যৌন নিপীড়ন- নারীর ‘সত্য’ কি পাবলিক ‘সত্য’? by নাসরিন খন্দকার
কোনো নিপীড়ন মর্যাদা দেয়, কোনোটা দেয় না। কোনো ঘটনায় নিপীড়িত সহানুভূতি পান, কোনোটায় পান নিগ্রহ।
আসরের মধ্যমণি হয়ে এক সহকর্মী দারুণ ফেনিয়ে ছিনতাইয়ের অভিজ্ঞতা বলছিলেন। চাঞ্চল্যকর বর্ণনায় সবাই মন্ত্রমুগ্ধ। সহমর্মিতার পাশাপাশি একটু হিংসাও হচ্ছিল।
আসরের মধ্যমণি হয়ে এক সহকর্মী দারুণ ফেনিয়ে ছিনতাইয়ের অভিজ্ঞতা বলছিলেন। চাঞ্চল্যকর বর্ণনায় সবাই মন্ত্রমুগ্ধ। সহমর্মিতার পাশাপাশি একটু হিংসাও হচ্ছিল।
এমন বলার মতো অভিজ্ঞতা তো আমাদের সহসা ঘটে না! ছিনতাইয়ে তিনি হারালেন দামি একটা মোবাইল, কিছু টাকা, কিন্তু পেলেন সহমর্মিতা আর জমিয়ে বলার মতো গল্প। ডাকাত পড়লে বা চুরি হলে মানসিক আঘাতের পাশাপাশি সামাজিক সহানুভূতিও অর্জিত হয়। কিন্তু সব অপরাধের ক্ষেত্রে কি এটা হয়? ধরুন, বাসে ওঠার সময় বাসের কন্ডাক্টর কোনো মেয়ের পেছনে ধাক্কা দিল বা ভিড়ের সুযোগে কোনো পুরুষ তার শরীরে হাত দিল; শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বা বস কক্ষে ডেকে কম নম্বর দেওয়ার বা চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়ে রাত কাটানোর প্রস্তাব দিল। এগুলো শাস্তিযোগ্য অপরাধ, আইনি ভাষায় এর নাম যৌন হয়রানি। কিন্তু এই অপরাধের শিকার নারী কি এতে বলার মতো গল্প পান? প্রকাশ্য আড্ডায় মধ্যমণি হয়ে ওঠেন? হন না। দীর্ঘ আন্দোলনের কারণে অনেক কষ্টে এই অপরাধের নাম যৌন হয়রানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা গেছে। কিন্তু এখনো এসব অপরাধকে নরম করে ‘ভদ্র’ ভাষার মোড়কে শ্লীলতাহানি বা সম্মানহানি বলে পরিবেশন করা হয়। এভাবে অপরাধের নামকরণের মাধ্যমে নারীর আবারও ‘সম্মানহানি’ ঘটে। যেন নারীর ‘শ্লীলতা’ বা ‘সম্মান’ ঠুনকো, আর পুরুষের জন্য তা অক্ষয়।
একটি সংবাদ বিভিন্ন দৈনিক থেকে শুরু করে অনলাইন ব্লগ-ফেসবুকে আলোড়ন তুলছে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গত তিন বছরে অন্তত ১২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ এসেছে। খবরটি কেবল আলোড়নই নয়, অনেকের বিস্ময়ও জাগায়। আমি বরং এই আলোড়ন তোলা বা বিস্মিত হওয়াতেই একটু আলোড়িত হই। এই খবর নারীদের বিস্মিত করে না, কারণ তারা জানে। যা তার প্রতিদিনকার জানা অভিজ্ঞতা তা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে পুরুষালি সমাজের আয়নায় প্রতিবিম্বিত হয় মাত্র। পত্রিকার পাতায় নিপীড়ক সমাজ নিজের মুখ দেখে আঁতকে ওঠে। এই খবর নারীদের জন্য নতুন তো নয়ই, হতাশারও নয়, বরং আশার। কেননা শিক্ষক নামধারী অন্তত ১২ জন নিপীড়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। তাঁদের সাধুবাদ, যেমন সাধুবাদ ভিকারুননিসার সেই নির্যাতিত কিন্তু প্রতিবাদী কিশোরীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ভিকারুননিসার গর্ব এরা। যা বলা হয় না, বললে শুনতে চায় না, মানতে চায় না, যা বললে নিরাপত্তার থেকে ঝুঁকিই বরং বাড়ে, তা যারা বলতে পারে তারা তো পথপ্রদর্শক।
আইনে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীর প্রতি এ ধরনের নিপীড়ন রোধে শাস্তির বিধান থাকলেও, সমাজ মানসে অপরাধকে হালকা করা বা জায়েজ করার নানা পন্থা জারি থাকে। অল্প যেসব ক্ষেত্রে নিপীড়িত নারীর প্রতিবাদ প্রকাশিত হলে অপরাধী নয়, শুরু হয় সেই নারীচরিত বিশ্লেষণ। তাঁর চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করা, তাঁকে রসালো খবর করে বিক্রি করা ইত্যাদির ফেরে পড়ে তার নিপীড়ন পৌনঃপুনিক হারে বাড়তেই থাকে। এমনকি নিপীড়িত নারীর ‘সম্মানহানি’ যা হওয়ার হয়ে গেছে ধরে নিয়ে, অন্য নিপীড়কের কাছে সে সহজলভ্য হিসেবেও বিবেচিত হয়। ভিকটিমের