গোধূলির ছায়াপথে-অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া... by মুস্তাফা জামান আব্বাসী
একদিন ছেলেমানুষি করে লিখে ফেললাম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি। চেতনার রঙে রাঙিয়ে। পরদিন নিজেই পোস্টম্যান। জানিয়েছিলেন যার যা বক্তব্য চিঠি লিখে জানাতে। কী লিখেছিলাম মনে নেই। তিনিও গুনগুন করে গান করেন, এটাই স্বাভাবিক। এই মুহূর্তে তাঁর কণ্ঠে কী গান জানা নেই। হয়তো অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া জানে না সন্তরণ।
খচখচ করছে যে জায়গাটায়, তার কথাই সম্ভবত লিখেছি। মেনে নিতে পারিনি বিরতিহীন হত্যাকাণ্ড। টনি মাসকার্নিস তাঁর অসমাপ্ত বিপ্লব বইয়ের বাইরে যা বলেছিলেন আমাকে দেখা হওয়ার সময়, সেটি বলব শেষে। এ কেমন দেশ আমাদের, যেখানে সমানে ঘটে চলেছে বিভীষিকাময় হত্যার মিছিল? হাতে গুনে শেষ করা যাবে না, তবু শুরু করি: ১. একাত্তরের সংগ্রামে তিরিশ লাখ মানুষের হত্যা ও অপমান, পৃথিবীর ইতিহাসে যার তুলনা মেলা ভার। ২. বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের নৃশংস হত্যা, পৃথিবীর ইতিহাসে যার জুড়ি নেই, ৩. জিয়ার বর্বরোচিত হত্যা সামরিক অফিসারদের ষড়যন্ত্রে, ৪. শেখ হাসিনার প্রতি উপর্যুপরি আক্রমণ, ৫. রমনার বটমূল ও উদীচীর গানের আসরে বিস্ফোরণ, ৬. বিডিআর বিদ্রোহ ও শ্রেষ্ঠ সেনা অফিসারদের আহুতি।
১. জনগণের স্মরণক্ষমতা বা পাবলিক মেমোরি নাকি সর্বনিম্নে অথচ ওই ঘটনাগুলো তো কেউ ভোলেননি। জড়িতদের শনাক্তকরণ কঠিন, কঠিনতর ক্ষমা। মক্কা বিজয়ের পর যে ক্ষমা তার উদাহরণ দেখিয়েছি। আবার ‘কিসাসে’র নিয়মে যার ক্ষতি হয়েছে তার অনুমতির ওপর নির্ভর করছে ক্ষমা। খুনিরা ক্ষমার অযোগ্য। সবাই খুনি নয়, কিছু লোক খুনি। তা শনাক্ত করে নতুনভাবে বাঁচব, নাকি আবর্তেই ঘুরতে থাকব আফ্রিকার কিছু নবলব্ধ স্বাধীন দেশের মতো? অপরাধী শনাক্তকরণে স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে জন্ম হতে পারবে নতুন ষড়যন্ত্রের, নতুন বিভেদের। বিরুদ্ধ প্রমাণ যেমন প্রস্তুতযোগ্য, টার্গেট হতে হয় নির্ভুল। ব্যাপারটা পরিষ্কার করি। ধর্মের ব্যানারে দল ও ধর্ম অভিন্ন নয়। এদের মধ্যে নির্বাচিত সদস্য কম নয়। ধর্ম যদি টার্গেট হয়, যার আলামত নিশ্চয়ই দৃশ্যযোগ্য, তা হবে ‘বুমেরাং’; আপাত দৃষ্টিতে নিরাপদ একটি অস্ট্রেলিয়ান খেলনা, সামনের দিকে সবেগে ছুড়লে আঘাতকারীকেই করে কুপোকাত। বিচারের প্রশ্নে দেশ ঐক্যবদ্ধ, এতে ভুল নেই।
২. বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকারীরা জালিম। তাদের সকলের শাস্তি কার্যকর আনবে দেশবাসীর স্বস্তি।
