পোশাক শিল্পের ৫৬ শীর্ষ নেতাই অশ্রমিক- অনুসন্ধানী প্রতিবেদন by তৌহিদুর রহমান
কেউ করছেন ওকালতি। কেউ নিয়োজিত ডাক্তারী পেশায়। আবার কেউ করছেন কনসাল্ট্যান্সি। পোশাক শিল্পশ্রমিক হিসেবে জীবনে একটি দিনের জন্যও কখনও কাজ করেননি তাঁরা। তবে এখন তাঁরা তাঁদের নিজস্ব পেশাগত পরিচয়ের গ-ি পেরিয়ে একজন পোশাক শিল্পশ্রমিক নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।
আর এসব অশ্রমিকই নিয়ন্ত্রণ করছেন পোশাক শিল্পশ্রমিক আন্দোলন। তবে পোশাক শিল্পমালিকরা মনে করেন শ্রমিকদেরই নেতৃত্ব দেয়া উচিত। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোশাক শিল্পশ্রমিক সংগঠনের ৫৬ শীর্ষ নেতার কেউ-ই শ্রমিক নন। এঁদের মধ্যে ৪১ শ্রমিক নেতা জীবনে কোনদিনই পোশাক শিল্পশ্রমিক ছিলেন না। অপরদিকে ১৫ নেতা এক সময়ে পোশাক শিল্পশ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তবে এখন তাঁরা কেউ-ই শ্রমিক নন। অথচ এসব নেতা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এসব শ্রমিক নেতাই শ্রমিকদের নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছেন। শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে রাজপথে লড়াই করছেন। তবে শ্রমিক না হয়েও শ্রমিক নেতা হওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত সেসব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৪১ পোশাক শিল্পশ্রমিক নেতা কখনই পোশাক শিল্পের শ্রমিক ছিলেন না। এসব শ্রমিক নেতা হলেন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জাতীয় গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাদির, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ও লেদার ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী জোটের সভাপতি গোলাম রব্বানী জামিল, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি ফেরদৌসি বেগম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ বাদল, বাংলাদেশ স্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন ব্যাপারী, বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি হোসেন মোল্লা, বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ আলী, টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল গনি, সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আলী রেজা হায়দার, সমন্বিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পথিক, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী জোটের সভাপতি গোলাম রব্বানী জামিল, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাহেব উল্লাহ, গার্মেন্টস ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, বাংলদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান, জাতীয়তাবাদী গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সভাপতি রোকেয়া সুলতানা আনজু, জাতীয় নিট এ্যান্ড ডাইং শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জামান চৌধুরী, বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মালা রানী, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কেন্দ্রের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ রফিক, জাতীয়তাবাদী গার্মেন্টস শ্রমিক দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন নাহার লতা, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহিনা আক্তার, পোশাক ও বস্ত্র শিল্প শ্রমিক লীগের সভাপতি কামরুল আলম, জনস্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট দোলোয়ার হোসেন, গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কার্স লীগের সভাপতি শাহাজান খান ও সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা নিজাম, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ফয়েজ হোসেন, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি ডাক্তার শামসুল আলম, গার্মেন্টস বস্ত্র-দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শহিদুল্লাহ বাদল, স্বাধীন গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি আফজাল বেপারী।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৫ শীর্ষ পোশাক শিল্পশ্রমিক নেতা এক সময় পোশাক শিল্পশ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে এখন তাঁরা আর শ্রমিক নন। শ্রমিক না হলেও নিয়োজিত রয়েছেন শ্রমিক নেতা হিসেবে। এসব শ্রমিক নেতা হলেনÑবাংলাদেশ গার্মেন্টস এ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমিন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান, গার্মেন্টস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার ও সাধারণ সম্পাদক আলেয়া বেগম, গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আলমগীর রনি, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীমা নাসরিন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন, বাংলাদেশ ওএসএফ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম সবুজ, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি লীমা ফেরদৌস, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংঘের সভাপতি জুবরান আলী জুয়েল, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি হেলেনা বেগম।
কোন কোন পোশাক শ্রমিক নেতা ওকালতি পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। ওকালতিই তাঁদের মূল পেশা। তবে এ্যাডভোকেট হলেও তাঁরা শ্রমিক নেতা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, জনস্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট দোলোয়ার হোসেন, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ। শুধু এ্যাডভোকেট নন, শ্রমিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তারও। গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি ডাক্তার শামসুল আলম। সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আলী রেজা হায়দার, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা কনসাল্ট্যান্সি করেন। আবার অনেক শ্রমিক নেতা বিদেশ থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়ে চলেছেন।
