নারীর অধিকার-সরকার কথা রাখেনি by শরীফা বুলবুল
নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগ কথা রাখছে না- এ অভিযোগ তুলে নারী ও মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীরা বলেছেন, সরকার নারীর অধিকার আদায়ে রাজনীতির সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি, তাদের কথা আর কাজের মধ্যে রয়ে গেছে দুস্তর ব্যবধান।
বরং গুটিকয়েক মৌলবাদী গোষ্ঠীর হুমকি ও নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেওয়া অঙ্গীকারও পালন করছে না। যৌন নির্যাতন বন্ধেও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেই।
নারী নেতারা বলেছেন, ২০১০ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, নারীদের প্রতি যেসব বৈষম্যমূলক আইন চালু আছে, তা বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে সংশোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রম ছাড়া সম্পদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণাই সার, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরকারের চার বছরেও উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কার বা সিডও সনদ থেকে আপত্তি তোলার ক্ষেত্রেও দোদুল্যমানতায় ভুগছে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হন এবং ৪৫ জন সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পান। পরে সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে ৫০ করেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছে। ইশতেহারে আরো বলেছে, সংসদে প্রত্যক্ষ ভোটে নারীর জন্য ১০০ আসন সংরক্ষিত করা হবে। সিডও সনদের ক্ষেত্রেও সরকার দোদুল্যমান এবং দায়সারাগোছের। সিডও সনদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধারা থেকে আপত্তি তুলে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
নারী নেতারা বলেছেন, ছাত্রীদের জন্য ডিগ্রি পড়া অবৈতনিক করার ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যালে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও ভৌত অবকাঠামো বাড়ানো এবং অভিবাসী নারী শ্রমিকদের জন্যও উল্লেখযোগ্য কিছু করেনি সরকার। করেনি আরো অনেক কিছু।
বিবাহ নিবন্ধনের বিধান ঐচ্ছিক রেখে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন পাস করেছে সরকার। হিন্দু নারীরা বিয়ের প্রমাণ হিসেবে কাগজ দেখাতে পারেন না বলেই নির্যাতনের শিকার হন। তাই এ বিধান ঐচ্ছিক রাখায় নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বেশ হোঁচট খাচ্ছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, 'সরকার নারীনীতি কিংবা পারিবারিক সহিংসতা আইন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছুই করেনি। নারী উন্নয়ন নীতিতে পাদটীকায় সরকার বলে দিয়েছে, নীতিতে যা-ই থাকুক না কেন, কোরআন-সুন্নাহর বিপরীতে কোনো আইন বা নীতি সরকার বাস্তবায়ন করবে না।' তিনি আরো বলেন, 'নারীনীতিতে সরকার এ ধরনের পাদটীকা যোগ করেছে, তা আমরা জানতেও পারিনি! তাহলে আমাদের সঙ্গে এত কনসালটেশন, এত মতবিনিময় করা হলো কেন? এতে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন।' আয়শা খানম মনে করেন, সরকারের এখনো সময় আছে কিছু করার। বিশেষ করে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা, সিডও সনদ, নারীর প্রতি যেসব বৈষম্যমূলক আইন আছে তা বাতিল করা। সেই সুযোগটা তাদের নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, 'নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আমরা যে আন্দোলন করেছি, এর জন্য আইনি ভিত্তি তৈরি হওয়া দরকার।'
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 'এই প্রগতিশীল সরকারের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক কিছুই পাইনি। সরাসরি নির্বাচনের জায়গায় সরকারের পদক্ষেপ নেই। অথচ নির্বাচনী ইশতেহারে তারা এ ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছিল। এখন তারা সিডও কিংবা নারী ইস্যুর প্রশ্নে পিছিয়ে আছে। নারী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এটা অনেক বড় হতাশার জায়গা। এটা সংবিধানের মূলধারার চেতনার পরিপন্থী। একদিকে বলা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা, অন্যদিকে নীরবতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কেবল জঙ্গিবাদ দমন করা তো না।' ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, 'সরকারের সদিচ্ছা ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্যে সমন্বয় নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিলেও এর বাস্তবায়নও দুর্বল। এর জন্য মনিটরিংও করা হচ্ছে না। কাজের ধারাবাহিকতাও বজায় রাখা হচ্ছে না।'
সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, "সরকার নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন সংস্কার কিংবা সিডও থেকে আপত্তি তোলার ক্ষেত্রে গুটিকয়েক মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং নির্বাচনে প্রভাব পড়া নিয়ে ভয় পাচ্ছে। সরকার কেবল বলেই চলেছে, 'আমরা করছি', 'আমরা দেখছি'। তা সত্ত্বেও কেন যে হয় না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা না করার কারণে নারীর বিপক্ষে যে শক্তিগুলো আছে তারা সক্রিয় হচ্ছে। এসবের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাচ্ছে। দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করার মানে এই নয় যে সুইচ টিপলেই সব হবে। এসবের সঙ্গে ধর্মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু গড়িমসি করছে। অথচ ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নারীর ক্ষমতায়নে তারা আন্তরিক। যদি সরকার সত্যিকার অর্থে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে, তাহলে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইনগুলো সংশোধন করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।"
অবশ্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী সরকারের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং এ প্রসঙ্গে বলেন অন্য কথা। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'এক মেয়াদে যতটুকু অগ্রসর হওয়া সম্ভব, তা সরকার করছে। তবে সরকারের এক মেয়াদে নারী আন্দোলনের সব প্রত্যাশা হয়তো পূরণ করা সম্ভব হবে না। এটা কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এ সরকার নারীবান্ধব। নারী প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীও আন্তরিক।'
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তারিক উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নারী উন্নয়ন নীতিমালা এবং পারিবারিক সহিংসতা আইনের বিধিমালা তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন। কর্মপরিকল্পনা বা বিধি তৈরি না হলেও বিভিন্ন কাজ হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার আন্তরিক।'
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রসঙ্গে প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক অ্যারমা দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, "আমাদের দাবি হচ্ছে, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা। এটা হিন্দু নারীদের আইনগত ডকুমেন্ট। এটাকে অবশ্য পালনীয় এবং বাধ্যতামূলক করা উচিত। দেখা যায়, একেকজন দু-তিনটা করে বিয়ে করছে। আগের সন্তানদের কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। এর ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে পারবে। কিন্তু সরকারের কথা কী বলব, এখানে পুরুষ হিন্দু যাঁরা আছেন, যাঁরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন, তাঁরাই এতে বাধা দিচ্ছেন। তাঁরাই বলছেন, 'রেজিস্ট্রেশন হতে পারবে না।' এটা হলে নাকি 'ধর্মের ওপর হস্তক্ষেপ' করা হবে। অথচ ভারতের মতো দেশেও এ আইন পুরোপুরিই পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে বিয়ে করলে নারীরা সম্পত্তির সমান অধিকার পাচ্ছে।"
নারী নেতারা বলেছেন, ২০১০ সালের ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের শতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন, নারীদের প্রতি যেসব বৈষম্যমূলক আইন চালু আছে, তা বাতিল করা হবে। প্রয়োজনে সংশোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছিলেন, ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিক্রম ছাড়া সম্পদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণাই সার, কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সরকারের চার বছরেও উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। বৈষম্যমূলক আইনের সংস্কার বা সিডও সনদ থেকে আপত্তি তোলার ক্ষেত্রেও দোদুল্যমানতায় ভুগছে। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেওয়া হয়নি। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৯ জন নারী সরাসরি নির্বাচিত হন এবং ৪৫ জন সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পান। পরে সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন বাড়িয়ে ৫০ করেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছে। ইশতেহারে আরো বলেছে, সংসদে প্রত্যক্ষ ভোটে নারীর জন্য ১০০ আসন সংরক্ষিত করা হবে। সিডও সনদের ক্ষেত্রেও সরকার দোদুল্যমান এবং দায়সারাগোছের। সিডও সনদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধারা থেকে আপত্তি তুলে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
নারী নেতারা বলেছেন, ছাত্রীদের জন্য ডিগ্রি পড়া অবৈতনিক করার ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যালে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও ভৌত অবকাঠামো বাড়ানো এবং অভিবাসী নারী শ্রমিকদের জন্যও উল্লেখযোগ্য কিছু করেনি সরকার। করেনি আরো অনেক কিছু।
