মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ ২৪ জুন
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৪ জুন দিন নির্ধারণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গতকাল রোববার রাষ্ট্রপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শেষে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কার্যক্রম শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের সূচনা বক্তব্য ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন শুরু করে। আসামির কাঠগড়ায় গোলাম আযম উপস্থিত ছিলেন। ঘণ্টা খানেক পর আসামিপক্ষের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কারাকক্ষে ফেরত পাঠানো হয়। এ-সংক্রান্ত আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামি শারীরিকভাবে অস্বস্তি বোধ করায় তাঁকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সাক্ষ্য গ্রহণের আগপর্যন্ত তাঁকে আর ট্রাইব্যুনালে হাজির করার প্রয়োজন নেই।
গতকাল ১৪২ পৃষ্ঠার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ, কৌঁসুলি জেয়াদ-আল-মালুম, নূরজাহান মুক্তা, এ কে এম সাইফুল ইসলাম, সুলতান মাহমুদ ও মীর ইকবাল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষ সূচনা বক্তব্যে বলে, রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি বাহিনী মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধ ঘটিয়েছে, এসব বাহিনীর ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বে থাকায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযম কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের (বর্তমানে ছাত্রশিবির) বাছাই করা সেরা কর্মীদের দিয়ে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়েছিল।
পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে শান্তি কমিটি গঠনে গোলাম আযম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সদস্য নির্বাচনে এ শান্তি কমিটির বিশেষ ভূমিকা ছিল।
সূচনা বক্তব্যে বলা হয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে রাজাকারদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তারা পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করা ছাড়াও নিজ উদ্যোগে নানা ধরনের অভিযান চালায়। বিজয়ের প্রাক্কালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড রাজাকার ও আলবদরদের তেমন অভিযানের উদাহরণ।
সূচনা বক্তব্যে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে আবারও উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্ররোচনা ও উসকানিমূলক বক্তব্য, পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক ইয়াহিয়া খান ও টিক্কা খানের সঙ্গে ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অভিযোগ।
সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাজুল ইসলাম জেরার প্রস্তুতির জন্য সময়ের আরজি জানান। পরে ট্রাইব্যুনাল ২৪ জুন সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করে আদেশ দেন। ওই দিনের মধ্যে আসামিপক্ষকে তাঁদের সাক্ষীর তালিকা ও সংশ্লিষ্ট নথি জমা দিতে বলা হয়েছে।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে গত ১৩ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগে গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এসব অভিযোগে ৬০টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়। ৫ জুন সূচনা বক্তব্যের জন্য দিন ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষের কয়েকটি আবেদনের শুনানির জন্য তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে গতকাল তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন, কারাগারে আটক গোলাম আযমকে পবিত্র কোরআন, হাদিসসহ ইসলামি বই সরবরাহের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৩ মে যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা এখনো পালন করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল আজ সোমবার আদেশ দিতে পারেন।
No comments