৩. শহীদ জিয়া রক্তের আখরে লিখে গেছেন তাঁর নাম। দল কখনো শক্ত, কখনো দুর্বল। সমর্থনের কার্ভ নিচে নেমে গেছে, এ হিসাব নির্ভুল নয়। ৩৩:৩৩:৩৩ এটাই সোজা হিসাব। শেষের পরিবর্তনশীল ৩৩ কোন দিকে যাবে, তাতেই পাল্লার ওঠানামা। অল্প সময়েই এ পাল্লা বদলে যায়, সবারই জানা।
৪. বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মনে পড়ে, একদিন তিনি আমার কাছে গান শিখতে চেয়েছিলেন। আজ শত হাসির আড়ালে তাঁর মলিন মুখ আমাকে ব্যথিত করে। হত্যাচেষ্টার মামলা যখন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে দিনের পর দিন, দলমত-নির্বিশেষে দেশের মানুষ হন হতবাক। নানা গল্প শুনছি, শিশিরের কার্টুন দেখেছি, ভেবে অবাক হয়েছি কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখের সামনে বিশাল কর্মীবাহিনীর চোখ এড়িয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা অনায়াসে পালিয়ে যায় [আবেদীন রিপোর্ট]। এ যেন টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের সিনেমা। এর পরও পড়ি জজ মিয়ার আষাঢ়ে গল্প, যা সংবাদপত্রের পাতা অধিকার করে সাধারণ মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনা প্রবাহিত করে অন্যদিকে। এটুকু বুঝি, ২১ আগস্ট হত্যাচেষ্টার দায় কাঁধে যার, তিনি হত্যাকারী শনাক্ত করতে শুধু ব্যর্থই হননি, মামলা ঘুরিয়েছেন বিপথে। ক্ষমতার করিডরে বাবরকে দেখেছি ছোটাছুটি করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার বাসনায়। তখনই উচিত ছিল জহিরউদ্দিন শাহ মোহাম্মদ বাবরের আত্মজীবনী বাবুরনামা বাংলা একাডেমী থেকে সংগ্রহ করে ছত্রটি পড়ে দেওয়া। মূল ফারসিতে। বাংলায় আমার অনুবাদে: ‘যখন তুমি চাইবে বিচার, বিচার তোমার পিছনে ছুটুক। তারচেয়ে ভালো রইব ফকির, বাদশাহী তাজ ধুলায় লুটুক।’
৫. আজও জানতে পারেনি জনগণ রমনার বটমূলে, উদীচীর সভায় কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এরা জালিম।
৬. বিডিআরের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার করুণ হত্যাকাণ্ড দেশবাসী মেনে নিতে পারে না। এরা বড় জালিম। ক্ষমতায় যারা তারা এর সুবিচার না করলে কাল ক্ষমা করবে না।
এ দেশ তো সবার। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সবাই। অর্জনের বিভক্তি বিভাজনে। কলকাতা থেকে যাঁরা গান গাইতে এসেছিলেন তাঁরাই যেন হিরো। স্বাধীনতা দিনের গান বইটি যাঁরা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা দেখবেন, কলকাতায় কয়েকজন গায়ক নন শুধু, বাংলাদেশের লাখো শিল্পী-গীতিকার-সাহিত্যিক সপক্ষ সৈনিক-শক্তি। লোক-কবিরা শনাক্ত করেছিলেন তাঁদের রক্তাক্ত পথের শেষে সোনালি দিন।
