আফ্রিকায় আলো ছড়াচ্ছেন মোস্তাক by ইফতেখার মাহমুদ
মোস্তাক আহমেদ বললেন, ‘আমাদের মাধ্যমে বছরে তিন কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা আসছে দেশে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে সেটা ২০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।’ আউটসোর্সিংয়ের কাজ পেয়ে বাংলাদেশ উপকৃত হচ্ছে তাঁর কাজের মাধ্যমে। কিন্তু তাঁর কর্মক্ষেত্র আসলে আফ্রিকা।
২০০৭ সাল। মোস্তাক তখন কাজ করছেন সোয়াজিল্যান্ডে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে সোয়াজিল্যান্ড সরকারের বিভিন্ন সেবামূলক কাজকে আনা হচ্ছিল তথ্যপ্রযুক্তির আওতায়। মোস্তাকের প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল সেই কাজে। বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার সময়টিতে দেশটির করব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছিল। এ সময় সে দেশের অর্থমন্ত্রী সিটলে মাজৌরি ইইউকে বলে বসলেন, ‘দেশের অর্থনীতিই ঠিকমতো চলছে না। এখন এসব তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে কী হবে? আপাতত কাজ বাদ দিন।’
মোস্তাক সরাসরি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বললেন, ‘আমি আপনাদের এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দেব। আপনাদের করব্যবস্থাকে কম্পিউটার তথ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসুন। প্রতিটি বন্দরের বহির্গমন ও অবতরণ ক্ষেত্রে একটি আলাদা ডেস্ক বসান। সেখানে কর দিয়ে তারপর দেশের বাইরে বা ভেতরে যেতে হবে। এতে প্রতিটি নাগরিক ও তাদের সঙ্গে আসা পণ্য করের আওতায় চলে আসবে।’
প্রস্তাবটি মনে ধরল অর্থমন্ত্রীর। কর সংগ্রহের দায়িত্ব মোস্তাকের কোম্পানি ডেটানেট ও সোয়াজিল্যান্ড সরকারকে যৌথভাবে দেওয়া হলো। দুই বছরের মাথায় কর বাবদ সরকারের আয় বাড়ল চার গুণ। ঘুরে দাঁড়াল সোয়াজিল্যান্ডের অর্থনীতি। পুরো আফ্রিকায় মোস্তাকের এই কীর্তিতে সাড়া পড়ে গেল। এর আগে মোস্তাক সোয়াজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য, হিসাবরক্ষণ ও কৃষিব্যবস্থা-সংক্রান্ত তথ্যসেবা কম্পিউটার প্রযুক্তির আওতায় এনেও সাড়া ফেলেছিলেন।
এবার মোস্তাকের ডাক পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকায়। এখানে দায়িত্ব সরকারের কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকে কম্পিউটার প্রযুক্তির আওতায় আনার। মোস্তাক দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠা করলেন এনওয়াইবিএসওয়াইএস নামের আরেকটি কোম্পানি। ইউরোপ ও আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিকে প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলে তাঁর কোম্পানি এখন দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের কাজ করছে। এরপর একে একে আফ্রিকার লেসোথো, বতসোয়ানা ও মোজাম্বিকেও মোস্তাকের প্রতিষ্ঠা করা এনওয়াইবিএসওয়াইএস ও ডেটানেটের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরেও তাঁর এই কোম্পানির শাখা খোলা হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শাখা খোলার।
বাংলাদেশেও ডেটানেটের একটি শাখা খুলেছেন মোস্তাক। রাজধানীর মিরপুরে স্থাপিত ওই কোম্পানির বাংলাদেশ শাখায় ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাজ করছেন। আরও ১০০ জনকে এ কাজে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের তথ্যসেবা-সংক্রান্ত কাজ বাংলাদেশে আউটসোর্সিং করে পাঠিয়ে দিচ্ছে তাঁর কোম্পানি। দেশের তরুণেরা সে কাজ সম্পন্ন করে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা বা সোয়াজিল্যান্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
