সহপাঠীদের হাতে খুন!- স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে মনে, নবম শ্রেণীর কিশোরদের মধ্যে কী নিয়ে শত্রুতা থাকতে পারে
সম্প্রতি কুমিল্লায় সহপাঠীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে জাকারিয়া নিলয় নামের এক স্কুলছাত্র খুন হয়েছে। সোমবার আনুমানিক রাত ১১টায় শহরের নতুন চৌধুরীপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিলয় নামের ১৫ বছর বয়স্ক কিশোরটি কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র।
মঙ্গলবার দুপুরে নিলয়ের মামা বাদী হয়ে ৩ স্কুলছাত্রসহ ৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এই হত্যাকা-ের খবর পরদিন সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। নিলয়ের পরিচিত অপরিচিত অনেকেই এ হত্যাকা-ের খবর শুনে মর্মাহত হয়েছেন। হত্যাকারী সন্দেহে যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদের প্রায় সবার বয়স ১৮ বছরের কিংবা তার নিচে। আমাদের দেশে কিশোর অপরাধের সংখ্যা যে ক্রমেই বেড়ে চলেছেÑএ ধরনের হত্যাকা- তারই প্রমাণ।ইতোপূর্বে সহাপাঠী বা সমবয়সী বন্ধুদের দ্বারা ছাত্র হত্যার ঘটনা দেশে বেশ কয়েকবার সংঘটিত হয়েছে; এ ধরনের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। খবর পড়ে সবাই মর্মাহত হয়েছেন, তারপর বিস্মৃত হয়েছেন। সমাজ থেকে অপরাধ সমূলে বিদায় নিচ্ছে না। শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার সম্প্রসারণ হয়েছে। কিন্তু সবার মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি। আমাদের শিক্ষা বিজ্ঞানভিত্তিক; কিন্তু এর মধ্যে নীতিবোধের সংযুক্তি প্রয়োজন। শিশু বয়স থেকে প্রতিটি ছাত্রীছাত্রী যাতে লেখাপড়া শিক্ষার পাশাপাশি সৎ ও মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হতে হবে। খবরে প্রকাশ, নবম শ্রেণীর ছাত্র নিলয় পূর্বশত্রুতার জের হিসেবে সহপাঠীদের হাতে নিহত হয়। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে মনে, নবম শ্রেণীর কিশোরদের মধ্যে কী নিয়ে শত্রুতা থাকতে পারে? আমাদের সমাজবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের অবশ্যই এসব নিয়ে ভাবতে হবে। কী কারণে সমাজের মূল্যবোধের এমন অবক্ষয়? যদিও শিশু-কিশোররা উদ্বুদ্ধ হবে এমন আদর্শ মানুষের সংখ্যা এখন সমাজে কমে আসছে। তবু ন্যূনতম যাঁরা আছেন, তাঁদের সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টির কাজে লাগাতে হবে।
স্কুলে শিক্ষকদের আগামী দিনের সৎ ও শিক্ষিত নাগরিক গড়ার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বিপথগামী ছাত্রদের সুপথে নিয়ে আসার জন্য সবকিছু করা দরকার। সন্তান যাতে বিপথে না যায়Ñ সেই লক্ষ্যে বাবা-মাকে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে। সুস্থ সমাজ ও সৎ নাগরিক গড়ার আলোকে শিশুকাল থেকেই শুরু করা দরকার। তাহলে এ সমাজে হত্যা ও ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধ অনেকাংশে হ্রাস পাবে। তখন হয়ত নিলয়ের মতো আর কাউকে এমন কম বয়সে সহপাঠীদের হাতে নিহত হতে হবে না। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবেÑ এটাই প্রত্যাশা।
No comments