১. কৃষাণ মজুর তোমার সাথি রে/ ও ভাই মোর তোমার কিসের ভয়/ তোমার হাতেই দ্যাশের কাঠি/ হবে রে হবে রে হবে জয়। [পৃষ্ঠা ৩১, কথা ও সুর: মো. মোশাদ আলী]
২. বালু টিটি পঙ্খি কাঁদে/ নিজের আহার খুঁজির বাদে রে/ হায় রে হায়, তোমরা বুঝি নেও নিজের অধিকার/ ভাই মোর বাঙালি রে। [পৃষ্ঠা ১৩, কথা: আবদুল করিম, সুর: আব্বাসউদ্দীন]
৩. হালুয়া ভাই রে, ও তুই/ গোংরে ধরিস ভ্যাকড়া নাঙ্গল কোনা/ ওরে দেলেতে বিসমিল্লাহ জপি/ ভুঁইয়োত এ্যালা পরেক ঝাপ্পি রে/ ভাইরে দয়াল খোদা কইল্যে মঙ্গল/ প্যাটত পাব দানা, ও তুই গোংরে ধরিস ভ্যাকড়া নাঙ্গল কোনা। [পৃষ্ঠা ৫৯, কথা ও সুর: মহেশচন্দ্র রায়]
৪. কিবা হিন্দু কিবা মুসলিম বৌদ্ধ আর খ্রিষ্টান/ জাতে হই বাঙালি মোরা এক মায়ের সন্তান। [পৃষ্ঠা ৯৫, কথা ও সুর: আবদুল গনি বোখারী]
৫. স্বাধীন বাংলার সৈন্য ওরা/ লড়াই করতে যায়/ আকাশ জমিন কাইপা উঠছে ওদের বৈঠার ঘায়\ [পৃষ্ঠা ১৫, কথা ও সুর: জসীমউদ্দীন]
৬. স্বাধীন দেশের মানুষ আমরা করব না আর ভয়/ হিংস্র পশু পলাইয়াছে মোদের হইছে জয়/ ভাই রে, চাইয়া দেখ ঘরে ঘরে জয়ের নিশাণ উড়তাছে/ সোনার বাংলা স্বাধীন হইয়াছে। [পৃষ্ঠা ১৭, কথা: মমতাজ আলী খান, সুর ও শিল্পী: মুস্তাফা জামান আব্বাসী]
৭. এস দেশের ভাই/ এক সাথে সবাই/ সব ভেদাভেদ ভুলে এবার করব যে লড়াই। [পৃষ্ঠা ৮৯, কথা ও সুর: ড. এনামুল হক]
৮. আয় রে যাদু দেখ রে যাদু শোন রে কেমন মধুময়/ ছেইলা মাইয়া জোয়ান বুড়া একটি কথাই কয়/ জয় জয় জয় জয় রে ও ভাই জয় বাংলার জয় [পৃষ্ঠা ৫৩, কথা ও সুর: আবদুল লতিফ]
৯. পাল উড়াইয়া উদাস মনে বৈসা পাছা নায়/ মুজিব মুজিব বইলা মাঝি বাংলার গান গায় [পৃষ্ঠা ৬৮, কথা ও সুর: আজিজুল ইসলাম]
১০. ও তোর ভয় নাই রে জোরে মারো টান/ এই নৌকার কান্ডারী আছে মুজিবুর রহমান [পৃষ্ঠা ৫৭, কথা: রজ্জব আলী দেওয়ান, সুর ও শিল্পী: সর্দার আলাউদ্দিন আহমেদ]
১১. তিতুমীরের বাংলা এ যে, মুজিবের বাংলা এই/ শেরেবাংলার বাংলা এ যে, সূর্য সেনের বাংলা এই/ এই বাংলাদেশে জন্ম আমার সেই গরবে বুক ফুলাই\ [পৃষ্ঠা ৫৪, কথা ও সুর: আবদুল লতিফ]
১২. আল্লা রসুল সাক্ষী করে এই কথা তোক কঁও/ ভাইয়ের অন্ন যে ভাই মারে জাহান্নাম তাক থোঁও/ এই অত্যাচারীর বালাকোঠার ভিত্তি উঠুক নড়ি/ লুঠ করি যে নিয়া গেল বাংলাদেশের কড়ি। [পৃষ্ঠা ১৯, কথা ও সুর: মুস্তাফা জামান আব্বাসী]
বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গীকৃত, ১৭ মার্চ, ১৯৭২। সর্বমোট সংগৃহীত গান: ২০০০। চেয়েছি এ দেশ হবে গরিবের, অবিচার ঠাঁই পাবে না, গরিব খুঁজে পাবে অনায়াসে দুমুঠো লবণ-ভাত, বস্ত্র, মাথা গোঁজার ঠাঁই। নবীর স্বপ্ন মদিনায় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, যেখানে ছিলেন সবাই সমান, গরিব বড়লোকেরা সম্পদ ভাগ করে নিয়েছেন, শোষণ ছিল না।
টনি বললেন, ‘মিস্টার আব্বাসী, তোমরা বিভক্ত। বিভক্তি জাতি গড়তে সমর্থ হয় না। সম্পদও একদিন যাবে কয়েকজনের পকেটে ওই বাইশ পরিবারের মতো’। বললাম, টনি, তুমি বাঙালিদের কতটুকু চেনো? ভুল করি, আবার গর্জে উঠি। আমরা তেমনটি হতে দেব না কিছুতেই। মাথা তুলে দাঁড়াবই।
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: লেখক-গবেষক, সংগীত ব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
১. জনগণের স্মরণক্ষমতা বা পাবলিক মেমোরি নাকি সর্বনিম্নে অথচ ওই ঘটনাগুলো তো কেউ ভোলেননি। জড়িতদের শনাক্তকরণ কঠিন, কঠিনতর ক্ষমা। মক্কা বিজয়ের পর যে ক্ষমা তার উদাহরণ দেখিয়েছি। আবার ‘কিসাসে’র নিয়মে যার ক্ষতি হয়েছে তার অনুমতির ওপর নির্ভর করছে ক্ষমা। খুনিরা ক্ষমার অযোগ্য। সবাই খুনি নয়, কিছু লোক খুনি। তা শনাক্ত করে নতুনভাবে বাঁচব, নাকি আবর্তেই ঘুরতে থাকব আফ্রিকার কিছু নবলব্ধ স্বাধীন দেশের মতো? অপরাধী শনাক্তকরণে স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে জন্ম হতে পারবে নতুন ষড়যন্ত্রের, নতুন বিভেদের। বিরুদ্ধ প্রমাণ যেমন প্রস্তুতযোগ্য, টার্গেট হতে হয় নির্ভুল। ব্যাপারটা পরিষ্কার করি। ধর্মের ব্যানারে দল ও ধর্ম অভিন্ন নয়। এদের মধ্যে নির্বাচিত সদস্য কম নয়। ধর্ম যদি টার্গেট হয়, যার আলামত নিশ্চয়ই দৃশ্যযোগ্য, তা হবে ‘বুমেরাং’; আপাত দৃষ্টিতে নিরাপদ একটি অস্ট্রেলিয়ান খেলনা, সামনের দিকে সবেগে ছুড়লে আঘাতকারীকেই করে কুপোকাত। বিচারের প্রশ্নে দেশ ঐক্যবদ্ধ, এতে ভুল নেই।
২. বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকারীরা জালিম। তাদের সকলের শাস্তি কার্যকর আনবে দেশবাসীর স্বস্তি।
৩. শহীদ জিয়া রক্তের আখরে লিখে গেছেন তাঁর নাম। দল কখনো শক্ত, কখনো দুর্বল। সমর্থনের কার্ভ নিচে নেমে গেছে, এ হিসাব নির্ভুল নয়। ৩৩:৩৩:৩৩ এটাই সোজা হিসাব। শেষের পরিবর্তনশীল ৩৩ কোন দিকে যাবে, তাতেই পাল্লার ওঠানামা। অল্প সময়েই এ পাল্লা বদলে যায়, সবারই জানা।
