সময়চিত্র-আদালতের মর্যাদা কীভাবে রক্ষিত হবে by আসিফ নজরুল

১৪ সেপ্টেম্বর একটি ছবি ছাপানো হয়েছে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকায়। ছবিটি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান বিচারপতি ও অন্য কয়েকজন বিচারপতির। প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে গত শনিবার তাঁরা গণভবনে গিয়েছিলেন। ছবিটির উৎস সরকারের একটি দপ্তর, প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট।


প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বাসভবনে গিয়ে প্রধান বিচারপতির শুভেচ্ছা জানানোর নজির আমার জানামতে আর নেই। এই ঘটনা সর্বোচ্চ আদালতের জন্য মর্যাদাহানিকরও মনে হতে পারে কারও কারও কাছে। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোতে (বিশেষ করে সাংবিধানিক, ফৌজদারি, ট্যাক্স-সংক্রান্ত) সরকার একটি পক্ষ হিসেবে জড়িত থাকে। সরকার বলতে এখানে নির্বাহী বিভাগকেই বোঝানো হয়। সেই নির্বাহী বিভাগের প্রধান হচ্ছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ধরনের সামাজিক মেলামেশা সে জন্য মানুষকে ভুল ইঙ্গিত দিতে পারে। সম্ভবত এই বিবেচনা থেকেই আমরা বিচারপতিদের কোনো সরকারপ্রধানের কাছে গিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে আগে কখনো দেখিনি।
এর আগে কাছাকাছি একটি ঘটনা ঘটেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে। তখন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মাহমুদূল আমীন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিচারপতিদের কিছু সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। তিনি বিনা কাজে সেখানে যাননি, অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে করেও নিয়ে যাননি। তার পরও তখন এই ঘটনার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা করা হয়েছিল। বর্তমান প্রধান বিচারপতির সে ঘটনা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। তাঁর সঙ্গে যেসব বিচারপতি গিয়েছেন তাঁদেরও নিকট-অতীতের এই ঘটনা ভুলে যাওয়ার কথা নয়। প্রধান বিচারপতি যদি তাঁদের বলেও থাকেন, তাহলেও সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা তাঁদের ছিল না।
প্রধান বিচারপতির আচরণ নিয়ে অতীতেও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর চট্টগ্রাম সমিতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন সমিতি বা বাংলাদেশ আইন সমিতির মতো সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। বিচারপতিদের আচরণবিধির সঙ্গে এগুলো কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি তার পরও থামেননি। মাত্র মাসখানেক আগেই তিনি একটি লিটল ম্যাগাজিন আয়োজিত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে গিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এসব প্রশ্ন উদ্রেককারী ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন আদালতের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব উচ্চ আদালতই অন্যদের বিভিন্নভাবে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। প্রধান বিচারপতি নিজেও এ ক্ষেত্রে কঠোর ভূমিকা নিচ্ছেন। তিনি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতিরা আদালত অবমাননার দায়ে মাহমুদূর রহমানকে নজিরবিহীনভাবে দণ্ডিত করেছেন। উচ্চ আদালত আরও কিছু ক্ষেত্রে তাঁর মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে সাধারণ নাগরিকদের বিভিন্নভাবে তিরস্কৃত বা শাস্তিদান করেছে।
উচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষা করা অবশ্যই সবার দায়িত্ব। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে এই মর্যাদা সবচেয়ে বেশি রক্ষিত হতে পারে বিচারপতিদের আচরণ ও কাজের মধ্য দিয়েই। বিচারপতিদের কেউ যদি এসব বিষয়ে দৃষ্টিযোগ্যভাবে সচেতন না থাকেন, আবার কেউ যদি আদালতের সম্মান রক্ষার কথা বলে সমালোচকদের নজিরবিহীন শাস্তি দেন, তাহলে তা সবার কাছে মানানসই মনে হবে না। আদালতের রায়ে কোনো রকম অসংগতি থাকলেও তা আদালতের মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে না।

২.
