অভিমত ভিন্নমত

জনসংখ্যা সমস্যা বিস্ফোরণের দিকে সরকারের কার্যক্রমে ধীরগতি, কিছু মানুষের স্বার্থপরতা, জনগণের সচেতনতার অভাব প্রভৃতি নানা কারণে আমাদের এই সোনার বাংলার অগ্রযাত্রা আজ অত্যন্ত ধীর। যে দেশের মানুষের মেধা ও সক্ষমতা সন্দেহাতীত, সেই দেশের অগ্রযাত্রা কেন এত ধীরগতিতে চলবে? আমাদের দেশকে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যার


মোকাবিলা করতে হচ্ছে যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য হচ্ছে এসব সমস্যার সিংহভাগ সৃষ্টি হচ্ছে জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে। এটা গবেষণা করে বের করার বিষয় নয়, সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব কী প্রকটভাবে পড়ছে। আমরা যত উন্নয়ন-অগ্রগতির সমস্যা দেখি না কেন, প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি, নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আমাদের খাদ্য জোগানে যতই সহযোগিতা করুক না কেন, যতই দ্রুতগতির যানবাহন আর ইন্টারনেট আমাদের নাগালের মধ্যে আসুক না কেন, জনসংখ্যার মাত্রাতিরিক্ত ক্রমবর্ধমান চাপের ফলে সবক্ষেত্রেই আমাদের পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ-সমস্যা বলি, শিক্ষা-সমস্যা বলি, চিকিৎসা-বাসস্থান—যে সমস্যার দিকেই তাকাই না কেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা কোনো ক্ষেত্রেও এগিয়ে যেতে পারছি না, পারব না। আমাদের সামর্থ্যের তুলনায় চাহিদা বাড়ছে কয়েক গুণ বেশি হারে, কারণ আমাদের জনসংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, যাকে বলা যায় চক্রবৃদ্ধি হারে। গ্রামাঞ্চল ও মফস্বল শহরগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যাবে, ঘরবাড়ি বাড়তে বাড়তে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে, শহরগুলোর খেলার মাঠ, খাল-পুকুর সব ভরাট করে বাড়িঘর বানাতে হচ্ছে। কারণ মানুষ আর মানুষ, শুধু যেন মানুষই বাড়ছে, আর সব কিছু, যা কিছু মানুষের জীবনধারণ ও জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন, সবকিছুই যেন কমে যাচ্ছে।
কিন্তু জাতির এই এক নম্বর সমস্যাটি নিয়ে আমাদের বিশেষ দুশ্চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে, পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম এখন নেই বললেই চলে। একটা সময় কিন্তু এ কার্যক্রমের অনেক সুফল লক্ষ করেছি। স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতেন, জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী বিতরণ করতেন। এখন এসব দেখা যায় না।
উদাসীনতা বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের বোঝা উচিত জনসংখ্যা ততক্ষণ পর্যন্ত একটা দেশের সম্পদ, যতক্ষণ প্রত্যেকের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়। নইলে তা দেশের বোঝা হিসেবে নানা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আমরা জানি, দেশে সৃষ্ট চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, বেকারত্ব, যানজট, পানিসংকট, বিদ্যুৎ-সংকট, খাদ্যসংকট থেকে শুরু করে নানা সমস্যার প্রধান কারণ জনসংখ্যা সমস্যা। তাই সরকারের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম অতিসত্বর বেগবান করার সঙ্গে সঙ্গে জনসংখ্যা সমস্যার ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে নানা পদক্ষেপ হাতে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
