দূরের দুরবীনে-জন্মভূমি বাঁচলেই পৃথিবীর বাঙালি বাঁচবে by অজয় দাশগুপ্ত
লেনিন বিশ্বাস করতেন, পৃথিবী দরিদ্র নয়, বিপুলা এই ধরণীর যে ঐশ্বর্য, বৈভব ও ক্ষমতা, তাতে বিশ্ব শান্তি বা ক্ষুধাহীন দুনিয়া কঠিন কিছু নয়, সে জন্য চাই সম্পদের সুষম বণ্টন। বলা বাহুল্য, বণ্টনের আরেক নামই বাটোয়ারা। ভাগবাটোয়ারার ক্ষেত্রে সম্পদশালী দেশগুলো তাদের কথা রাখেনি।
শুধু রাখেনি বললে ভুল হবে; আজ নানা গৌরবে স্ফীত ও ধনী দেশগুলোর অতীতে আছে পশ্চাৎপদ, দরিদ্র নামে পরিচিত দেশের শিক্ষা ও সুযোগবঞ্চিত মানব সন্তানের দীর্ঘশ্বাস। এই যে নিয়মনিষ্ঠা, শৃঙ্খলা আর সৌজন্য, এই যে কায়দা-মোড়ানো আভিজাত্য, পদে পদে ভদ্রতা, এর পেছনের শক্তি কোথায়? কোথা থেকে এসেছে পাশ্চাত্যের এই নিয়মনিষ্ঠা? এশিয়া, আফ্রিকা বা যেকোনো মহাদেশের পিছিয়ে পড়া সাধারণ মানুষ তার মেধা ও যোগ্যতার লালনে কোথায় পৌঁছতে পারে, ইতিহাসই তার উজ্জ্বল সাক্ষী; কিন্তু সে চেষ্টা বা প্রয়াসকে সংঘবদ্ধ হতে দেওয়ার ব্যাপারে পুঁজিবাদী দেশগুলো কি আদৌ আন্তরিক? তারা কি আসলেই চায় দুনিয়াব্যাপী মানুষ একই মর্যাদা, এক মানদণ্ডে, এক অবস্থানের সুখী ও সচ্ছল জীবন যাপন করুক? আপাতদৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও এর সহজ উত্তর_না। অস্ট্রেলিয়ার কথায় ফিরি। এ দেশটিকে মনের মতো সাজিয়েছেন সেটেলার নামে পরিচিত ইংরেজ শাসকরা। কঠিন ও রক্তাক্ত অতীতের গ্লানি ও চিহ্ন মুছে দিতে আধুনিকতার সর্বোচ্চ উপকরণ জেল্লা পরানোর আপ্রাণ প্রচেষ্টায় এ দেশ আজ অভিবাসী মানুষের স্বর্গভূমি, কিন্তু খটকা থেকেই যায়। ইংরেজ তো আমাদের দেশও দখল করেছিল। অবিভক্ত উপমহাদেশে ২০০ বছর দোর্দণ্ড শাসনও চালিয়েছিল তারা। সন্দেহ নেই যাতায়াত, শিক্ষা, জীবন, চিকিৎসা_নানা ক্ষেত্রে এরাই পথিকৃৎ; খুলে দিয়েছিল নতুন পথ ও আধুনিকতার প্রশস্ত, অবাধ দিগন্ত। ফের প্রশ্ন জাগে, এই যে অস্ট্রেলিয়ার যান ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট, যানবাহনের দুর্দান্ত নিয়মাবলি, শাসন ও স্নেহে গড়া সুরক্ষাবলয়, সে আন্তরিক প্রচেষ্টা কি আমাদের বেলায় ছিল? ছিল না। চট্টগ্রামের কথাই বলি, বিপ্লবী সূর্য সেন ও স্বদেশি আন্দোলনের রক্তাক্ত বিপ্লবের জোরে টালমাটাল ইংরেজ শাসক চট্টগ্রামের নিভৃত গ্রামেও পাকা রাস্তাঘাট-কালভার্ট নির্মাণে কার্পণ্য করেনি, উদ্দেশ্য দ্রুত যোগাযোগে অভ্যুত্থান বা বিদ্রোহ দমন, অথচ দক্ষিণ চট্টগ্রামের দোহাজারীর পর পরই বিশ্বের দীর্ঘ ও নয়নাভিরাম সমুদ্রসৈকত। এ কথা তারা জানত, জানত বলেই তো আমাদের প্রিয় ও গর্বের এই সৈকত নগরীর নামটি ইংরেজ বণিক কক্সের নামে। কিন্তু ওই অবধি রেললাইন বিস্তারে মনোযোগ দেয়নি তারা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিলি্ল, আগ্রা, পাঞ্জাব, লাহোর সর্বত্র এক বাস্তবতা, একই চিত্র। এর কারণ বোঝা কঠিন কিছু নয়। তারা জানত ভারতবর্ষ অধিকার করা গেলেও পদানত করা যাবে না। উপমহাদেশের মাটি, হাওয়া, মানুষ ও সংস্কৃতি আপাত-পরাজয় মানলেও বশ্যতা মানবে না। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো উপনিবেশ শাসনের পরও এ দুই দেশের মতো নেতৃত্বহীন, ঐতিহ্যবিহীন, অভিভাবকহীন ছিল না। ফলে একদিন না একদিন যে ক্ষমতা ছেড়ে যেতে হবে_এটা তারা নিশ্চিতভাবে জানত। আর সে কারণেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যাতায়াত ব্যবস্থা, সুখী-শিক্ষিত-সচ্ছল দেশ ও সমাজের পরিবর্তে 'যা পাও তাই নাও' নীতির শাসন চালিয়ে যেতে পেরেছিল।
সে তো বহুকাল আগের কথা, অতঃপর পাকিস্তান; সে আমলেও আমাদের দীর্ঘশ্বাস আর কষ্টের শেষ হয়নি। তারপর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত দেশ, আজও কি পাশ ফিরে শুতে পারার সময় এসেছে? আজ কি আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, এ দেশ ও জাতি নিরাপদ? এ নিরাপত্তা ভৌগোলিক সার্বভৌমত্ব বা অন্য দেশের রক্তচক্ষুর বেলায় যেমন, তেমনই প্রকৃতিগত বিপর্যয়েও এক জ্বলন্ত প্রশ্ন। জাপানের কথাই ধরুন, এমন কঠিন ও কঠোর প্রাকৃতিক শাস্তি ঈশ্বরের হৃদয়কেও দীর্ণ করে। জাপানিদের মতো পরিশ্রমী ও বিনয়ী জাতি দুনিয়ায় বিরল। পেট্রল স্টেশন থেকে সুপার মার্কেট, এয়ারপোর্ট থেকে বিদ্যালয়, যেখানে যাবেন মাথা নুয়ে বিনয়ী জাপানির আন্তরিক সম্ভাষণে সিক্ত হবেন আপনি। এ বিনয় কেবল সৌজন্য নয়, এ তাদের ঐতিহ্য। এ দেশে যত জাপানি বন্ধু বা সহকর্মী পেয়েছি, সবাই কর্মঠ ও পরিশ্রমী, হওয়ারই কথা। অনেকে জানেন, সে দেশের বয়স্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী পরিমাণ কর্মচঞ্চল ও নিবেদিত। একটা বয়সের পর কিভাবে কাজ করতে না পারলে অশ্রুপাত ও হাহাকার যেমন সাধারণ বিষয়, তেমনি হারিকিরি বা আত্মহননও। পৃথিবীর কোনো দেশে কর্মক্ষেত্রে বা কাজে ১০০ পার্সেন্ট মনোযোগ ও শ্রম দিতে না পারায় আত্মত্যাগের নজির আছে বলে মনে হয় না। বিনয়ী ও পরিশ্রমী মানুষের এই দেশটিকে প্রকৃতি কেন এই নির্মমতার ছোবল মেরে শিক্ষা দিচ্ছে? ব্যক্তিগতভাবে ভাগ্যবান, টোকিও যাওয়ার প্রাক্কালে এমন দুর্ঘটনায় যাত্রা গেছে থেমে, নইলে কি হতো বা আজ কোথায় থাকতাম জানি না।
