দলীয় ও গোষ্ঠীস্বার্থে ব্যবহার করা যাবে না-চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মান বাড়ান

দেশের অর্থনীতির জীবননালি বলে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের অব্যবস্থা, পণ্য পরিবহনে দীর্ঘসূত্রতা যে আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষের এসব নিয়ে আদৌ মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না।


বন্দরের অব্যবস্থা, দুর্নীতি, চুরি ও সেবার মান পড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। কেননা বন্দরে আমদানি পণ্য খালাসে বিলম্ব হলে ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়ে, আর শেষ পর্যন্ত তা ভোক্তাদের কাঁধেই চাপে। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতারা বন্দর ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, দ্রুত প্রতিকার চেয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বর্তমান সরকারের প্রথম ১৪ মাস বন্দর মোটামুটি চললেও গত চার মাসে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। এর কারণ কী? বন্দর কর্তৃপক্ষ এক কথা বলছে, মন্ত্রণালয় বলছে অন্য কথা। আবার মন্ত্রণালয়ের ওপর সংসদীয় কমিটির খবরদারিরও অভিযোগ রয়েছে। এভাবে একে অপরের ওপর দায় চাপানো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। বন্দর থেকে মালামাল খোয়া যাওয়া সম্পর্কে বন্দর চেয়ারম্যানের কিছু না জানার জবাবও অগ্রহণযোগ্য। বন্দরের কোথায় কী ঘটছে, সে সম্পর্কে শীর্ষ কর্মকর্তাই যদি বেহুঁশ থাকেন, তাহলে তিনি প্রতিকার করবেন কীভাবে? চট্টগ্রাম বন্দরের মতো জরুরি সেবাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও পরিবহন বিভাগের পরিচালকের একযোগে ছুটিতে থাকার বিষয়টিও দায়িত্বহীনতা ছাড়া কিছু নয়। ব্যবসায়ী নেতারা যেসব দাবি পেশ করেছেন, তা যুক্তিসংগত এবং অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যত দ্রুত সম্ভব তার বাস্তবায়নও জরুরি।
বৈঠকে বন্দরের সেবার মান বাড়াতে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল আড়াই দিনে নামিয়ে আনা, বন্দরের সংরক্ষিত জেটি এলাকা থেকে পণ্য চুরি ঠেকাতে আরও নতুন ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন, এক সপ্তাহের মধ্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে পণ্য ওঠানো-নামানোর দরপত্র আহ্বান প্রভৃতি। প্রশ্ন হলো, সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না। কারা করবে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্দরের সেবার মান বাড়ানো এবং পণ্য খালাসের সময় কমানো গেলে এখন যাবে না কেন? সে সময় শ্রমিকেরা ঠিকমতো কাজ করলে এখন না করার কারণ কী? কথিত শ্রমিক-অসন্তোষের পেছনে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে, তাও খুঁজে বের করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করায় যখন আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তখন বন্দরে এ ধরনের অব্যবস্থা কাম্য হতে পারে না। অতীতে দলীয় ও সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে বন্দরকে বহুবার জিম্মি করা হয়েছে। বর্তমানে যে আলামত দেখা যাচ্ছে, তা আমাদের শঙ্কিত না করে পারে না। বন্দরের সেবার মান পড়ে যাওয়ায় দেশীয় পণ্য পরিবহনই যেখানে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেখানে বিদেশিদের আগ্রহী করা যাবে কীভাবে? অতএব যেকোনো মূল্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মান বাড়াতে হবে। বন্দরকে রাখতে হবে সব দলীয় ও গোষ্ঠী-রাজনীতির ঊর্ধ্বে।

No comments

Powered by Blogger.