জনসংখ্যা সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির কাজে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও মসজিদের ইমামেরা। সমাজের নানা স্তরে তাঁদের অবস্থান আলাদা। এ বিষয়ে ইমামদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
জনসংখ্যা সমস্যা সম্পর্কে আর উদাসীন হয়ে থাকার উপায় নেই। অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখনো যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম জোরালো করতে না পারি, তাহলে জনসংখ্যা বিস্ফোরণে দেশটাই বিকল হয়ে যেতে পারে। কিন্তু আমরা তো আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য দেশ রেখে যেতে চাই।
মো. হাবীব উল্লাহ, পূর্ব বরৈয়া, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম।
habib_eb2006@yahoo.com

মেধার মূল্যায়ন ও কোটা প্রথা
বিসিএস পরীক্ষায় নানা ধরনের কোটার ভিত্তিতে চাকরি পায় ৫৫ শতাংশ আর মেধার ভিত্তিতে ৪৫ শতাংশ। কোটা সংরক্ষণ মানে বিশেষ সুবিধা সংরক্ষণ, যেখানে মেধার বিষয়টিকে কিছু মাত্রায় ছাড় দেওয়া হয়। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের জনপ্রশাসন দক্ষভাবে পরিচালনার জন্য মেধার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। বহু যুগ ধরে বৈষম্য-অবহেলার কারণে অনগ্রসর কোনো জনগোষ্ঠী এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছেন এমন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কিছুসংখ্যক কোটা সংরক্ষণ করা উচিত। কিন্তু নানা রকমের কোটা মিলিয়ে মোট কোটার হার যদি ৫৫ শতাংশ হয়, তাহলে মেধার মূল্যায়ন অবহেলিত হয়।
চাকরিতে মেধাই হওয়া উচিত প্রধান যোগ্যতা। বর্তমান মাত্রায় কোটা প্রথা মেধা মূল্যায়নের অন্তরায়। যত কম সংখ্যায় কোটা সংরক্ষণ করা যায় দেশ-জাতির জন্য ততই মঙ্গল। কোটার সংখ্যা কমানো হলে কোটাভুক্তদের মধ্যেও প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হবে এবং তাদের মধ্যে যারা অধিকতর মেধাবী তারা চাকরি পাবে। সম্পূর্ণ মেধাহীনদের অন্তত সরকারি চাকরিতে ঢোকার সুযোগ বন্ধ হবে। বাংলাদেশকে একুশ শতকের উপযোগী হিসেবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বিপুল মেধাবী মানুষ দরকার। জনপ্রশাসনে বা সরকারি চাকরিতে দরকার সবচেয়ে বেশি।
এম সিজার মোনায়েমুল ইসলাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

উত্তর-পূর্ব পূর্বাচল এলাকায় মানুষের বিপন্ন জীবন
বর্তমান পূর্বাচল মডেল (রাজউকের ভাষায় নতুন) টাউন প্রকল্প শুরু হয়েছিল ইউসুফগঞ্জ উপশহর নামে প্রায় দেড় যুগ আগে। পরবর্তী সরকারের (১৯৯৬—২০০১) আমলে উপশহর প্রকল্পটি মডেল টাউন নাম ধারণ করে। রাজউক মডেল/নিউ টাউন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ করার পর, বিশেষত ঢাকা পূর্ব বাইপাস সড়ক কার্যকর হওয়ার পর আশপাশের জমির দাম হয়ে যায় আকাশচুম্বী। দেশের বিভিন্ন এলাকার আর্থিক সংগতিসম্পন্ন মানুষ এই এলাকায় একখণ্ড জমি কেনার জন্য পাগলের মতো ছোটাছুটি করে। পরিণামে এলাকার অনেক মানুষ রাতারাতি জমির দালাল বনে যায়। এলাকার বহুলোককে এরা বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছাড়া করে জমি বুঝিয়ে দিয়েছে বিত্তশালী ক্রেতাদের। সম্প্রতি এলাকার গলান মৌজার এক বৃদ্ধ এভাবে সব জমি হারানোর পর মারা গেছেন। তাঁকে কবর দিতে হয়েছে তাঁর এক ছোট ভাইয়ের জমিতে।
