বিশেষ সাক্ষাৎকার : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী-দেশ তারল্য সংকটে ভুগছে অথচ বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে
জাতীয় সংসদে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। বরাবরের মতো এবারও বিরোধী দল বাজেট প্রস্তাবের দিন সংসদে অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু দলের একটি প্যানেল টেলিভিশনে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা দেখেছে।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে কালের কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছিলেন ওই প্যানেলের সদস্য, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলী হাবিব
কালের কণ্ঠ : নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এই বাজেটের আকার নিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এই বাজেটকে কতটা বাস্তবানুগ বলে মনে করেন আপনি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বাজেটের আকার হওয়া উচিত বাস্তবভিত্তিক সর্বোচ্চ আয়ের উৎসের দিকগুলো যত দূর সম্ভব নিশ্চিত করে। আয়ের বাইরে অনুদান, ঋণ (বৈদেশিক) এবং দেশীয় সঞ্চয়ের প্রধানত ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে (সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি) উৎসগুলোর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে ও নির্দিষ্ট করতে হবে। এসব মাথায় রেখে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করতে হবে। আয়-ব্যয়ের সমন্বয়ের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ও সার্বিক বিনিয়োগের (সরকারি/বেসরকারি) একটি উত্তম ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা সর্বাগ্রে বিবেচ্য হতে হবে। এবারের বাজেটের আয়তন বড় সেটা আমি বলব না, যেটা বলার তা হলো ভারসাম্যহীনতা।
কালের কণ্ঠ : ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিগত বাজেটে আয়-ব্যয় ভারসাম্যের এতটাই সমস্যা ছিল যে সরকারকে বিশাল অঙ্কের ব্যাংকঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে। এই ধারায় আরো অধিক হারে বিগত বাজেটের চেয়ে বেশি পরিমাণ হবে বলে প্রতীয়মান হয়। সরকারের রাজস্ব আয় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ প্রায় ১১ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ও ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে আনলে অতিরিক্ত কিছুই থাকছে না। অপরদিকে বিদেশি ঋণ, অনুদান বহুমাত্রিক দুর্নীতির কারণে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুর্নীতি নিয়ে দাতাদের কাছ থেকে যে অভিযোগগুলো উঠেছে তার কোনো সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই; কারণ দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযুক্তদের তড়িঘড়ি করে ইতিমধ্যে Clean Certificate প্রদান করেছে। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের মধ্যে সরকারি ঋণ নেওয়ার যে Instrumentগুলো রয়েছে, সেগুলোও সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যদিও সরকার নতুন করে এগুলোকে আবারও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির কারণে স্থির আয়ের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজনের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় এটার সফলতা সম্পর্কে আমি সন্ধিহান। কারণ লোকজনের কর্মসংস্থানের অভাব ও ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সঞ্চয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে। উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান না হলেও সরকার সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামে অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল খাতে দলীয় লোকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে, যা থেকে সাধারণ জনগণ কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছে না বরং সরকারের দায় বেড়ে যাচ্ছে। জনগণের ওপর এই বোঝা চাপানো হচ্ছে। এটা উৎপাদনশীল খাতকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সরকারের কার্যক্রমে দক্ষতা হ্রাস পাবে।
কালের কণ্ঠ : আগামী বছর মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এই হার ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। এই বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনা কি সম্ভব হবে? ব্যাখ্যা করুন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ হয় পণ্যের আমদানি মূল্য দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামো যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পরিবহনসহ অবকাঠামোগত সমস্যা, মূল্য বৃদ্ধি ও প্রাপ্যতার অভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংকের সুদ বেড়ে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানীকৃত শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মাধ্যমিক কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিতে প্রতিফলন ঘটছে। সরকারের বিশাল অঙ্কের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ছাপানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি আরো উস্কে দিচ্ছে। বিদ্যুতের অপ্রাপ্যতা, উচ্চ মূল্য ও উচ্চ জ্বালানি মূল্য পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে।