আদালত অবমাননার দায়ে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং এর একজন প্রতিবেদকের শাস্তি প্রদানের ঘটনা সাম্প্রতিক। এই রায় নিয়ে আইরিন খান, আতাউস সামাদ, মিজানুর রহমান খানসহ অনেকের লেখা ছাপা হয়েছে, বহু ব্লগে পাঠকেরা নানা মন্তব্য করেছেন। আমি খুব কম লেখা ও মন্তব্যে এই রায়ের প্রতি সমর্থন লক্ষ করেছি। আইনশাস্ত্রে একটি বহুল প্রচলিত নীতি হচ্ছে, ন্যায়বিচার শুধু করলেই হবে না, ন্যায়বিচার যে হয়েছে তা প্রতীয়মান হতে হবে। মাহমুদুর রহমানের রায়ের ক্ষেত্রে তা কোনো কোনো স্থানে প্রতীয়মান হয়নি। ন্যায়বিচারের অন্যতম শর্ত হচ্ছে, অন্তত একটি আপিল করার অধিকার প্রদান। খুনি, ধর্ষণকারী এমনকি যুদ্ধাপরাধীরা পর্যন্ত এই অধিকার বাংলাদেশ এবং অন্য সব দেশে পেয়ে থাকেন। এই অধিকার নিশ্চিত করার জন্য পৃথিবীর বহু দেশে আপিল বিভাগ বা সর্বোচ্চ বিচারিক প্রতিষ্ঠানকে নিজে নিজে বিচার করার ক্ষমতা (অর্থাৎ আদি এখতিয়ার) প্রদান করা হয়নি। আপিল বিভাগের আদি এখতিয়ার আছে, বাংলাদেশের সংবিধানেও তা বলা নেই। সংবিধান সুস্পষ্টভাবে আদি এখতিয়ার প্রদান করেছে হাইকোর্ট বিভাগকে, যাতে তার রায়ের ভুল-বিচ্যুতি উচ্চতর বিভাগ হিসেবে আপিল বিভাগ আপিল চলাকালে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। কিন্তু মাহমুদুর রহমানকে নজিরবিহীনভাবে বিচার করে শাস্তি প্রদান করেছে আপিল বিভাগ নিজে। এখন বাংলাদেশে তিনি এবং তাঁর প্রতিবেদকই হচ্ছেন সম্ভবত একমাত্র মানুষ, যাঁদের কোনো আপিলের অধিকার নেই। আমাদের সংবিধানে বর্ণিত আইনের দৃষ্টিতে সমতার নীতি এতে রক্ষিত হলো কি?
তাঁকে যে মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গেও আপিল বিভাগের একজন কর্মরত বিচারক এবং সাবেক বিচারপতি গোলাম রাব্বানীসহ কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। আদালত অবমাননা আইন, ১৯২৬ অনুসারে আদালত অবমাননার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং/অথবা দুই হাজার টাকা জরিমানা। আইনে এও বলা আছে যে অন্য কোনো আইনে যা কিছুই লেখা থাক না কেন, হাইকোর্ট এর চেয়ে বেশি কোনো শাস্তি দিতে পারবে না। আইনে এ কথা জোরের সঙ্গে বলার কারণ এই যে আগে আদালত অবমাননার শাস্তি নির্ধারণে বিচারকদের ক্ষমতা ছিল অবারিত এবং অতীতে এর বহু বিতর্কিত প্রয়োগ হয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা কেবল সংসদের। আমাদের সংবিধানে সুপ্রিম কোর্টকে এবং আপিল বিভাগের বিধিমালায় আপিল বিভাগকে আইনসাপেক্ষে বা আইন অনুসারে আদালত অবমাননার শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আদালত অবমাননার জন্য আপিল বিভাগ সর্বোচ্চ কত শাস্তি দিতে পারবে, এটি নির্ধারণ করে কোনো আইন আজ পর্যন্ত প্রণীত হয়নি। আপিল বিভাগ এ ক্ষেত্রে অন্তত ১৯২৬ সালের আইনের সীমারেখার মধ্যে থাকতে পারতেন। তাঁরা যে মাহমুদুর রহমানকে অতিরিক্ত শাস্তি দিলেন, তা একটি খারাপ নজির হয়ে থাকবে। কারণ এর তাত্ত্বিক মানে হচ্ছে, ভবিষ্যতে উল্লিখিত আইন না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা আপিল বিভাগ নিজে নিজেকে প্রদান করেছেন। এই ক্ষমতা বিশেষ করে অনির্বাচিত সরকারের আমলে বিভিন্ন মহল কর্তৃক অপব্যবহারের চেষ্টা করা হতে পারে।
