চিকির্যাসাসেবা-কেমন হবে ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক by এ কে আজাদ খান ও ফরিদ কবির
সম্পর্ক নানা ধরনের। বিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন ভাষায় মানুষের সঙ্গে মানুষের এই সম্পর্ককে নানাভাবে দেখা হয়। ইংরেজিতে ‘রিলেটিভ’ বললে একজন ইংরেজিভাষী রক্তসম্পর্কীয় বা রক্তীয় কাউকেই বুঝবেন। কিন্তু আমাদের কাছে সম্পর্ক দুই রকমের—রক্তীয় এবং আত্মীয়।
রক্তসম্পর্কীয় সবার সঙ্গে যেমন আমাদের আত্মার সম্পর্ক হয় না, তেমনি রক্তসম্পর্কীয় নয়, এমন অনেকেই হয়ে উঠতে পারেন আত্মার আত্মীয়। মানুষের সঙ্গে মানুষের এই যে নানামাত্রিক সম্পর্কের মধ্যে কিছু কিছু সম্পর্ক নানা কারণেই হয়ে ওঠে অনন্য। তার একটি হচ্ছে, রোগী-ডাক্তার সম্পর্ক।
ডাক্তার সেবা দেন, রোগী সেবা নেন। বিষয়টি অনেক সময় ঘটে অর্থের বিনিময়েই। তা সত্ত্বেও এ সম্পর্কটি অন্যান্য পণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মতো নয়। একজন ডাক্তার আর তাঁর রোগীর মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, আর কোনো সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতার মধ্যে এমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে খুব কমই দেখা যায়। যেমন একজন উকিল বা আইনজীবীও তাঁর মক্কেলকে রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালান, ফলে, একজন আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর মক্কেলেরও বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক যতটা দেখা যায়, উকিল-মক্কেল সম্পর্ক ঠিক ততটা দেখা যায় না।
বিভিন্ন কারণেই একজন ডাক্তারের সঙ্গে একজন রোগীর সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতার সম্পর্ক ছাপিয়ে এক গভীর মানবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কারণ একজন প্রকৃত ডাক্তারমাত্রই রোগীর ব্যথায় ব্যথিত হন, তাকে ভালো করে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, অর্থের বিষয়টি তখন একেবারেই গৌণ হয়ে পড়ে! একজন ভালো ডাক্তার যিনি রোগীর প্রতি সহমর্মী, যিনি রোগীকে চিকির্যাসা দেন আন্তরিকভাবে, তাঁর প্রতি রোগী আকৃষ্ট হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তিনিই প্রকৃত ডাক্তার, যিনি এক সময় হয়ে ওঠেন রোগীর অভিভাবক, বন্ধু এবং গাইড। অনেক সময় এ রকমও দেখা যায়, একজন রোগী তাঁর ছেলে বা মেয়ের বিয়ের ব্যাপারেও ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন এমনকি পারিবারিক নানা বিষয়েও। ডাক্তারের ওপর যথেষ্ট বিশ্বাস ও আস্থা থাকলেই শুধু এটা সম্ভব।
আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তার-রোগী সম্পর্কটা যেন ঠিক তেমন নয়, যেমন হওয়া উচিত। বাজার অর্থনীতির এই যুগে চিকির্যাসাসেবাও হয়ে উঠেছে এক ধরনের পণ্য! যদিও চিকির্যাসাসেবাকে কিছুতেই পণ্য হতে দেওয়া ঠিক নয়। একজন ডাক্তারের দায়িত্ব হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা, যাতে তাঁর রোগী প্রকৃত অর্থেই যথাযথ সেবাটি পান। কিন্তু ডাক্তাররা কি সত্যি সত্যি তার রোগীকে যথাযথ সেবাটি দিচ্ছেন? একজন রোগীকে চিকির্যাসাসেবা দেওয়ার জন্য রোগীর প্রতি যে ধরনের সহমর্মিতা ও মমত্ববোধ তাঁর থাকা দরকার, তা কি তাঁর আছে?
