নাম বদলালেই তা বৈধতা পাবে না-চাঁদাবাজির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের উদ্যোগ

সম্প্রতি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগমন্ত্রী, নৌপরিবহনমন্ত্রী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, ঢাকা মহানগর এলাকার বাস-মিনিবাস ও আন্তজেলা পরিবহনের যানবাহন থেকে চাঁদা তোলা হবে, সেসব চাঁদার টাকা নেবে মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।


ঢাকায় গাড়িপ্রতি ৭০ টাকা, অন্যত্র ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক।
এটি একটি অদ্ভুত সিদ্ধান্ত। কেননা, পরিবহন খাতের মালিক ও শ্রমিকেরা তাঁদের নিজ নিজ সংগঠনকে চাঁদা দেবেন কি দেবেন না, দিলে কী ভিত্তিতে কী হারে দেবেন—এগুলো মালিক-শ্রমিক ও তাঁদের সংগঠনগুলোর নিজস্ব বিষয়। অবশ্য নৌমন্ত্রী এটাকে চাঁদা না বলে বলেছেন ‘সার্ভিস চার্জ’, যার উদ্দেশ্য পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ করা! তিনি আরও বলেছেন, সংগঠন চালাতে হলে টাকা লাগে, এ জন্য চাঁদা তোলায় কোনো দোষ নেই। কিন্তু বিশুদ্ধ চাঁদাবাজির নাম পাল্টে ‘সার্ভিস চার্জ’ বললেই সেটা বৈধ হয় না। সংগঠন বলতে তিনি যা বোঝাচ্ছেন, তা চালাতে গেলে কত টাকা লাগে, কীভাবে সেই টাকা সংগ্রহ করা হবে—এসব সিদ্ধান্ত ওই সংগঠনের সদস্য ও নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে জবরদস্তি সংগঠিত অন্যায়ের রূপ ধারণ করে। অনুগ্রহভাজন নেতাদের চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়ায় মন্ত্রী পর্যায়ের ব্যক্তিদের হস্তক্ষেপ স্পষ্টত অন্যায় ও অনিয়ম। ওই নেতারা সাধারণ মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেন এবং সেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মন্ত্রীদের শরণাপন্ন হন, এসবও বিবেচনার বিষয়।
পরিবহন খাতে মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনের সংখ্যা অনেক; তাদের মধ্যে সরকারের বা মন্ত্রীর অনুসারী সংগঠনকে চাঁদা তোলার একচেটিয়া অধিকার দিলে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। পরিবহন খাতে পথে পথে চাঁদাবাজি হয়, এটা সরকারের যদি জানাই থাকে, তবে তা আইনানুগ পন্থায় বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। সংগঠনের নেতাদের সুপারিশে চাঁদা আদায়বিষয়ক একটা নীতিমালা গঠন করা হবে বলে খবর বেরিয়েছে। এর আইনগত ভিত্তি কী হবে, তা একটি বড় প্রশ্ন।
এসব চাঁদাবাজির সব আর্থিক চাপ গিয়ে পড়ে যাত্রীসাধারণের ওপর। পরিবহন খাতে বিদ্যমান চাঁদাবাজির চর্চাকে সরকারের ক্ষমতাধর কতিপয় ব্যক্তির উদ্যোগে বৈধতার লেবাস পরানো হলে অবৈধ চর্চাটিকে প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হবে। এসবের পরিবর্তে বরং চেষ্টা করা উচিত, কীভাবে চাঁদাবাজি বন্ধ করে পরিবহন-ব্যয় কমানো যায়, যার সুফল পাবে যাত্রীসাধারণ এবং এতে প্রশংসিত হবে সরকার।

No comments

Powered by Blogger.