নতুন ৯টি ব্যাংক যাত্রা শুরু করলে অসম প্রতিযোগিতার কারণে, ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাংক সঞ্চয় ও ঋণের সুদের হার আরো বাড়বে। সেখানেও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এবারও সরকার মূল্যস্ফীতির টার্গেট ৭ শতাংশে রেখেছিল, আসলে প্রায় ১১ শতাংশে রয়ে গেছে।
কালের কণ্ঠ : অনেকেই বলছেন বাজেট বক্তৃতায় ভর্তুকির বিষয়টি অস্পষ্ট। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : গত বাজেটে যে ভর্তুকি ধরা হয়েছে তিন মাসের মধ্যে বোঝা গেল সেটা আসলে বহু গুণ বাড়তি। আমার মনে হয়, এখানে স্বচ্ছতার অভাব ছিল। কারণ বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর নামে অস্বচ্ছভাবে কোনো দরপত্র ছাড়া দলীয় ও নিজস্ব লোকজনকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের অনুমতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের রক্তক্ষরণের মাধ্যমে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান তো দূরের কথা বাংলাদেশের বিগত ২০ বছরে বিভিন্ন সরকারের সময় সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে উত্তম ভারসাম্য গড়ে উঠেছিল তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে যে পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে তা দেশের অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছে এর জন্য জাতিকে অনেক উচ্চ মূল্য দিতে হবে। এই ব্যাপারে ভবিষ্যতে যাতে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয় তার জন্য সরকার দায়মুক্তি আইন করে এই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে বৈকি! পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে একই ধরনের দুর্নীতির জন্য বর্তমান ও প্রাক্তন মন্ত্রীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করেছে, হিসাব জব্দ করেছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সিভিল ও ক্রিমিন্যাল মামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
কালের কণ্ঠ : প্রবৃদ্ধির প্রশ্নটিও তো স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে। প্রবৃদ্ধির যে হার ধরা হয়েছে, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে সরকারি-বেসরকারি ও বৈদেশিক উৎপাদনশীল বিনিয়োগের ওপর। কিন্তু বিনিয়োগের ভিত্তি হচ্ছে অবকাঠামো ও আইনের শাসনের প্রয়োগ, দুটিরই বাংলাদেশের করুণ অবস্থা। তা ছাড়া আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে এবং সরকারের অতিরিক্ত ঋণগ্রহণের ফলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে সুযোগ নিতান্ত সীমিত। তা ছাড়া সরকারের অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগও প্রবৃদ্ধির সহায়ক নয়। ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার টাকা অবমূল্যায়নের কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ স্থগিত হয়ে পড়েছে। বিদেশি ঋণ এবং অনুদান সরকার একদিকে অব্যবস্থাপনার কারণে বিনিয়োগ করতে পারছে না, অন্যদিকে দাতাগোষ্ঠীও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বৈদেশিক আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের আমদানি-রপ্তানি দুটিই কমেছে, ঋণের প্রবাহ কমেছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালের আমদানিও কমেছে। এই ধারায় প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে আসবে? এবার কৃষি ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। অবকাঠামোরও করুণ অবস্থা।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের অর্থনীতি আছে চাপের মধ্যে। বিশ্ব-অর্থনীতি সহসাই চাঙ্গা হবে, এমন সম্ভাবনাও কম। আছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের চাপ। এই অবস্থায় এই বাজেট কতটা কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে করেন আপনি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এই বাজেটে সরকারের প্রয়োজন ছিল অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দেশ যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন সেটার সমাধান দেওয়া। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় পার হয়ে গেছে। তারা দেশবাসীকে আবারও সেই প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে কিন্তু পূরণ করার সেই সুযোগ ও অর্থনৈতিক সাধ্য সরকারের আছে বলে আমার মনে হয় না।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা বিদ্যুৎ খাত। এই খাতের উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো আশার আলো কি দেখতে পেয়েছেন? বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে আপনার কোনো পরামর্শ কি আছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিদ্যুৎ খাতের সমস্যার কোনো সমাধান আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমি আগেও বলেছি, এই খাতে যে পর্বতপ্রমাণ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে জাতিকে এই বোঝা থেকে মুক্ত করার পথ বের করতে হবে। তা ছাড়া বিদ্যুতের যে পরিকল্পনা সরকার দিয়েছে, তা আশাবাদ ছাড়া আর কিছু না।