আজকাল আমরা প্রায়ই শুনতে পাই, বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর বিক্ষুব্ধ আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে হামলা করছে, কিংবা ডাক্তারকে লাঞ্ছিত করছে। এর বড় কারণ, ডাক্তারের ওপর রোগীর বা সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব।
একজন ডাক্তারের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে তাঁর প্রতি একজন রোগীর আস্থা বা বিশ্বাস সৃষ্টি করবে, তা যেন ক্রমেই দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। অথচ পারস্পরিক বিশ্বাস চিকির্যাসার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ চিকির্যাসার প্রয়োজনে রোগীকে তার অনেক গোপন কথাও ডাক্তারকে জানাতে হয়। অনেক সময় চিকির্যাসা করতে গিয়ে ডাক্তারও রোগীর এমন কিছু রোগের কথা জানতে পারেন, যা তাঁকে গোপন রাখতে হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পাকিস্তানে ‘কায়েদে আযম’ নামে পরিচিত, তিনি না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো কিনা সন্দেহ। পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছরের মধ্যেই তিনি যক্ষ্মায় মারা যান। জিন্নাহর ডাক্তার জানতেন যে তিনি যক্ষ্মায় ভুগছেন, কিন্তু সে কথা তাঁর কাছ থেকে প্রকাশ পায়নি। যদি এ কথা কোনোভাবে প্রকাশ পেত, তাহলে এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস আজ ভিন্ন হতে পারত! তর্যাকালীন রাজনীতির জন্য জিন্নাহর এ রোগের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাঁর ডাক্তার তা গোপন রাখতে পেরেছিলেন।
মানবসেবার মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এক সময় ছেলেমেয়েরা ডাক্তারি পেশায় এলেও এখন যেন তা ক্রমশই বদলে যাচ্ছে। যেন ডাক্তারি পেশা হয়ে উঠেছে ধনী হওয়ার সবচেয়ে ভালো একটা পেশা। চিকির্যাসাসেবার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এই পেশাকে অবলম্বন করে কেউ যদি দ্রুত ধনী হতে চান, তবে তা কোনোভাবেই অভিপ্রেত নয়। আর নৈতিকভাবে এই পেশা অবলম্বন করে খুব দ্রুত ধনী হওয়া সম্ভবও নয়।
একজন ভালো ডাক্তার এক বা একাধিক রোগের চিকির্যাসায় দক্ষ হতে পারেন। কিন্তু কোনো ডাক্তারই সব বিষয়ে দক্ষ হতে পারেন না। একজন ডাক্তার তাঁর মেধা ও দক্ষতা দিয়ে, তাঁর মমত্ববোধ দিয়ে একজন রোগীকে সেবা দেবেন এটাই কাঙ্ক্ষিত। তা ছাড়া, তাঁকে অবশ্যই তাঁর নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে হবে। কোনো রোগের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান বা দক্ষতা না থাকলে তাঁর উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব উপযুক্ত ডাক্তারের কাছে রোগীকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সম্পর্কে তাই তার ভালো ধারণা থাকা উচিত।
চিকির্যাসা দিতে গিয়ে রোগীর আর্থিক সামর্থ্যের কথাও ডাক্তারকে ভাবতে হবে। এমন টেস্ট বা এমন চিকির্যাসার পরামর্শ দেওয়া ঠিক নয়, যা একজন দরিদ্র রোগীর পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। ওষুধ বা পথ্যের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রেও চিকির্যাসককে রোগীর সামর্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এগুলোই তাঁর প্রতি রোগীর আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ, ডাক্তারের প্রতি রোগীর আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি রোগীর চিকির্যাসার ক্ষেত্রেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই আস্থা ও বিশ্বাস রোগীর মনোবলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা রোগীকে সুস্থ হতে মানসিক শক্তি জোগাতে পারে। কিন্তু আজকাল আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখতে পাই, ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক পারস্পরিক সন্দেহে ভরা! ডাক্তাররা কোনো টেস্ট দিলে অনেক রোগীরই তাই সন্দেহ জাগে, তাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেস্ট দেওয়া হয়েছে কি না! রোগীদের এ ধরনের সংশয় দূর করতে ডাক্তারসহ সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, একজন ডাক্তারকে অবশ্যই আগে একজন ভালো মানুষ হতে হবে। একজন ভালো মানুষের যেসব মানবিক গুণ থাকা দরকার তা তাঁর থাকতে হবে। সব রোগীই চায়, ডাক্তার তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখুক, তার শারীরিক কষ্ট অনুধাবন করুক। যে ডাক্তার রোগীদের প্রতি আন্তরিক, রোগীদের প্রতি সহমর্মী, তাঁর কাছে রোগীরা নিরাপদ ও স্বস্তিবোধ করবে—এটাই স্বাভাবিক। এমন ডাক্তারের প্রতি যদি রোগীরা আকৃষ্ট হয়, তাঁর কাছে যদি বারবার যায়, তবে একদিন তো তাদের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে!