৪. বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। মনে পড়ে, একদিন তিনি আমার কাছে গান শিখতে চেয়েছিলেন। আজ শত হাসির আড়ালে তাঁর মলিন মুখ আমাকে ব্যথিত করে। হত্যাচেষ্টার মামলা যখন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে দিনের পর দিন, দলমত-নির্বিশেষে দেশের মানুষ হন হতবাক। নানা গল্প শুনছি, শিশিরের কার্টুন দেখেছি, ভেবে অবাক হয়েছি কীভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখের সামনে বিশাল কর্মীবাহিনীর চোখ এড়িয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা অনায়াসে পালিয়ে যায় [আবেদীন রিপোর্ট]। এ যেন টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের সিনেমা। এর পরও পড়ি জজ মিয়ার আষাঢ়ে গল্প, যা সংবাদপত্রের পাতা অধিকার করে সাধারণ মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনা প্রবাহিত করে অন্যদিকে। এটুকু বুঝি, ২১ আগস্ট হত্যাচেষ্টার দায় কাঁধে যার, তিনি হত্যাকারী শনাক্ত করতে শুধু ব্যর্থই হননি, মামলা ঘুরিয়েছেন বিপথে। ক্ষমতার করিডরে বাবরকে দেখেছি ছোটাছুটি করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার বাসনায়। তখনই উচিত ছিল জহিরউদ্দিন শাহ মোহাম্মদ বাবরের আত্মজীবনী বাবুরনামা বাংলা একাডেমী থেকে সংগ্রহ করে ছত্রটি পড়ে দেওয়া। মূল ফারসিতে। বাংলায় আমার অনুবাদে: ‘যখন তুমি চাইবে বিচার, বিচার তোমার পিছনে ছুটুক। তারচেয়ে ভালো রইব ফকির, বাদশাহী তাজ ধুলায় লুটুক।’
৫. আজও জানতে পারেনি জনগণ রমনার বটমূলে, উদীচীর সভায় কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এরা জালিম।
৬. বিডিআরের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার করুণ হত্যাকাণ্ড দেশবাসী মেনে নিতে পারে না। এরা বড় জালিম। ক্ষমতায় যারা তারা এর সুবিচার না করলে কাল ক্ষমা করবে না।
এ দেশ তো সবার। মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সবাই। অর্জনের বিভক্তি বিভাজনে। কলকাতা থেকে যাঁরা গান গাইতে এসেছিলেন তাঁরাই যেন হিরো। স্বাধীনতা দিনের গান বইটি যাঁরা সংগ্রহ করেছেন তাঁরা দেখবেন, কলকাতায় কয়েকজন গায়ক নন শুধু, বাংলাদেশের লাখো শিল্পী-গীতিকার-সাহিত্যিক সপক্ষ সৈনিক-শক্তি। লোক-কবিরা শনাক্ত করেছিলেন তাঁদের রক্তাক্ত পথের শেষে সোনালি দিন।
১. কৃষাণ মজুর তোমার সাথি রে/ ও ভাই মোর তোমার কিসের ভয়/ তোমার হাতেই দ্যাশের কাঠি/ হবে রে হবে রে হবে জয়। [পৃষ্ঠা ৩১, কথা ও সুর: মো. মোশাদ আলী]
২. বালু টিটি পঙ্খি কাঁদে/ নিজের আহার খুঁজির বাদে রে/ হায় রে হায়, তোমরা বুঝি নেও নিজের অধিকার/ ভাই মোর বাঙালি রে। [পৃষ্ঠা ১৩, কথা: আবদুল করিম, সুর: আব্বাসউদ্দীন]
৩. হালুয়া ভাই রে, ও তুই/ গোংরে ধরিস ভ্যাকড়া নাঙ্গল কোনা/ ওরে দেলেতে বিসমিল্লাহ জপি/ ভুঁইয়োত এ্যালা পরেক ঝাপ্পি রে/ ভাইরে দয়াল খোদা কইল্যে মঙ্গল/ প্যাটত পাব দানা, ও তুই গোংরে ধরিস ভ্যাকড়া নাঙ্গল কোনা। [পৃষ্ঠা ৫৯, কথা ও সুর: মহেশচন্দ্র রায়]