মাসখানেক আগে দালাল-বাটপার চক্র নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের ‘জনপ্রতিনিধিদের’ সহযোগিতায় সেন্ট নিকোলাস উচ্চবিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত শিক্ষকের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছিল। এলাকার অনেকের ধারণা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে দেখা করতে বলার উদ্দেশ্য ছিল তাঁকে শুক্র-শনি দুই দিন হাজতে আটকে রেখে তাঁর জমিতে পাকাপোক্ত খুঁটি দিয়ে তা দখল করে নেওয়া। তিনি ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা না করে গাজীপুর জেলা আদালতে জমিসংক্রান্ত মামলা করে সে-যাত্রা থানার হয়রানি থেকে বেঁচেছেন। অসীম ক্ষমতাধর এই গোষ্ঠীর হাত থেকে তাঁর মতো নিরীহ শিক্ষক কদিন বেঁচে থাকতে পারবেন, তা কে জানে।
উল্লেখ্য, ঢাকা পূর্ব বাইপাস সড়কের পাশে এবং পূর্বাচল টাউন প্রকল্পের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত রাথুরা, গলান ও কেটুন মৌজার জমির দালালির কেন্দ্রে আছেন এখনো এক বিএনপির দালাল। এই নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে ইলেকট্রনের মতো ঘুরপাক খায় এলাকার সব আওয়ামী দালালও। তাই কয়েক সপ্তাহ আগে এলাকার এক বিশিষ্ট আওয়ামী নেতাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এলাকায় আওয়ামী শাসন কবে শুরু হবে?’ তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
আমরা জানি, আইনের হাত অনেক লম্বা। আর এই লম্বা হওয়ার কারণেই বোধ হয় বিচার-প্রক্রিয়াও প্রলম্বিত হয়। তাই আইনি প্রক্রিয়ায় এলাকার নিরীহ জনগণকে এই দালাল-বাটপার চক্রের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন। এলাকার অবস্থা পর্যালোচনা করে আমার মনে হচ্ছে, মানুষকে বাঁচানোর একটা পথ হচ্ছে জনহিতৈষী সাংবাদিকতা। জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধিরা এলাকায় ঘুরে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পত্রিকায় প্রকাশ করে জনগণকে এই অনাচার থেকে রক্ষা করতে পারেন।
শুনেছি, পত্রিকার প্রতিনিধিরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও থানার ওসিকে অনেক সংবাদের উৎস গণ্য করেন। জাতীয় দৈনিকের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে আমার আহ্বান হচ্ছে, অফিস দিনের বাইরে সাপ্তাহিক ছুটির দুই দিনে ওই জনপ্রতিনিধিরা এলাকায় যেসব সংবাদ সৃষ্টি করেন, সেগুলোও খুঁজে বের করে জনসমক্ষে তুলে ধরুন। এতে স্থানীয় ও জাতীয় সরকার জনগণের সমস্যা অনুধাবন করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
আবদুস সাত্তার মোল্লা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা।
asmolla61@yahoo.com

মুঠোফোনের অপব্যবহার
মুঠোফোন এখন খুবই প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্র। ধনী থেকে গরিব, ছোট থেকে বড়—সব মানুষের হাতে হাতে মুঠোফোন পৌঁছে গেছে। মুঠোফোনের অতি ব্যবহার মানুষকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, জানি না। তবে একটি শ্রেণীর মানুষকে বিকৃত রুচির করে তুলছে—এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
একশ্রেণীর মানুষ আছে (যুবক এবং উঠতি বয়সী ছেলের সংখ্যাই বেশি) যারা মেয়েদের নম্বর পেলেই তাদের জ্বালাতন করে। হয়তো এ থেকে একসময় তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্কও তৈরি হয়ে যায়। আমার চোখের সামনেই এ ঘটনা অনেক ঘটেছে। দেখা নেই, কথা নেই—কোথা থেকে একটা নম্বর পেল—সেটা দিয়েই সম্পর্ক তৈরি হলো। তারপর হয় মেয়েটির জীবন শেষ—নয়তো ছেলেটির (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের বেলায়ই ঘটছে)। মোবাইল প্রেমের সূত্র ধরে যে প্রেম হয়, তার পরিণতি মৃত্যুটাকেও দেখেছি খুব কাছ থেকে। এত কিছুর পরও মুঠোফোনের এ যন্ত্রণা শেষ হচ্ছে না। কারণে-অকারণে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা মুঠোফোন ব্যবহার করে তাদের পড়াশোনার ক্ষতি করছে—নষ্ট করছে তাদের ভবিষ্যৎ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মেধাবী ছেলেমেয়ে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। এ অবস্থার অবসান হওয়া একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য সবার আগে পরিবারের অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। দেশে অনেক বিজ্ঞজন রয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভেবে এসব বন্ধের একটা পথ খুঁজে পেতে পারেন বলেই মনে করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এভাবে শেষ হতে দেওয়া যায় না।
এ কথাও বলে রাখা দরকার—সবকিছুর ভালো-মন্দ দিক আছে। মুঠোফোনে ভালো কিছুও শেখা যায়। আমার এক বন্ধু মুঠোফোনে ইংরেজি শব্দ শিখছে। কোনো নতুন শব্দ শুনলেই সেটি মুঠোফোনের অভিধান অপশনে গিয়ে লিখে সেভ করে রাখছে। আমি আশা করব, যাঁরা মুঠোফোন ব্যবহার করছেন, তাঁরা এটির আর অপব্যবহার করবেন না। অন্যদেরও এ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাবেন।
সৌমিত্র শীল, রাজবাড়ী।

গুঁড়ো দুধের ব্যাপক আমদানি বন্ধ করা হোক
গত এক দশকে গবেষণায় মায়ের দুধের উপকারিতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মায়ের দুধদানে শিশু ও মা উভয়েরই উপকার হয়—এটাও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য। পৃথিবীর গুঁড়ো দুধ প্রস্তুতকারী বড় কোম্পানিগুলোও স্বীকার করেছে, শিশুর জন্য মায়ের দুধই সর্বোত্তম।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিকল্প দুধ পানকারী শিশুরা ঘন ঘন পাতলা পায়খানা, নিউমোনিয়া, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগে ভোগে। দুই মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের যারা বিকল্প দুধ তথা বাজারের টিনের বা কৌটার দুধ পান করে, মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুদের তুলনায় তাদের ডায়রিয়ায় মৃত্যুর আশঙ্কা ২৫ গুণ এবং অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশনে (এআরআই) মৃত্যুর ঝুঁকি চার গুণ বেশি হয়।
তবু প্রতিবছর ১৫ শতাংশ হারে গুঁড়ো দুধের ব্যবসা বাড়ছে। গুঁড়ো দুধের বড় কোম্পানিগুলোর মালিকানা উন্নত পশ্চিমা দেশের। কিন্তু তাদের বাজারের বৃহত্তর অংশ হলো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ। বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশও বছরে তিন শ কোটি মার্কিন ডলারের গুঁড়ো দুধজাতীয় দ্রব্য আমদানি করে। শিক্ষিত সচেতন উন্নত দেশগুলোর সরকার এ সম্পর্কে নানা রকম বিধিনিষেধ প্রণয়ন করেছে, যা সবাইকে মেনে চলতে হয়। ১৯৮১ সালের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল কোড অব ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট বা বিএমএস কোড গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। বিভিন্ন দেশে বিএমএস কোডকে কার্যকর করতে নিজস্ব আইন করেছে। তাই টিনজাত নিম্নমানের শিশুখাদ্য উন্নত দেশে উৎপন্ন হলেও তাদের টার্গেট আমাদের মতো দরিদ্র, অসচেতন দেশের অসহায় জনগোষ্ঠী। প্রকৃতিপ্রদত্ত অমৃতধারা, শ্রেষ্ঠ শিশুখাদ্য মায়ের দুধের পরিবর্তে আমরা চড়ামূল্যে নিম্নমানের গুঁড়ো দুধ নিজ সন্তানকে খাওয়াই। এ তো নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতোই অবস্থা।
