ধ্বংসের মুখে পোল্ট্রি শিল্প
'জৈব ষড়যন্ত্রে' পোল্ট্রি শেষ_শিরোনামে ২৭ মার্চ কালের কণ্ঠের শীর্ষ প্রতিবেদনে যে তথ্যচিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। ওই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, আত্মকর্মসংস্থান ক্ষেত্রের ওপর আঘাতের পাশাপাশি এর বিরূপ প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়ছে মারাত্মকভাবে।
বার্ড ফ্লু মানবদেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে_এ আশঙ্কায় কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই ইতিমধ্যে লাখ লাখ মুরগি নিধন করা হয়েছে। বাদ যায়নি ডিমও। যদি সত্যিকার অর্থেই বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে থাকে তাহলে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এ আশঙ্কা সত্যিই আছে কি না, তা যাচাই না করেই প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন স্বেচ্ছাচারীর খৰ হাতে তুলে নিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনছেন। তাদের অতি উৎসাহ ও হঠাৎ কর্মতৎপরতার পেছনের রহস্য উদ্ঘাটন জাতীয় স্বার্থেই আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। তাদের এ কর্মকাণ্ড নির্বিচারে অপরাধের শামিল কি না তা এখনই খতিয়ে দেখা দরকার। এ দেশের পোল্ট্রি শিল্পের সূচনা পর্ব এবং উত্তরোত্তর এর ক্রমবিকাশ সম্পর্কে সচেতন মহল মাত্রই জ্ঞাত। বেকার জনগোষ্ঠীর একাংশ বহু কষ্টে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে নিজেদের সহায়-সম্পদ ছাড়িয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণ নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করে আজ এটিকে একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। ইতিমধ্যে এ শিল্পের ওপর দিয়ে ঝড়-ঝাপটা কম বয়ে যায়নি, তবুও থেমে থাকেননি উদ্যম মানুষ। কালের কণ্ঠের ওই প্রতিবেদনেই প্রকাশ, একটি খামারে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার অস্তিত্ব পাওয়ার পর এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বড়-ছোট খামার, এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সব মুরগি মারা হয়েছিল ২০০৭ ও ২০০৮ সালে। এই কার্যক্রম পরবর্তী বছরগুলোতে অব্যাহত ছিল যখন বার্ড ফ্লু নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না। এ বছরের চিত্র সেই সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। কেন এই আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড_এ প্রশ্নের আশু সুরাহা হওয়া দরকার সার্বিক প্রয়োজনেই। অভিযোগ আছে, বিদেশি কয়েকটি সংস্থার ইন্ধনে এ ইস্যুটি জিইয়ে বিকাশমান এ শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, শুরু থেকে এ পর্যন্ত মুরগি নিধন ছাড়া বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে আর কী প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? মাথাব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা নিশ্চয়ই দাওয়াই নয়। খামারিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নামমাত্র যে ব্যবস্থা সরকারের তরফে নেওয়া হয়েছিল, সেই আর্থিক বরাদ্দেও অনিয়মের অন্ত নেই_এমন অভিযোগও আছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যারা কোনো রকম বাছবিচার ছাড়া একটি বিকাশমান শিল্পকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে দেশ-জাতির সর্বনাশ ডেকে আনছে বলে অভিযাগ উঠেছে, তা অতি দ্রুত খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
No comments