মালয়েশিয়ায় জাতিবিদ্বেষ
মালয়েশিয়ায় জাতিগত বিদ্বেষ রয়েছে এবং তা প্রাতিষ্ঠানিক রূপও পরিগ্রহ করেছে। সম্প্রতি সেখানে গণতন্ত্র কর্মীদের হয়রানির কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে জাতিগত বিদ্বেষের উদ্বেগজনক প্রকাশ ঘটেছে। মালয়েশিয়া একটি বহু জাতিসত্তার দেশ। মালয়ীরা সেখানে জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫২ শতংশ, চৈনিক বংশোদ্ভূতরা ৩০ শতাংশ, ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা ৮
শতাংশ এবং অবশিষ্ট অন্যান্য জাতিসত্তার লোকজন। সিভিল সার্ভিসের প্রায় সকল চাকরি দখল করে আছে মালয়ীরা। মাত্র ৭ শতাংশ সরকারী কর্মচারী চৈনিক। অন্যান্য জাতিসত্তার লোকজন অতি নগণ্য। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও নার্সিং পেশায় নতুন রিক্রুটদের মাত্র ৫ শতাংশ অ-মালয়ী। সমস্ত সরকারী কনট্রাক্টের ৯৫ শতাংশ মালয়ীদের দেয়া হয়। এ থেকে সেখানে বর্ণ বা জাতিগত বৈষম্যের চিত্রটি বেরিয়ে আসে।
হালে রাজনীতির অঙ্গনেও সেই বৈষম্যের উৎকট প্রকাশ ঘটেছে। কিছুদিন ধরে মালয়েশিয়ান বার কাউন্সিলের সাবেক সভানেত্রী মিজ অম্বিগা শ্রীনিবাসনকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। কারণ তিনি এখন রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় এসে গেছেন যা আগামী সাধারণ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কুয়ালালামপুরের মধ্যবিত্ত আইনজীবী মিজ অম্বিগা বেরিশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা। এটি হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে প্রচারাভিযানে নিয়োজিত এনজিওগুলোর একটি কোয়ালিশন। মালয় ভাষায় বেরিশ শব্দের অর্থ বিশুদ্ধ। বেরিশ আন্দোলন মালয়েশিয়ায় গণতন্ত্র জোরদার করার প্রচারাভিযানে নিবেদিত। মালয়েশিয়ার শাসনব্যবস্থায় শাসক দল সংযুক্ত মালয় জাতীয় সংস্থার (উমনো) একচেটিয়া প্রাধান্য। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা লাভের থেকে এই দলটি অবিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় আছে। প্রধানত দুই সংখ্যালঘু দলকে নিয়ে গঠিত বারিশান ন্যাশনাল (বিএন) নামে একটি কোয়ালিশনের মাধ্যমে তারা দেশ শাসন করছে। একটি দল চৈনিকদের। অন্যটি ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের।
কিন্তু মিজ অম্বিগা রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় আসায় উমনোর অনেকে তাকে মস্তো হুমকি হিসাবে দেখছে। সেটা আরও বেশি হয়েছে এই জন্য যে আগামী বছরের প্রথমার্ধে মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক নির্বাচন দিতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। কারণ তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা যথেষ্ট বেশি হলেও কোয়ালিশন অতটা জনপ্রিয় নয়।
এ অবস্থায় গত এপ্রিলে রাজধানীতে বেরিশ আন্দোলনের জনসমাবেশে বিপুল লোকসমাগম হয়। এদের মধ্যে বিরোধীদলীয় অনেক নেতাও ছিল। কিন্তু সমাবেশটি দাঙ্গাহাঙ্গামার মধ্যে পরিসমাপ্ত হয়। তখন থেকে উমনো এবং এর সমর্থনপুষ্টরা বেরিশ নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়ী জনগোষ্ঠীর একাংশের হাততালি পাওয়া গেলেও ব্যাপারটা সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই পটভূমিতে গত মে মাস থেকে অম্বিগাকে হয়রানি করা শুরু