টেলিভিশনে ইদানীং একটি গুঁড়ো দুধের বিজ্ঞাপনে বলা হয় শিশুর ব্রেন, বডি এবং বৃদ্ধিতে গুঁড়ো দুধ কার্যকর ভূমিকা রাখে। অথচ আমরা জানি, মগজ বা ব্রেনের দুটো অংশ আছে: হোয়াইট মেটার এবং গ্রে মেটার। সূক্ষ্ম মানবিক গুণাবলির উৎস এই গ্রে মেটার, এর অর্ধেকটাই হলো ডিএইচএ। ডিএইচএ পাওয়া যায় শুধু মায়ের দুধে। এ ছাড়া গুঁড়ো দুধ কোম্পানি এবং তাদের এজেন্টরা আরও অপপ্রচার চালায় যে জন্মের পর মায়ের দুধ আসতে তিন-চার দিন সময় লাগে। এটা মানুষকে বিভ্রান্ত করার একটা কৌশল। কারণ শিশুর জন্মের আগে থেকেই তার মায়ের বুকে অনাগত সন্তানের জন্য খাদ্য প্রস্তুত হয়ে থাকে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে বুকে দিলেই সে তার তৃষ্ণা মেটানোর অমিয় সুধা পেয়ে যায়। অসাধু ব্যবসায়ী চক্রগুলোর হাত থেকে মা, শিশু, পরিবারকে রক্ষা করতে হবে।
সামসাদ মোনায়েম, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ
কল্যাণপুর, ঢাকা।

প্রয়োজন ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি
বর্তমানে অবাধ বাণিজ্যের যুগে পররাষ্ট্রনীতির ভূমিকা অনেক বেড়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটা সময়োপযোগী ভূমিকা রাখতে পারছে, তা ভাবার সময় এসেছে। স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শন ছিল—সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়। এই দর্শনের আবেদন বর্তমান সময়ে এসে একটুও কমেনি। আমাদের মনে রাখতে হবে, কূটনীতিতে চিরবন্ধু ও চিরশত্রু বলে কিছু নেই। নিজের দেশের স্বার্থ রক্ষা করাই পররাষ্ট্রনীতির মূল ক্ষেত্র হওয়া উচিত। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতিরও যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি আমাদের দেশের বন্ধুদেশও পরিবর্তিত হয়।
যেমন—বর্তমান সরকার ভারতকে যতটা গুরুত্ব দেয়, বর্তমান বিরোধী দলের ক্ষেত্রে ভারত ততটা গুরুত্ব পায় না। অর্থাৎ দেশের স্বার্থ বিবেচনা না করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ অনুযায়ী বিভিন্ন দেশকে গুরুত্ব দেয়, যা কখনোই কাম্য নয়। ভুলে গেলে চলবে না যে ভারত ভৌগোলিকভাবে তিন দিক থেকে আমাদের ঘিরে রেখেছে। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় ভারতের গুরুত্ব সর্বাধিক। তবে মনে রাখতে হবে, ভারতকে গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ ভারতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করে নিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটা সফল হচ্ছে বা হচ্ছে না, তা লক্ষ করার বিষয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক ট্রানজিট চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের চেয়ে ভারত বেশি লাভবান হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্য-ঘাটতি রয়েছে, তাও কমার সম্ভাবনা কম। এ ছাড়া উল্লেখ করা যায়, বিএসএফের গুলিতে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশিদের প্রাণ দিতে হয়, কিন্তু এর সমাধানও আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করতে পারেনি। সমুদ্রসীমা নিয়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে আমাদের সমস্যাও অমীমাংসিত। ভারতের সঙ্গে ছিটমহল নিয়ে সমস্যা নিষ্পত্তিহীন, তিস্তার পানিবণ্টন সমস্যাও এগোয়নি। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে জনশক্তি রপ্তানি আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কমে গেছে, যা আমাদের অর্থনীতির উন্নয়নের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিচক্ষণতার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গতিশীল ও কার্যকর করার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হয়। বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনার পরিবর্তে দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলে সুফল বেশি হতে পারে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গঠনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের কাজে লাগাতে হবে। সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