শ্রমিক নেতাদের মধ্যে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার আওয়াজ ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। তিনি বিদেশী বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। গার্মেন্টস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার ও সাধারণ সম্পাদক আলেয়া বেগম সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নামে একটি সংস্থা পরিচালনা করেন। এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা এসব শ্রমিক সংগঠন করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনও করেছেন।
পোশাক শিল্পের শ্রমিক হিসেবে কখনও কাজ না করেই এখন একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে কেন কাজ করছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, বেশির ভাগ পোশাক শিল্পশ্রমিক লেখাপড়া কম জানেন। অপরদিকে মালিকপক্ষ অনেক বেশি শিক্ষিত। সে কারণে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলার মতো মেধা তাদের (শ্রমিক) নেই। সে কারণে শ্রমিকদের পক্ষে লড়াই করতেই শ্রমিক নেতা হয়েছি। দেশের যে কোন নাগরিক শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করতে পারেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি হেলেনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম। হেলেনা বেগম এক সময় শ্রমিক ছিলেন। তবে এখন আর শ্রমিক নন। আর জাহানারা বেগম কখনই শ্রমিক ছিলেন না। শ্রমিক না হয়েও কেন শ্রমিক আন্দোলন করছেনÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহানারা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত রয়েছি। শ্রমিকদের পাশে রয়েছি। এটা তো দোষের নয়।
শ্রম অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে সাত হাজার ৪৯১টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এরমধ্যে পোশাক শিল্প খাতে ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে ১৩০টি । এসব ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১১৪টি। আর চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ১৬টি। অপরদিকে সারাদেশে ১৬৪টি ফেডারেশনের মধ্যে গার্মেন্টেস খাতে জাতীয় ফেডারেশন রয়েছে ৩৬টি।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ১৮০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক না হলে তিনি টেড্র ইউনিয়নের সদস্য হতে পারবেন না। তবে ফেডারেশন সংগঠন করার ক্ষেত্রে আইনে সুযোগ রয়ে গেছে। মূলত ফেডারেশন করার সুযোগ নিয়েই অ-শ্রমিক হয়েও নেতারা নেতৃত্ব করছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট এ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাক শিল্প শ্রমিক নেতাদের শ্রমিক হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। পোশাক শিল্প শ্রমিক হয়ে নেতৃত্ব দিলে শ্রমিকদের প্রতি দরদ থাকবে। আর অ-শ্রমিক হয়ে নেতৃত্ব দিলে শ্রমিকদের প্রতি দরদ থাকবে না। তিনি বলেন, শুধু পোশাক শিল্পশ্রমিকদেরই এই খাতের নেতৃত্বে আসা প্রয়োজন। আর সেটা না হলো এ শিল্পের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা সম্ভব নয়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিকাইল শিপার জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদেরই নেতৃত্বে আসা প্রয়োজন। ট্রেড ইউনিয়ন আইন অনুযায়ী অ-শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার কোন সুযোগ নেই। তবে ফেডারেশনে বিশ শতাংশ অ-শ্রমিক নেতৃত্ব দিতে পারেন। সে অনুযায়ী অ-শ্রমিকরা শ্রমিক নেতৃত্বে আছেন।
উল্লেখ্য, বিজিএমইর হিসাব অনুযায়ী দেশে ৫ হাজার পোশাক শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক। এসব শ্রমিকের মধ্যে প্রায় আশি শতাংশই নারী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ৪১ পোশাক শিল্পশ্রমিক নেতা কখনই পোশাক শিল্পের শ্রমিক ছিলেন না। এসব শ্রমিক নেতা হলেন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জাতীয় গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কাদির, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ও লেদার ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহম্মেদ, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী জোটের সভাপতি গোলাম রব্বানী জামিল, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি ফেরদৌসি বেগম, বাংলাদেশ গার্মেন্টস দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ বাদল, বাংলাদেশ স্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন ব্যাপারী, বাংলাদেশ গার্মেন্টস টেক্সটাইল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি হোসেন মোল্লা, বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ আলী, টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল গনি, সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আলী রেজা হায়দার, সমন্বিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম পথিক, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী জোটের সভাপতি গোলাম রব্বানী জামিল, বাংলাদেশ সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাহেব উল্লাহ, গার্মেন্টস ঐক্য ফোরামের সভাপতি মোশরেফা মিশু, বাংলদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান, জাতীয়তাবাদী গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের সভাপতি রোকেয়া সুলতানা আনজু, জাতীয় নিট এ্যান্ড ডাইং শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জামান চৌধুরী, বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মালা রানী, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কেন্দ্রের সভাপতি আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ রফিক, জাতীয়তাবাদী গার্মেন্টস শ্রমিক দলের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন নাহার লতা, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহিনা আক্তার, পোশাক ও বস্ত্র শিল্প শ্রমিক লীগের সভাপতি কামরুল আলম, জনস্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট দোলোয়ার হোসেন, গার্মেন্টস টেইলার্স ওয়ার্কার্স লীগের সভাপতি শাহাজান খান ও সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা নিজাম, জাতীয় সোয়েটার গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ফয়েজ হোসেন, গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি ডাক্তার শামসুল আলম, গার্মেন্টস বস্ত্র-দর্জি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শহিদুল্লাহ বাদল, স্বাধীন গার্মেন্টস ফেডারেশনের সভাপতি আফজাল বেপারী।