কালের কণ্ঠ : পিপিপি এবারও এসেছে বাজেটে। পিপিপিতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পিপিপির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলুন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : পিপিপির নীতিমালায় ব্যক্তি খাত ও সরকারি খাতের মধ্যে একটি পুরোপুরি আস্থার পরিবেশ থাকতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে স্বচ্ছতাও থাকতে হবে। প্রকল্প বাছাই প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত হতে হবে। সরকারের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কালের কণ্ঠ : এবার আসা যাক কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবারও রাখা হয়েছে। এতে কি রাজনীতির কাছে নৈতিকতার পরাজয় হলো?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া যদি দেশের স্বার্থে না হয়ে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে হয় সেটা গণবিরোধী কাজ হবে। এ ক্ষেত্রে এবার আবারও কেন করা হচ্ছে, সেটাও বোধ হয় কারো বুঝতে বাকি নেই।
কালের কণ্ঠ : অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরো সংহত করার কোনো পদক্ষেপ কি এই বাজেটে লক্ষ করা যায়?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য যেখানে থাকবে না, সেখানে স্থিতিশীলতা আশা করা যায় না।
কালের কণ্ঠ : মুদ্রাব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রা প্রবাহ- এই তিনটি বিষয়ের নিরিখে এই বাজেট বাস্তবায়নের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমাতে চাচ্ছে, সেখানে সরকার অধিক হারে ঋণ নিয়ে টাকা ছাপিয়ে একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগকে সীমিত করে দিচ্ছে। অথচ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল ও কর্মসংস্থান সহায়ক। আবার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে এমনিতে যেখানে দেশ তারল্য সংকটে ভুগছে, সেখানে বিনিয়োগ আরো নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে সুশাসনের ব্যাপারটিও। অর্থমন্ত্রী সে ব্যাপারে তাঁর বাজেট বক্তৃতায় আলোকপাত করেছেন। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : সুশাসনের জন্য প্রথমে যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি প্রভাবমুক্ত রাখা। এর প্রতিটি বাংলাদেশে আজ অনুপস্থিত। তা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আইনের শাসনের অপপ্রয়োগ, নিরাপত্তাহীনতা এবং সবপর্যায়ে চরম দুর্নীতি দেশ, জনগণ ও অর্থনীতিকে চরম সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : আপনি কি মনে করেন, এই বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা বর্তমান সরকারের আছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিগত বাজেটের দিকে তাকালে এক অবনতিশীল ধারা আমরা লক্ষ করছি। দেশি ও বিদেশি সম্পদ ব্যবহারে এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। সরকারের দক্ষতা আপেক্ষিক ব্যাপার। নির্ভর করে পারদর্শিতার ওপর।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ। কালের কণ্ঠের পাঠকদের অভিনন্দন।
কালের কণ্ঠ : নতুন অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এই বাজেটের আকার নিয়ে শুরু করা যেতে পারে। এই বাজেটকে কতটা বাস্তবানুগ বলে মনে করেন আপনি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বাজেটের আকার হওয়া উচিত বাস্তবভিত্তিক সর্বোচ্চ আয়ের উৎসের দিকগুলো যত দূর সম্ভব নিশ্চিত করে। আয়ের বাইরে অনুদান, ঋণ (বৈদেশিক) এবং দেশীয় সঞ্চয়ের প্রধানত ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে (সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি) উৎসগুলোর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে ও নির্দিষ্ট করতে হবে। এসব মাথায় রেখে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কী হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করতে হবে। আয়-ব্যয়ের সমন্বয়ের ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ও সার্বিক বিনিয়োগের (সরকারি/বেসরকারি) একটি উত্তম ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তা সর্বাগ্রে বিবেচ্য হতে হবে। এবারের বাজেটের আয়তন বড় সেটা আমি বলব না, যেটা বলার তা হলো ভারসাম্যহীনতা।
কালের কণ্ঠ : ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিগত বাজেটে আয়-ব্যয় ভারসাম্যের এতটাই সমস্যা ছিল যে সরকারকে বিশাল অঙ্কের ব্যাংকঋণ গ্রহণ করতে হয়েছে। এই ধারায় আরো অধিক হারে বিগত বাজেটের চেয়ে বেশি পরিমাণ হবে বলে প্রতীয়মান হয়। সরকারের রাজস্ব আয় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে অথচ প্রায় ১১ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি ও ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে আনলে অতিরিক্ত কিছুই থাকছে না। অপরদিকে বিদেশি ঋণ, অনুদান বহুমাত্রিক দুর্নীতির কারণে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুর্নীতি নিয়ে দাতাদের কাছ থেকে যে অভিযোগগুলো উঠেছে তার কোনো সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা নেই; কারণ দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযুক্তদের তড়িঘড়ি করে ইতিমধ্যে Clean Certificate প্রদান করেছে। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়ের মধ্যে সরকারি ঋণ নেওয়ার যে Instrumentগুলো রয়েছে, সেগুলোও সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। যদিও সরকার নতুন করে এগুলোকে আবারও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতির কারণে স্থির আয়ের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজনের প্রকৃত আয় কমে যাওয়ায় এটার সফলতা সম্পর্কে আমি সন্ধিহান। কারণ লোকজনের কর্মসংস্থানের অভাব ও ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সঞ্চয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে। উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান না হলেও সরকার সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামে অপ্রয়োজনীয় ও অনুৎপাদনশীল খাতে দলীয় লোকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে, যা থেকে সাধারণ জনগণ কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছে না বরং সরকারের দায় বেড়ে যাচ্ছে। জনগণের ওপর এই বোঝা চাপানো হচ্ছে। এটা উৎপাদনশীল খাতকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সরকারের কার্যক্রমে দক্ষতা হ্রাস পাবে।
কালের কণ্ঠ : আগামী বছর মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এই হার ছিল ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। এই বাস্তবতায় মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনা কি সম্ভব হবে? ব্যাখ্যা করুন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : মূল্যস্ফীতির হার নির্ধারণ হয় পণ্যের আমদানি মূল্য দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামো যেমন- বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পরিবহনসহ অবকাঠামোগত সমস্যা, মূল্য বৃদ্ধি ও প্রাপ্যতার অভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যাংকের সুদ বেড়ে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানীকৃত শিল্পের যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, মাধ্যমিক কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিতে প্রতিফলন ঘটছে। সরকারের বিশাল অঙ্কের ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট ছাপানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি আরো উস্কে দিচ্ছে। বিদ্যুতের অপ্রাপ্যতা, উচ্চ মূল্য ও উচ্চ জ্বালানি মূল্য পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করবে।
নতুন ৯টি ব্যাংক যাত্রা শুরু করলে অসম প্রতিযোগিতার কারণে, ধারণা করা হচ্ছে, ব্যাংক সঞ্চয় ও ঋণের সুদের হার আরো বাড়বে। সেখানেও মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এবারও সরকার মূল্যস্ফীতির টার্গেট ৭ শতাংশে রেখেছিল, আসলে প্রায় ১১ শতাংশে রয়ে গেছে।
কালের কণ্ঠ : অনেকেই বলছেন বাজেট বক্তৃতায় ভর্তুকির বিষয়টি অস্পষ্ট। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে চাই।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : গত বাজেটে যে ভর্তুকি ধরা হয়েছে তিন মাসের মধ্যে বোঝা গেল সেটা আসলে বহু গুণ বাড়তি। আমার মনে হয়, এখানে স্বচ্ছতার অভাব ছিল। কারণ বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর নামে অস্বচ্ছভাবে কোনো দরপত্র ছাড়া দলীয় ও নিজস্ব লোকজনকে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের অনুমতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের রক্তক্ষরণের মাধ্যমে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান তো দূরের কথা বাংলাদেশের বিগত ২০ বছরে বিভিন্ন সরকারের সময় সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে উত্তম ভারসাম্য গড়ে উঠেছিল তা বিনষ্ট হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে যে পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে তা দেশের অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে এসেছে এর জন্য জাতিকে অনেক উচ্চ মূল্য দিতে হবে। এই ব্যাপারে ভবিষ্যতে যাতে কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে না হয় তার জন্য সরকার দায়মুক্তি আইন করে এই দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে বৈকি! পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যে একই ধরনের দুর্নীতির জন্য বর্তমান ও প্রাক্তন মন্ত্রীসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাঁদের লাইসেন্স বাতিল করেছে, হিসাব জব্দ করেছেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে সিভিল ও ক্রিমিন্যাল মামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
কালের কণ্ঠ : প্রবৃদ্ধির প্রশ্নটিও তো স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে। প্রবৃদ্ধির যে হার ধরা হয়েছে, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে সরকারি-বেসরকারি ও বৈদেশিক উৎপাদনশীল বিনিয়োগের ওপর। কিন্তু বিনিয়োগের ভিত্তি হচ্ছে অবকাঠামো ও আইনের শাসনের প্রয়োগ, দুটিরই বাংলাদেশের করুণ অবস্থা। তা ছাড়া আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে এবং সরকারের অতিরিক্ত ঋণগ্রহণের ফলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে সুযোগ নিতান্ত সীমিত। তা ছাড়া সরকারের অনুৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগও প্রবৃদ্ধির সহায়ক নয়। ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার টাকা অবমূল্যায়নের কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় বিদেশি বিনিয়োগ স্থগিত হয়ে পড়েছে। বিদেশি ঋণ এবং অনুদান সরকার একদিকে অব্যবস্থাপনার কারণে বিনিয়োগ করতে পারছে না, অন্যদিকে দাতাগোষ্ঠীও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বৈদেশিক আয়-ব্যয়ের হিসাবে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