মোস্তাক আহমেদের বাবা আবদুল রহীম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে উপসহকারী প্রকৌশলী ছিলেন। মোস্তাকের জন্ম-বেড়ে ওঠা নরসিংদীতে। ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হয়ে মোস্তাক বাবার কাছে বায়না ধরলেন একটি কম্পিউটার কিনে দেওয়ার জন্য। ছেলের আগ্রহ দেখে শেষ পর্যন্ত বাবার পেনশনের টাকায় কম্পিউটার কিনে দেওয়া হলো।
মোস্তাক নতুন নতুন সফটওয়্যার তৈরি শুরু করলেন। শুরুতে সিলেবাসে থাকা হিসাবরক্ষণ-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে আরও সহজ করার জন্য কয়েকটি সফটওয়্যার বানালেন তিনি। এরপর বাংলায় সুকুমার রায়ের কবিতা ও ‘নন্টে-ফন্টে’ কমিক নিয়ে কয়েকটি কার্টুনও বানালেন তিনি। সে সময় বিটিভিতে সেগুলো প্রচারও হলো।
চতুর্থ সেমিস্টারে পড়া অবস্থায় ইউনিসেফের সহায়তায় প্রথম জন্মনিবন্ধনের তথ্যভান্ডার তৈরির জন্য রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পান। এরপর পান যুক্তরাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিকল্পনা কমিশনের হয়ে সরকারের হিসাবরক্ষণব্যবস্থার দায়িত্ব। ২০০২ সালে জন্মনিবন্ধনের কাজের জন্য যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেরা তথ্যপ্রযুক্তির পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। এরপর মোস্তাককে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বাংলাদেশের পক্ষে তথ্যপ্রযুক্তিসেবা বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বছরে শত কোটি ডলার আয় সম্ভব। ফিলিপাইন বছরে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার এই খাত থেকে আয় করলে বাংলাদেশ কেন পারবে না—এই প্রশ্ন ৩৭ বছর বয়সী তরুণ মোস্তাকের। আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের পরিচিতি এখন পালিয়ে আসা অভিবাসী বা নিম্ন চাকরির জনবলের মধ্যে নেই। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রপথিক হিসেবেই সেখানে বাংলাদেশের পরিচয়।
‘আমি এখন পর্যন্ত যা করেছি, তা কিছুই না। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে বড় করে তুলতে হবে’—মোস্তাক বলেন। আফ্রিকায় বসেই তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। আবার অনলাইনে নিয়মিত প্রথম আলো পড়েন তিনি, ফলে দেশের খবর পেয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন, দেশ থেকে দূরে থেকেও।
মোস্তাক সরাসরি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বললেন, ‘আমি আপনাদের এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার ব্যবস্থা করে দেব। আপনাদের করব্যবস্থাকে কম্পিউটার তথ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসুন। প্রতিটি বন্দরের বহির্গমন ও অবতরণ ক্ষেত্রে একটি আলাদা ডেস্ক বসান। সেখানে কর দিয়ে তারপর দেশের বাইরে বা ভেতরে যেতে হবে। এতে প্রতিটি নাগরিক ও তাদের সঙ্গে আসা পণ্য করের আওতায় চলে আসবে।’
প্রস্তাবটি মনে ধরল অর্থমন্ত্রীর। কর সংগ্রহের দায়িত্ব মোস্তাকের কোম্পানি ডেটানেট ও সোয়াজিল্যান্ড সরকারকে যৌথভাবে দেওয়া হলো। দুই বছরের মাথায় কর বাবদ সরকারের আয় বাড়ল চার গুণ। ঘুরে দাঁড়াল সোয়াজিল্যান্ডের অর্থনীতি। পুরো আফ্রিকায় মোস্তাকের এই কীর্তিতে সাড়া পড়ে গেল। এর আগে মোস্তাক সোয়াজিল্যান্ডের স্বাস্থ্য, হিসাবরক্ষণ ও কৃষিব্যবস্থা-সংক্রান্ত তথ্যসেবা কম্পিউটার প্রযুক্তির আওতায় এনেও সাড়া ফেলেছিলেন।
