পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ তায়ালা দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তুলতে চান

৯৩. ফাতাওয়াল্লা- আ'নহুম ওয়া ক্বা-লা ইয়া-ক্বাওমি লাক্বাদ আবলাগ্তুকুম রিছালাতি রাব্বী ওয়া নাসাহ্তু লাকুম; ফাকাইফা আ-ছা- আ'লা- ক্বাওমিন কা-ফিরীন। ৯৪. ওয়া মা- আরছালনা- ফী ক্বারইয়াতিম্ মিন্ নাবিয়্যিন ইল্লা- আখায্না- আহ্লাহা- বিলবা'ছা-য়ি ওয়াদ্দ্বার্রা-য়ি লাআ'ল্লাহুম ইয়াদ্দ্বার্রাঊ'ন।


৯৫. ছুম্মা বাদ্দালনা- মাকা-না চ্ছায়্যিআতিল হাছানাতা হাত্তা- আ'ফাওঁ ওয়া ক্বা-লূ ক্বাদ মাচ্ছা আ-বা-আনাদ্ দ্বার্রা-উ ওয়াচ্ছার্রা-উ ফাআখায্না-হুম বাগ্তাতাওঁ ওয়াহুম লা-ইয়াশউ'রূন।
৯৬. ওয়া লাও আন্না আহলাল ক্বুরা- আ-মানূ ওয়াত্তাক্বাও লাফাতাহ্না- আ'লাইহিম বারাকা-তিম্ মিনাচ্ছা-মা-য়ি ওয়ালআরদ্বি ওয়ালা-কিন্ কায্যাবূ ফাআখায্না-হুম বিমা- কা-নূ ইয়াক্ছিবূন। [সুরা : আল-আ'রাফ, আয়াত : ৯৩-৯৬]

অনুবাদ : ৯৩. এরপর নবী শোয়ায়েব তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন এবং বললেন, হে আমার কওম, আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তাগুলো পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করেছিলাম। কিন্তু একটা অবাধ্য জাতির জন্য আমি কিভাবে আফসোস করি।
৯৪. আমি যেকোনো জনপদে নবী পাঠিয়েছি, সেখানকার অধিবাসীদের অবশ্যই অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত করেছি, যাতে তারা বিনয়ী হয়ে ওঠে।
৯৫. তারপর আমি অবস্থা পরিবর্তন করেছি। দুরবস্থার স্থলে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছি। এমনকি তারা সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে এবং বলতে শুরু করে_দুঃখ-কষ্ট তো আমাদের পূর্বপুরুষরা ভোগ করেছেন। অতঃপর আমি অকস্মাৎ তাদের এভাবে পাকড়াও করি যে তারা আগেভাগে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।
৯৬. যদি সেসব জনপদবাসী ইমান আনত এবং দায়িত্বনিষ্ঠতা অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর উভয় দিক থেকে বরকতের দরজাগুলো খুলে দিতাম। কিন্তু তারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করল। সুতরাং আমি তারা যে পাপ অর্জন করেছে এর পরিণতি হিসেবে পাকড়াও করলাম।

ব্যাখ্যা : ৯২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছিল, শোয়ায়েব (আ.)-এর পাপাচারী জাতিকে আল্লাহ তায়ালা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। ৯৩ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, নবী শোয়ায়েব (আ.) তাঁর পাপাচারী জাতির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেন। কিভাবে এবং কেন চলে গেলেন, এর কারণও এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৯৪ নম্বর আয়াত এবং এর পরবর্তী কয়েকটি আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা পাপাচারী জাতিগুলোকে শাস্তি কিভাবে দেন এবং কেন দেন। এখানে বলা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা যাদের শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করেছেন তাদের যে আকস্মিক রাগের বশে ধ্বংস করেছেন এমন নয়। বরং তাদের সুপথে আসার জন্য বছরের পর বছর সুযোগ দিয়েছেন এবং সব রকমের ব্যবস্থা করেছেন। প্রথমত, তাদের জন্য নবী পাঠিয়েছেন, উপদেশ বাণী পাঠিয়েছেন। এরপর তাদের আর্থিক কষ্টসহ বিভিন্ন রকম কষ্টে ফেলেছেন, যাতে তাদের চৈতন্য জাগে। কখনো কখনো দুঃখ-দৈন্যের পর তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যও দান করা হয়, যাতে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ পায়। অবস্থার এসব পরিবর্তনের দ্বারা কিছু লোক তো অবশ্যই শিক্ষা গ্রহণ করে এবং সঠিক পথে আসে। কিন্তু অবাধ্য প্রকৃতির এমন কিছু লোক থাকে, যারা শিক্ষা গ্রহণ করে না। বরং উল্টো তারা বলে, এমন সুখ-দুঃখ ও ঠাণ্ডা-গরমের পালাবদল আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনেও ঘটেছে। সুতরাং এসবকে অহেতুক আল্লাহর কোনো সংকেত সাব্যস্ত করার দরকার কী? এভাবে যখন অবাধ্যদের ব্যাপারে আল্লাহর সব রকমের প্রমাণ চূড়ান্ত হয়ে যায়, তখন একসময় হঠাৎ করে তাদের ওপর আসমানি শাস্তি এসে নিপতিত হয়। তখন এটাকেই অনেকে মনে করে আকস্মিক ঘটনা। আল্লাহ তায়ালাও বলেছেন, বিষয়টা আসলেই এমন আকস্মিকভাবে ঘটে যে তারা আগে থেকে এটা অনুমান করতে পারে না। আসলে এই করুণ পরিণতি তাদের হয় ক্রমাগত পাপাচারের পরিণাম হিসেবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.