চরিত্রহননের থেকে নিপীড়নবান্ধব প্রবণতা আর নেই। নিপীড়ন ঘটার পর সমাজ যখন নিপীড়তকেই দোষ দেয়, আলাদা করে দেয়, তখনই নিপীড়ন পূর্ণাঙ্গ হয়। ধর্ষক শরীরকে ধর্ষণ করতে পারে, কিন্তু নারীর মনকে বারবার ধর্ষণ করে এসব সামাজিক গঞ্জনা। তাই অপরাধ হিসেবে যৌন নিপীড়ন মোকাবিলার প্রথম ধাপ এই বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসা। যাঁরা তা পারেন, তাঁদের মানুষ হিসেবে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর এই সাহসকে আমরা প্রণতি জানাই না। খেয়াল করি না, আরও বিপত্তি ঘটতে পারে জেনেও কী সাংঘাতিক আত্মসম্মানবোধ আর মানবিকতাবোধ তাঁকে প্রতিবাদী করে তোলে। উল্টো তার ‘শ্লীলতা’ বা সম্মান খর্ব হয়েছে বলে বলে লেবেল দিয়ে দিই। এই বাস্তবতায় নিপীড়িত নারী আরও আরও অপমানের ভয়ে সহসা মুখ খোলেন না। ঘটনাগুলো পর্দার পেছনের কাহিনি হিসেবে আড়ালে চলে যায়।
একবার ক্লাসে পুরুষ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলাম, তারা ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সচরাচর কী ধরনের ব্যবস্থা নেন। কেউ কেউ চোখ চাওয়াচাওয়ি করলেন, মেয়েরা কেউ কেউ একটু ব্যঙ্গের হাসি দিলেন। আমার প্রশ্নে হতভম্ভ এক ছাত্র বললেন, আমাদের তো কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় না! এবার একই প্রশ্ন করলাম নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি। প্রায় সব ছাত্রীই উত্তর দিলেন। কেউ বললেন, তিনি ভিড়ের দুর্বৃত্তদের ঠেকানোয় ব্যাগে সেফটিপিন রাখেন। কেউ বললেন, ভিড়ে চলার সময় ডান হাত বুকের সামনে আর বাঁ হাত পেছনে রাখেন, যাতে আক্রমণকারীকে হাতেনাতে ধরা যায়। কেউ বললেন, নির্জন রাস্তায় কেউ অনুসরণ করছে বুঝতে পারলে তিনি রাস্তা আড়াআড়ি পার হন বা রিকশায় উঠে পড়ার চেষ্টা করেন। কেউ বললেন তাঁরা কতিপয় শিক্ষককে এড়িয়ে চলেন। যৌন হয়রানি মোকাবিলায় ইত্যাদি নানা তরিকার কথা জানা গেল, নারী শিক্ষার্থীরা বললেন। এবার তাঁদেরই বললাম, এ রকম দু-একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে, যার কারণে এ ধরনের আত্মরক্ষার কৌশল নিতে তাঁরা বাধ্য হন। এবার কোনো কথা নেই। ক্লাস চুপ। মনে পড়ল, এসব অভিজ্ঞতার কথা ‘বলা যায় না’।
নিত্যদিনের যৌন নিপীড়ন নারীদের স্বপ্ন-মন-সরলতা ভাঙা এক ‘সত্য’। নারী-শরীর নিয়ে জন্মানো প্রতিটি মানুষ এসব জানেন। যদিও তা ‘বলা যায় না’। নারী-শরীরের প্রতি পুরুষের অপরাধের দায় এভাবেই নারীদের বয়ে বেড়াতে হয়। আত্মরক্ষার কৌশল বের করে, একে মোকাবিলার পথ খোঁজে। কিন্তু এই সত্যকে সে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে না, করতে পারে না। ক্ষত হয়ে রয়ে যায় মনে। যেখানে সমাজের পরতে পরতে ভোগবাদ ও যৌনবাদ যুগল বেণির মতো বোনা, সেখানে এই ছোট ছোট ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার কৌশল অথৈ সমুদ্রে ভেলা ভাসিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা মাত্র। এই ব্যক্তিক টিকে থাকা তো প্রতিরোধ না, প্রতিকারও এতে হয় না। এটা সর্বব্যাপ্ত যৌনবাদী সমাজের সঙ্গে মানিয়ে চলার সাময়িক পথ, যার দায় নিতে হয় নিপীড়িতকেই। দরকার এই ব্যক্তিক প্রতিরোধকে যৌথ লড়াইয়ে রূপান্তরিত করা।
প্রতিবাদী নারীর পাশে থেকে, নিপীড়কবর্গ থেকে নিজেকে আলাদা করার দায় পুরুষেরও। আর তার জন্য দরকার সমন্বিতভাবে তার চরিত্রহননের অস্ত্র সম্ভ্রম আর ইজ্জতের বন্দুকের নল ঘুরিয়ে নিপীড়কের দিকেই তাক করা। যৌন নিপীড়নকে নারীর লজ্জা নয়, বরং নিপীড়ক আর নিপীড়ন-পোষক সমাজের লজ্জা হিসেবে চিহ্নিত করা। যে ‘সত্য’ নারী একা বয়, তাকে পাবলিক ‘সত্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কত দেরি পাঞ্জেরি?