১৯২৬ সালের আইনের নির্দিষ্ট দণ্ডের বিষয়টি অনুসরণ না করলেও এই আইন থেকে উদ্ভূত যে সেকেলে দৃষ্টিভঙ্গি সেটা কিন্তু ঠিকই অনুসরণ করেছেন আপিল বিভাগ। তাঁরা আদালত সম্পর্কে মাহমুদুর রহমানের অবমাননাকর মন্তব্যগুলো সত্য ছিল কি না, তা পরীক্ষা করে দেখেননি। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সত্যপ্রকাশকে আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য করা হয় না। ভারতে ২০০৬ সালের আইনে সত্যপ্রকাশকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের আইনে বিদ্বেষপ্রসূত কোনো উদ্দেশ্য না থাকলে এমনকি বিকৃত তথ্য প্রকাশ করলেও তা আদালত অবমাননা হবে না। আমাদের দেশেও অতীতে সত্যপ্রকাশের জন্য আদালত অবমাননা হয়নি, এ ধরনের নজির আছে (যেমন মানবজমিন মামলা)। সত্য প্রকাশ করা হয়েছিল বলেই অতীতে আমরা দুর্নীতিপরায়ণ বা মিথ্যে সার্টিফিকেট প্রদানকারী বিচারপতিকে হাইকোর্ট ত্যাগ করতে বাধ্য হতে দেখেছি। এখন আপিল বিভাগের রায়ের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে যদি এ ধরনের কোনো বিচারপতি আদালত অবমাননার দণ্ড দিয়ে দেন, তা কি শুভকর হবে?
আদালত অবমাননা আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, আদালত নামক মহান প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ রক্ষা করা। এর উদ্দেশ্য সমালোচকদের ঢালাওভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করা নয়। ঔপনিবেশিক আমলে ১৯২৬ সালের আইনটি খুব সৎ উদ্দেশ্যে করা হয়নি। উচ্চ আদালত বহু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে জনস্বার্থ মামলায় আইন ও সংবিধানের প্রগতিশীল ব্যাখ্যা দান করে প্রশংসিত হয়েছেন। মাহমুদুর রহমানের মামলায় ১৯২৬ সালের আইনটির প্রগতিশীল ব্যাখ্যা করার সুযোগ উচ্চ আদালতের ছিল। তাঁরা তা করলেই বরং উচ্চ আদালতের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পেত।

৩.
উচ্চ আদালতের মর্যাদা বিশেষভাবে সম্পর্কিত সংবিধানসংক্রান্ত রায়গুলোর সঙ্গে। এসব রায়ে রাজনৈতিক ইতিহাসের আইনগত পর্যালোচনার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশের মতো তীব্রভাবে বিভাজিত একটি রাজনৈতিক সমাজে সেই রায় তাই পড়া হয় নানা প্রত্যাশা এবং একই সঙ্গে সন্দেহ নিয়ে।
সম্প্রতি উচ্চ আদালত পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী-সংক্রান্ত রায় দিয়েছেন। আমার বিশ্বাস, এসব রায় জনমনে প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। এসব রায়ে প্রত্যাশিতভাবেই সামরিক শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে বহু বিশ্লেষক প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তাই বলে রায়গুলো বিতর্কমুক্ত থাকেনি। যেমন: পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে বঙ্গবন্ধুর আমলে কৃত চতুর্থ সংশোধনীর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ক্ষেত্রগুলোতে পঞ্চম সংশোধনীর বিধানগুলো বহাল রাখা হয়েছে। কেন একটি বৈধ সংশোধনীর (চতুর্থ) তুলনায় অবৈধ সংশোধনী (পঞ্চম) প্রাধান্য পেল, তার সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা করতে হলে চতুর্থ সংশোধনীর অগণতান্ত্রিক দিকগুলো আলোচনা করা প্রয়োজন ছিল। রায়ে তা অনেকাংশে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার একই রায়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে কৃত সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনকে মাইনর চেঞ্জেস (ছোটখাটো পরিবর্তন) হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। অথচ এই পরিবর্তনের মাধ্যমেই সংবিধানে মৌলিক অধিকার-পরিপন্থী বিধান সংযোজনের পথ সুগম হয়েছে।