বিবাহ নিবন্ধনের বিধান ঐচ্ছিক রেখে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন পাস করেছে সরকার। হিন্দু নারীরা বিয়ের প্রমাণ হিসেবে কাগজ দেখাতে পারেন না বলেই নির্যাতনের শিকার হন। তাই এ বিধান ঐচ্ছিক রাখায় নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা বেশ হোঁচট খাচ্ছেন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, 'সরকার নারীনীতি কিংবা পারিবারিক সহিংসতা আইন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কিছুই করেনি। নারী উন্নয়ন নীতিতে পাদটীকায় সরকার বলে দিয়েছে, নীতিতে যা-ই থাকুক না কেন, কোরআন-সুন্নাহর বিপরীতে কোনো আইন বা নীতি সরকার বাস্তবায়ন করবে না।' তিনি আরো বলেন, 'নারীনীতিতে সরকার এ ধরনের পাদটীকা যোগ করেছে, তা আমরা জানতেও পারিনি! তাহলে আমাদের সঙ্গে এত কনসালটেশন, এত মতবিনিময় করা হলো কেন? এতে আমরা গভীরভাবে দুঃখিত এবং উদ্বিগ্ন।' আয়শা খানম মনে করেন, সরকারের এখনো সময় আছে কিছু করার। বিশেষ করে সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনসংখ্যা ৩৩ শতাংশে উন্নীত করা, সিডও সনদ, নারীর প্রতি যেসব বৈষম্যমূলক আইন আছে তা বাতিল করা। সেই সুযোগটা তাদের নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, 'নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আমরা যে আন্দোলন করেছি, এর জন্য আইনি ভিত্তি তৈরি হওয়া দরকার।'
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, 'এই প্রগতিশীল সরকারের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক কিছুই পাইনি। সরাসরি নির্বাচনের জায়গায় সরকারের পদক্ষেপ নেই। অথচ নির্বাচনী ইশতেহারে তারা এ ব্যাপারে অঙ্গীকার করেছিল। এখন তারা সিডও কিংবা নারী ইস্যুর প্রশ্নে পিছিয়ে আছে। নারী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এটা অনেক বড় হতাশার জায়গা। এটা সংবিধানের মূলধারার চেতনার পরিপন্থী। একদিকে বলা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা, অন্যদিকে নীরবতা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে কেবল জঙ্গিবাদ দমন করা তো না।' ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, 'সরকারের সদিচ্ছা ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের মধ্যে সমন্বয় নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিলেও এর বাস্তবায়নও দুর্বল। এর জন্য মনিটরিংও করা হচ্ছে না। কাজের ধারাবাহিকতাও বজায় রাখা হচ্ছে না।'
সিডও কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান সালমা খান কালের কণ্ঠকে বলেন, "সরকার নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন সংস্কার কিংবা সিডও থেকে আপত্তি তোলার ক্ষেত্রে গুটিকয়েক মৌলবাদী গোষ্ঠী এবং নির্বাচনে প্রভাব পড়া নিয়ে ভয় পাচ্ছে। সরকার কেবল বলেই চলেছে, 'আমরা করছি', 'আমরা দেখছি'। তা সত্ত্বেও কেন যে হয় না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটা না করার কারণে নারীর বিপক্ষে যে শক্তিগুলো আছে তারা সক্রিয় হচ্ছে। এসবের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাচ্ছে। দুটি ধারা থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করার মানে এই নয় যে সুইচ টিপলেই সব হবে। এসবের সঙ্গে ধর্মের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু গড়িমসি করছে। অথচ ইশতেহারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নারীর ক্ষমতায়নে তারা আন্তরিক। যদি সরকার সত্যিকার অর্থে নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করে, তাহলে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইনগুলো সংশোধন করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।"
অবশ্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী সরকারের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং এ প্রসঙ্গে বলেন অন্য কথা। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'এক মেয়াদে যতটুকু অগ্রসর হওয়া সম্ভব, তা সরকার করছে। তবে সরকারের এক মেয়াদে নারী আন্দোলনের সব প্রত্যাশা হয়তো পূরণ করা সম্ভব হবে না। এটা কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এ সরকার নারীবান্ধব। নারী প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীও আন্তরিক।'
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তারিক উল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নারী উন্নয়ন নীতিমালা এবং পারিবারিক সহিংসতা আইনের বিধিমালা তৈরির কাজ প্রক্রিয়াধীন। কর্মপরিকল্পনা বা বিধি তৈরি না হলেও বিভিন্ন কাজ হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার আন্তরিক।'
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রসঙ্গে প্রিপ ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক অ্যারমা দত্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, "আমাদের দাবি হচ্ছে, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা। এটা হিন্দু নারীদের আইনগত ডকুমেন্ট। এটাকে অবশ্য পালনীয় এবং বাধ্যতামূলক করা উচিত। দেখা যায়, একেকজন দু-তিনটা করে বিয়ে করছে। আগের সন্তানদের কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। এর ওপর ভিত্তি করে তারা তাদের অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে পারবে। কিন্তু সরকারের কথা কী বলব, এখানে পুরুষ হিন্দু যাঁরা আছেন, যাঁরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন, তাঁরাই এতে বাধা দিচ্ছেন। তাঁরাই বলছেন, 'রেজিস্ট্রেশন হতে পারবে না।' এটা হলে নাকি 'ধর্মের ওপর হস্তক্ষেপ' করা হবে। অথচ ভারতের মতো দেশেও এ আইন পুরোপুরিই পরিবর্তন করা হয়েছে। সেখানে বিয়ে করলে নারীরা সম্পত্তির সমান অধিকার পাচ্ছে।"
No comments