শুধু দাতাদের অসন্তোষ কাজ দেবে না-দুদকসহ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার
অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দুর্নীতি দমনসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণের প্রয়াসে উন্নয়ন অংশীদারদের চাপের ফল তেমন সুখকর হয় না। এবারও আমরা তেমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছিল।
কিন্তু তারাই দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলোপ করে তথাকথিত স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন করেছিল। কিন্তু তা ছিল একটি কাগুজে বাঘ। দাতাদের অব্যাহত চাপের মুখে নামকাওয়াস্তে তারা দুদক প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই প্রতিষ্ঠান যাতে বাস্তবে কাজ না করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও পাকা করে রাখা হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল একশ্রেণীর দুর্নীতিগ্রস্ত রাঘববোয়ালের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে এসেছিল। সেই তাঁরাই ইদানীং দল-মতনির্বিশেষে অধিকতর স্বস্তিতে আছেন। তাঁরা গণতন্ত্র ও নির্বাচিত শাসনামলকে একটি ঢাল হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ করে নিয়েছেন। কিন্তু জনপ্রশাসন কিংবা বেসরকারি ক্ষেত্রের কোথাও উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্নীতি কমেছে কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা শাস্তি পাচ্ছেন, তা আমরা বুঝতে পারছি না।
আগামী নভেম্বরে দাতাদের পর্যালোচনা সভা হবে। আমরা অনেক সময় শুনি যে দাতাদের অন্যায্য শর্ত বাংলাদেশ সরকার মানবে না। শর্তের বিরুদ্ধে অনেক সময় মেঠো বক্তৃতা শোনা যায় এবং তাতে সস্তা বাহ্বা কুড়ানোও সম্ভব হয়। অবশ্য এ কথাও ঠিক, দাতাগোষ্ঠীর তরফে অন্যায্য কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শর্ত চাপানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের ইতিহাসে আছে। এখানে অবশ্য সরকার ও দাতা উভয় তরফে জনগণ বা গণমাধ্যমের সঙ্গে এক ধরনের অস্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়। আমরা মনে করি, কী শর্তে কী পরিমাণ টাকা নেওয়া হয় এবং সে বিষয়ে কত দূর কী সুফল মেলে, সে বিষয়ে উভয়ের তরফে সময়ে সময়ে লিখিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে (১৪ সেপ্টেম্বর) বলেন, ‘ইতিমধ্যে উন্নয়ন-সহযোগীরা সরকারের সঙ্গে মিলে যৌথ সহায়তায় কর্মকৌশল তৈরি করেছে।’ উন্নয়ন-সহযোগী ও সরকারের সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় পরামর্শক দলের (এলসিজি) যুগ্ম আহ্বায়ক ক্রিস অস্টিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’ অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে উন্নয়ন-সহযোগীরা বলেছিল, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে বিচার বিভাগ, দুদক, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সব মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে যে কোনো অগ্রগতি নেই, তা আমরা বেশ দেখতে পাচ্ছি। লক্ষণীয় যে উন্নয়ন-সহযোগীরা বোধগম্য কারণেই তাদের হতাশার কথা প্রকাশ করে না। যেমন দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন।
উন্নয়ন-সহযোগীদের এ ধরনের অসন্তোষ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে, এমন আশা করা কঠিন। সাহায্য বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সরকার বিচলিত হয় না। আবার কখনো কখনো আমরা দেখেছি যে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে হঠাৎ দাতাদের শর্ত না মানার ‘দেশপ্রেম’ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারা সাহায্য নিতে কিংবা নিলেও তা ব্যবহার করতে অনাগ্রহ দেখায়। এ রকম একটি গোলকধাঁধা থেকে বেরোনোর উপায় হলো জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার হওয়া। স্থানীয় সরকার ও সংসদকেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই সংস্কারের লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আগামী নভেম্বরে দাতাদের পর্যালোচনা সভা হবে। আমরা অনেক সময় শুনি যে দাতাদের অন্যায্য শর্ত বাংলাদেশ সরকার মানবে না। শর্তের বিরুদ্ধে অনেক সময় মেঠো বক্তৃতা শোনা যায় এবং তাতে সস্তা বাহ্বা কুড়ানোও সম্ভব হয়। অবশ্য এ কথাও ঠিক, দাতাগোষ্ঠীর তরফে অন্যায্য কিংবা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শর্ত চাপানোর তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের ইতিহাসে আছে। এখানে অবশ্য সরকার ও দাতা উভয় তরফে জনগণ বা গণমাধ্যমের সঙ্গে এক ধরনের অস্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়। আমরা মনে করি, কী শর্তে কী পরিমাণ টাকা নেওয়া হয় এবং সে বিষয়ে কত দূর কী সুফল মেলে, সে বিষয়ে উভয়ের তরফে সময়ে সময়ে লিখিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা উচিত। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে (১৪ সেপ্টেম্বর) বলেন, ‘ইতিমধ্যে উন্নয়ন-সহযোগীরা সরকারের সঙ্গে মিলে যৌথ সহায়তায় কর্মকৌশল তৈরি করেছে।’ উন্নয়ন-সহযোগী ও সরকারের সমন্বয়ে গঠিত স্থানীয় পরামর্শক দলের (এলসিজি) যুগ্ম আহ্বায়ক ক্রিস অস্টিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট।’ অথচ গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে উন্নয়ন-সহযোগীরা বলেছিল, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে বিচার বিভাগ, দুদক, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ সব মৌলিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে যে কোনো অগ্রগতি নেই, তা আমরা বেশ দেখতে পাচ্ছি। লক্ষণীয় যে উন্নয়ন-সহযোগীরা বোধগম্য কারণেই তাদের হতাশার কথা প্রকাশ করে না। যেমন দুই ইউরোপীয় কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন।
উন্নয়ন-সহযোগীদের এ ধরনের অসন্তোষ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে, এমন আশা করা কঠিন। সাহায্য বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সরকার বিচলিত হয় না। আবার কখনো কখনো আমরা দেখেছি যে পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে হঠাৎ দাতাদের শর্ত না মানার ‘দেশপ্রেম’ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারা সাহায্য নিতে কিংবা নিলেও তা ব্যবহার করতে অনাগ্রহ দেখায়। এ রকম একটি গোলকধাঁধা থেকে বেরোনোর উপায় হলো জনপ্রতিনিধিদের সোচ্চার হওয়া। স্থানীয় সরকার ও সংসদকেন্দ্রিক জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই সংস্কারের লক্ষ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
No comments