এবার মোস্তাকের ডাক পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকায়। এখানে দায়িত্ব সরকারের কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতকে কম্পিউটার প্রযুক্তির আওতায় আনার। মোস্তাক দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠা করলেন এনওয়াইবিএসওয়াইএস নামের আরেকটি কোম্পানি। ইউরোপ ও আমেরিকার বড় বড় কোম্পানিকে প্রতিযোগিতায় পেছনে ফেলে তাঁর কোম্পানি এখন দক্ষিণ আফ্রিকার এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিকায়নের কাজ করছে। এরপর একে একে আফ্রিকার লেসোথো, বতসোয়ানা ও মোজাম্বিকেও মোস্তাকের প্রতিষ্ঠা করা এনওয়াইবিএসওয়াইএস ও ডেটানেটের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরেও তাঁর এই কোম্পানির শাখা খোলা হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে শাখা খোলার।
বাংলাদেশেও ডেটানেটের একটি শাখা খুলেছেন মোস্তাক। রাজধানীর মিরপুরে স্থাপিত ওই কোম্পানির বাংলাদেশ শাখায় ২০ জন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ কাজ করছেন। আরও ১০০ জনকে এ কাজে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের তথ্যসেবা-সংক্রান্ত কাজ বাংলাদেশে আউটসোর্সিং করে পাঠিয়ে দিচ্ছে তাঁর কোম্পানি। দেশের তরুণেরা সে কাজ সম্পন্ন করে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা বা সোয়াজিল্যান্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
মোস্তাক আহমেদের বাবা আবদুল রহীম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে উপসহকারী প্রকৌশলী ছিলেন। মোস্তাকের জন্ম-বেড়ে ওঠা নরসিংদীতে। ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি হয়ে মোস্তাক বাবার কাছে বায়না ধরলেন একটি কম্পিউটার কিনে দেওয়ার জন্য। ছেলের আগ্রহ দেখে শেষ পর্যন্ত বাবার পেনশনের টাকায় কম্পিউটার কিনে দেওয়া হলো।
মোস্তাক নতুন নতুন সফটওয়্যার তৈরি শুরু করলেন। শুরুতে সিলেবাসে থাকা হিসাবরক্ষণ-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে আরও সহজ করার জন্য কয়েকটি সফটওয়্যার বানালেন তিনি। এরপর বাংলায় সুকুমার রায়ের কবিতা ও ‘নন্টে-ফন্টে’ কমিক নিয়ে কয়েকটি কার্টুনও বানালেন তিনি। সে সময় বিটিভিতে সেগুলো প্রচারও হলো।
চতুর্থ সেমিস্টারে পড়া অবস্থায় ইউনিসেফের সহায়তায় প্রথম জন্মনিবন্ধনের তথ্যভান্ডার তৈরির জন্য রাজশাহী বিভাগের দায়িত্ব পান। এরপর পান যুক্তরাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিকল্পনা কমিশনের হয়ে সরকারের হিসাবরক্ষণব্যবস্থার দায়িত্ব। ২০০২ সালে জন্মনিবন্ধনের কাজের জন্য যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেরা তথ্যপ্রযুক্তির পুরস্কারও জিতে নেন তিনি। এরপর মোস্তাককে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
বাংলাদেশের পক্ষে তথ্যপ্রযুক্তিসেবা বা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বছরে শত কোটি ডলার আয় সম্ভব। ফিলিপাইন বছরে এক হাজার ২০০ কোটি ডলার এই খাত থেকে আয় করলে বাংলাদেশ কেন পারবে না—এই প্রশ্ন ৩৭ বছর বয়সী তরুণ মোস্তাকের। আফ্রিকার দেশগুলোতে বাংলাদেশের পরিচিতি এখন পালিয়ে আসা অভিবাসী বা নিম্ন চাকরির জনবলের মধ্যে নেই। তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রপথিক হিসেবেই সেখানে বাংলাদেশের পরিচয়।
‘আমি এখন পর্যন্ত যা করেছি, তা কিছুই না। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে বড় করে তুলতে হবে’—মোস্তাক বলেন। আফ্রিকায় বসেই তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। আবার অনলাইনে নিয়মিত প্রথম আলো পড়েন তিনি, ফলে দেশের খবর পেয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন, দেশ থেকে দূরে থেকেও।
No comments