হয়েছে। হয়রানি নানাভাবে করা হয়। প্রথমে ছোটখাটো আকারে। পরে তা কুৎসিত রূপ নেয়। কয়েক শ’ লোকের স্বাক্ষরিত এক দরখাস্তে তাঁকে ইসলামবিদ্বেষী আখ্যায়িত করে মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানানো হয়। অম্বিগা বলেন, এসব দাবির পিছনে স্বভাবতই রাষ্ট্রের অনুমোদন বা সমর্থন ছিল। শেষে ২৬ জুন উমনোর বিশিষ্ট রাজনীতিক মোহাম্মদ আজিজ পার্লমেন্টে বলেন : ‘আমরা কি অম্বিগাকে বিশ্বাসঘাতকদের গণ্য করে তাঁকে ফাঁসিতে লটকানোর দ- দিতে দিতে পারি না?’ এ নিয়ে ঝড় ওঠে। প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দেয়া ছাড়াও অম্বিগার বিরুদ্ধে পত্রপত্রিকায় নানা বিদ্বেষমূলক লেখা বের হয়। স্বয়ং সেই এমপির রচিত নিবন্ধের মধ্যে দিয়ে মালয়েশিয়ার স্পর্শকাতর সংবাদপত্রে বর্ণবাদী ও জাতিবিদ্বেষী রাজনীতির আগুন জ্বলে ওঠে। মিজ অম্বিগা ভারতীয় সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা। দেশের ২০ লাখ ভারতীয় নানাভাবে বিভক্ত হলেও তারা দ্রুত অম্বিগার পিছনে এসে দাঁড়ায়। এমনকি কোয়ালিশনভুক্ত হলেও মালয়েশিয়ান ইন্ডিয়ান কংগ্রেস পার্টি তাদের রাজনৈতিক মিত্র সেই এমপির নিন্দা না করে পারেনি।
মিজ অম্বিগা বিশ্বাস করেন যে তাঁর ওপর মালয়ীদের পরিচালিত সমস্ত আক্রমণই বর্ণবিদ্বেষী। কারণ তাঁর বেরিশ আন্দোলনের যুগ্ম নেতা বিখ্যাত লেখক এ সামাদ সৈয়দ মালয়ী তাই তার ওপর কোন ধরনের আক্রমণ শানানো হয়নি। এমন তিক্ত পরিবেশে ভারতীয়রা বারিশান ন্যাশনালের বিরুদ্ধে যাবে কিনা পরিষ্কার নয়। জনগোষ্ঠীর ৮ শতাংশ ভারতীয় ঐতিহ্যগতভাবে বেশিরভাগই বারিশান ন্যাশনালকে ভোট দিয়ে আসলেও এখন তাদের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেÑ বিশেষ করে যেসব এলাকায় অম্বিগার জনপ্রিয়তা আছে। অথচ ভারতীয়দের ভোট পেতে প্রধানমন্ত্রী নাজিবকে কম গলদঘর্ম হতে হয়নি। চলমান ঘটনায় নাজিবের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হতে পারে। নিজেকে তিনি উদারপন্থী দাবি করলেও সমালোচকদের মতে বর্ণবাদী হামলার রাস টেনে ধরতে তিনি তেমন কিছু করেননি।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
হালে রাজনীতির অঙ্গনেও সেই বৈষম্যের উৎকট প্রকাশ ঘটেছে। কিছুদিন ধরে মালয়েশিয়ান বার কাউন্সিলের সাবেক সভানেত্রী মিজ অম্বিগা শ্রীনিবাসনকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি হত্যার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। কারণ তিনি এখন রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় এসে গেছেন যা আগামী সাধারণ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কুয়ালালামপুরের মধ্যবিত্ত আইনজীবী মিজ অম্বিগা বেরিশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা। এটি হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে প্রচারাভিযানে নিয়োজিত এনজিওগুলোর একটি কোয়ালিশন। মালয় ভাষায় বেরিশ শব্দের অর্থ বিশুদ্ধ। বেরিশ আন্দোলন মালয়েশিয়ায় গণতন্ত্র জোরদার করার প্রচারাভিযানে নিবেদিত। মালয়েশিয়ার শাসনব্যবস্থায় শাসক দল সংযুক্ত মালয় জাতীয় সংস্থার (উমনো) একচেটিয়া প্রাধান্য। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা লাভের থেকে এই দলটি অবিচ্ছিন্নভাবে ক্ষমতায় আছে। প্রধানত দুই সংখ্যালঘু দলকে নিয়ে গঠিত বারিশান ন্যাশনাল (বিএন) নামে একটি কোয়ালিশনের মাধ্যমে তারা দেশ শাসন করছে। একটি দল চৈনিকদের। অন্যটি ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের।