৪. কিবা হিন্দু কিবা মুসলিম বৌদ্ধ আর খ্রিষ্টান/ জাতে হই বাঙালি মোরা এক মায়ের সন্তান। [পৃষ্ঠা ৯৫, কথা ও সুর: আবদুল গনি বোখারী]
৫. স্বাধীন বাংলার সৈন্য ওরা/ লড়াই করতে যায়/ আকাশ জমিন কাইপা উঠছে ওদের বৈঠার ঘায়\ [পৃষ্ঠা ১৫, কথা ও সুর: জসীমউদ্দীন]
৬. স্বাধীন দেশের মানুষ আমরা করব না আর ভয়/ হিংস্র পশু পলাইয়াছে মোদের হইছে জয়/ ভাই রে, চাইয়া দেখ ঘরে ঘরে জয়ের নিশাণ উড়তাছে/ সোনার বাংলা স্বাধীন হইয়াছে। [পৃষ্ঠা ১৭, কথা: মমতাজ আলী খান, সুর ও শিল্পী: মুস্তাফা জামান আব্বাসী]
৭. এস দেশের ভাই/ এক সাথে সবাই/ সব ভেদাভেদ ভুলে এবার করব যে লড়াই। [পৃষ্ঠা ৮৯, কথা ও সুর: ড. এনামুল হক]
৮. আয় রে যাদু দেখ রে যাদু শোন রে কেমন মধুময়/ ছেইলা মাইয়া জোয়ান বুড়া একটি কথাই কয়/ জয় জয় জয় জয় রে ও ভাই জয় বাংলার জয় [পৃষ্ঠা ৫৩, কথা ও সুর: আবদুল লতিফ]
৯. পাল উড়াইয়া উদাস মনে বৈসা পাছা নায়/ মুজিব মুজিব বইলা মাঝি বাংলার গান গায় [পৃষ্ঠা ৬৮, কথা ও সুর: আজিজুল ইসলাম]
১০. ও তোর ভয় নাই রে জোরে মারো টান/ এই নৌকার কান্ডারী আছে মুজিবুর রহমান [পৃষ্ঠা ৫৭, কথা: রজ্জব আলী দেওয়ান, সুর ও শিল্পী: সর্দার আলাউদ্দিন আহমেদ]
১১. তিতুমীরের বাংলা এ যে, মুজিবের বাংলা এই/ শেরেবাংলার বাংলা এ যে, সূর্য সেনের বাংলা এই/ এই বাংলাদেশে জন্ম আমার সেই গরবে বুক ফুলাই\ [পৃষ্ঠা ৫৪, কথা ও সুর: আবদুল লতিফ]
১২. আল্লা রসুল সাক্ষী করে এই কথা তোক কঁও/ ভাইয়ের অন্ন যে ভাই মারে জাহান্নাম তাক থোঁও/ এই অত্যাচারীর বালাকোঠার ভিত্তি উঠুক নড়ি/ লুঠ করি যে নিয়া গেল বাংলাদেশের কড়ি। [পৃষ্ঠা ১৯, কথা ও সুর: মুস্তাফা জামান আব্বাসী]
বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গীকৃত, ১৭ মার্চ, ১৯৭২। সর্বমোট সংগৃহীত গান: ২০০০। চেয়েছি এ দেশ হবে গরিবের, অবিচার ঠাঁই পাবে না, গরিব খুঁজে পাবে অনায়াসে দুমুঠো লবণ-ভাত, বস্ত্র, মাথা গোঁজার ঠাঁই। নবীর স্বপ্ন মদিনায় রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, যেখানে ছিলেন সবাই সমান, গরিব বড়লোকেরা সম্পদ ভাগ করে নিয়েছেন, শোষণ ছিল না।
টনি বললেন, ‘মিস্টার আব্বাসী, তোমরা বিভক্ত। বিভক্তি জাতি গড়তে সমর্থ হয় না। সম্পদও একদিন যাবে কয়েকজনের পকেটে ওই বাইশ পরিবারের মতো’। বললাম, টনি, তুমি বাঙালিদের কতটুকু চেনো? ভুল করি, আবার গর্জে উঠি। আমরা তেমনটি হতে দেব না কিছুতেই। মাথা তুলে দাঁড়াবই।
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।
মুস্তাফা জামান আব্বাসী: লেখক-গবেষক, সংগীত ব্যক্তিত্ব।
mabbasi@dhaka.net
No comments