আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতি-পুলিশ প্রশাসনের আন্তরিকতা প্রয়োজন

দেশে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে অতি নাজুক, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু লক্ষণীয়, এই আইনশৃঙ্খলা অবনতির সঙ্গে যোগ হয়েছে চরম নৃশংস ঘটনাবলি, যা বাংলাদেশে আগে কখনোই এই মাত্রায় দেখা যায়নি।


এবং আরো আশঙ্কার বিষয় হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব গুরুতর অপরাধের বিষয়ে কখনো নির্লিপ্ত, কখনো দায়িত্ব পালনে অবহেলাগ্রস্ত, এমনকি কখনো অপরাধে অভিযুক্তদের সহায়তা দিয়ে আসছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠছে, যা দেশের সাধারণ জনগণকে আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভোগাচ্ছে। অসংখ্য হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই, দখলের খবর নিয়মিত পত্রিকার পাতা ভরে তুলছে। সেই সঙ্গে এমন কিছু অস্বাভাবিক হত্যাকাণ্ডের সংবাদ বের হচ্ছে, যা এ দেশের জনগণের কাছে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত; আবেগপ্রবণ এ জাতির হৃদয় বিদীর্ণ করছে। শনিবার সিলেটে দুর্বৃত্তরা ৭৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ মোমিনা খাতুনকে গলায় ছুরি চালিয়ে এবং তাঁর ছয় বছর বয়সী নাতনি সাবিহা আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকায় বৃদ্ধ মা খালেদা বানুর চোখের সামনে মেয়ে নিশাত বানুকে হত্যা করেছে দুষ্কৃৃতকারীরা। এ অপরাধে নিহতের পরিবার থেকে যাদের জোরালোভাবে দায়ী করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে সিলেটের ঘটনায় কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অপরাধের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, পৃথিবীর সর্বত্রই যারা হত্যা করে, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই লোকচক্ষুর আড়ালে অপরাধটি সেরে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হত্যার মোটিভ ধরে হত্যাকাণ্ডের আলামত পরীক্ষা করে মেধা খাটিয়ে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে হয়। সে কাজটি করতে একদিকে প্রয়োজন পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও নিষ্ঠা, অন্যদিকে প্রয়োজন আন্তরিকতা ও মানবিক বিবেচনা। দুঃখের বিষয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বরতদের মধ্যে এসব গুণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করার কাজ সরকারের। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকেও পরিস্থিতি সঠিকভাবে অনুধাবন করা হচ্ছে বলে মনে হয় না। নিষ্ঠুর এসব ঘটনা ঘটতে না দেওয়া এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করার ব্যাপারে সরকারকে এখনই কঠিন পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশ পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের জনগণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকে। সুতরাং সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আমরা সিলেটের ওই দুঃখজনক হত্যাকাণ্ড এবং ঢাকার নিশাত হত্যাকাণ্ডসহ সারা দেশে সম্প্রতি সংঘটিত অপরাধগুলোর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করার দাবি জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.