নাসরিন খন্দকার: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
nasrin.khandoker¦gmail.com
একটি সংবাদ বিভিন্ন দৈনিক থেকে শুরু করে অনলাইন ব্লগ-ফেসবুকে আলোড়ন তুলছে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গত তিন বছরে অন্তত ১২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের লিখিত অভিযোগ এসেছে। খবরটি কেবল আলোড়নই নয়, অনেকের বিস্ময়ও জাগায়। আমি বরং এই আলোড়ন তোলা বা বিস্মিত হওয়াতেই একটু আলোড়িত হই। এই খবর নারীদের বিস্মিত করে না, কারণ তারা জানে। যা তার প্রতিদিনকার জানা অভিজ্ঞতা তা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে পুরুষালি সমাজের আয়নায় প্রতিবিম্বিত হয় মাত্র। পত্রিকার পাতায় নিপীড়ক সমাজ নিজের মুখ দেখে আঁতকে ওঠে। এই খবর নারীদের জন্য নতুন তো নয়ই, হতাশারও নয়, বরং আশার। কেননা শিক্ষক নামধারী অন্তত ১২ জন নিপীড়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস দেখিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। তাঁদের সাধুবাদ, যেমন সাধুবাদ ভিকারুননিসার সেই নির্যাতিত কিন্তু প্রতিবাদী কিশোরীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা ভিকারুননিসার গর্ব এরা। যা বলা হয় না, বললে শুনতে চায় না, মানতে চায় না, যা বললে নিরাপত্তার থেকে ঝুঁকিই বরং বাড়ে, তা যারা বলতে পারে তারা তো পথপ্রদর্শক।
আইনে ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীর প্রতি এ ধরনের নিপীড়ন রোধে শাস্তির বিধান থাকলেও, সমাজ মানসে অপরাধকে হালকা করা বা জায়েজ করার নানা পন্থা জারি থাকে। অল্প যেসব ক্ষেত্রে নিপীড়িত নারীর প্রতিবাদ প্রকাশিত হলে অপরাধী নয়, শুরু হয় সেই নারীচরিত বিশ্লেষণ। তাঁর চরিত্রের ব্যবচ্ছেদ করা, তাঁকে রসালো খবর করে বিক্রি করা ইত্যাদির ফেরে পড়ে তার নিপীড়ন পৌনঃপুনিক হারে বাড়তেই থাকে। এমনকি নিপীড়িত নারীর ‘সম্মানহানি’ যা হওয়ার হয়ে গেছে ধরে নিয়ে, অন্য নিপীড়কের কাছে সে সহজলভ্য হিসেবেও বিবেচিত হয়। ভিকটিমের চরিত্রহননের থেকে নিপীড়নবান্ধব প্রবণতা আর নেই। নিপীড়ন ঘটার পর সমাজ যখন নিপীড়তকেই দোষ দেয়, আলাদা করে দেয়, তখনই নিপীড়ন পূর্ণাঙ্গ হয়। ধর্ষক শরীরকে ধর্ষণ করতে পারে, কিন্তু নারীর মনকে বারবার ধর্ষণ করে এসব সামাজিক গঞ্জনা। তাই অপরাধ হিসেবে যৌন নিপীড়ন মোকাবিলার প্রথম ধাপ এই বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসা। যাঁরা তা পারেন, তাঁদের মানুষ হিসেবে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর এই সাহসকে আমরা প্রণতি জানাই না। খেয়াল করি না, আরও বিপত্তি ঘটতে পারে জেনেও কী সাংঘাতিক আত্মসম্মানবোধ আর মানবিকতাবোধ তাঁকে প্রতিবাদী করে তোলে। উল্টো তার ‘শ্লীলতা’ বা সম্মান খর্ব হয়েছে বলে বলে লেবেল দিয়ে দিই। এই বাস্তবতায় নিপীড়িত নারী আরও আরও অপমানের ভয়ে সহসা মুখ খোলেন না। ঘটনাগুলো পর্দার পেছনের কাহিনি হিসেবে আড়ালে চলে যায়।
