কালের যাত্রা by পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
নিষিদ্ধ পলিথিন শপিং ব্যাগে বাজার আবার সয়লাব। দেশের আনাচ-কানাচের কোনো বাজারেই পলিথিন শপিং ব্যাগের অভাব নেই। মাছ, তরকারি, সবজি থেকে শুরু করে মাত্র পাঁচ টাকার মরিচ কিনলেও দোকানিরা পলিথিন শপিং ব্যাগে দিতে কার্পণ্য করছে না।
বেশ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধ এ পলিথিন ব্যাগে বাজার ছেয়ে গেছে। কেবল চেহারায় কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝে মাঝে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে অভিযানও পরিচালনা করছে। কিন্তু বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের সরব উপস্থিতি মোটেই নীরব হচ্ছে না।
পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির কথা চিন্তা করে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর আওতায় ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় এবং একই বছরের ১ মার্চ সারা দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অনেক দিন এর সুফলও ভোগ করেছি আমরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে এগুলোর যেমন ছড়াছড়ি, তাতে এর উৎপাদন ও বিক্রি যে বন্ধ নেই তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।
নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন বা প্রদর্শনের শাস্তিও কিন্তু একেবারে কম নয়। পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত করলে আইন লঙ্ঘনকারী অনধিক ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। পলিথিন শপিং ব্যাগ বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে আইন লঙ্ঘনকারী অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
পলিথিন ব্যাগের একমাত্র সুবিধা হলো, দৈনন্দিন কেনাকাটার পণ্যগুলো বহন সহজসাধ্য ও আরামদায়ক করে তোলা। অত্যন্ত কম মূল্যমানের হওয়ায় কোনো ক্রেতা ৫ টাকার জিনিস কিনলেও দোকানি একটি পলিথিন ব্যাগে তা ভর্তি করে দিতে কার্পণ্য করেন না। কিন্তু একটি উপকার বা এতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যের বিনিময়ে পলিথিন ব্যাগ পরিবেশের কী বিশাল ক্ষতি করছে, তা চিন্তা করছেন না কেউ। পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার এবং বর্জ্য বিনাশের চেষ্টা প্রতিটি পর্যায়েই রয়েছে বিষক্রিয়াজনিত বিপদ। এটি উৎপাদনের সময় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ, ব্যবহারের সময় খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিকের সংমিশ্রণ এবং আগুনে পুড়িয়ে বিনাশের চেষ্টা করার সময় বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে বায়ুদূষণের মতো মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। তার পরও পলিথিন ব্যাগ বাজারে আসছে এবং মানুষ ব্যবহার করছে।
পলিথিন ব্যাগ বায়োডিগ্রেডেবল নয়, অর্থাৎ এটি কখনো মাটির সঙ্গে মিশে না। যেখানে পড়ে সেখানকার মাটিকে পৃথক করে রাখে যুগ যুগ ধরে এবং পলিথিনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে ঢুকে মাটি দূষিত করে। মাটির নিজস্ব গুণাগুণ নষ্ট করে। ধীরে ধীরে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে। ফলে ক্ষেতখামার, গাছপালার ওপর সে প্রভাব অনিবার্য হয়ে ওঠে। পলিথিনের রাসায়নিক সংস্রবের কারণে নদ-নদীর পানি দূষিত হয়। সে কারণে জলজ প্রাণীদের জীবন ধারণেও অসুবিধার সৃষ্টি হয়। পানি দূষণের ফলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। মানুষ একটু সুবিধার জন্য পলিথিন ব্যাগে বহন করছে কাঁচা তরকারি, মাছ-মাংসসহ অনেক রকম খাদ্যসামগ্রী। পলিথিন ব্যাগ থেকে এসব খাবারে কিছু না কিছু বিষ মিশেই যাচ্ছে। শরীরের পুষ্টির জন্য মানুষ যে খাবার কিনে আনছে সেটিই ঘটাচ্ছে বিষক্রিয়ার। পলিথিনের শপিং ব্যাগে খাদ্যদ্রব্য রাখলে দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করায় মানবদেহে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করতে পারে।