দেশের আমদানি-রপ্তানি দুটিই কমেছে, ঋণের প্রবাহ কমেছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালের আমদানিও কমেছে। এই ধারায় প্রবৃদ্ধি কোথা থেকে আসবে? এবার কৃষি ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। অবকাঠামোরও করুণ অবস্থা।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের অর্থনীতি আছে চাপের মধ্যে। বিশ্ব-অর্থনীতি সহসাই চাঙ্গা হবে, এমন সম্ভাবনাও কম। আছে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের চাপ। এই অবস্থায় এই বাজেট কতটা কল্যাণ বয়ে আনবে বলে মনে করেন আপনি?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : এই বাজেটে সরকারের প্রয়োজন ছিল অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দেশ যে বিপর্যয়ের সম্মুখীন সেটার সমাধান দেওয়া। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় পার হয়ে গেছে। তারা দেশবাসীকে আবারও সেই প্রতিশ্রুতি দিতে পারবে কিন্তু পূরণ করার সেই সুযোগ ও অর্থনৈতিক সাধ্য সরকারের আছে বলে আমার মনে হয় না।
কালের কণ্ঠ : বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা বিদ্যুৎ খাত। এই খাতের উন্নয়নে প্রস্তাবিত বাজেটে কোনো আশার আলো কি দেখতে পেয়েছেন? বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে আপনার কোনো পরামর্শ কি আছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিদ্যুৎ খাতের সমস্যার কোনো সমাধান আমি দেখতে পাচ্ছি না। আমি আগেও বলেছি, এই খাতে যে পর্বতপ্রমাণ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে এসে জাতিকে এই বোঝা থেকে মুক্ত করার পথ বের করতে হবে। তা ছাড়া বিদ্যুতের যে পরিকল্পনা সরকার দিয়েছে, তা আশাবাদ ছাড়া আর কিছু না।
কালের কণ্ঠ : পিপিপি এবারও এসেছে বাজেটে। পিপিপিতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পিপিপির ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলুন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : পিপিপির নীতিমালায় ব্যক্তি খাত ও সরকারি খাতের মধ্যে একটি পুরোপুরি আস্থার পরিবেশ থাকতে হবে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে স্বচ্ছতাও থাকতে হবে। প্রকল্প বাছাই প্রক্রিয়া বাস্তবসম্মত হতে হবে। সরকারের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কালের কণ্ঠ : এবার আসা যাক কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবারও রাখা হয়েছে। এতে কি রাজনীতির কাছে নৈতিকতার পরাজয় হলো?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়া যদি দেশের স্বার্থে না হয়ে কোনো বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থে হয় সেটা গণবিরোধী কাজ হবে। এ ক্ষেত্রে এবার আবারও কেন করা হচ্ছে, সেটাও বোধ হয় কারো বুঝতে বাকি নেই।
কালের কণ্ঠ : অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরো সংহত করার কোনো পদক্ষেপ কি এই বাজেটে লক্ষ করা যায়?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য যেখানে থাকবে না, সেখানে স্থিতিশীলতা আশা করা যায় না।
কালের কণ্ঠ : মুদ্রাব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রা প্রবাহ- এই তিনটি বিষয়ের নিরিখে এই বাজেট বাস্তবায়নের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমাতে চাচ্ছে, সেখানে সরকার অধিক হারে ঋণ নিয়ে টাকা ছাপিয়ে একদিকে মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে। অন্যদিকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগকে সীমিত করে দিচ্ছে। অথচ ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল ও কর্মসংস্থান সহায়ক। আবার সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে ঋণপ্রবাহ কমিয়ে এমনিতে যেখানে দেশ তারল্য সংকটে ভুগছে, সেখানে বিনিয়োগ আরো নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়ে সুশাসনের ব্যাপারটিও। অর্থমন্ত্রী সে ব্যাপারে তাঁর বাজেট বক্তৃতায় আলোকপাত করেছেন। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : সুশাসনের জন্য প্রথমে যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সরকারি প্রভাবমুক্ত রাখা। এর প্রতিটি বাংলাদেশে আজ অনুপস্থিত। তা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আইনের শাসনের অপপ্রয়োগ, নিরাপত্তাহীনতা এবং সবপর্যায়ে চরম দুর্নীতি দেশ, জনগণ ও অর্থনীতিকে চরম সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
কালের কণ্ঠ : আপনি কি মনে করেন, এই বাজেট বাস্তবায়নের দক্ষতা বর্তমান সরকারের আছে?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : বিগত বাজেটের দিকে তাকালে এক অবনতিশীল ধারা আমরা লক্ষ করছি। দেশি ও বিদেশি সম্পদ ব্যবহারে এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য। সরকারের দক্ষতা আপেক্ষিক ব্যাপার। নির্ভর করে পারদর্শিতার ওপর।
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী : আপনাকেও ধন্যবাদ। কালের কণ্ঠের পাঠকদের অভিনন্দন।
No comments