একবার ক্লাসে পুরুষ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলাম, তারা ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সচরাচর কী ধরনের ব্যবস্থা নেন। কেউ কেউ চোখ চাওয়াচাওয়ি করলেন, মেয়েরা কেউ কেউ একটু ব্যঙ্গের হাসি দিলেন। আমার প্রশ্নে হতভম্ভ এক ছাত্র বললেন, আমাদের তো কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় না! এবার একই প্রশ্ন করলাম নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি। প্রায় সব ছাত্রীই উত্তর দিলেন। কেউ বললেন, তিনি ভিড়ের দুর্বৃত্তদের ঠেকানোয় ব্যাগে সেফটিপিন রাখেন। কেউ বললেন, ভিড়ে চলার সময় ডান হাত বুকের সামনে আর বাঁ হাত পেছনে রাখেন, যাতে আক্রমণকারীকে হাতেনাতে ধরা যায়। কেউ বললেন, নির্জন রাস্তায় কেউ অনুসরণ করছে বুঝতে পারলে তিনি রাস্তা আড়াআড়ি পার হন বা রিকশায় উঠে পড়ার চেষ্টা করেন। কেউ বললেন তাঁরা কতিপয় শিক্ষককে এড়িয়ে চলেন। যৌন হয়রানি মোকাবিলায় ইত্যাদি নানা তরিকার কথা জানা গেল, নারী শিক্ষার্থীরা বললেন। এবার তাঁদেরই বললাম, এ রকম দু-একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে, যার কারণে এ ধরনের আত্মরক্ষার কৌশল নিতে তাঁরা বাধ্য হন। এবার কোনো কথা নেই। ক্লাস চুপ। মনে পড়ল, এসব অভিজ্ঞতার কথা ‘বলা যায় না’।
নিত্যদিনের যৌন নিপীড়ন নারীদের স্বপ্ন-মন-সরলতা ভাঙা এক ‘সত্য’। নারী-শরীর নিয়ে জন্মানো প্রতিটি মানুষ এসব জানেন। যদিও তা ‘বলা যায় না’। নারী-শরীরের প্রতি পুরুষের অপরাধের দায় এভাবেই নারীদের বয়ে বেড়াতে হয়। আত্মরক্ষার কৌশল বের করে, একে মোকাবিলার পথ খোঁজে। কিন্তু এই সত্যকে সে স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে না, করতে পারে না। ক্ষত হয়ে রয়ে যায় মনে। যেখানে সমাজের পরতে পরতে ভোগবাদ ও যৌনবাদ যুগল বেণির মতো বোনা, সেখানে এই ছোট ছোট ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার কৌশল অথৈ সমুদ্রে ভেলা ভাসিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা মাত্র। এই ব্যক্তিক টিকে থাকা তো প্রতিরোধ না, প্রতিকারও এতে হয় না। এটা সর্বব্যাপ্ত যৌনবাদী সমাজের সঙ্গে মানিয়ে চলার সাময়িক পথ, যার দায় নিতে হয় নিপীড়িতকেই। দরকার এই ব্যক্তিক প্রতিরোধকে যৌথ লড়াইয়ে রূপান্তরিত করা।
প্রতিবাদী নারীর পাশে থেকে, নিপীড়কবর্গ থেকে নিজেকে আলাদা করার দায় পুরুষেরও। আর তার জন্য দরকার সমন্বিতভাবে তার চরিত্রহননের অস্ত্র সম্ভ্রম আর ইজ্জতের বন্দুকের নল ঘুরিয়ে নিপীড়কের দিকেই তাক করা। যৌন নিপীড়নকে নারীর লজ্জা নয়, বরং নিপীড়ক আর নিপীড়ন-পোষক সমাজের লজ্জা হিসেবে চিহ্নিত করা। যে ‘সত্য’ নারী একা বয়, তাকে পাবলিক ‘সত্য’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কত দেরি পাঞ্জেরি?
নাসরিন খন্দকার: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
nasrin.khandoker¦gmail.com
No comments