যে কথা বলছিলাম, উপনিবেশ, প্রকৃতির শিক্ষা_কোনোটা থেকেই অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা গ্রহণ করি না আমরা। জাপানের ভয়াবহ দুর্যোগ, কুইন্সল্যান্ডের ভয়াল বন্যা, নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্পের পর বহু মানুষ প্রশ্ন করেন, 'আচ্ছা ঢাকায় এমন কিছু হলে কী হবে?' শুধু ঢাকা কেন, দেশের যেকোনো শহর বা অঞ্চলে এর কাছাকাছি জাতীয় কোনো বিপর্যয় ঘটলে কী হবে, সে ধারণা করাও দুঃস্বপ্ন। দেশে প্রতীক্ষা-কাতর আমার মায়ের মুখটি হয়তো চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে, কোনো দিন খুঁজে পাব না আমার ভগি্ন অথবা ভ্রাতাদের পরিচয়, জীবনের কোনো চিহ্নও থাকবে না কোথাও, যে হাতের লাল রাখি লাল সুতোয় বঙ্গদেশের রঙিন স্বপ্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে হয়তো অন্ধ মাটির তলায় অদৃশ্যে গোপনে ঢাকা পড়ে যাবে, ইতিহাসের পলেস্তারায় ঢাকা পড়ে রইবে হাজারও প্রিয়মুখ।
আমরা কি তা চাই? না কামনা করি? করি না বটে, কিন্তু এ-জাতীয় ভয়াবহতা বা বিপর্যয় রোধে সম্মিলিত প্রতিরোধ কিংবা রুখে দেওয়ার শক্তি অর্জনেও সচেষ্ট নই, প্রকৃতি কখন কি করবে বা করতে পারে_তার আগাম সংকেত দেওয়া অসম্ভব, তা বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাও কাজের কথা নয়। রাজনীতি তথা সরকার বা বিরোধী দল কী করল, না করল, কী ভাবল, না ভাবল তার চেয়ে জরুরি নিজেদের ভাবনা। কিউবার কথা নিশ্চয়ই জানি, নিশ্চয়ই মনে রাখি আমরা, সমুদ্রতীরে বসবাস বড় দেশগুলোর রক্তচক্ষু আর বিরোধিতা মাথায় নিয়ে সে বেঁচে আছে, মাথা উঁচিয়ে বসবাস করে জানান দেয়, এভাবেই বাঁচতে হয়, যে ঝড়ে, যে জলোচ্ছ্বাসে আমেরিকার মতো দেশের নগরী লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, মানুষের মৃত্যু হয় পাখির মতো, অন্ধকারে চুরি, রাহাজানি, খুনে আমেরিকা হয়ে ওঠে দুঃস্বপ্ন; একই তাণ্ডবে শান্ত, স্থির কিউবার ক্ষতি অণু পরিমাণ। যার মূল কারণ আগাম সতর্কতা, সুরক্ষাবলয় আর শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে বাঁচার অদম্য প্রচেষ্টা। স্বাধীনতার ৪০ বছরে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ, পাকিস্তান, সাম্রাজ্যবাদ, সমাজবাদ, জঙ্গিবাদ_এসব ছুতো বা একে-ওকে দোষারোপ করে মুক্তি মিলবে না। যাঁরা ভালো আছেন, যাঁরা পৃথিবীতে সুখ-শান্তিতে, নিয়ম-নিষ্ঠায় বেঁচে আনন্দময় জীবন যাপন করছেন, তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যে রাজনীতি তা করতে দেয় না তাকে পরিহার করার শক্তি অর্জন করতে হবে। যে রাজনীতি দেশ ও মানুষ ছাড়া অন্য কিছু শেখায় না তাকে বরণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভালোবাসতে হবে নিজেকে, পাশের মানুষকে, সমাজকে অতঃপর দেশ ও মাটিকে। ভালোবাসা যেখানে থাকে সেখানেই জীবন মৃত্যুর চেয়ে বড়। এই ভালোবাসাকে যেন অতীত আর ভবিষ্যৎমুখী ঝগড়া-বিবাদে না ফেলে_এটাই শেষ কথা। বাংলাদেশ ও তার অস্তিত্ব না থাকলে কোনো কিছুই থাকবে না। যেকোনো বিপর্যয়ের আগেই তা বুঝতে হবে।
