ক্ষমতায়ন- অলিম্পিকে দ্রুততম মানবীদের কথা

১৯৮৮ ফ্লোরেন্স গ্রিফিথ জয়নার লম্বা লম্বা হাতের নখ! নখগুলোতে আবার নানা রঙের নেইলপলিশ দেওয়া! প্রস্তুতি অবস্থায় যখন ট্র্যাকে হাত রাখেন, তখন লম্বা লম্বা বিভিন্ন রঙের নখগুলো দেখা যায়। তাঁর কৃতিত্বের পাশাপাশি এমন আজব নখের দিকে তাই নজর থাকে অনেকেরই।


দ্রুততম মানবী হিসেবে ১৯৮৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদকজয়ী গ্রিফিথ জয়নার দৌড়ের পাশাপাশি আলোচিত ছিলেন নিজের নখগুলো নিয়েও। একই বছরের অলিম্পিকে ১০০, ২০০ ও ৪০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণপদক জিতেছেন তিনি। সে বছর মাত্র ১০.৫৪ সেকেন্ডে দৌড় সম্পন্ন করে রেকর্ড সৃষ্টি করা গ্রিফিথের পরের প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকে মাত্র ০.৩ সেকেন্ডে এগিয়ে ছিলেন তিনি! ১৯৫৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্ম গ্রিফিথের। পুরো নাম ফ্লোরেন্স দিলোরাজ গ্রিফিথ জয়নার—সংক্ষেপে যিনি ফ্লো-জো নামে পরিচিত। লস অ্যাঞ্জেলেসের জর্ডান হাইস্কুলে প্রথম দৌড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন গ্রিফিথ। ১৯৮৩ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী গ্রিফিথ অলিম্পিকের বাইরে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাথলেটিক ফেডারেশন আয়োজিত ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপেও স্বর্ণপদক জিতে নেন। গ্রিফিথের স্বামী আল জয়নারও ছিলেন অ্যাথলেট। আলোচিত এই দ্রুততম মানবী ১৯৯৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান।

১৯৯২ ও ১৯৯৬
গেইল ডেভার্স
বড় নখের জন্য আলোচিত আরেক দ্রুততম মানবী গেইল ডেভার্স। তবে নখের জন্য নয়, গেইল ছিলেন আরও একটি কারণে আলোচিত। অলিম্পিক ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড বিভাগে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন তিনি। ১৯৯০ সালে অত্যধিক থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হওয়ার কারণে গ্রেভস রোগে আক্রান্ত হন তিনি। এ রোগ নিরাময়ের জন্য তিনি রেডিয়ো-অ্যাকটিভ আয়োডিন চিকিৎসা এবং থাইরয়েড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিও নেন। এত কিছুর পরও এ রোগ থেকে মুক্তি পেয়ে আবার ট্র্যাকে ফিরে যাওয়া এক কঠিন কাজই ছিল। তবে সেই কঠিন কাজটি করেই আবার প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন গেইল ডেভার্স। এ জন্যও বিশেষভাবে আলোচিত এ দ্রুততম মানবী। ১৯৬৬ সালের ১৯ নভেম্বর যুক্তরাজ্যে জন্ম নেওয়া গেইলের পুরো নাম ইয়োলান্ডা গেইল ডেভার্স। ১৯৯০ সালে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর আবার সুস্থ হয়ে ১৯৯১ সালের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার দৌড়ে রৌপ্য জেতেন। এরপর একই ট্র্যাকে ১৯৯২ ও ১৯৯৬ সালে সোনা জেতেন গেইল। এর পাশাপাশি গেইলের তালিকায় রয়েছে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচটি স্বর্ণপদক, ওয়ার্ল্ড ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপে চারটি স্বর্ণপদক এবং প্যান আমেরিকা গেমসে দুটি স্বর্ণপদক।

২০০৪
ইউলিয়া নেস্তেরেঙ্কো
সৌন্দর্য ও ক্ষিপ্রগতির দিক দিয়ে আলোচিত দ্রুততম মানবী ইউলিয়া নেস্তেরেঙ্কো। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বেলারুশের এ তারকা ২০০৪ সালে স্বর্ণপদক জিতে চমক লাগিয়ে দেন। আর এ কৃতিত্বের জন্য দেশটির সরকার ইউলিয়া নেস্তেরেঙ্কোর নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করে। অলিম্পিক ছাড়া ইউলিয়া অংশ নিয়েছেন ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড ইনডোর চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে। তবে স্বর্ণপদক একবারই পেয়েছেন, যা অলিম্পিকে সেরা দ্রুততম মানবী হয়ে। ২০০৪ সালের এথেন্স অলিম্পিক গেমসে বেশ আলোচিত ছিলেন ইউলিয়া।

২০০৮ ও ২০১২
শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস
এবারের আসরসহ দ্বিতীয়বারের মতো দ্রুততম মানবী হওয়া শেলি-অ্যান ফ্রেজার-প্রাইস ‘দ্য পকেট রকেট’ নামে পরিচিত। এ কীর্তি গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওমিয়া টিয়াস (১৯৬৪ ও ৬৮) ও গেইল ডেভার্সের (১৯৯২ ও ৯৬) সঙ্গী হয়ে গেলেন তিনি। ১৯৮৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর জ্যামাইকায় জন্ম শেলির। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্রথম দ্রুততম মানবী হিসেবে পর পর দুবার স্বর্ণপদক জিতলেন শেলি। মাত্র ২৫ বছর বয়সে এমন কৃতিত্ব অর্জন করে বেশ আলোচিত এখন শেলি। অলিম্পিকের বাইরে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে দুটি, ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক ফাইনালে একটি, ক্রিফটা গেমসে একটি, সিএসি জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে একটিসহ জিতেছেন একাধিক রৌপ্যপদকও।
তবে ভালো করলেও ২০১০ সালে দাঁতের ব্যথার জন্য এক ওষুধ খেয়ে ডোপ টেস্টে ধরা পড়েছিলেন। এর ফলে নিষিদ্ধও ছিলেন ছয় মাস। তবে এ কালো দাগটি মানসিকভাবে বেশ ভুগিয়েছে শেলিকে। যদিও পরে প্রমাণ হয়েছে যে শেলির ঘটনাটা সত্যি ছিল না। তিনি শুধু ওষুধই নিয়েছিলেন, কোনো মাদক নয়। তবে সামনে আরও রেকর্ড গড়ার জন্য পথ খোলা রয়েছে শেলির। এখন দেখার অপেক্ষা, সামনে কী করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.