১৪ জুনের আগে মুক্তি পাচ্ছেন না শীর্ষ নেতারা

হরতালের সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় জামিন পেলেও এখনই মুক্তি পাচ্ছেন না বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ১৬ নেতা। সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে আদালত হাজিরা পরোয়ানা (পিডাবি্লউ) জারি করায় মুক্তি পাওয়ার ব্যাপারে এই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।


বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে হাজিরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আদালত এই আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন আগামী ১৪ জুন। ফলে ১৪ জুনের আগে তাঁরা মুক্তি পাচ্ছেন না- এটা নিশ্চিত করেছেন তাঁদের আইনজীবীরা। গতকাল রবিবার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুনানির তারিখ ধার্য করেন।
সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার ১৬ নেতার বিরুদ্ধে হাজিরা পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হক। একই সঙ্গে আগামী ২৬ জুলাই তাঁদের আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও এফ আর এম নাজমুল আহসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই ১৬ জনসহ ৩০ জন নেতাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলায় জামিন দেন। ওই দিনই ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু কারাগারে থাকা ১৬ নেতার বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণের মামলায় পিডাবি্লউ দেওয়ার আবেদন করেন। তাঁরাসহ ২৯ নেতার বিরুদ্ধে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলাটি বিচারের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়।
যাঁদের বিরুদ্ধে পিডাবি্লউ জারি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বনির্ভরতাবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল মতিন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য কামরুজ্জামান রতন।
গাড়ি পোড়ানোর মামলায় যে ৩০ জনকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, তাঁদের সবাই বিস্ফোরণ মামলার আসামি নন। এ কারণে ১৬ জন ছাড়া বাকি আসামিরা গাড়ি পোড়ানোর মামলায় জামিননামা দাখিল করার পর জামিনে মুক্তি পাবেন বলে আইনজীবীরা জানান।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে গত ২৯ এপ্রিল ডাকা হরতালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া সচিবালয়ে বোমা বিস্ফোরণের অভিযোগেও আরেকটি মামলা করা হয়।
মির্জা ফখরুলসহ জোট নেতারা আগাম জামিনের আবেদন করলে হাইকোর্ট তাঁদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ১০ মে চার্জশিট দেওয়ার পর ২১ মে সব আসামির বিরুদ্ধেই চার্জশিট আমলে নেন সিএমএম আদালত। এ অবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ফখরুলসহ ৩৩ জন ১৬ মে এবং একজন ২০ মে ঢাকা মহানগর দ্রুত বিচার হাকিমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে আদালত তা নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠান। এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করলেও তাঁদের আবেদন খারিজ করা হয়। এ ছাড়া রুহুল কবির রিজভী ও কামরুজ্জামান রতনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়। নিম্ন আদালত তাঁদের জামিন আবেদন খারিজ করেন। এই ৩৬ জনের মধ্যে ৩৫ জনের জন্য জামিন আবেদন করা হয়।
২৭ মে হাইকোর্ট পাঁচ সংসদ সদস্য এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে জামিন দেন। পাঁচজনই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
এর আগে গত ১৪ মে সচিবালয়ে ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতাদের জামিন দেন হাইকোর্ট। মামলার চার্জশিট দাখিল পর্যন্ত প্রত্যেককে জামিন দেওয়া হয়।
এদিকে ১৬ নেতার বিরুদ্ধে হাজিরা পরোয়ানা জারির তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া গতকাল সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আসামিদের জামিনে থাকার কথা জেনেও হাজিরা পরোয়ানা দিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালত অন্যায় এবং অবৈধ কাজ করেছেন। হাইকোর্টের আদেশ ও আইনের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতেই সরকারের হস্তক্ষেপে এ কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মামলাটির শুনানির দিন ধার্য আছে আগামী ২৬ জুলাই। নির্ধারিত তারিখের এক মাস ১৯ দিন আগে হাজিরা পরোয়ানা জারির আবেদনে প্রমাণিত হয়, নিম্ন আদালত সরকারের কথায় চলছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, হাজিরা পরোয়ানা জারির এই আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামিদের আগামী ১৩ জুন সমাবেশের আগে মুক্তি না দিতে কাজটি করেছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের হাজিরা পরোয়ানা জারির আবেদন নজিরবিহীন ঘটনা। হয়রানির নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছে তারা।
মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু বলেন, অভিযোগপত্র দাখিল পর্যন্ত আসামিদের জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তাঁদের জামিন এখন বহাল নেই। নতুন করে জামিনের আবেদন জানাতে হবে। তিনি বলেন, যাঁদের জামিন বহাল নেই, তাঁদের বিরুদ্ধে হাজিরা পরোয়ানা জারি করাকে বেআইনি বলার কোনো সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.