অস্বীকারের সংস্কৃতি ত্যাগ করাই বাঞ্ছনীয়- সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশা

গত সোমবার প্রথম আলোয় ‘সড়ক-মহাসড়কের করুণ দুর্দশা, দুর্ভোগ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ যে বক্তব্য দিয়েছে, তা বাঞ্ছনীয় না হলেও অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ, সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রামাণ্য প্রতিবেদনের অনেক তথ্যকে ভিত্তিহীন, তথ্যভিত্তিক নয়,


উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইত্যাদি নেতিবাচক বিশেষণে ভূষিত করে অস্বীকার করায় অভ্যস্ত।
প্রথম আলোর সোমবারের প্রতিবেদন ছিল সরেজমিনে ঘুরে দেখে তৈরি করা সচিত্র প্রতিবেদন। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-খুলনাসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মহাসড়কের কয়েক শ কিলোমিটার অংশ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে—প্রতিবেদনের এই তথ্যকে ‘তথ্যভিত্তিক নয়’ বলে মন্তব্য করেছে সড়ক বিভাগ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের ৪০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা নাজুক—এটাও নাকি বাস্তবসম্মত নয়। তাহলে সারা দেশের মোট মহাসড়কের যে ১০ শতাংশ আর আঞ্চলিক সড়কের ২০ শতাংশ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে সড়ক বিভাগ স্বীকার করে, সেই সড়কগুলো কোথায়?
অবাক বিষয়, প্রথম আলোয় প্রকাশিত ছবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা অংশে যে খানাখন্দ রয়েছে, তা-ও ‘বাস্তবে দৃশ্যমান’ নয় বলে অস্বীকার করেছে সড়ক বিভাগ। বস্তুত, প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরদিনই ভালুকার বড়টিলা থেকে থানা মোড় পর্যন্ত মহাসড়কের খানাখন্দ ভরাটের কাজ শুরু করা হয়েছে। খানাখন্দ যদি বাস্তবে দৃশ্যমান না-ই হতো, তাহলে কেন জরুরি তৎপরতা শুরু করা হলো?
আসলে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর পরই সড়ক বিভাগ যে তৎপরতার সঙ্গে মহাসড়ক মেরামতের কাজ শুরু করেছে, সেটাই বাঞ্ছনীয় পদক্ষেপ। প্রতিবেদনের অধিকাংশ তথ্যকে ‘তথ্যভিত্তিক নয়’, ‘বাস্তবভিত্তিক নয়’ বলে অস্বীকৃতিমূলক বক্তব্য দেওয়া নিষ্প্রয়োজনীয় ছিল। সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সরকারের নজরে আনা; অতএব এর প্রামাণ্য তথ্যকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে না দিয়ে সরকার যদি ত্বরিত সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেয়, তাহলেই জনগণের মঙ্গল হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রামাণ্য তথ্য অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয় না।

No comments

Powered by Blogger.