সপ্তম সংশোধনী মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় আমরা পাইনি এখনো। তবে এই রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশে কেবল ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত এরশাদের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, বাকি সময়ে তাঁর শাসনামল বৈধ ছিল। এরশাদ এখন বলার সুযোগ পাবেন যে ১৯৮৭ ও ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল একটি বৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন (নাকি যড়যন্ত্র?)। তিন জোটের যে দলিলে এরশাদকে অবৈধ শাসক বলা হয়েছে, সেই দলিলও কি তাহলে এখন অবৈধ বা মানহানিকর হয়ে গেল না? জয়নাল, দীপালি সাহা, সেলিম, দেলোয়ার, বসুনিয়া, নূর হোসেন তাহলে রক্ত দিয়েছিলেন একজন বৈধ শাসককে উৎখাত করতে গিয়ে? হাইকোর্টের আদেশের এমন অপব্যাখ্যা করার সুযোগ কি আদেশের মধ্যেই রয়ে গেল না? পূর্ণাঙ্গ রায়ে এর কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না থাকলে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য তা শুভকর হবে না।

৪.
বাংলাদেশের মতো দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশে মানুষের শেষ ভরসার স্থল হচ্ছে আদালত। এখানে নির্বাহী বিভাগের আচরণ লুটেরা ও অত্যাচারীর মতো। সংসদ থাকে নির্বাহী বিভাগের তল্পিবাহক হয়ে। দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন বা মানবাধিকার কমিশন কাজ করে বা বসে থাকে সরকারের ডিকটেশনে। সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে রাখার ভূমিকা অপর্যাপ্তভাবে হলেও পালন করে কেবল গণমাধ্যম বা উচ্চ আদালত। এই দুটো প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা, স্বাতন্ত্র্য ও নিরপেক্ষতা নিয়ে তাই সচেতন নাগরিক সমাজ সব সময়ই উচ্চকিত। তবে তাঁদের কারও কারও মন্তব্য বা আচরণে বাড়াবাড়ি থাকে না, তা নয়। কিন্তু আদালত অতীতে অধিকাংশ সময়ে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে তা দেখেছেন। অন্যদিকে, আদালতের স্বাধীনতা ও ক্ষমতায়নের প্রতিও মানুষ অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে।
শাসক বনাম শোষিতের স্বার্থের দ্বন্দ্বে আইনগত পরিসীমার মধ্যে থেকে আদালত যখনই শোষিতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁর মর্যাদা তখনই বেড়েছে। আইনের শাসন, মানবাধিকার আর সংবিধানকে রক্ষা করতে গিয়ে উচ্চ আদালত যত বেশি বিদ্যমান সরকারের প্রতিপক্ষ হয়েছে, তাঁর সম্মান ততই প্রসারিত হয়েছে।
আমরা আদালতের এমন ভূমিকা প্রত্যাশা করি। আমরা এও মনে করি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, মিথ্যা ও অবমাননাকর আক্রমণ থেকে আদালতকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে। একটি যুগোপযোগী ও সুস্পষ্ট আদালত অবমাননা আইন, বিচারপতিদের আচরণবিধি তদারকিতে উচ্চ আদালত কর্তৃক বিধি প্রণয়ন করে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নির্ধারণ, বিচারকদের নিয়োগপদ্ধতি উন্নতকরণ, ১৯৭২ সালের সংবিধানের আলোকে তাঁদের অবসর-পরবর্তী নিয়োগ নিষিদ্ধকরণ এবং তাঁদের চাকরিকালীন সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধির মাধ্যমে এগুলো করা সম্ভব। উচ্চ আদালত কিছু বিষয়ে নিজেই বিভিন্নভাবে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে পারেন।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.