গৃহবধূর সম্ভ্রমহানি ভয়ে লজ্জায় দেশ ছেড়ে গেল কমলেশ পরিবার- বাগেরহাটে উপজেলা চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মানববন্ধন
জেলার কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্ভমহানির শিকার হয়ে অবশেষে প্রাণ বাঁচাতে স্বামী-সন্তানসহ সংখ্যালঘু একটি পরিবার ভিটেমাটি ফেলে রাতারাতি অন্যত্র চলে যাওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার একপক্ষকাল পরে বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানাজানি হলে গোটা বাগেরহাটে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কচুয়ায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মাহফুজুর রহমানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজরা দেলোয়ার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, ডেপুটি কমান্ডার সিকদার হাবিবুর রহমান, সাবেক কমান্ডার হাজরা জাহিদুল ইসলাম মুন্নু, মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজর আহম্মেদ, শুকুর আলী শেখ।একইদিন বিকেলে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দরাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলার পর তীব্র নিন্দা ও অনুরূপ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এদের মধ্যে এ্যাড. মিলন ব্যানার্জী, অমিত রায়, অবনিশ চক্রবর্ত্তী সোনা, স্বপন দাস, স্বপন বিশ্বাস, অসীম সরকার প্রমুখ ছিলেন। জেলার নারী নেত্রীরাও একই দাবি করেছেন।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার খবর পেয়ে বাগেরহাটের কয়েক সংবাদকর্মী এদিন বিকেলে কচুয়ার উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের চরকাঠী গ্রামের দাসপাড়ায় গিয়ে আমজনতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে বাড়ি ছাড়া সংখ্যালঘু পরিবারটির করুণ কাহিনী। কচুয়া এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের আতঙ্কে সংখ্যালঘুসহ এলাকার সাধারণ মানুষ কেউই পরিচয় দিয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। মুখ খুললে পরিণাম নিয়ে তারা সকলে শঙ্কিত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভিন্ন শ্রেণী ও বয়সের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের চরকাঠী গ্রামের দাসপাড়া এলাকার মৃত মনিন্দ্রনাথ দাসের ছেলে সাইনবোর্ড বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী কমলেশ দাসের স্ত্রীকে ওই জনপ্রতিনিধি টেনে-হিঁচড়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে সম্ভমহানি করে। এ সময় গৃহবধূ হাত-পায়ে ধরেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। এ ঘটনার পর জীবন নাশের হুমকি দিয়ে বীরদর্পে চলে যায়। পরে এ ঘটনা চাউর হয়ে পড়লে ওই গৃহবধূ নিজের লোকলজ্জায় এবং জনপ্রতিনিধির হুমকির মুখে সহায় সম্পত্তি ফেলে একমাত্র পুত্রসন্তান ও স্বামীকে নিয়ে পালিয়ে যান। ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ বলেন, বাবা একজন জনপ্রতিনিধি এই জঘন্য কাজ করতে পারে তা কখনও ভাবতে পারিনি। দিনভর খুঁজেও কমলেশ দাস ও তার স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। সবাই বলেছে কমলেশ তাঁর সহায়-সম্পত্তি ফেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে গেছে। নিরাপত্তার অভাবে সংবাদকর্মীদের কাছে তথ্য প্রকাশ করতে রাজি হননি ওই এলাকার মানুষ।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই সংখ্যালঘু পরিবারের এক নিকটাত্মীয় জানান, ১৯ ডিসেম্বর ২০১২ উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের চরকাঠী গ্রামের দাসপাড়ার ওই বাড়িতে গিয়ে চেয়ারম্যান ওই গৃহবধূর শ্লীতাহানি ঘটায়। এর পর তার স্বামীকে হুমকি দেয়। এ কারণে শ্লীলতাহানির শিকার ওই মহিলা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ২১ ডিসেম্বর তার স্বামী ও ৭ বছর বয়সী পুত্রসন্তানকে নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মাফুজুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক। রাজনৈতিকভাবে তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য প্রতিপক্ষরা অপ্রচার চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার খোন্দকার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এমন একটি ঘটনা জানার পর তিনি কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভিকটিমকে খুঁজে বের করার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কচুয়া থানার ওসি জানান, এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ থানায় কোন ধরনের অভিযোগ দাখিল করেনি। তবে পুলিশ প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মু. শুকুর আলী সাংবাদিকদের জানান, এরূপ ঘটনা ঘটলে সে যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাউফলে উচ্ছেদের হুমকি ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল থেকে জানান, এক সংখ্যালঘুর দোকান ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় থানায় মামলা করায় বাদীকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানোসহ বাড়ি থেকে উচ্ছেদের হুমকি দিয়েছে আসামিরা। ফলে মামলার বাদী পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে।
No comments