কিন্তু মিজ অম্বিগা রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় আসায় উমনোর অনেকে তাকে মস্তো হুমকি হিসাবে দেখছে। সেটা আরও বেশি হয়েছে এই জন্য যে আগামী বছরের প্রথমার্ধে মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক নির্বাচন দিতে অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে। কারণ তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা যথেষ্ট বেশি হলেও কোয়ালিশন অতটা জনপ্রিয় নয়।
এ অবস্থায় গত এপ্রিলে রাজধানীতে বেরিশ আন্দোলনের জনসমাবেশে বিপুল লোকসমাগম হয়। এদের মধ্যে বিরোধীদলীয় অনেক নেতাও ছিল। কিন্তু সমাবেশটি দাঙ্গাহাঙ্গামার মধ্যে পরিসমাপ্ত হয়। তখন থেকে উমনো এবং এর সমর্থনপুষ্টরা বেরিশ নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়ী জনগোষ্ঠীর একাংশের হাততালি পাওয়া গেলেও ব্যাপারটা সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই পটভূমিতে গত মে মাস থেকে অম্বিগাকে হয়রানি করা শুরু হয়েছে। হয়রানি নানাভাবে করা হয়। প্রথমে ছোটখাটো আকারে। পরে তা কুৎসিত রূপ নেয়। কয়েক শ’ লোকের স্বাক্ষরিত এক দরখাস্তে তাঁকে ইসলামবিদ্বেষী আখ্যায়িত করে মালয়েশিয়া থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানানো হয়। অম্বিগা বলেন, এসব দাবির পিছনে স্বভাবতই রাষ্ট্রের অনুমোদন বা সমর্থন ছিল। শেষে ২৬ জুন উমনোর বিশিষ্ট রাজনীতিক মোহাম্মদ আজিজ পার্লমেন্টে বলেন : ‘আমরা কি অম্বিগাকে বিশ্বাসঘাতকদের গণ্য করে তাঁকে ফাঁসিতে লটকানোর দ- দিতে দিতে পারি না?’ এ নিয়ে ঝড় ওঠে। প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দেয়া ছাড়াও অম্বিগার বিরুদ্ধে পত্রপত্রিকায় নানা বিদ্বেষমূলক লেখা বের হয়। স্বয়ং সেই এমপির রচিত নিবন্ধের মধ্যে দিয়ে মালয়েশিয়ার স্পর্শকাতর সংবাদপত্রে বর্ণবাদী ও জাতিবিদ্বেষী রাজনীতির আগুন জ্বলে ওঠে। মিজ অম্বিগা ভারতীয় সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট নেতা। দেশের ২০ লাখ ভারতীয় নানাভাবে বিভক্ত হলেও তারা দ্রুত অম্বিগার পিছনে এসে দাঁড়ায়। এমনকি কোয়ালিশনভুক্ত হলেও মালয়েশিয়ান ইন্ডিয়ান কংগ্রেস পার্টি তাদের রাজনৈতিক মিত্র সেই এমপির নিন্দা না করে পারেনি।
মিজ অম্বিগা বিশ্বাস করেন যে তাঁর ওপর মালয়ীদের পরিচালিত সমস্ত আক্রমণই বর্ণবিদ্বেষী। কারণ তাঁর বেরিশ আন্দোলনের যুগ্ম নেতা বিখ্যাত লেখক এ সামাদ সৈয়দ মালয়ী তাই তার ওপর কোন ধরনের আক্রমণ শানানো হয়নি। এমন তিক্ত পরিবেশে ভারতীয়রা বারিশান ন্যাশনালের বিরুদ্ধে যাবে কিনা পরিষ্কার নয়। জনগোষ্ঠীর ৮ শতাংশ ভারতীয় ঐতিহ্যগতভাবে বেশিরভাগই বারিশান ন্যাশনালকে ভোট দিয়ে আসলেও এখন তাদের সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেÑ বিশেষ করে যেসব এলাকায় অম্বিগার জনপ্রিয়তা আছে। অথচ ভারতীয়দের ভোট পেতে প্রধানমন্ত্রী নাজিবকে কম গলদঘর্ম হতে হয়নি। চলমান ঘটনায় নাজিবের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হতে পারে। নিজেকে তিনি উদারপন্থী দাবি করলেও সমালোচকদের মতে বর্ণবাদী হামলার রাস টেনে ধরতে তিনি তেমন কিছু করেননি।
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
No comments