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৫ শীর্ষ পোশাক শিল্পশ্রমিক নেতা এক সময় পোশাক শিল্পশ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। তবে এখন তাঁরা আর শ্রমিক নন। শ্রমিক না হলেও নিয়োজিত রয়েছেন শ্রমিক নেতা হিসেবে। এসব শ্রমিক নেতা হলেনÑবাংলাদেশ গার্মেন্টস এ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি লাভলী ইয়াসমিন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি শফিকুল ইসলাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান, গার্মেন্টস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার ও সাধারণ সম্পাদক আলেয়া বেগম, গণতান্ত্রিক গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি আলমগীর রনি, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শামীমা নাসরিন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান নয়ন, বাংলাদেশ ওএসএফ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম সবুজ, গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি লীমা ফেরদৌস, বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক সংঘের সভাপতি জুবরান আলী জুয়েল, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের সভাপতি শবনম হাফিজ ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি হেলেনা বেগম।
কোন কোন পোশাক শ্রমিক নেতা ওকালতি পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। ওকালতিই তাঁদের মূল পেশা। তবে এ্যাডভোকেট হলেও তাঁরা শ্রমিক নেতা। এঁদের মধ্যে রয়েছেন টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাইল, জনস্বাধীন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট দোলোয়ার হোসেন, গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ। শুধু এ্যাডভোকেট নন, শ্রমিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ডাক্তারও। গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি ডাক্তার শামসুল আলম। সংযুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আলী রেজা হায়দার, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা কনসাল্ট্যান্সি করেন। আবার অনেক শ্রমিক নেতা বিদেশ থেকে অর্থ সহযোগিতা নিয়ে চলেছেন।
শ্রমিক নেতাদের মধ্যে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার আওয়াজ ফাউন্ডেশন গড়ে তুলেছেন। তিনি বিদেশী বিভিন্ন দাতা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। গার্মেন্টস এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার ও সাধারণ সম্পাদক আলেয়া বেগম সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নামে একটি সংস্থা পরিচালনা করেন। এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা এসব শ্রমিক সংগঠন করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনও করেছেন।
পোশাক শিল্পের শ্রমিক হিসেবে কখনও কাজ না করেই এখন একজন শ্রমিক নেতা হিসেবে কেন কাজ করছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, বেশির ভাগ পোশাক শিল্পশ্রমিক লেখাপড়া কম জানেন। অপরদিকে মালিকপক্ষ অনেক বেশি শিক্ষিত। সে কারণে শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে কথা বলার মতো মেধা তাদের (শ্রমিক) নেই। সে কারণে শ্রমিকদের পক্ষে লড়াই করতেই শ্রমিক নেতা হয়েছি। দেশের যে কোন নাগরিক শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করতে পারেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি হেলেনা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক জাহানারা বেগম। হেলেনা বেগম এক সময় শ্রমিক ছিলেন। তবে এখন আর শ্রমিক নন। আর জাহানারা বেগম কখনই শ্রমিক ছিলেন না। শ্রমিক না হয়েও কেন শ্রমিক আন্দোলন করছেনÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহানারা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত রয়েছি। শ্রমিকদের পাশে রয়েছি। এটা তো দোষের নয়।
শ্রম অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে সাত হাজার ৪৯১টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে। এরমধ্যে পোশাক শিল্প খাতে ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে ১৩০টি । এসব ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১১৪টি। আর চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ১৬টি। অপরদিকে সারাদেশে ১৬৪টি ফেডারেশনের মধ্যে গার্মেন্টেস খাতে জাতীয় ফেডারেশন রয়েছে ৩৬টি।
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ১৮০ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক না হলে তিনি টেড্র ইউনিয়নের সদস্য হতে পারবেন না। তবে ফেডারেশন সংগঠন করার ক্ষেত্রে আইনে সুযোগ রয়ে গেছে। মূলত ফেডারেশন করার সুযোগ নিয়েই অ-শ্রমিক হয়েও নেতারা নেতৃত্ব করছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট এ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, পোশাক শিল্প শ্রমিক নেতাদের শ্রমিক হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। পোশাক শিল্প শ্রমিক হয়ে নেতৃত্ব দিলে শ্রমিকদের প্রতি দরদ থাকবে। আর অ-শ্রমিক হয়ে নেতৃত্ব দিলে শ্রমিকদের প্রতি দরদ থাকবে না। তিনি বলেন, শুধু পোশাক শিল্পশ্রমিকদেরই এই খাতের নেতৃত্বে আসা প্রয়োজন। আর সেটা না হলো এ শিল্পের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা সম্ভব নয়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মিকাইল শিপার জনকণ্ঠকে বলেন, শ্রমিকদেরই নেতৃত্বে আসা প্রয়োজন। ট্রেড ইউনিয়ন আইন অনুযায়ী অ-শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার কোন সুযোগ নেই। তবে ফেডারেশনে বিশ শতাংশ অ-শ্রমিক নেতৃত্ব দিতে পারেন। সে অনুযায়ী অ-শ্রমিকরা শ্রমিক নেতৃত্বে আছেন।
উল্লেখ্য, বিজিএমইর হিসাব অনুযায়ী দেশে ৫ হাজার পোশাক শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩৫ লাখ শ্রমিক। এসব শ্রমিকের মধ্যে প্রায় আশি শতাংশই নারী।
No comments