পলিথিন শপিং ব্যাগ যে এলাকায় তৈরি হয় সেখানকার বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। রিসাইক্লিং করে নতুন ব্যাগ বা পলিথিন সামগ্রী তৈরির সময় এর মানের আরো অবনতি ঘটে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পলিথিন শপিং ব্যাগ পোড়ালে বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, পলিথিন শপিং ব্যাগের বহুল ব্যবহারের ফলে কী শহর, কী গ্রাম_সর্বত্রই খড়কুটা বা গাছপালার পাতা কিছু পরিমাণ এক স্থানে জড়ো করলেই তার মধ্যে কিছু বর্জ্য পলিথিন শপিং ব্যাগের উপস্থিতি থাকে। সেসব খড়কুটা, পাতা পোড়ানোর সময় পলিথিন ব্যাগও পুড়ে মারাত্মক বায়ুদূষণের ঘটনা সংঘটিত হয়।
মানুষকে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার থেকে নিবৃত্ত করার জন্য প্রয়োজন এর সঠিক ও সহজলভ্য বিকল্প। পলিথিন শপিং ব্যাগের কারণে ক্ষতিটা যেহেতু তাৎক্ষণিক নয়, সে কারণে মানুষ ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত ক্ষতিকে উপেক্ষা করে দিনের বাজার করাকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও আরামদায়ক করতে খুব সহজেই পলিথিন শপিং ব্যাগের দিকে হাত বাড়ায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি যতক্ষণ একটি উপযুক্ত বিকল্প সামনে তুলে দেওয়া না যাবে ততক্ষণ মানুষের এই প্রবণতা বন্ধ করা কষ্টকর। সে ক্ষেত্রে পাট ও কাপড়ের ব্যাগের প্রচলন আমাদের ব্যাপকভাবে সহায়তা করতে পারে। পাট ও কাপড়ের পাতলা, সহজলভ্য ও সস্তা ব্যাগ মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি। সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং পলিথিন নিষিদ্ধ করা আইন যাতে কেউ অমান্য করতে না পারে, সে বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ পরিবেশ দূষণরোধে আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই। কিন্তু পরিবেশ আইনগুলো অমান্য করলে যেসব শাস্তি হতে পারে সে সম্পর্কে জনগণের সঠিক ধারণা বা চিন্তা না থাকায় অনেক পরিবেশ আইনই মানুষ সঠিকভাবে মানছে না। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি পলিথিন শপিং ব্যাগের বেলায়।
লেখক : প্রকৌশলী, বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ের লেখক
পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির কথা চিন্তা করে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর আওতায় ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকায় এবং একই বছরের ১ মার্চ সারা দেশে পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। অনেক দিন এর সুফলও ভোগ করেছি আমরা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে এগুলোর যেমন ছড়াছড়ি, তাতে এর উৎপাদন ও বিক্রি যে বন্ধ নেই তা বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।
নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন বা প্রদর্শনের শাস্তিও কিন্তু একেবারে কম নয়। পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত করলে আইন লঙ্ঘনকারী অনধিক ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। পলিথিন শপিং ব্যাগ বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে আইন লঙ্ঘনকারী অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
পলিথিন ব্যাগের একমাত্র সুবিধা হলো, দৈনন্দিন কেনাকাটার পণ্যগুলো বহন সহজসাধ্য ও আরামদায়ক করে তোলা। অত্যন্ত কম মূল্যমানের হওয়ায় কোনো ক্রেতা ৫ টাকার জিনিস কিনলেও দোকানি একটি পলিথিন ব্যাগে তা ভর্তি করে দিতে কার্পণ্য করেন না। কিন্তু একটি উপকার বা এতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যের বিনিময়ে পলিথিন ব্যাগ পরিবেশের কী বিশাল ক্ষতি করছে, তা চিন্তা করছেন না কেউ। পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার এবং বর্জ্য বিনাশের চেষ্টা প্রতিটি পর্যায়েই রয়েছে বিষক্রিয়াজনিত বিপদ। এটি উৎপাদনের সময় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রণ, ব্যবহারের সময় খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিকের সংমিশ্রণ এবং আগুনে পুড়িয়ে বিনাশের চেষ্টা করার সময় বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান বাতাসে ছড়িয়ে বায়ুদূষণের মতো মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। তার পরও পলিথিন ব্যাগ বাজারে আসছে এবং মানুষ ব্যবহার করছে।
