এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয়- উড়ছে পাকিস্তান
ইডেনের সঙ্গে সুসম্পর্ক অটুট থাকল পাকিস্তানের। ভারতের সঙ্গেও ‘দুঃসম্পর্ক’ বজায় থাকল আরও একজনের, অভিষেকের পর থেকেই যে দলের বিপক্ষে নামলেই হয় ফিফটি নয়তো সেঞ্চুরি করে ফেলছেন তিনি! কাল ম্যাচ শেষে মহেন্দ্র সিং ধোনি নাসির জামশেদকে হাসিমুখে কী যেন বললেনও।
হয়তো বললেন, ‘ভাই, ভারতের ওপর তোমার কিসের এত রাগ!’ ভারতের বিপক্ষে এ পর্যন্ত চার ওয়ানডেতে জামশেদের রান: ৫৩*, ১১২, ১০১* এবং ১০৬। ঠিকই পড়েছেন। টানা তিন সেঞ্চুরি, প্রথমটি এশিয়া কাপে, বাকি দুটিই এই সিরিজে। এর মধ্যে আগের ম্যাচের সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানোর পরও আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। আড়াল করে দিয়েছিল ধোনির অবিশ্বাস্য এক লড়াকু সেঞ্চুরি। কালও ধোনি বিরুদ্ধস্রোতে একাই লড়লেন। কিন্তু এবার পাকিস্তানের ৮৫ রানের জয়ে সব আলোই জামশেদকে ঘিরে।সেঞ্চুরি করেও জামশেদের আড়ালে পড়ে যাওয়ার ঘটনা অবশ্য এই সিরিজেই প্রথম ঘটেনি। প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছিলেন এই ঢাকায়, গত মার্চে। সেবার বিরাট কোহলির ১৮৩ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসের আলোয় অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। তবে ওই ম্যাচের সঙ্গে কাল একটা মিল থাকল। সেবার মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে শুরুতেই এনে দিয়েছিলেন ২২৪ রানের জুটি। কাল অত বড় না হলেও হাফিজের সঙ্গেই উদ্বোধনী জুটি ১৪৩ বলে ১৪১ রানের।
শুরুতে বিনা উইকেটে এত রান তোলার পরও পাকিস্তান ২৫০ রানে অলআউট। ম্যাচটা দেখে না থাকলে স্কোরকার্ড বিভ্রান্তি জাগাতে পারে। পাকিস্তান যে ১০ উইকেট হারিয়ে ফেলল পরের ১০৯ রান তুলতেই। দারুণভাবে দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার কাজটা করলেও বোলারদের সেই চেষ্টা বৃথাই গেল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। একটা সময় তো জামশেদ-হাফিজ জুটির সমান রানই ভারত তুলতে পারে কি না, সেই সংশয়ও জেগেছিল। শেষ উইকেটে ইশান্ত শর্মার সঙ্গে ধোনি ৩৩ রানের জুটি গড়াতেই শেষ পর্যন্ত ১৪১-এর চেয়ে ২৪ রান বেশি করে অলআউট হলো ভারত। ধোনি-ইশান্তর এই ৩৩ উদ্বোধনী জুটির ৪২-এর পর ভারতের সর্বোচ্চ জুটি—এই তথ্যের মধ্যেও লুকিয়ে থাকল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।
ম্যাচের মাঝবিরতিতে সংবর্ধনা নিতে আসা সাবেক ভারতীয় তারকাদের কাছে ম্যাচটা হয়ে গেল বিস্বাদের, নিশ্চিতভাবেই উল্টো অনুভূতি হচ্ছে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের। অথচ তখনো ম্যাচে ভারতের জয়ের পক্ষেই বাজি ছিল বেশি। ইডেনে গত ৬টি ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করে ২৫০-ই সর্বনিম্ন! তা ছাড়া পাকিস্তান ইনিংসে ফিরে আসার মানসিক সুবিধাও তখন ভারতের পক্ষে। একসময় তো মনে হচ্ছিল পাকিস্তান ৩২০-৩০-ও করে ফেলতে পারে। টিভি জরিপে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা বেশির ভাগই ভারতীয়, সেখানেও উঠে এসেছিল এমন অনুমান। কিন্তু হাফিজের আত্মহত্যা দিয়ে শুরু হলো যে ধস, সেটা আর সামলাতেই পারল না পাকিস্তান। হাফিজকে বোল্ড করা জাদেজা শেষ পর্যন্ত তুলে নিলেন ৩ উইকেট, ইশান্তেরও উইকেট ৩টি।
পাকিস্তানি বোলাররা কিন্তু এই রানটাকেও বানিয়ে দিল অনেক বড়। শুরু থেকেই ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলল তারা। শুরু থেকেই বলাটা অবশ্য ভুল হলো। ফর্মের সঙ্গে যুঝতে থাকা শেবাগের ব্যাট থেকে পুরোনো দিনের আগুনের কিছু ফুলকি ছুটে বেরোনোয় ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি হয়েছিল। কিন্তু জুনাইদের বলে গম্ভীর প্লেড অন হওয়ার পর নিয়মিত বিরতিতেই একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকল ভারত। আগের ম্যাচের বোলিং নায়ক জুনাইদের কালও ৩ উইকেট। ৩ উইকেট সাঈদ আজমলেরও, সেটিও একই ওভারে। চারটি ডিসমিসাল করে নিজের দুর্নাম ঘোচালেন কামরান আকমল। এর মধ্যে বাঁয়ে ঝাঁপিয়ে কোহলির যে ক্যাচটা নিলেন, আকমলের সঙ্গে তা সত্যি বেমানান!
এই ম্যাচে আরেকটা দুঃখ ঘুচল জামশেদের। গত ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও যে ধোনি কেড়ে নিয়েছিলেন! কাল বলেছেনও, ‘গতবার ম্যাচসেরার পুরস্কারটা পাইনি। ভাগ্য ভালো, এবার আমাকে দেওয়া হলো।’
আগের ম্যাচে টস নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। ধোনি কাল টস জিতেও ফিল্ডিং নিয়েছেন। সিদ্ধান্তটা তাঁরই। ফলে আক্ষেপটা থাকল ব্যাটিং নিয়ে, ‘বোলাররা আমাদের দারুণভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল, কিন্তু আমরা তাড়াতাড়ি অনেকগুলো উইকেট হারিয়ে ফেলেছি।’
যাতে আগামী পরশু দিল্লির ম্যাচটা বাকি থাকতেই সিরিজটাও হারিয়ে ফেলল ভারত। তথ্যসূত্র: স্টার ক্রিকেট ও ওয়েবসাইট।
No comments