অধ্যাপক এ কে আজাদ খান: চিকির্যাসাবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মী। সভাপতি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।
ফরিদ কবির: কবি ও প্রাবন্ধিক। যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।
ডাক্তার সেবা দেন, রোগী সেবা নেন। বিষয়টি অনেক সময় ঘটে অর্থের বিনিময়েই। তা সত্ত্বেও এ সম্পর্কটি অন্যান্য পণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মতো নয়। একজন ডাক্তার আর তাঁর রোগীর মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, আর কোনো সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতার মধ্যে এমন সম্পর্ক গড়ে উঠতে খুব কমই দেখা যায়। যেমন একজন উকিল বা আইনজীবীও তাঁর মক্কেলকে রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালান, ফলে, একজন আইনজীবীর সঙ্গে তাঁর মক্কেলেরও বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায়। কিন্তু ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক যতটা দেখা যায়, উকিল-মক্কেল সম্পর্ক ঠিক ততটা দেখা যায় না।
বিভিন্ন কারণেই একজন ডাক্তারের সঙ্গে একজন রোগীর সেবাগ্রহীতা ও সেবাদাতার সম্পর্ক ছাপিয়ে এক গভীর মানবিক সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। কারণ একজন প্রকৃত ডাক্তারমাত্রই রোগীর ব্যথায় ব্যথিত হন, তাকে ভালো করে তুলতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন, অর্থের বিষয়টি তখন একেবারেই গৌণ হয়ে পড়ে! একজন ভালো ডাক্তার যিনি রোগীর প্রতি সহমর্মী, যিনি রোগীকে চিকির্যাসা দেন আন্তরিকভাবে, তাঁর প্রতি রোগী আকৃষ্ট হবেন—এটাই স্বাভাবিক। তিনিই প্রকৃত ডাক্তার, যিনি এক সময় হয়ে ওঠেন রোগীর অভিভাবক, বন্ধু এবং গাইড। অনেক সময় এ রকমও দেখা যায়, একজন রোগী তাঁর ছেলে বা মেয়ের বিয়ের ব্যাপারেও ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন এমনকি পারিবারিক নানা বিষয়েও। ডাক্তারের ওপর যথেষ্ট বিশ্বাস ও আস্থা থাকলেই শুধু এটা সম্ভব।
আজকাল অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তার-রোগী সম্পর্কটা যেন ঠিক তেমন নয়, যেমন হওয়া উচিত। বাজার অর্থনীতির এই যুগে চিকির্যাসাসেবাও হয়ে উঠেছে এক ধরনের পণ্য! যদিও চিকির্যাসাসেবাকে কিছুতেই পণ্য হতে দেওয়া ঠিক নয়। একজন ডাক্তারের দায়িত্ব হচ্ছে এটা নিশ্চিত করা, যাতে তাঁর রোগী প্রকৃত অর্থেই যথাযথ সেবাটি পান। কিন্তু ডাক্তাররা কি সত্যি সত্যি তার রোগীকে যথাযথ সেবাটি দিচ্ছেন? একজন রোগীকে চিকির্যাসাসেবা দেওয়ার জন্য রোগীর প্রতি যে ধরনের সহমর্মিতা ও মমত্ববোধ তাঁর থাকা দরকার, তা কি তাঁর আছে?