পলিথিন ব্যাগ বায়োডিগ্রেডেবল নয়, অর্থাৎ এটি কখনো মাটির সঙ্গে মিশে না। যেখানে পড়ে সেখানকার মাটিকে পৃথক করে রাখে যুগ যুগ ধরে এবং পলিথিনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে ঢুকে মাটি দূষিত করে। মাটির নিজস্ব গুণাগুণ নষ্ট করে। ধীরে ধীরে মাটি অনুর্বর হয়ে পড়ে। ফলে ক্ষেতখামার, গাছপালার ওপর সে প্রভাব অনিবার্য হয়ে ওঠে। পলিথিনের রাসায়নিক সংস্রবের কারণে নদ-নদীর পানি দূষিত হয়। সে কারণে জলজ প্রাণীদের জীবন ধারণেও অসুবিধার সৃষ্টি হয়। পানি দূষণের ফলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। মানুষ একটু সুবিধার জন্য পলিথিন ব্যাগে বহন করছে কাঁচা তরকারি, মাছ-মাংসসহ অনেক রকম খাদ্যসামগ্রী। পলিথিন ব্যাগ থেকে এসব খাবারে কিছু না কিছু বিষ মিশেই যাচ্ছে। শরীরের পুষ্টির জন্য মানুষ যে খাবার কিনে আনছে সেটিই ঘটাচ্ছে বিষক্রিয়ার। পলিথিনের শপিং ব্যাগে খাদ্যদ্রব্য রাখলে দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করায় মানবদেহে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি করতে পারে।
পলিথিন শপিং ব্যাগ যে এলাকায় তৈরি হয় সেখানকার বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। রিসাইক্লিং করে নতুন ব্যাগ বা পলিথিন সামগ্রী তৈরির সময় এর মানের আরো অবনতি ঘটে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় প্রচুর বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। পলিথিন শপিং ব্যাগ পোড়ালে বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, পলিথিন শপিং ব্যাগের বহুল ব্যবহারের ফলে কী শহর, কী গ্রাম_সর্বত্রই খড়কুটা বা গাছপালার পাতা কিছু পরিমাণ এক স্থানে জড়ো করলেই তার মধ্যে কিছু বর্জ্য পলিথিন শপিং ব্যাগের উপস্থিতি থাকে। সেসব খড়কুটা, পাতা পোড়ানোর সময় পলিথিন ব্যাগও পুড়ে মারাত্মক বায়ুদূষণের ঘটনা সংঘটিত হয়।
মানুষকে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার থেকে নিবৃত্ত করার জন্য প্রয়োজন এর সঠিক ও সহজলভ্য বিকল্প। পলিথিন শপিং ব্যাগের কারণে ক্ষতিটা যেহেতু তাৎক্ষণিক নয়, সে কারণে মানুষ ব্যক্তিগত এবং পরিবেশগত ক্ষতিকে উপেক্ষা করে দিনের বাজার করাকে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও আরামদায়ক করতে খুব সহজেই পলিথিন শপিং ব্যাগের দিকে হাত বাড়ায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি যতক্ষণ একটি উপযুক্ত বিকল্প সামনে তুলে দেওয়া না যাবে ততক্ষণ মানুষের এই প্রবণতা বন্ধ করা কষ্টকর। সে ক্ষেত্রে পাট ও কাপড়ের ব্যাগের প্রচলন আমাদের ব্যাপকভাবে সহায়তা করতে পারে। পাট ও কাপড়ের পাতলা, সহজলভ্য ও সস্তা ব্যাগ মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি। সঙ্গে সঙ্গে জনগণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি এবং পলিথিন নিষিদ্ধ করা আইন যাতে কেউ অমান্য করতে না পারে, সে বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ পরিবেশ দূষণরোধে আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই। কিন্তু পরিবেশ আইনগুলো অমান্য করলে যেসব শাস্তি হতে পারে সে সম্পর্কে জনগণের সঠিক ধারণা বা চিন্তা না থাকায় অনেক পরিবেশ আইনই মানুষ সঠিকভাবে মানছে না। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি পলিথিন শপিং ব্যাগের বেলায়।
লেখক : প্রকৌশলী, বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ের লেখক
No comments