এম সিজার মোনায়েমুল ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রাথমিকে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ
২৩ আগস্ট সরকারি হিসাব-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দেশের সব বেসরকারি ও কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণের সুপারিশ করেছে।
সারা দেশে ২০ হাজার খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসংকট মেটাতে ‘পুল’ গঠন করবে। প্রতি উপজেলা বা থানায় গড়ে ৪০ জন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এই সহকারী শিক্ষকেরা প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে সম্মানী পাবেন। তাঁরা স্থায়ী চাকরি দাবি করতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন।
তিন হাজার টাকা বেতন হলে পড়ালেখাও তিন হাজার টাকার মানে হবে। জেনে-শুনে শিক্ষকেরা এ পেশায় এসেছেন। অথচ এসব স্কুলে শিক্ষকেরা প্রায়ই গরহাজির থাকেন।
পেটে খেলে পিঠে সয়। চাকরি ও বেতনের নিশ্চয়তা পেলে আমাদের শিক্ষকেরা দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবেন। শিক্ষকেরা অনিশ্চয়তার মধ্যে নিদারুণ অর্থকষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করলে পড়াবেন কী? তাই জাতীয়করণ করা হলেই শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিশ্চিত হবে না।
পুলপ্রথার অপব্যবহার হওয়ারও সুযোগ আছে। অনেক বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষকের পক্ষে তাঁর কোনো আত্মীয় ক্লাস করে থাকেন। এটি নিয়মসিদ্ধ নয়, তবুও এই দৃষ্টান্ত রয়েছে। পুলপ্রথা চালু হলে যাঁরা প্রক্সির মাধমে মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছেন, তাঁরা একটা মওকা পেয়ে যাবেন। কারণ পুলপ্রথার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানে যাতে বিঘ্ন না ঘটে। তখন এক পদে দুজনকে বেতন দিতে হবে।
যে স্কুলে শিক্ষক নেই, সেখানে পড়ালেখা হয় না—এটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যে স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক আছেন সেখানে পড়ালেখা হয় না—এটা মেনে নেওয়া যায় না। একজন ছাত্র ফাঁকি দিলে সে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির শিকার হয়, একজন শিক্ষক ফাঁকি দিলে পুরো স্কুলের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি হয়। এ কারণেই শিক্ষকদের মানসম্মান কমে গেছে। ফাঁকিবাজ শিক্ষকদের কারণে পরিচ্ছন্ন দায়িত্বপরায়ণ শিক্ষকেরা সমালোচনার শিকার হচ্ছেন। জাতীয়করণ করা হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। শিক্ষকদের স্কুলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
আবদুল মকিম চৌধুরী, নয়াটোলা, ঢাকা।

একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ি