লেখক : সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
dasguptajoy@hotmail.com
সে তো বহুকাল আগের কথা, অতঃপর পাকিস্তান; সে আমলেও আমাদের দীর্ঘশ্বাস আর কষ্টের শেষ হয়নি। তারপর রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত দেশ, আজও কি পাশ ফিরে শুতে পারার সময় এসেছে? আজ কি আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, এ দেশ ও জাতি নিরাপদ? এ নিরাপত্তা ভৌগোলিক সার্বভৌমত্ব বা অন্য দেশের রক্তচক্ষুর বেলায় যেমন, তেমনই প্রকৃতিগত বিপর্যয়েও এক জ্বলন্ত প্রশ্ন। জাপানের কথাই ধরুন, এমন কঠিন ও কঠোর প্রাকৃতিক শাস্তি ঈশ্বরের হৃদয়কেও দীর্ণ করে। জাপানিদের মতো পরিশ্রমী ও বিনয়ী জাতি দুনিয়ায় বিরল। পেট্রল স্টেশন থেকে সুপার মার্কেট, এয়ারপোর্ট থেকে বিদ্যালয়, যেখানে যাবেন মাথা নুয়ে বিনয়ী জাপানির আন্তরিক সম্ভাষণে সিক্ত হবেন আপনি। এ বিনয় কেবল সৌজন্য নয়, এ তাদের ঐতিহ্য। এ দেশে যত জাপানি বন্ধু বা সহকর্মী পেয়েছি, সবাই কর্মঠ ও পরিশ্রমী, হওয়ারই কথা। অনেকে জানেন, সে দেশের বয়স্ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী পরিমাণ কর্মচঞ্চল ও নিবেদিত। একটা বয়সের পর কিভাবে কাজ করতে না পারলে অশ্রুপাত ও হাহাকার যেমন সাধারণ বিষয়, তেমনি হারিকিরি বা আত্মহননও। পৃথিবীর কোনো দেশে কর্মক্ষেত্রে বা কাজে ১০০ পার্সেন্ট মনোযোগ ও শ্রম দিতে না পারায় আত্মত্যাগের নজির আছে বলে মনে হয় না। বিনয়ী ও পরিশ্রমী মানুষের এই দেশটিকে প্রকৃতি কেন এই নির্মমতার ছোবল মেরে শিক্ষা দিচ্ছে? ব্যক্তিগতভাবে ভাগ্যবান, টোকিও যাওয়ার প্রাক্কালে এমন দুর্ঘটনায় যাত্রা গেছে থেমে, নইলে কি হতো বা আজ কোথায় থাকতাম জানি না।
যে কথা বলছিলাম, উপনিবেশ, প্রকৃতির শিক্ষা_কোনোটা থেকেই অভিজ্ঞতা বা শিক্ষা গ্রহণ করি না আমরা। জাপানের ভয়াবহ দুর্যোগ, কুইন্সল্যান্ডের ভয়াল বন্যা, নিউজিল্যান্ডের ভূমিকম্পের পর বহু মানুষ প্রশ্ন করেন, 'আচ্ছা ঢাকায় এমন কিছু হলে কী হবে?' শুধু ঢাকা কেন, দেশের যেকোনো শহর বা অঞ্চলে এর কাছাকাছি জাতীয় কোনো বিপর্যয় ঘটলে কী হবে, সে ধারণা করাও দুঃস্বপ্ন। দেশে প্রতীক্ষা-কাতর আমার মায়ের মুখটি হয়তো চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে, কোনো দিন খুঁজে পাব না আমার ভগি্ন অথবা ভ্রাতাদের পরিচয়, জীবনের কোনো চিহ্নও থাকবে না কোথাও, যে হাতের লাল রাখি লাল সুতোয় বঙ্গদেশের রঙিন স্বপ্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে হয়তো অন্ধ মাটির তলায় অদৃশ্যে গোপনে ঢাকা পড়ে যাবে, ইতিহাসের পলেস্তারায় ঢাকা পড়ে রইবে হাজারও প্রিয়মুখ।
আমরা কি তা চাই? না কামনা করি? করি না বটে, কিন্তু এ-জাতীয় ভয়াবহতা বা বিপর্যয় রোধে সম্মিলিত প্রতিরোধ কিংবা রুখে দেওয়ার শক্তি অর্জনেও সচেষ্ট নই, প্রকৃতি কখন কি করবে বা করতে পারে_তার আগাম সংকেত দেওয়া অসম্ভব, তা বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকাটাও কাজের কথা নয়। রাজনীতি তথা সরকার বা বিরোধী দল কী করল, না করল, কী ভাবল, না ভাবল তার চেয়ে জরুরি নিজেদের ভাবনা। কিউবার কথা নিশ্চয়ই জানি, নিশ্চয়ই মনে রাখি আমরা, সমুদ্রতীরে বসবাস বড় দেশগুলোর রক্তচক্ষু আর বিরোধিতা মাথায় নিয়ে সে বেঁচে আছে, মাথা উঁচিয়ে বসবাস করে জানান দেয়, এভাবেই বাঁচতে হয়, যে ঝড়ে, যে জলোচ্ছ্বাসে আমেরিকার মতো দেশের নগরী লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, মানুষের মৃত্যু হয় পাখির মতো, অন্ধকারে চুরি, রাহাজানি, খুনে আমেরিকা হয়ে ওঠে দুঃস্বপ্ন; একই তাণ্ডবে শান্ত, স্থির কিউবার ক্ষতি অণু পরিমাণ। যার মূল কারণ আগাম সতর্কতা, সুরক্ষাবলয় আর শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে বাঁচার অদম্য প্রচেষ্টা। স্বাধীনতার ৪০ বছরে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশ, পাকিস্তান, সাম্রাজ্যবাদ, সমাজবাদ, জঙ্গিবাদ_এসব ছুতো বা একে-ওকে দোষারোপ করে মুক্তি মিলবে না। যাঁরা ভালো আছেন, যাঁরা পৃথিবীতে সুখ-শান্তিতে, নিয়ম-নিষ্ঠায় বেঁচে আনন্দময় জীবন যাপন করছেন, তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যে রাজনীতি তা করতে দেয় না তাকে পরিহার করার শক্তি অর্জন করতে হবে। যে রাজনীতি দেশ ও মানুষ ছাড়া অন্য কিছু শেখায় না তাকে বরণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, ভালোবাসতে হবে নিজেকে, পাশের মানুষকে, সমাজকে অতঃপর দেশ ও মাটিকে। ভালোবাসা যেখানে থাকে সেখানেই জীবন মৃত্যুর চেয়ে বড়। এই ভালোবাসাকে যেন অতীত আর ভবিষ্যৎমুখী ঝগড়া-বিবাদে না ফেলে_এটাই শেষ কথা। বাংলাদেশ ও তার অস্তিত্ব না থাকলে কোনো কিছুই থাকবে না। যেকোনো বিপর্যয়ের আগেই তা বুঝতে হবে।
লেখক : সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
dasguptajoy@hotmail.com
No comments