৪ সেটে পরাজিত করেন চেক প্রজাতন্ত্রের আন্দ্রেয়া হ্লাভাকোভা ও লুসিয়ে রাদেকা জুটিকে। এ স্বর্ণ জিতে অলিম্পিকে বিরল রেকর্ড গড়েছেন এ দুই সহোদরা। এবারসহ তিন অলিম্পিকে দ্বৈত বিভাগে স্বর্ণ জিতলেন তাঁরা। ২০০০ সালের সিডনি গেমস দিয়ে যাত্রা শুরুর পর ২০০৮ বেজিংয়ের পর এবার ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকেও স্বর্ণ জিতলেন ভেনাস-সেরেনা। লন্ডন অলিম্পিকের আগে প্রমীলা দ্বৈতে তিনবার স্বর্ণ জয় করলেও এককে স্বর্ণ অধরাই ছিল সেরেনার। শনিবার রাশিয়ান টেনিস তারকা মারিয়া শারাপোভাকে হারিয়ে এ চক্রও পূরণ করেছেন ৩০ বছর বয়সী সেরেনা। সেরেনার বড় বোন ভেনাস এ চক্র পূরণ করেছেন আরও আগে। ২০০০ সালের সিডনি আসরে ভেনাস এককের স্বর্ণজয় করার পর ছোট বোন সেরেনাকে নিয়ে জিতেছিলেন দ্বৈতের শিরোপা। রবিবার দ্বৈত শিরোপা জয়ের মধ্যদিয়ে ভেনাস-সেরেনা জুটি স্পর্শ করেছে স্পেনের কনচিটা মার্টিনেজকে। মার্টিনেজ ১৯৯২ ও ২০০৪ অলিম্পিকে রৌপ্য এবং ১৯৯৬ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জপদক জয় করেন। তবে তিন অলিম্পিকে স্বর্ণজয় করে সাবেক স্প্যানিশ তারকাকে ছাড়িয়ে গেছেন ভেনাস-সেরেনা। অলিম্পিক আসর শুরুর আগে লন্ডনে অনুষ্ঠিত ‘টেনিসের বিশ্বকাপ’খ্যাত উইম্বলডন ওপেনেরও শিরোপা জিতেছিলেন সেরেনা। ইনজুরির জন্য সেরেনা প্রায় বছরখানেক টেনিস খেলতে না পেরে র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর অবস্থান থেকে অধোগতি হতে হতে চলে গিয়েছিলেন ১০০ নম্বরেরও অনেক পরে। অন্য কেউ হলে রণেভঙ্গ দিতেন। কিন্তু সেরেনা যে অন্য ধাতুতে গড়া। অদম্য আর দৃঢ় মানসিকতার অধিকারী সেরেনা ভাঙবেন কিন্তু মচকাবেন না। তাই তো ফিরে এসেছেন দৃশ্যপটে বীরদর্পে, দাপটের সঙ্গে। লন্ডনে যাওয়ার আগে সেরেনা বলেছিলেন, ‘একটি সোনা জয় করলেই আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া হবে। তাই বলে আমার সব স্বপ্ন বা আশা ছেড়ে দিচ্ছি না।’ আশা যে ছাড়েননি সেরেনা, সেটা তো এখন দিবালোকের মতোই পরিষ্কার। ২০১০ সালে উইম্বলডন জয়ের পরই জার্মানির একটি রেস্টুরেন্টে কাচে লেগে পা কেটে গিয়েছিল সেরেনার। যে কারণে কয়েক দফা অস্ত্রোপচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকাকে। যার মাসুলও তাঁকে দিতে হয়। কোর্টের বাইরে চলে যাওয়া সেরেনার ক্যারিয়ারই পড়েছিল হুমকির মুখে। ওই ধাক্কা কাটিয়ে গত বছর থেকেই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন। তবে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন চলমান বছরে। বছরের প্রথম গ্র্যান্ডসø্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে হার, দ্বিতীয় গ্র্যান্ডসø্যাম ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিলেও জিতে নেন রোম মাস্টার্স ও তৃতীয় গ্র্যান্ডসø্যাম উইম্বলডন। এ জয়ের মধ্য দিয়ে সেরেনার পুনর্জন্ম হয়। এমনিতে বাস্তবে ‘ফিনিক্স’ বলে কোন পাখির অস্তিত্ব নেই। তবে আছে রূপকথায়। এটা এমনই এক পাখি, যে পখির আয়ু শেষ হয়ে গেলে আচমকা নিজের গায়ে নিজেই আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই ভস্মীভূত থেকেই আবার নতুন করে জন্ম নেয় ফিনিক্স। সেরেনা উইলিয়ামস যেন এমনই এক ফিনিক্স পাখি। নতুন করে যেন জন্ম হয়েছে তাঁর। ইনজুরি এবং অফ ফর্ম মিলিয়ে হারিয়েই যেতে বসেছিলেন। গত বছরটা ছিল রীতিমতো হতাশার চাদরে ঢাকা। অব্যাহত ইনজুরি ও বাজে ফর্মের দরুন অনেকেই আশা ছেড়ে দিয়ে ভেবেছিলেন, ‘হয়ত অতলেই চলে গেলেন সেরেনা।’ কিন্তু তা হয়নি। আরেকটু পরিষ্কার করে বললে হতে দেননি। অদম্য দৃঢ় মানসিকতার সেরেনা হাল ছেড়ে দেননি। তাই তো নতুন বছরের শুরু থেকেই ইঙ্গিত দেন ফর্মে ফেরার। অস্তাচলে যাওয়ার আগে কেউ ঝলসে ওঠে, কেউ ওঠে না। সেরেনার বেলায় সেটাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভেনাস বিশ্বাস করেন ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমসে চতুর্থবারের মতো অংশ নিয়ে তাঁরা বোনের জুটি আবারও রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য, সেরেনার সোনা জয়ের পর আমরা সত্যিই অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছিলাম এই ভেবে যে পদক তালিকায় আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমাদের ভূমিকা রয়েছে।
No comments