আশির দশকে নির্মিত জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র অশিক্ষিত। খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক সত্য সাহা ছবিটি প্রযোজনা করেন। অগণিত দর্শককে মুগ্ধ করেছিল ছবিটি। ওই ছবিতে এক নান্দনিক জমিদার বাড়ির দৃশ্য ধারণ করা হয়। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে হাটহাজারীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের নন্দীরহাটের পশ্চিমে দুই গম্বুজবিশিষ্ট দোতলা বাড়িটির অবস্থান। বাড়িটির কারুকাজখচিত দেয়াল, স্তম্ভ, কার্নিশ ভেঙে পড়েছে। স্তম্ভগুলো থেকে খসে পড়ছে চুন-সুরকি। বিবর্ণ হয়ে গেছে গম্বুজ ও দেয়ালের রং। মরচে ধরেছে দরজা-জানালার লোহার রডগুলোতে। অশিক্ষিত ছবিতে পুলিশের চলচ্চিত্রে অভিনয়কারী স্থানীয় অনিলবরণ রাহা এই বাড়ির স্মৃতিচারণা করে বললেন, সংগীত পরিচালক সত্য সাহার বাবা প্রসন্ন কুমার সাহা বাড়িটি নির্মাণ করেন ১৮৯০ সালে। তিনি ছিলেন এই অঞ্চলের প্রথিতযশা জমিদার।
বছরজুড়ে নানা পূজা-পার্বণে বিপুল লোকের সমাগম হতো এই বাড়িতে। স্থানীয়রা জানান, জমিদার প্রসন্ন কুমার সাহার সময় এই বাড়িতে জমিজমার কর দিতে আসতেন এলাকার শত শত কৃষক। বছরজুড়ে চলত দোলপূজা, ঝুলনযাত্রা ও রাজপুণ্যাহসহ নানা বর্ণিল উৎসব। এক বেলায় রান্না হতো তিন-চার শ লোকের খাবার। হালচাষের জন্য ১০-১২ জোড়া গরু। এই বাড়িতে কর্মচারী ছিল শতাধিক। ছিল সেরেস্তা ঘর, ধানের গোলা ও নাচঘর।
বর্তমানে মূল ভিটেবাড়ি ও পুকুরের পাঁচ একর জমি ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছু নেই। এই বাড়িতে এখন বাস করছেন জমিদারি পরিবারের ১২ জন সদস্য।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় জরাজীর্ণ স্তম্ভ। দেয়াল, ছাদ, কার্নিশ দেখলে মনে হবে এখনই যেন ভেঙে পড়বে। দোতলা বাড়িটির নিচে মাঝামাঝি স্থানে লোহার বিশাল ফটক। এটিই মূল প্রবেশপথ। বাড়িতে ঢোকার পর হাতের বাঁ পাশে সিঁড়ি। এরপর বাড়ির উঠোন। দক্ষিণ পাশে ঝোপঝাড়ে ভরা সেরেস্তা ঘর। উত্তর পাশে একটি মন্দির। উঠোনের পূর্বপাশে মূলঘর। বাইরের দিকটা অবিকল থাকলেও দরজা, জানালা ও কক্ষগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। মূলঘরের পেছনে একটি এবং বাড়ির সামনে একটি পুকুর। এর দক্ষিণ পাশে নাচঘর। পুকুরঘাটটি এখনো বিলুপ্তপ্রায়। কালের স্মারক হিসেবে বাড়িটি সরকারিভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে ভালো হয়।
মোহাম্মদ রফিক, চট্টগ্রাম।

চিকিৎসক নিয়োগ
‘মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটা সংরক্ষণ’ নীতিমালার আলোকে অ্যাডহক ভিত্তিতে তিন সহস্রাধিক চিকিৎসক (সহকারী সার্জন) নিয়োগ করা হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ৫৮২টি অপূরণকৃত শূন্য পদ সংরক্ষণ করা হয় এবং এর প্রায় এক সপ্তাহ পর ২৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তাতে প্রাধিকার কোটার বিপরীতে অপূরণকৃত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ৮১৩। এ নীতিমালার আলোকে ২৮তম বিসিএসে চিকিৎসক (সহকারী সার্জন) পদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অপূরণকৃত পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে।
দেশে চিকিৎসকের অভাব, এ কথা যেমন সত্য, তেমনি যোগ্যতর চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে, এটাও তেমনি সত্য। অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগপদ্ধতি এবং নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক চিকিৎসকের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের নিয়োগের পরিবর্তে নীতিমালা শিথিল করে অ্যাডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ জনস্বার্থে ভালো পদক্ষেপ নয়। সব ক্ষেত্রেই মেধাবী পেশাজীবীরা যেন জনপ্রশাসনে ঢুকতে পারেন, সরকারের সে ব্যবস্থাই করা উচিত।
হাসিবুর রহমান, জয়পুরহাট।

No comments

Powered by Blogger.