আজকাল আমরা প্রায়ই শুনতে পাই, বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রোগীর বিক্ষুব্ধ আত্মীয়স্বজন হাসপাতালে হামলা করছে, কিংবা ডাক্তারকে লাঞ্ছিত করছে। এর বড় কারণ, ডাক্তারের ওপর রোগীর বা সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব।
একজন ডাক্তারের যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে তাঁর প্রতি একজন রোগীর আস্থা বা বিশ্বাস সৃষ্টি করবে, তা যেন ক্রমেই দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। অথচ পারস্পরিক বিশ্বাস চিকির্যাসার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ চিকির্যাসার প্রয়োজনে রোগীকে তার অনেক গোপন কথাও ডাক্তারকে জানাতে হয়। অনেক সময় চিকির্যাসা করতে গিয়ে ডাক্তারও রোগীর এমন কিছু রোগের কথা জানতে পারেন, যা তাঁকে গোপন রাখতে হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, পাকিস্তানে ‘কায়েদে আযম’ নামে পরিচিত, তিনি না থাকলে পাকিস্তান সৃষ্টি হতো কিনা সন্দেহ। পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছরের মধ্যেই তিনি যক্ষ্মায় মারা যান। জিন্নাহর ডাক্তার জানতেন যে তিনি যক্ষ্মায় ভুগছেন, কিন্তু সে কথা তাঁর কাছ থেকে প্রকাশ পায়নি। যদি এ কথা কোনোভাবে প্রকাশ পেত, তাহলে এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস আজ ভিন্ন হতে পারত! তর্যাকালীন রাজনীতির জন্য জিন্নাহর এ রোগের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও তাঁর ডাক্তার তা গোপন রাখতে পেরেছিলেন।
মানবসেবার মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এক সময় ছেলেমেয়েরা ডাক্তারি পেশায় এলেও এখন যেন তা ক্রমশই বদলে যাচ্ছে। যেন ডাক্তারি পেশা হয়ে উঠেছে ধনী হওয়ার সবচেয়ে ভালো একটা পেশা। চিকির্যাসাসেবার মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করা দোষের কিছু নয়। কিন্তু এই পেশাকে অবলম্বন করে কেউ যদি দ্রুত ধনী হতে চান, তবে তা কোনোভাবেই অভিপ্রেত নয়। আর নৈতিকভাবে এই পেশা অবলম্বন করে খুব দ্রুত ধনী হওয়া সম্ভবও নয়।
একজন ভালো ডাক্তার এক বা একাধিক রোগের চিকির্যাসায় দক্ষ হতে পারেন। কিন্তু কোনো ডাক্তারই সব বিষয়ে দক্ষ হতে পারেন না। একজন ডাক্তার তাঁর মেধা ও দক্ষতা দিয়ে, তাঁর মমত্ববোধ দিয়ে একজন রোগীকে সেবা দেবেন এটাই কাঙ্ক্ষিত। তা ছাড়া, তাঁকে অবশ্যই তাঁর নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে হবে। কোনো রোগের ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান বা দক্ষতা না থাকলে তাঁর উচিত হবে যত দ্রুত সম্ভব উপযুক্ত ডাক্তারের কাছে রোগীকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া। বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সম্পর্কে তাই তার ভালো ধারণা থাকা উচিত।
চিকির্যাসা দিতে গিয়ে রোগীর আর্থিক সামর্থ্যের কথাও ডাক্তারকে ভাবতে হবে। এমন টেস্ট বা এমন চিকির্যাসার পরামর্শ দেওয়া ঠিক নয়, যা একজন দরিদ্র রোগীর পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। ওষুধ বা পথ্যের ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রেও চিকির্যাসককে রোগীর সামর্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর এগুলোই তাঁর প্রতি রোগীর আস্থা ও বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ, ডাক্তারের প্রতি রোগীর আস্থা ও বিশ্বাসের বিষয়টি রোগীর চিকির্যাসার ক্ষেত্রেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই আস্থা ও বিশ্বাস রোগীর মনোবলের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যা রোগীকে সুস্থ হতে মানসিক শক্তি জোগাতে পারে। কিন্তু আজকাল আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখতে পাই, ডাক্তার-রোগী সম্পর্ক পারস্পরিক সন্দেহে ভরা! ডাক্তাররা কোনো টেস্ট দিলে অনেক রোগীরই তাই সন্দেহ জাগে, তাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টেস্ট দেওয়া হয়েছে কি না! রোগীদের এ ধরনের সংশয় দূর করতে ডাক্তারসহ সবাইকে উদ্যোগ নিতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, একজন ডাক্তারকে অবশ্যই আগে একজন ভালো মানুষ হতে হবে। একজন ভালো মানুষের যেসব মানবিক গুণ থাকা দরকার তা তাঁর থাকতে হবে। সব রোগীই চায়, ডাক্তার তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখুক, তার শারীরিক কষ্ট অনুধাবন করুক। যে ডাক্তার রোগীদের প্রতি আন্তরিক, রোগীদের প্রতি সহমর্মী, তাঁর কাছে রোগীরা নিরাপদ ও স্বস্তিবোধ করবে—এটাই স্বাভাবিক। এমন ডাক্তারের প্রতি যদি রোগীরা আকৃষ্ট হয়, তাঁর কাছে যদি বারবার যায়, তবে একদিন তো তাদের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে!
অধ্যাপক এ কে আজাদ খান: চিকির্যাসাবিজ্ঞানী ও সমাজকর্মী। সভাপতি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।
ফরিদ কবির: কবি ও প্রাবন্ধিক। যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি।
No comments