'চক্রবর্তী রাজা' by সুভাষ সাহা
মনুর অনুভবে চক্রবর্তী রাজার রাজ্যে বাঘে-মোষে এক ঘাটে পানি খাওয়ার মতো অবস্থা। রাজা ছিলেন আদিত্য সূর্যের মতো, সাধারণ মানুষের চোখ-মন ধাঁধিয়ে দেন। সেখানে থমকানো একটা ভয় সবসময় মানুষকে বশ্যতার সীমায় বরফের মতো আড়ষ্ট করে রাখে।
সেই দুনিয়ায় এমন কেউ নেই, যিনি বা যারা রাজার দিকে মুখ তুলে, চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখেন। রাজা যা বলেন, যা হুকুম করেন, তাই আইন এবং তাকেই সব প্রজাকে পালন করতে সদা প্রস্তুত থাকতে হয়। কিন্তু গণতন্ত্রে মানুষের স্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার, সভা-সমাবেশ করার অধিকার, শাসকের সমালোচনা করার অধিকার এবং প্রয়োজনে শাসককে পাল্টানোর অধিকার সাধারণের ওপর ন্যস্ত। অতএব গণতান্ত্রিক শাসনে মনু বর্ণিত চক্রবর্তী রাজার কোনো স্থান থাকার কথা নয়। যদিও কয়েকটি দেশে এখনও বাদশাহিতন্ত্র বহাল রয়েছে এবং কোথাও কোথাও সামরিক শাসকের এখনও হুঙ্কার শোনা যায়। তবে এটা দুনিয়ার সাধারণ প্রবণতা নয়। তারপরও এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, গণতন্ত্রের নামে দলতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র কখনও কখনও গণতান্ত্রিক শাসনের নামেই কোনো কোনো রাজ্যপাট সামলাচ্ছে। এ ধরনের শাসনে পরিবার ও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠে মোসাহেবের দল, যাদের কাজ হলো রাজাদের অমাত্যবর্গের মতো সর্বক্ষণ পরিবার ও ব্যক্তির গুণকীর্তন করা। এভাবে একটি দল বা ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠী ক্ষমতায় দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে মানুষের মধ্যে এমন ভাব জন্ম নেয় যে, এর বুঝিবা কোনো বিকল্প নেই। এ কারণেই কি রবার্ট মিশেলের 'আয়রন অব অলিগার্কি' গণতন্ত্রেও কোথাও কোথাও দেখা যায়! এ ধরনের শাসনকেও আমজনতার সমঝে চলতে হয়। এর অন্যথা হলেই কলির ভয়ঙ্কর বাঁশি চরাচর কাঁপিয়ে দিতে পারে।
অধুনা রাশিয়ায় এ ধরনের শাসনের আলামত উলঙ্গভাবে ধরা পড়েছে। সেখানে সাংবিধানিক বিধিবিধানকে আক্ষরিকভাবে অনুসরণের স্থূল প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। সংবিধানের মূল বাণীকে বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্সি ও প্রধানমন্ত্রিত্বকে পালাক্রমে পুতিন এবং মেদভেদেভের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত সংসদ রয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও যথারীতি হয়, কিন্তু শাসন ক্ষমতার প্রধান ব্যক্তিদ্বয় অবস্থান অদলবদল করে একই থেকে যান। প্রেসিডেন্ট পদে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় না থাকার বিধান করা হয়েছিল, যাতে দেশটিতে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে শাসন-প্রশাসন জিম্মি হয়ে না পড়ে। লক্ষ্য ছিল, নেতৃত্বে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নতুন নতুন অগ্রবর্তী চিন্তাকে ধারণ করার মাধ্যমে নতুন ভিশনারি নেতৃত্বের আগমনের পথকে প্রশস্ত করা। কিন্তু পুতিন ও মেদভেদেভ তাদের মধ্যে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়াকে সেই পুরনো অচলায়তনেই আবদ্ধ রাখলেন। স্বভাবতই এর বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্ম ক্রমে বিদ্রোহী হয়ে উঠল। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো জাতীয়-আন্তর্জাতিক আরও অনেক ইকুয়েশন। ফলে রাশিয়ার রাজপথ অতি দ্রুত পুতিন-মেদভেদেভের পালাক্রমে রাশিয়ার শাসনকে কব্জা করে নেওয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠার অপেক্ষায় ছিল। পুতিন এই প্রতিবাদ বিক্ষোভকে আর বাড়তে দিতে চান না। তাই তার দল ফ্রি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন সংসদ মিছিল-সমাবেশের পূর্বানুমতি না নিলে ব্যক্তির ওপর বিভিন্ন হারের জরিমানার বিধান রেখে এক অভিনব আইন পাস করল। পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাতে সিলমোহর দিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জিও প্রায় একই ধরনের আইন প্রণয়নের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু রাশিয়ায় এ ধরনের আইন বলবৎ হওয়ায় স্বাভাবিক প্রতিবাদ সমাবেশের রাস্তা না পেয়ে তারুণ্য এক সময় বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হতে পারে। এতে আয়রন ল অব অলিগার্কির চোখ রাঙানিকে মানুষ জয় করে প্রশাসনকে তছনছ করে দিতে পারে।
কাজেই চক্রবর্তী রাজার মতো পুতিন-মেদভেদেভ কেন ভাবছেন যে, তারা ছাড়া জনতার আর কোনো গতি নেই!
অধুনা রাশিয়ায় এ ধরনের শাসনের আলামত উলঙ্গভাবে ধরা পড়েছে। সেখানে সাংবিধানিক বিধিবিধানকে আক্ষরিকভাবে অনুসরণের স্থূল প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। সংবিধানের মূল বাণীকে বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্সি ও প্রধানমন্ত্রিত্বকে পালাক্রমে পুতিন এবং মেদভেদেভের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচিত সংসদ রয়েছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও যথারীতি হয়, কিন্তু শাসন ক্ষমতার প্রধান ব্যক্তিদ্বয় অবস্থান অদলবদল করে একই থেকে যান। প্রেসিডেন্ট পদে এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় না থাকার বিধান করা হয়েছিল, যাতে দেশটিতে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে শাসন-প্রশাসন জিম্মি হয়ে না পড়ে। লক্ষ্য ছিল, নেতৃত্বে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চারের মাধ্যমে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নতুন নতুন অগ্রবর্তী চিন্তাকে ধারণ করার মাধ্যমে নতুন ভিশনারি নেতৃত্বের আগমনের পথকে প্রশস্ত করা। কিন্তু পুতিন ও মেদভেদেভ তাদের মধ্যে অলিখিত চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়াকে সেই পুরনো অচলায়তনেই আবদ্ধ রাখলেন। স্বভাবতই এর বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্ম ক্রমে বিদ্রোহী হয়ে উঠল। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো জাতীয়-আন্তর্জাতিক আরও অনেক ইকুয়েশন। ফলে রাশিয়ার রাজপথ অতি দ্রুত পুতিন-মেদভেদেভের পালাক্রমে রাশিয়ার শাসনকে কব্জা করে নেওয়ার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠার অপেক্ষায় ছিল। পুতিন এই প্রতিবাদ বিক্ষোভকে আর বাড়তে দিতে চান না। তাই তার দল ফ্রি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন সংসদ মিছিল-সমাবেশের পূর্বানুমতি না নিলে ব্যক্তির ওপর বিভিন্ন হারের জরিমানার বিধান রেখে এক অভিনব আইন পাস করল। পুতিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাতে সিলমোহর দিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জিও প্রায় একই ধরনের আইন প্রণয়নের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু রাশিয়ায় এ ধরনের আইন বলবৎ হওয়ায় স্বাভাবিক প্রতিবাদ সমাবেশের রাস্তা না পেয়ে তারুণ্য এক সময় বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হতে পারে। এতে আয়রন ল অব অলিগার্কির চোখ রাঙানিকে মানুষ জয় করে প্রশাসনকে তছনছ করে দিতে পারে।
কাজেই চক্রবর্তী রাজার মতো পুতিন-মেদভেদেভ কেন ভাবছেন যে, তারা ছাড়া জনতার আর কোনো গতি নেই!
No comments